ফরিদপুরে পেনশনের টাকা ব্যাংক হিসাবে যুক্ত হয়ে আবার ফেরত যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ফরিদপুর সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পেনশনভোগী ৪৯ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুর সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ইনচার্জ) শেখ আমির খসরু।

বিষয়টিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে শেখ আমির খসরু বলেন, ‘ডাবল এন্ট্রি’ হওয়ায় এক ব্যাংকের ৪৯ গ্রাহক এ সমস্যায় পড়েছেন। 

এ ঘটনার অন্যতম ভুক্তভোগী ফরিদপুরের প্রবীণ সাংবাদিক সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো.

শাহজাহান (৮০)। তিনি ফরিদপুর শহরের আলীপুর মহল্লার বাসিন্দা। ২০০২ সালের ৩১ জুলাই শরীয়তপুরের নড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে অবসরে যান। সোনালী ব্যাংকের ফরিদপুর করপোরেট শাখায় তাঁর হিসাব নম্বরে (অ্যাকাউন্টে) গত ২৩ বছর ধরে অবসরকালীন ভাতা, উৎসব ভাতাসহ আনুষঙ্গিক টাকা ঠিকমতো জমা হয়। গত ২৩ বছরে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। কিন্তু গত ৪ মে তাঁর মোবাইল ফোনে আসা দুটি মেসেজ থেকে তিনি একাধারে বিস্মিত ও শঙ্কিত হয়ে পড়েন। 

অধ্যাপক শাহজাহান জানান, গত ৪ মে তাঁর মোবাইল ফোনে আসা খুদে বার্তা থেকে তিনি জানতে পারেন, সোনালী ব্যাংকে তাঁর হিসাব নম্বরে পেনশন বাবদ পাওয়া এপ্রিল মাসের টাকা জমা হয়েছে। এর কয়েক মিনিট পরে মোবাইল ফোনে আসা আরেকটি খুদে বার্তা থেকে তিনি জানতে পারেন, পেনশন বাবদ যে পরিমাণ টাকা তাঁর হিসাবে যুক্ত হয়েছিল, তা কেটে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে পরদিন ৫ মে তিনি ব্যাংকে যোগাযোগ করলে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা তাঁকে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তিনি হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী ৬ মে তাঁর হিসাব থেকে ১ হাজার টাকা তোলেন এবং ব্যাংক থেকে তাঁর হিসাব নম্বরের একটি ‘স্টেটমেন্ট’ সংগ্রহ করেন। সে ‘স্টেটমেন্ট’ থেকেও দেখা যায়, গত ৪ মে পেনশনের টাকা তাঁর হিসাব নম্বরে জমা হওয়ার পর আবার কেটে নেওয়া হয়েছে এবং নতুন করে কোনো অর্থ তাঁর হিসাবে যুক্ত হয়নি।

পেনশন যুক্ত না হওয়া সোনালী ব্যাংকের ৪৯ জন গ্রাহকের অনেকেরই সংসার চলে পেনশনের সামান্য টাকায়। এ ছাড়া সামনে  ঈদুল আজহা। পেনশনের টাকা না এলে ঈদ বোনাসও আটকে যাবে। এ ভাবনা ভুক্তভোগীদের শঙ্কিত করে তুলেছে বলে জানান  সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা।

ফরিদপুর সোনালী ব্যংক করপোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ইনচার্জ) শেখ আমির খসরু জানান, শুধু অধ্যাপক মো. শাহজাহানের ক্ষেত্রেই নয়, একই সমস্যায় পড়েছেন সোনালী ব্যাংকের ফরিদপুর করপোরেট শাখায় আরও ৪৯ জন পেনশনভোগী। বিষয়টি নিয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। দু-একদিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদী। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: করপ র ট শ খ কর মকর ত প নশন র ক ত হয় সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

ফুটবলার প্রতিমা এগিয়ে যাচ্ছেন, পাশে আছে কিশোর আলোসহ অনেকে

একটি পরিবারের ওপর নেমে আসা অপ্রত্যাশিত চাপ আর হতাশাকে দূর করেছে একটি সংবাদ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার টাকার জন্য। প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিলেছে সহযোগিতা, পরিশোধ হয়ে গেছে বিকেএসপির বকেয়া।

এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডা। তাঁদের ওপর থেকে নেমে গেছে বড় ধরনের আর্থিক চাপ।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেএসপি প্রতিমার অভিভাবককে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছিল, তাঁদের মেয়ের বকেয়া বেতন ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা। সেই চিঠিতেই সতর্ক করে বলা হয়, ছয় মাসের বেশি বেতন বকেয়া থাকলে চূড়ান্ত সতর্কীকরণ, আর ১২ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে বহিষ্কারের বিধান আছে। অর্থাভাবে যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল প্রতিমার ভবিষ্যৎ, ঠিক সেই সময় ১১ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয় তাঁদের পরিবারের সংগ্রামের গল্প।

আরও পড়ুনবকেয়া বেতন চেয়ে বিকেএসপির চিঠি, ফুটবলার প্রতিমার পড়াশোনা বন্ধের পথে ১১ অক্টোবর ২০২৫

প্রতিবেদনটি পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিশোর আলোর পক্ষ থেকে প্রতিমার বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই দিনই বিকেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি প্রতিমা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী সহায়তা করেন আরও ১০ হাজার টাকা। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার দেন পাঁচ হাজার টাকা ও একটি ফুটবল।

সহায়তা পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে। মুঠোফোনে প্রতিমা বলেন, ‘এখন আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। বিকেএসপির পাওনা ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। আমি ভালো আছি, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা আর অনুশীলন করছি।’

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রতিমা মুন্ডা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে কিশোর আলোর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