ডিম্বাশয় ক্যান্সার: অবহেলা নয়, অভিযোজন
Published: 8th, May 2025 GMT
প্রতিবছর ৮ মে বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়, যার লক্ষ্য ডিম্বাশয় ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পেট ফাঁপা, পেলভিক ব্যথা এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের মতো লক্ষণ প্রায়ই অলক্ষিত থাকে। অনেক ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করা হয় উন্নত পর্যায়ে, যা চিকিৎসাকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবস প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়, উন্নত চিকিৎসার বিকল্প এবং আক্রান্তদের জন্য শক্তিশালী সহায়তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবসের ইতিহাস এবং তাৎপর্য সম্পর্কে জানা যায়, বিশ্ব ওভারিয়ান ক্যান্সার দিবস ২০১৩ সালে বিশ্বজুড়ে ডিম্বাশয় ক্যান্সারের পক্ষে প্রচারণাকারী সংস্থাগুলোর একটি দল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিভিন্ন দেশের নেতাদের একটি বৈঠক থেকে এ ধারণা এসেছে, যারা প্রায়ই উপেক্ষিত এ রোগ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির জরুরি প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন। ভারতের বিশেষায়িত হাসপাতাল ম্যাক্স হেলথকেয়ার ইনস্টিটিউট লিমিটেডের অনকোলজি বিশেষজ্ঞ ডা.
ডিম্বাশয় ক্যান্সার ডিম্বাশয়ে শুরু হয়। নারীদের পেলভিসের ছোট অঙ্গ– যা ডিম্বাণু এবং হরমোন উৎপন্ন করে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামে। এটি তখন ঘটে যখন ডিম্বাশয়ের অস্বাভাবিক কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং যদি দ্রুত শনাক্ত না করা হয়, তবে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিভিন্ন ধরনের ডিম্বাশয় ক্যান্সার রয়েছে, যার মধ্যে এপিথেলিয়াল ডিম্বাশয় ক্যান্সার সবচেয়ে সাধারণ। এই রোগটি বিশেষভাবে গুরুতর হয়ে ওঠার কারণ এটি প্রায়ই প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো স্পষ্ট লক্ষণ দেখায় না, যা ইতোমধ্যে অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত শনাক্ত করা কঠিন করে তোলে। প্রাথমিক রোগ নির্ণয় সফল চিকিৎসার সম্ভাবনা উন্নত করতে পারে, যে কারণে সচেতনতা এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডিম্বাশয় ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি। তবে ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু কারণ জানা যায়। এর মধ্যে জিনগত, পরিবেশগত এবং হরমোনজনিত প্রভাবের সংমিশ্রণ অন্তর্ভুক্ত। সাধারণ ঝুঁকির কারণ হচ্ছে ডিম্বাশয়, স্তন বা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস; বংশগত জিন পরিবর্তন; বয়স, বিশেষ করে ৫০ বছরের বেশি বয়সী বা মেনোপজের পরে নারীদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে; এন্ডোমেট্রিওসিস, এমন একটি অবস্থা– যেখানে জলবায়ুর আস্তরণের মতো টিস্যু এর বাইরে বৃদ্ধি পায়; হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি) দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার; বন্ধ্যত্ব অথবা কখনও অন্তঃসত্ত্বা না হওয়া। ডিম্বাশয় ক্যান্সার প্রায় তখনই শুরু হয়, যখন ডিম্বাশয়ের কোষগুলো তাদের ডিএনএতে পরিবর্তন করে। ফলে অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ঘটে। তবে এই ঝুঁকিপূর্ণ কারণের এক বা একাধিক থাকার অর্থ এই নয় যে, একজন নারীর অবশ্যই এই রোগ হবে। এটি শুধু আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। গবেষকরা এখনও অনুসন্ধান করছেন যে এই পরিবর্তনগুলো কী কারণে শুরু হয় এবং কীভাবে আগে থেকে শনাক্ত করা যায়।
ডিম্বাশয় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যান্সার কোয়ালিশন। ২০১৩ সালে বিশ্বজুড়ে ডিম্বাশয় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একদল নেতার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি ৮ মে বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবস পালনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। প্রতিবছর এই দিনটিকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী ডিম্বাশয় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়। বিশ্ব ওভারিয়ান ক্যান্সার দিবস হচ্ছে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রধান উদ্যোগ। বিশ্বজুড়ে ২০০টিরও বেশি দেশ ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যান্সার কোয়ালিশন সংস্থার সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যান্সারবিষয়ক সচেতনতার ব্যাপ্তি ত্বরান্বিত করে আসছে।
বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় সচেতনতার ফলে যে কোনো রোগের সঙ্গে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। সুতরাং এসব ভয়াবহ প্রাণঘাতী রোগের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। রোগকে অবহেলা নয়, অভিযোজন জরুরি।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: সাংবাদিক
