দখলদারদের খপ্পরে পড়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে নান্দাইল উপজেলার বলদা বিল। প্রভাবশালীরা বিলের খাস জায়গা দখল করে সেখানে বড় বড় মৎস্য খামার তৈরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, এভাবে দখল হতে থাকলে আগামীতে বিল বলে আর কিছুই থাকবে না।
নান্দাইল উপজেলার উত্তরে সদর ইউনিয়নে বলদা বিলের অবস্থান। এ বিলের দক্ষিণে কাটলীপাড়া ও দাতারাটিয়া গ্রাম। উত্তরে দক্ষিণ রসুলপুর, উত্তর রসুলপুর, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কুমারুলী গ্রাম। পশ্চিমে দাতারাটিয়া ও দত্তগ্রাম, পূর্বে কাটলীপাড়া গ্রাম।
আগে বলদা বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। প্রতিবছর বিলে মাছ ধরার ‘হাইত’ উৎসব হতো। সময়ের বিবর্তনে পলি পড়ে বিলটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এখন আর বিলে তেমন পানি থাকে না, মাছও পাওয়া যায় না খুব একটা। এ সুযোগে বিলের খাসজমি দখল করে মাছ চাষের পুকুর তৈরি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে মুক্ত জলাশয়ে মাছের স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন আরও কমে যাবে। তা ছাড়া মাছ ধরা এবং বিক্রি করে সংসার চালানো পরিবারগুলো পেশা বদল করতে বাধ্য হবে।
স্থানীয়রা জানান, জলাশয়টি ভরাট হওয়ার পর থেকেই এলাকায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে। মাছ ধরে যারা সংসার চালাতেন তারা মাছ ধরতে না পেরে কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। আবার পানির অভাবে চাষাবাদে ঠিকমতো সেচও দিতে পারছেন না কৃষক। এই পরিস্থিতি বিল দখল করে পুকুর খনন করলে আরও সংকট তৈরি হবে। দখল রোধে কর্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। 
সরেজমিন দেখা গেছে, চারপাশের গ্রামগুলো বিল থেকে অনেক দূরে। পার থেকে যতটুকু দেখা যায়, তাতে খাল বাদে কোথাও পানির অস্তিত্ব নেই। বিলের দুই দিকে দুটি ভেকু (খননযন্ত্র) মৎস্য খামারের জন্য মাটি খনন করতে দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, বিলটির আয়তন প্রায় ২০০ একর। তাতে খাসজমির পরিমাণ হবে ৮০ থেকে ৯০ একর। আগে বেশি পানি থাকার কারণে বড় বড় মাছ পাওয়া যেত। শুকনো মৌসুমেও এখানে বোরো ধানের আবাদ সম্ভব হতো না। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, বিলটি ভরাট হয়ে গভীরতা হারাচ্ছে। ফলে কয়েক বছর ধরে শুকনো মৌসুমে বিলের জমিতে বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। বর্তমানে কেউ কেউ মাছ চাষের জন্য নিজেদের জমির পাশাপাশি বিলের খাসজমি দখল করে বড় বড় পুকুর খনন শুরু করেছেন। তাদের দাবি, প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন লোক এ ধরনের মৎস্য খামার তৈরির সঙ্গে জড়িত। এভাবে দখল হতে থাকলে আগামীতে বিলটির অস্তিত্ব থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খামার গড়ে তোলার কারণে বিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালটিও বন্ধ হওয়ার পথে। 
বিলে ঘাস কাটতে আসা কাটলীপাড়া গ্রামের সেকান্দর আলী জানান, অনেক দিন আগে থেকেই বিলে মৎস্য খামার তৈরি শুরু হয়েছে। সবাই নিজেদের জমিতে খামার তৈরি করছেন বলে প্রচার করলেও কেউ কেউ বিলের খাসজমিও দখল করে নিচ্ছেন। তবে জড়িতদের নাম-পরিচয় বলতে রাজি হননি তিনি। বিল পারে হাঁসের পাল নিয়ে আসা সুজন মিয়া বলেন, ‘বিল শুকিয়ে যাওয়ায় সবাই পুকুর তৈরি করছে।’
দখলদারদের মধ্যে কেউ কেউ স্থানীয় ভূমি অফিসের সহায়তায় বিলের খাসজমি নিজেদের নামে লিখে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিলে মৎস্য খামার তৈরি করছেন কাটলীপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য কনু মেম্বার। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আগে তাঁর বাপদাদার নামে বিলে থাকা ৬৩ কাঠা জমিতে একটি এবং পরে তাদের খরিদ করা ৭২ কাঠা জমিতে আরেকটি মৎস্য খামার দিয়েছেন তারা। বিলের ১ শতাংশ জমিও দখল করেননি বলে দাবি তাঁর। কারা দখল করছেন, তাও জানেন না বলে দাবি করেন তিনি।
হাসনাত মাহমুদ তালহা জানান, তিনি তাদের পৈতৃক জমিতেই খামার করেছেন। বিলের কোনো জমি দখল করেননি। তবে এ-সংক্রান্ত সংবাদ পত্রিকায় না প্রকাশের অনুরোধ জানান তিনি।
নান্দাইল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) আজিজুল হকের ভাষ্য, এরশাদ সরকার আমলে কেউ কেউ বিলের 
খাসজমি নিজেদের নামে কাগজপত্র করে দখল করেছেন বলে শুনেছেন তিনি। তবে এখন আর এমনটি হচ্ছে না।
নান্দাইল ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন জানান, আগে অনেকেই কাগজপত্র করে বিলের জমি দখলে নিয়েছেন বলে শুনেছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় নান্দাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর তিনি সরেজমিন দেখে মৎস্য খামার মালিকদের জমির মালিকানার কাগজপত্র নিয়ে অফিসে আসার জন্য বলেছেন। তারা এলে দলিলপত্র যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মৎস য খ ম র ত র ব ল র খ সজম ছ ন বল উপজ ল করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

