মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে স্বপ্রণোদিত মন্দা ও সরবরাহব্যবস্থা ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে ৯০ দিনের বিরতি দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, উভয় দেশই উচ্চ শুল্কের পথ থেকে ফিরে আসবে। শুল্ক ও পাল্টা শুল্কের এই খেলায় বিশ্বের প্রধান দুই অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের শুল্কযুদ্ধে এই নাটকীয় বিরতি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক অন্তত গত এক মাসের পরিস্থিতি বিবেচনায়। এ সমঝোতা ওয়াল স্ট্রিটে আশাবাদ সঞ্চার করেছে। আশা জাগিয়েছে, শুল্ককেন্দ্রিক দুঃস্বপ্ন হয়তো এড়ানো সম্ভব হবে।

অর্থনীতিবিদেরা অবশ্য বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুরোপুরি বিপদমুক্ত—এ কথা এখনই বলা যাবে না। মন্দার ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে, যদিও অর্থনৈতিক পতনের আশঙ্কা কিছুটা কমেছে।

শুল্ক এখনো বেশি। গত কয়েক দশকে এমন উচ্চ শুল্ক ছিল না। অনিশ্চয়তা এর চেয়ে বেশি। আস্থা ও বাণিজ্যপ্রবাহের যে ক্ষতি হয়েছে, তা রাতারাতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

এ ছাড়া ভবিষ্যতে কী ঘটবে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এত অল্প সময়ে একের পর এক অর্থনৈতিক ধাক্কার পর কোনো আধুনিক অর্থনীতি কীভাবে তা সামাল দেয়, তার নজির নেই।

আমেরিকান অ্যাকশন ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকানদের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ডগলাস হোল্টজ-ইকিন বলেন, ‘আমরা এখনো বিপদ কাটিয়ে উঠিনি।’ অনেকে বলছেন, ট্রাম্প উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করেছেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। এখনো যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্বহার শতবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুল্ক অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যে যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল, তা ছিল একেবারে অস্বাভাবিক। এটা কার্যত চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একপ্রকার নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো। সরবরাহব্যবস্থা–বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছিলেন, এতে দোকানের তাক খালি হয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা হতে পারে।

বিশ্লেষকে বলেন, ট্রাম্পের এই ফিরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে আপাতত রক্ষা করেছে। তাঁরা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন যখন ১৪৫ শতাংশ শুল্ক থেকে সরে আসে, তখন বোঝা যায় যে তারা উপলব্ধি করেছে, এই হারে শুল্ক থাকলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।

ট্রাম্প বেশ কিছু ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, যেমন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘শিশুদের আসলে কতগুলো পুতুল দরকার?’ তারপরও দোকানের তাক খালি হয়ে যাওয়া বা বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন তিনি। ট্রাম্প প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন।

‘শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষই সৌভাগ্যক্রমে ক্রিসমাসটা বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে’ বলে মনে করেন ব্লিকলি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা পিটার বুকভার। তাঁর মতে, ‘ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট ব্যবসাগুলো হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছিল’; শেষমেশ ট্রাম্প তা শুনেছেন এবং গুরুত্ব দিয়েছেন।

সোমবার শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তের পরও চীনের পণ্যে এখনো ৩০ শতাংশ করা হলেও—কমপক্ষে ৯০ দিনের জন্য—এই হার এখনো চলতি বছরের শুরুর তুলনায় অনেক বেশি।

চীন ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যচুক্তির কাঠামো অনুযায়ী মুডিজ অ্যানালিটিকস হিসাব করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর শুল্কহার ২১ দশমিক ৩ শতাংশ কমে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তারপরও এই হার এখনো ১৯১০ সালের পর সর্বোচ্চ।

মুডিজ অ্যানালিটিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি সিএনএনকে বলেন, এ হারে শুল্ক থাকলে আগামী এক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার ১ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে। শুধু তা–ই নয়, মোট দেশজ উৎপাদনও (জিডিপি) একই হারে কমতে পারে।

কমেছে মন্দার আশঙ্কা

মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ কিছুটা প্রশমিত হওয়ায় মন্দার আশঙ্কা কিছুটা কমেছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস। মুডিজ অ্যানালিটিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরে মন্দার আশঙ্কা ৪৫ শতাংশ, যদিও তা আগে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল।