[email protected]
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর য য
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি ফুটবলের ‘পেলে’
ফিলিস্তিন জাতীয় দলের সাবেক ফরোয়ার্ড সুলেইমান আল–ওবেইদ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে মানবিক সাহায্য পেতে অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনি জনতার ওপর ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে প্রাণ হারান ৪১ বছর বয়সী এই ফুটবলার। ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএএফ) গতকাল তাদের ওয়েবসাইটে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সুলেইমানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুনবন্ধু সুয়ারেজ ও ‘দেহরক্ষী’ দি পলে কোয়ার্টার ফাইনালে মেসির মায়ামি৫ ঘণ্টা আগেপিএএফের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে মানবিক সাহায্যের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় শহীদ হয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় ও বিচ সার্ভিসেস দলের তারকা সুলেইমান আল–ওবেইদ। ফিলিস্তিন ফুটবলে সুলেইমান “দ্য গ্যাজেল (হরিণ)”, “দ্য ব্লাক পার্ল (কালো মুক্তা)”, “হেনরি অব প্যালেস্টাইন” এবং “পেলে অব প্যালেস্টাইন ফুটবল” নামে পরিচিত ছিলেন। পাঁচ সন্তান রেখে মারা গেছেন ফিলিস্তিন ফুটবলের এই পেলে।’
গাজায় জন্ম নেওয়া সুলেইমান সার্ভিসেস বিচ ক্লাবের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর পশ্চিম তীরে গিয়ে সেখানকার ক্লাব আল আমারি ইয়ুথ সেন্টারে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খেলেন। ২০১০–১১ মৌসুমে ফিলিস্তিনের প্রথম পেশাদার ফুটবল লিগ জেতেন সুলেইমান। আল আমারি ছেড়ে আল শাতিয়া ক্লাবে এক মৌসুম খেলেন সুলেইমান। এরপর গাজা স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে সাউদার্ন গভর্নরেটস প্রিমিয়ার লিগে ২০২৬–১৭ মৌসুমে ১৭ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। পরের মৌসুমে আল খাদামা ক্লাবের হয়েও লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।
আরও পড়ুনলা লিগায় সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া ১০ ফুটবলার৬ ঘণ্টা আগেপিএএফের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, দুর্দান্ত গতি ও দক্ষতার জন্য ২০০৭ সালে ফিলিস্তিন জাতীয় দলে জায়গা করে নেন সুলেইমান। ২০১৩ সালে জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচটি খেলার আগে ২৪ ম্যাচে করেন ২ গোল। এর মধ্যে সুলেইমানের বিখ্যাত গোলটি ২০১০ সালে পশ্চিম এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন চ্যাম্পিয়নশিপে। ইয়েমেনের বিপক্ষে ‘সিজর্স কিকে’ চোখধাঁধানো গোলটি করেছিলেন।
সুলেইমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি এরিক ক্যান্টোনা নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে লিখেছেন, ”‘সাহায্য পাওয়ার আশায় রাফায় অবস্থান করার সময় ফিলিস্তিন জাতীয় দলের তারকা সুলেইমান আল–ওবেইদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তাকে “ফিলিস্তিনের পেলে” ডাকা হতো। আমরা তাদের আর কত গণহত্যা করতে দেব? ফিলিস্তিন মুক্ত হোক।’”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘লম্বা ক্যারিয়ারে সুলেইমান আল–ওবেইদ ১০০–এর বেশি গোল করে ফিলিস্তিন ফুটবলের অন্যতম উজ্জ্বল তারকায় পরিণত হয়েছিলেন।’ তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে খেলাধুলা ও স্কাউটিং–সংশ্লিষ্ট পরিবারে শহীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬৬২, যেটা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের নির্মূলীকরণ যুদ্ধের মাধ্যমে শুরু হয়। ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন–সংশ্লিষ্ট মৃত মানুষের সংখ্যা ৩২১। এর মধ্যে রয়েছেন খেলোয়াড়, কোচ, প্রশাসক, সংগঠক, রেফারি ও ক্লাবের বোর্ড সদস্য।’
তবে গত ২৩ জুলাই পিএএফের এক্সে করা পোস্টের বরাত দিয়ে ফুটবলপ্যালেস্টাইন ওয়েবসাইট জানিয়েছে, গত ৬৬৯ দিনে ইসরায়েলের হামলায় ৪০০–এর বেশি ফুটবলার নিহত হয়েছেন। সেই পোস্টে তখন জানানো হয়েছিল, সর্বশেষ ৬৫৬ দিনে খেলাধুলা ও স্কাউটিং–সংশ্লিষ্ট ৮০০–এর বেশি নিহত হয়েছেন ইসরায়েলের হামলায়।
গত ২৯ জুলাই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফিলিস্তিন অলিম্পিক কমিটি জানিয়েছে, শুধু জুলাই মাসেই গাজা ও দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলায় ৪০ জন ফিলিস্তিনি অ্যাথলেট নিহত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘একেকটি দিন যায় আর ফিলিস্তিনের ক্রীড়াঙ্গনে বিয়োগান্ত ঘটনার নতুন অধ্যায় যোগ হয়।’
গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক মারা গেছেন। আহত হয়েছেন দেড় লাখের বেশি; তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম প্রেসটিভি।