প্রতিবছর ৮ মে বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়, যার লক্ষ্য ডিম্বাশয় ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পেট ফাঁপা, পেলভিক ব্যথা এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের মতো লক্ষণ প্রায়ই অলক্ষিত থাকে। অনেক ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করা হয় উন্নত পর্যায়ে, যা চিকিৎসাকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবস প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়, উন্নত চিকিৎসার বিকল্প এবং আক্রান্তদের জন্য শক্তিশালী সহায়তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।


বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবসের ইতিহাস এবং তাৎপর্য সম্পর্কে জানা যায়, বিশ্ব ওভারিয়ান ক্যান্সার দিবস ২০১৩ সালে বিশ্বজুড়ে ডিম্বাশয় ক্যান্সারের পক্ষে প্রচারণাকারী সংস্থাগুলোর একটি দল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিভিন্ন দেশের নেতাদের একটি বৈঠক থেকে এ ধারণা এসেছে, যারা প্রায়ই উপেক্ষিত এ রোগ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির জরুরি প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন। ভারতের বিশেষায়িত হাসপাতাল ম্যাক্স হেলথকেয়ার ইনস্টিটিউট লিমিটেডের অনকোলজি বিশেষজ্ঞ ডা.

সুমন লাল এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সবচেয়ে ভয়াবহ স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত ক্যান্সারের মধ্যে একটি হওয়া সত্ত্বেও ওভারিয়ান ক্যান্সার অন্যগুলোর তুলনায় অনেক কম মনোযোগ পায়! এর মূল কারণ হতে পারে লক্ষণগুলো অস্পষ্ট এবং রোগটি উন্নত পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত প্রায় সময়ই উপেক্ষা করা হয়। এ ছাড়া পারিবারিক এবং সামাজিক সীমাবদ্ধতা তো আছেই।’


ডিম্বাশয় ক্যান্সার ডিম্বাশয়ে শুরু হয়। নারীদের পেলভিসের ছোট অঙ্গ– যা ডিম্বাণু এবং হরমোন উৎপন্ন করে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামে। এটি তখন ঘটে যখন ডিম্বাশয়ের অস্বাভাবিক কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং যদি দ্রুত শনাক্ত না করা হয়, তবে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিভিন্ন ধরনের ডিম্বাশয় ক্যান্সার রয়েছে, যার মধ্যে এপিথেলিয়াল ডিম্বাশয় ক্যান্সার সবচেয়ে সাধারণ। এই রোগটি বিশেষভাবে গুরুতর হয়ে ওঠার কারণ এটি প্রায়ই প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো স্পষ্ট লক্ষণ দেখায় না, যা ইতোমধ্যে অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত শনাক্ত করা কঠিন করে তোলে। প্রাথমিক রোগ নির্ণয় সফল চিকিৎসার সম্ভাবনা উন্নত করতে পারে, যে কারণে সচেতনতা এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


ডিম্বাশয় ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি। তবে ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু কারণ জানা যায়। এর মধ্যে জিনগত, পরিবেশগত এবং হরমোনজনিত প্রভাবের সংমিশ্রণ অন্তর্ভুক্ত। সাধারণ ঝুঁকির কারণ হচ্ছে ডিম্বাশয়, স্তন বা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস; বংশগত জিন পরিবর্তন; বয়স, বিশেষ করে ৫০ বছরের বেশি বয়সী বা মেনোপজের পরে নারীদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে;  এন্ডোমেট্রিওসিস, এমন একটি অবস্থা– যেখানে জলবায়ুর আস্তরণের মতো টিস্যু এর বাইরে বৃদ্ধি পায়; হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি) দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার; বন্ধ্যত্ব অথবা কখনও অন্তঃসত্ত্বা না হওয়া। ডিম্বাশয় ক্যান্সার প্রায় তখনই শুরু হয়, যখন ডিম্বাশয়ের কোষগুলো তাদের ডিএনএতে পরিবর্তন করে। ফলে অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ঘটে। তবে এই ঝুঁকিপূর্ণ কারণের এক বা একাধিক থাকার অর্থ এই নয় যে, একজন নারীর অবশ্যই এই রোগ হবে। এটি শুধু আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। গবেষকরা এখনও অনুসন্ধান করছেন যে এই পরিবর্তনগুলো কী কারণে শুরু হয় এবং কীভাবে আগে থেকে শনাক্ত করা যায়।


ডিম্বাশয় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যান্সার কোয়ালিশন। ২০১৩ সালে বিশ্বজুড়ে ডিম্বাশয় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একদল নেতার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি ৮ মে বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবস পালনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। প্রতিবছর এই দিনটিকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী ডিম্বাশয় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়। বিশ্ব ওভারিয়ান ক্যান্সার দিবস হচ্ছে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রধান উদ্যোগ। বিশ্বজুড়ে ২০০টিরও বেশি দেশ ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যান্সার কোয়ালিশন সংস্থার সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যান্সারবিষয়ক সচেতনতার ব্যাপ্তি ত্বরান্বিত করে আসছে।
বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় সচেতনতার ফলে যে কোনো রোগের সঙ্গে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। সুতরাং এসব ভয়াবহ প্রাণঘাতী রোগের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। রোগকে অবহেলা নয়, অভিযোজন জরুরি।


শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: সাংবাদিক
jsb.shuvo@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর য য

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট থেকে আয় হলেও চালু হচ্ছে না অভ্যন্তরীণ রুট

কুমিল্লা বিমানবন্দর দেখলে বোঝার উপায় নেই, এক সময় এখানে বিমান ওঠানামা করত। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় সুবিশাল রানওয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে পিচ ঢালাই ও ব্লক। এখন সেখানে উড়ছে ধুলাবালি। বিমানবন্দরের সংরক্ষিত অধিকাংশ এলাকায় ঘাস ও ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। অনেক জমি বেদখল হয়ে গেছে। তবে এখানকার সিগন্যাল যন্ত্র ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক রুটের ৩৫ থেকে ৪০টি ফ্লাইট থেকে প্রতি মাসে সরকার আয় করছে প্রায় আড়াই কোটি টাকার রাজস্ব।

কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দরে এখনও ২৪ জনশক্তি কাজ করেন। বিমাবন্দরের দায়িত্বরত প্রকৌশলী মনে করেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে অল্প জনবল নিয়োগ ও রানওয়ে মেরামত করলেই বিমানবন্দরটি চালু করা সম্ভব। এই বিমানবন্দরের সিগন্যাল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের উড়োজাহাজ।

সম্প্রতি দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচলের জন্য পরিত্যক্ত সাতটি বিমানবন্দর চালু করার কথা জানান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া। বিমানবন্দরগুলো হলো– বগুড়া, লালমনিরহাট, শমশেরনগর, ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, কুমিল্লা ও রাজধানীর তেজগাঁও  বিমানবন্দর। এগুলো চালু হলে পর্যটন শিল্পের বিকাশসহ দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে বলে মনে করেন বেবিচক চেয়ার‌ম্যান।

জানা যায়, কুমিল্লা শহরতলির দক্ষিণে তিন কিলোমিটার দূরে নেউরা, ঢুলিপাড়া, রাজাপাড়া, দিশাবন্দসহ কয়েকটি এলাকার ৭৭ একর জমিতে বিমানবন্দরটি স্থাপন করে যুক্তরাজ্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে (১৯৪১-৪২) অনেকটা তড়িঘড়ি করেই এটি নির্মাণ করা হয়। তবে বিমানবন্দরটি ১৯৯৪ সালে যাত্রী সংকটে বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে কুমিল্লার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচলের জন্য বেশ কয়েকটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স আগ্রহী। ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, দেশের অন্যতম প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা কুমিল্লা। এখানকার ইপিজেড, বিসিক, কয়েকশ শিল্পকারখানার সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ রাখতে হয়। এ ছাড়া কক্সবাজারের কাছে হওয়ায় পর্যটক যাতায়াতের সম্ভাবনাও রয়েছে। বিমানবন্দরটি চালু চলে ২৫ মিনিটে ঢাকা ও ৪০ মিনিটে কক্সবাজার যাতায়াত সম্ভব। বিমানবন্দরটি চালু করতে তারা বেশ কয়েক বছর যাবৎ সরকারের সঙ্গে কাজ করছেন বলে জানালেন তিনি।

কুমিল্লা বিমানবন্দরের সিএনএস প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে এখানে নেভিগেশন ফ্যাসিলিটিজ, ডিভিওআর, ডিএমই, ভিসেট, এয়ার কমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর, যাত্রীদের জন্য আলাদা কক্ষও আছে। শুধু উদ্যোগ নিয়ে রানওয়ে মেরামত ও কিছু যন্ত্রপাতি আনা হলেই অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল শুরু করা যাবে।

কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ডা. আজম খান নোমান জানান, বিমানবন্দরটি চালু হলে কুমিল্লার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে যোগ হবে নতুন মাত্রা। কুমিল্লা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব সমকালকে জানান, প্রাচীন জেলা কুমিল্লায় ক্রমেই ব্যবসা-বাণিজ্যের সমৃদ্ধি ঘটছে। বিমানবন্দর চালু হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী আসবে।

একটি সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের পুরো জমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের। তাই বিমানবন্দর চালু করতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেবিচককে যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে। কুমিল্লা বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, এ বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো চিঠি এখনও আসেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫ মে এ দেশে ইসলামপন্থার বিজয় হয়েছে: মাহমুদুর রহমান 
  • আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন চয়নিকা চৌধুরী
  • বিএনপির ‘রিকনসিলিয়েশন’ তত্ত্বের ব্যবহারিক তাৎপর্য
  • পাকিস্তান যেভাবে ভূপাতিত করল ভারতের ৫ যুদ্ধবিমান
  • যেভাবে ভূপাতিত ভারতের ৫ যুদ্ধবিমান
  • কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট থেকে আয় হলেও চালু হচ্ছে না অভ্যন্তরীণ রুট
  • শাপলা চত্বরের ঘটনা তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি এনসিপি নেতাদের
  • নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  • স্বাধীনভাবে চলতে মামলামুক্ত হতে তৎপর হেফাজত