জান্ডি আরও বলেন, ‘অর্থনীতির জন্য বছরটা কঠিন হবে, যদিও মন্দা এড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে। তবে এটাও ঠিক, অর্থনীতি এখন যেকোনো নতুন ধাক্কায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’ অর্থাৎ বাণিজ্যযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ‘ভুল করার অবকাশ’ বা সহনশীলতা অনেক কমিয়ে ফেলেছে।

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জাস্টিন উলফার্স এক্সে লেখেন, ‘এটা ঠিক, আজকের দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি ও অর্থনীতির সম্ভাবনা আগের গত কয়েক দিন আগের তুলনায় অনেক ভালো দেখাচ্ছে।’ আবারও এটাও ঠিক, ‘বর্তমান পরিস্থিতি এখনো ট্রাম্পের অভিষেক দিবসের চেয়ে অনেক খারাপ।’ এই দ্রুত পরিবর্তন আর অস্থিরতাই ট্রাম্প ২.

০ যুগের বৈশিষ্ট্য।

কিন্তু অনিশ্চয়তা শেষ হচ্ছে না। ট্রাম্প নিজেও স্বীকার করেছেন, চীনের পণ্যে শুল্ক আবার বাড়তে পারে। ৯০ দিনের মধ্যে চুক্তি না হলে শুল্ক আবার ১৪৫ শতাংশে ফিরে যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘না, তবে অনেকটাই বেড়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত চুক্তি একটা হবেই।’

সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি, যদিও উত্তেজনা কিছুটা কমেছে। খাতভিত্তিক শুল্ক (যেমন কাঠ, সেমিকন্ডাক্টর, ওষুধ, খনিজ ইত্যাদি) আরোপের সম্ভাবনা এখনো আছে। সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ, যেমন বিমান ও যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর নিরাপত্তা তদন্ত ভবিষ্যতে আরও শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দেয় বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

এসব অনিশ্চয়তার কারণে অর্থনীতিবিদ জো ব্রুসুয়েলাস আগামী এক বছরে মন্দার ঝুঁকি দেখছেন ৫৫ শতাংশ। ডয়েচে ব্যাংকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি কিছুটা নমনীয় হয়েছে। ফলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কিছুটা বেড়েছে। কমেছে বাণিজ্যযুদ্ধজনিত অনিশ্চয়তা।

অভূতপূর্ব অনিশ্চয়তা

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পারস্পরিক শুল্ক হ্রাস কিছুটা স্বস্তি আনলেও বাণিজ্য নীতিগত অনিশ্চয়তা সম্প্রতি রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্রে বলা হচ্ছে, ১৯৬০-এর দশকের পর এই অনিশ্চয়তা সর্বোচ্চ। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এটা ‘অচল করে দেওয়ার মতো অনিশ্চয়তা’।

বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, এটা সম্পূর্ণ কৃত্রিম বা তৈরি করা সংকট। ব্যবসা ও বিনিয়োগ মহলে এখনো আতঙ্ক রয়ে গেছে—পরবর্তী ধাক্কা কবে আসবে, তা নিয়ে। শুল্কনীতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা বাজারে স্থায়ীভাবে আস্থার অভাব তৈরি করেছে। এখন সবার প্রশ্ন, এই অস্থিরতা কি সাময়িক, নাকি নতুন কোনো অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত সামনে আসছে?

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র আশঙ ক মন দ র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

গৃহকর্মী সরবরাহ করে হ্যালো টাস্কের বছরে আয় এখন ১ কোটি টাকা

সাততলা ভবন থেকে নিচে নেমে কিছু কেনার চিন্তা থেকেই যাত্রা শুরু হয় একটি স্টার্টআপের। প্রথমে এই স্টার্টআপ ছিল বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থালি পণ্য আনা-নেওয়া বা ফ্যামিলি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেবা প্রদানের। শুরুতে এটির নাম ছিল ‘রোবট ডাকো’। অর্থাৎ আপনার বাসার জন্য কোনো পণ্য কিনতে হবে, তাহলে রোবট ডাকো থেকে লোক ভাড়া করে সেই কাজ করা। এই সেবা নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানো হয়, তখন অনেকেই এটিকে গৃহকর্মী সরবরাহের সেবা মনে করতে থাকেন। গ্রাহকেরা তাই গৃহকর্মীর খোঁজে রোবট ডাকোতে খোঁজ নিতে শুরু করেন। আর তাতেই নতুন ব্যবসার ধারণা পেয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর রোবট ডাকো সেবা বদলে চালু করে ‘হ্যালো টাস্ক’ নামে গৃহকর্মী সহায়তা সেবা। এই উদ্যোগ দুই ভাই মাহমুদুল হাসান ও মেহেদি স্মরণের চেষ্টার ফসল।

