সম্প্রতি অবৈধ অভিবাসন বন্ধ ও বৈধ অভিবাসন বাড়ানোর লক্ষ্যে ইতালি ও বাংলাদেশের মধ্যে যে ‘মাইগ্রেশন অ্যান্ড মোবিলিটি’ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক সই হলো, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে ইতালির চাহিদা অনুযায়ী বৈধ পথে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো সহজ হবে।

ইতালিতে দুই লাখের বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী আছেন, যাঁদের একাংশ বৈধ কাগজপত্র নিয়ে যাননি। গত বছরের নভেম্বরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.

তৌহিদ হোসেন ইতালিতে ৬০ হাজার পাসপোর্ট আটকে আছে, এই তথ্য জানিয়ে বলেছিলেন, ‘যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের সব দেশে বৈধ পথে অভিবাসনের অনেক সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। আমরা যদি অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে না পারি, তবে বৈধ পথে অভিবাসনের সুযোগ আমরা পাব না।’

এই সম্ভাবনাকে অবশ্যই আমাদের কাজে লাগাতে হবে। ভাগ্যান্বেষণে গিয়ে বহু বাংলাদেশি দালালদের খপ্পরে পড়ে বিদেশে গিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করেন। একশ্রেণির দালাল মোটা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের বিদেশে নিয়ে যান ভ্রমণ ভিসায়। এ অবস্থায় ধরা পড়লে তাঁরা ফিরে আসতে বাধ্য হন অথবা সেখানে পালিয়ে থাকতে হয়। 

সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, বৈধ পথে অভিবাসন বাড়াতেই এ উদ্যোগ। ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি বলেন, এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হবে। 

ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে বৈধ অভিবাসন বাড়ানোর লক্ষ্যে ইতিমধ্যে পর্তুগাল, অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের ছয়টি দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, যা বিদেশে বৈধ পথে শ্রমিক যাওয়াকে উৎসাহিত করবে। উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সম্প্রতি সৌদি আরব সফরকালে বাংলাদেশ থেকে  দক্ষ নারী ও পুরুষ কর্মী পাঠানো নিয়ে আলোচনা করেছেন। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যে সীমিতসংখ্যক ভ্রমণ ভিসা চালু করার ঘোষণা দিয়েছে, সেটাও বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সুখবর। 

এসব উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে, যাতে অবৈধ পথে কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়। একশ্রেণির জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অবৈধ পথে বিদেশে শ্রমিক পাঠিয়ে থাকে। এ কারণে ইতালিসহ জনশক্তি আমদানিকারক অনেক দেশের কাছে বাংলাদেশ বিপজ্জনক ভিসা তালিকায় আছে। 

ইউরোপীয় বর্ডার অ্যান্ড কোস্টগার্ড এজেন্সির (ফ্রন্টেক্স) তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মোট ৫৫ হাজার ২১৮ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন পথে অবৈধ উপায়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। দালালদের একটি চক্র ইউরোপের ‘স্টেপিং স্টোন’ (সহজ প্রবেশদ্বার) হিসেবে পরিচিত দেশ রোমানিয়া ও পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ছাত্র, ভ্রমণ ও ভিজিটিং ভিসার ব্যবস্থা করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। অভিবাসনপ্রত্যাশীরা তাঁদের পরিচিত বা পরিবারের সদস্য, যাঁরা ইতিমধ্যে অনিয়মিত পথে ইউরোপে অবস্থান করছেন, তাঁদের কথার ভিত্তিতে এ চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে পরে যাঁরা দেশে ফিরে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্তত ৮ শতাংশ এই চক্রের কথা নিশ্চিত করেছেন।

দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত একাধিক চক্র এটা করে থাকে। অবৈধ পথে কর্মী যাওয়ার কারণে অনেক দেশই বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের কর্তব্য হবে বৈধ পথে বিদেশে কর্মী পাঠানোকে উৎসাহিত করা এবং দালাল চক্রের প্রত্যেকের শাস্তি নিশ্চিত করা। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে যাতে কেউ বের না হতে পারে, তা–ও নিশ্চিত করতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউর প র ব ধ পথ সমঝ ত

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ককটেল-সদৃশ বস্তুর বিস্ফোরণ, তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ককটেল সদৃশ বস্তুর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে টিএসসিজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে টিএসসি এলাকার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশের ঘাসের মধ্যে এ বিস্ফোরণ ঘটে। তবে, কে বা কারা এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, সে ব্যাপারে জানা যায়নি। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে রাত এগারোটায় তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ।

বিস্ফোরণের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সিসিটিভির ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে জানার চেষ্টা করছি, কারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে।

এদিকে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল শেষে প্রক্টর অফিসের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ।

সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, আমরা মনে করছি ক্যাম্পাস নিরাপদ। কিন্তু কেউ যদি ক্যাম্পাসকে অনিরাপদ করার চেষ্টা করে, তাহলে এটা কৃত্রিম। আমরা মনে করি ক্যাম্পাসে ককটেল মেরে ডাকসু বন্ধ করা যাবে না। এটা অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আজকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসুর জন্য প্রস্তুত। আর আজই যখন এমন ঘটনা ঘটে, সেটা ডাকসু বন্ধ করার অপতৎপরতারই অংশ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