রূপগঞ্জে আওয়ামী দোসরের কাছ থেকে দেড় যুগ পর জমি উদ্ধার

রূপগঞ্জে দীর্ঘ দেড় যুগ পর জমির মালিকানা ফিরে পেলেন প্রকৃত মালিক। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি মন্ত্রীদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলার বাগবেড় মৌজায় ১০৫ নং দাগের সাড়ে ২০ শতাংশ জমির মধ্যে ৬ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছিলেন মোজাম্মেল হক।

 আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে বিচার সালিশের মাধ্যমে প্রকৃত মালিকরা জমিটি ফিরে পায়। শনিবার (১০ মে) সকালে ফিরে পাওয়া জমিতে বাউন্ডারি দেয়াল দিয়েছেন বর্তমান মালিক রাশেদুল ইসলাম।

জমিটির প্রকৃত মালিক মৃত আবুল হোসেন। মৃত্যুর পর তার পাঁচ ছেলে ওই জমির মালিক হয়েছে। তাদের মোট জমির পরিমাণ সাড়ে ২০ শতাংশ এর মধ্যে ৬ শতাংশ জমি বেদখল ছিল।

জানা গেছে, রূপগঞ্জের বাগবেড় মৌজায় ১০৫ নং দাগের সাড়ে ২০ শতাংশ জমির প্রকৃত মালিক মৃত আবুল হোসেন। তার মৃত্যুর পরে মো. আরিফ সহ পাঁচ ছেলে ওই জমির মালিক হন। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তৎকালীন সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর অনুসারী পরিচয় দিয়ে মোজাম্মেল হক ওরফে মগা এই জমিটি জোরপূর্বক দখল করে নেয়।