২০১৮ সালে হ্যালো টাস্ক নামের নতুন স্টার্টআপটির যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি তিন কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। তবে ২০২২ সালে এসে প্রতিষ্ঠানটি সিদ্ধান্ত নেয় বিনিয়োগ কমিয়ে মুনাফার লক্ষ্যে হাঁটবে তারা। তাই শুরুতে স্টার্টআপ হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও এখন এটিকে নিয়মিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করছে এটির দুই উদ্যোক্তা। প্রতিষ্ঠানটিতে এখন নিয়মিত কাজ করছে ১৬ জন কর্মী। মুঠোফোনের হ্যালো টাস্ক নামে পাওয়া যায় প্রতিষ্ঠানটির অ্যাপ। এই অ্যাপ ব্যবহার করে ঢাকার মধ্যে যেকেউ গৃহস্থালি নানা কাজের জন্য ভাড়া করতে পারেন গৃহকর্মী। ঘণ্টা ও মাসিক—দুই পদ্ধতিতে এই সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

যেভাবে শুরু

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য ২০১৭ সালে মেহেদি স্মরণ ব্যবসায়ী বাবার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নেন। সেই টাকায় চালু করেন এই স্টার্টআপ। এখন তাদের বার্ষিক আয় কোটি টাকার কাছাকাছি। ২০১৮ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের উদয়ন নামের একটি অর্থায়ন প্রকল্প থেকে ৪০ লাখ টাকার ঋণসহায়তা পায় স্টার্টআপটি। শুরুতে রোবট ডাকো নামে তাঁরা তাঁদের স্টার্টআপটি পরিচালনা শুরু করেন। পরে ভোক্তাদের গৃহকর্মী খোঁজার আগ্রহ দেখে চালু করা হয় হ্যালো টাস্ক।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগ নিয়ে কথা হয় সহপ্রতিষ্ঠাতা মেহেদি স্মরণের সঙ্গে। তিনি জানান, একসময় মোহাম্মদপুরের ছিল তাঁর বাসা। সেখানে রাস্তায় আসা-যাওয়ার পথে অনেক পোশাক কারখানা চোখে পড়ত। মাসের শুরুতে অনেক নারী শ্রমিক কাজের সন্ধানে এসব কারখানায় ভিড় করতেন। কিন্তু বেশির ভাগই চাকরি পেতেন না। চাকরি না পাওয়া এসব নারী শ্রমিককে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি তখন মাথায় আসে। আবার মানুষের গৃহকর্মী নিয়ে ব্যাপক আগ্রহের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল। তাই শুরুতে চাকরি খোঁজে থাকা ১০ শ্রমিককে মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এসব গৃহকর্মীর কর্মস্থলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কেনা হয় দুটি পুরোনো মোটরসাইকেল। ২০১৮ সালে প্রতিদিন গৃহকর্মীর খোঁজে ৭০০ থেকে ৮০০ আবেদন আসতে শুরু করল। একসময় এটি পূরণ করতে গিয়ে গৃহকর্মীর সংকট দেখা দেয়। তখন প্রতিষ্ঠানটির জন্য আশার আলো হয়ে ওঠে নারী মৈত্রী নামের বেসরকারি অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান। নারী মৈত্রী, অক্সফাম, ইউসেপ স্কুল ও বাংলাদেশ শ্রম গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিলস) মতন কিছু অলাভজনক প্রতিষ্ঠান মিলে ‘সুনীতি প্রজেক্ট’ নামের একটি গণসাক্ষরতা প্রকল্পের আয়োজন করেছিল। সেখানে প্রায় ১৬ হাজার নারীকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এ প্রকল্পে হ্যালো টাস্কের দায়িত্ব ছিল প্রশিক্ষিত নারী কর্মীদের চাকরির ব্যবস্থা করা।

