শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মশালমিছিল, উপাচার্য–প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি
Published: 14th, May 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এস এম শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে মশালমিছিল করেছে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’। বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে? সাম্য সাম্য; ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে?’ স্লোগান দেন।
এ সময় সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে উপস্থিত ছিলেন সাম্যের সহপাঠী ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। মিছিলে বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠনের নেতা–কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘একটা লাশ দেখলাম তোফাজ্জলের। যে তোফাজ্জলের মৃত্যু হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে। একটা লাশ দেখলাম গাছে ঝুলন্ত অবস্থায়। একটা লাশ দেখলাম গতকাল রাতে। আমাদের ক্যাম্পাসের, আমাদের বড় ভাই সাম্যের লাশ। তাঁকে হত্যা করল বাইরের কিছু উগ্র সন্ত্রাসী মানুষ।’
প্রশাসন গত রাতে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের পরেও আজ স্বাভাবিকভাবে শ্রেণিকক্ষে কার্যক্রম চালিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি পরীক্ষা কার্যক্রম এমনকি তাদের যে নিয়মিত খেলাধুলার কার্যক্রম, সেটি পর্যন্ত চালিয়ে গেছে।’
স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন শাহরিয়ার। তাঁর সহপাঠী আবিদুর রহমান মিশু ছাত্রদলের মাস্টারদা সূর্য সেন হল শাখার সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক। মশালমিছিলে অংশ নেওয়া আবিদুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাসিনামার্কা শোক দিবস ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলাম।’ সংক্ষিপ্ত এই সমাবেশে আর কেউ বক্তব্য দেননি।
আরও পড়ুনশাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিলেন প্রত্যক্ষদর্শী বন্ধু৩ ঘণ্টা আগেমশালমিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শুরু হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে দিয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদ হয়ে ভিসি চত্বরে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড র উপ চ র য
এছাড়াও পড়ুন:
বিনয়ী, প্রতিবাদী সাম্যের হত্যা মানতে পারছে না কেউ
দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) ছিলেন সদা বিনয়ী। সিরাজগঞ্জের বেলকুচির সড়াতৈল মধ্যপাড়া গ্রামের সন্তান সাম্যর পরিবারেরই এলাকায় ঝামেলায় জড়ানোর রেকর্ড নেই। এমন ভদ্র ছেলে হত্যার শিকার হতে পারেন– তা মানতেই পারছেন না গ্রামবাসী।
বন্ধু-পরিচিতজনের কথা– নম্র হলেও যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে সাম্য থাকতেন এগিয়ে। তাঁর এই গুণের কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও।
গতকাল বুধবার এক ফেসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ লেখেন, ‘২০১৯ সালের দিকে ক্যাম্পাসে গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কিংবা শিক্ষার্থীদের যে কোনো যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে যেসব মুখ সবসময় দেখা যেত, সাম্য তাদের একজন। মশিউর আমিন শুভ আর Shahriar Alam Shämmo– এই দু’জন সবসময় একসাথে আসতো। প্রথম বর্ষ থেকেই সাম্য ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং অসম্ভব ভদ্র একজন ছেলে। সেই ছোট ভাই সাম্য আজ আর আমাদের মাঝে নেই– এটা মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর।’
ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সাম্য ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক। গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেলে হলে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত হন সাম্য। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সাম্যের বড় ভাই শহিদুল আলম সৈকতের মামলায় গতকাল তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে গণমাধ্যমে সাম্যর মৃত্যুর খবর জেনে সকাল থেকেই তাঁর বেলকুচি উপজেলার সড়াতৈল গ্রামের বাড়িতে ভিড় করেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। বুধবার দুপুরে সরেজমিন সাম্যর গ্রামের বাড়িতে দেখা যায়, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর ভিড়। তাদের সবারই আফসোস– এমন একটি ছেলে অকালে ঝরে গেল!
সাম্যর ছোট চাচা কায়সারুল আলম কায়েস জানান, তাঁর বড় ভাই ফারহাদ হোসেনের চার ছেলের মধ্যে সবার ছোট ছিল সাম্য। ভাতিজারা গ্রামে বড় হলেও এখন সবাই থাকে ঢাকায়। ভাই ফরহাদ বিদেশ থেকে ফিরে ব্যবসা সূত্রে ঢাকায় থাকেন। ২০১৫ সালে সাম্যর মা মারা যান।
তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের প্রায় সবাই উচ্চশিক্ষিত। আমাদের বংশে উচ্ছৃঙ্খল কোনো সদস্য নেই। আমরা কখনও এলাকায় মারামারি দূরে থাক, কোনো ঝামেলাতেই জড়াইনি। তার পরও সাম্যর মতো নম্র-ভদ্র একটা ছেলে যে হত্যার শিকার হতে পারে, তা মানাই যায় না। আমরা এ হত্যার উপযুক্ত বিচার চাই।
ওই গ্রামের মামুন বিশ্বাস বলেন, সাম্যদের পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত, ঢাকায় থাকেন। ঈদ ও বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে তারা গ্রামে আসেন। সাম্যকে মেধাবী হিসেবে দেখেছি। এলাকার কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলার খবর কখনও শুনিনি। এমন মেধাবী একটা ছেলে এভাবে ঝরে যাবে, আমরা কখনও ভাবিনি।
সাম্য হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল বুধবার সিরাজগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা ছাত্রদল সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়েস প্রমুখ।
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রথম জানাজা শেষে সন্ধ্যায় সাম্যর মরদেহ সড়াতৈল গ্রামে নেওয়া হয়। এ সময় স্বজনের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সাম্যর বড় ভাই আমিনুল ইসলাম সাগর এ সময় বলেন, আমরা তো কারও কখনও ক্ষতি করিনি। এমনকি আমার ভাই তো কারও সঙ্গে কখনও ঝামেলায় জড়ায়নি। তাহলে কেন এভাবে তাকে অকালে প্রাণ হারাতে হলো।