 দীর্ঘ ১৭ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার সরকারের পতন হলে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি নিয়ে বিচার সালিশ করে দখলকৃত জমিটি ফিরে পায় প্রকৃত মালিকের অংশীদাররা। পরে জমির প্রকৃত মালিক মৃত আবুল হোসেনের পাঁচ ছেলে এই জমি রাশেদুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে দেয়। 

এ বিষয়ে মৃত আবুল হোসেন মিয়ার ছেলে মো. আরিফ বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর মোজাম্মেল হক ওরফে মগা জোরপূর্বক আমাদের ৬ শতাংশ  জমি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সেই জায়গা পুনরায় মেপে জমি ফিরে পেয়েছি। পরে সেই জায়গা আমরা রাশেদুল ইসলামের কাছে বিক্রি করি। 

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে অবৈধভাবে তারা আমাদের জমি দখল করে দোকানপাট ভাড়া দিয়েছে। এতে আমাদের প্রায় এক থেকে ২ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। এটি আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। 

এর আগে, গত শনিবার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, উভয়পক্ষের আইনজীবি, উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও এলাকার ব্যক্তিবর্গদের সাথে নিয়ে বিচার শালিস বসে। তখন মোজাম্মেল হকের আইনজীবি জমির মালিকানা নিয়ে সঠিক কাগজপত্র দাখিল করতে পারেননি।

তাছাড়া ক্রয়কৃত জমির পরিমাণ মোজাম্মেল হকের বাউন্ডারীর ভিতরে বেশি থাকায় রাশেদুল ইসলামকে বৈধতা হিসেবে বাকি জমি বুঝিয়ে দেন। পরে শনিবার থেকেই রাশেদুল ইসলাম তার জমিতে বাউন্ডারী দেওয়াল নির্মাণ শুরু করেন এবং প্রাপ্ত ফিরে পান।

বিচার শালিসে উপস্থিত ছিলেন- রাশেদুল ইসলামের আইনজীবি রিপন শর্মা, মোজাম্মেল হকের আইনজীবি মহসিন প্রধান, রূপগঞ্জ উপজেলা যুবদল নেতা আবু মোহাম্মদ মাসুম, রূপগঞ্জ জিয়া মঞ্চের সভাপতি জজ মিয়া, শহিদুল্লাহ মিয়া, ফজুল হক মিয়া, নুর মোহাম্মদ, জমির মালিক রাশেদুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক (মগা) সহ আরো অনেকে।

বিচার শালিসে উভয়পক্ষের কাগজপত্র দেখে সর্ব সম্মতিক্রমে রাশেদুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হকের জায়গা পরিমাপ করে পৃথকভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়। পরে একটি বাউন্ডারী দেওয়াল ভেঙে ওই সম্মত্তির বিরোধ সমাধান করা হয়।

বিচার শালিসে থাকা জজ মিয়া বলেন, বাগবেড় এলাকার একটি জমি নিয়ে রাশেদুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হকের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। পরে বিষয়টি সমাধানের জন্য উভয়পক্ষের লোকজন আইনজীবিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বিচার শালিস বসে। উভয়পক্ষের কাগজপত্র দেখে সঠিক সমাধান দেয়া হয়েছে। এ থেকে ওই জমি নিয়ে কোনো পক্ষের মধ্যে বিরোধ থাকবে না। 

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিরোধপূর্ণ জমির সমাধানের জন্য উভয়পক্ষকে আইনজীবি নিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়। পরে জমির কাগজপত্র পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষের আইনজীবির মাধ্যমে সমাধান করা হয়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রূপগঞ্জে আওয়ামী দোসরের কাছ থেকে দেড় যুগ পর জমি উদ্ধার
  • শরীয়তপুরের থানায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ
  • নারী সার্জেন্টের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীকে তাৎক্ষণিক কারাদণ্ড
  • নারী পুলিশ সার্জেন্টের সঙ্গে দুর্ব্যবহার: দুই যুবককে কারাদণ্ড