মেহেদি স্মরণ জানান, এসব প্রশিক্ষিত কর্মী থেকে ৫০ জন গৃহকর্মী নিয়োগ দেয় হ্যালো টাস্ক। মাসিক বেতন ধরা হয় ১২ হাজার টাকা। এভাবে কয়েক বছর ব্যবসা চলতে থাকে। তারপর আসে করোনা মহামারি। মহামারির দুই বছর তাঁদের ব্যবসা ধাক্কা খায়। এ সময় প্রতিষ্ঠানটি তাদের অ্যাপ, ব্যবসার মডেল ও সেবার মানোন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। তৈরি করে নিজেদের আইভিআর (ইন্টারঅ্যাকটিভ ভয়েস রেসপন্স) প্রযুক্তি। মেহেদি স্মরণ আরও জানান, দেশে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এখনো লাভবান প্রতিষ্ঠান না হলেও চলতি বছরের জুলাইয়ে না লাভ, না লোকসান (ব্রেক ইভেন) পর্যায়ে পৌঁছে যাব।

উদ্যোক্তারা জানান, আইভিআর প্রযুক্তি চালুর ফলে একজন গ্রাহক সেবার জন্য আবেদন করলে সরাসরি গৃহকর্মীর মুঠোফোনে কল চলে যায়। গৃহকর্মীরা তাঁদের ফোনে ১ চেপে কাজের আবেদন গ্রহণ করতে পারেন। তারপর মেসেজের মাধ্যমে কোথায় ও কখন যেতে হবে, বিস্তারিত তথ্য তাঁদের মুঠোফোনে চলে যায়। নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে একদিকে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্ষমতা বেড়েছে, অন্যদিকে কমেছে খরচ। গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ প্রযুক্তিতে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।

কোথায়, কীভাবে ও কত টাকায় সেবা

প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তারা জানান, বর্তমানে রাজধানীতে প্রতি মাসে তিন হাজারের বেশি সেবা প্রদান করছে তারা। প্রায় ১ হাজারের বেশি পাড়া বা মহল্লায় গ্রাহক সেবা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে তাঁদের অ্যাপে ১ লাখ ৩০ হাজার নিবন্ধিত গ্রাহক রয়েছেন। এখন পর্যন্ত হ্যালো টাস্ক ছয় লাখের বেশি সেবা দিয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বেশি গ্রাহক রয়েছে বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, গুলশান ও বনানী এলাকায়। প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধিত মোট গ্রাহকের ৩০ শতাংশ বসুন্ধরা এলাকার বাসিন্দা।

হ্যালো টাস্কের নিবন্ধিত গৃহকর্মীর সংখ্যা এখন প্রায় ৪৫০ জন। যারা ঘণ্টা ও মাসিক ভিত্তিতে গৃহস্থালি কাজের সেবা দিয়ে থাকেন। একজন গ্রাহক তিন ঘণ্টার জন্য একজন গৃহকর্মীর সেবা নিতে হলে দিতে হবে ৬৯০ টাকা। আর দৈনিক তিন ঘণ্টা করে মাসিক সেবা নিতে দিতে হবে ৭ হাজার ৮০০ টাকা। তবে গ্রাহকদের মধ্যে ৭০ শতাংশ দৈনিক সেবা নেন।

উদ্যোক্তারা জানান, প্রতিদিন একজন গৃহকর্মী আট ঘণ্টা কাজ করলে মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। গ্রাহকেরা চাইলে মাত্র ১০ টাকা দিয়ে সেবা নেওয়ার আবেদন করতে পারেন। গৃহকর্মী পছন্দ না হলে দ্রুত পরিবর্তনেরও সুবিধা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশে ৬০ লাখ টন গম আমদানির প্রয়োজন: খাদ্য উপদেষ্টা
  • জরুরি চিকিৎসাসামগ্রীর সংকট, কিনে আনতে হচ্ছে বাইরে থেকে
  • জেটিতে আধিপত্য নিয়ে হামলা-আগুন আহত ৩
  • কলাপাড়ায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-আগুন, আহত ৩    
  • হবিগঞ্জে টিসিবির চালে ভেজাল, তদন্তে বেরিয়ে এল খাদ্য কার্যালয়ের অনিয়ম
  • নড়াইল জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন
  • গৃহকর্মী সরবরাহ করে হ্যালো টাস্কের বছরে আয় এখন ১ কোটি টাকা
  • ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পর আলোচনায় সিন্ধু পানিচুক্তি
  • যুদ্ধের আবহে এক সপ্তাহে পাকিস্তানের শেয়ার সূচক কমেছে ৬,৯৩৯ পয়েন্ট