চিকিৎসক-জনবল সংকট সেবা পাচ্ছে না রোগী
Published: 15th, May 2025 GMT
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসক ও জনবল সংকটে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ রোগীরা। জেলা সদরের একমাত্র হাসপাতালে তীব্র চিকিৎসক সংকটের কারণে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে।
২৫০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে ওষুধেরও তীব্র সংকট চলছে। সরকারিভাবে সরবরাহকৃত ওষুধগুলো হাসপাতালে না পেয়ে বাইর থেকে কিনে খেতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওষুধ সংকট সহসাই কাটছে না। কারণ কেন্দ্রীয়ভাবে ওষুধের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে তা রোগীদের দেওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে বর্তমানে ৫৭টি চিকিৎসক ও কর্মকর্তার পদ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সেখানে কর্মরত রয়েছে মাত্র ২৭ জন। কাগজে কলমে ২৭ জন হলে প্রকৃত সংখ্যা আরও কম। এর মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসক ছুটিতে থাকলেও মেহেদী হাসান নামে এক চিকিৎসক দীর্ঘদিন যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। হাসপাতালটিতে বর্তমানে সিনিয়র কনসালট্যান্ট গাইনি পদে ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ইএনটি পদে ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজি পদে ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ইউরোলজি পদে ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট নেফরোলজি পদে ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট অর্থো সার্জারি ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট চর্ম ও যৌন পদে ১ জনের পদ খালি রয়েছে।
এ ছাড়াও জুনিয়র সিনিয়র কনসালট্যান্ট চক্ষু, রেডিওলজিস্ট, অর্থো সার্জারি, শিশু, প্যাথলজি, মেডিসিন, গাইনি, কার্ডিওলজি, মানসিক, গ্যাস্ট্রোলজি পদে ১টি করে পদ খালি রয়েছে। অ্যানেসথেটিস্ট পদে ৪টির মধ্যে ১টি খালি রয়েছে, মেডিকেল অফিসার প্যাথলজিস্ট পদে ২টি, রেজিস্ট্রার ১টি, মেডিকেল অফিসার রক্ত ১টি ও মেডিকেল অফিসার ১৪টির মধ্যে ৫টি পদ খালি রয়েছে।
গত বুধবার দুপুরে হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়– চিকিৎসক সংকটের কারণে অনেক রোগীই ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না। অনেক রোগী চিকিৎসকের সেবা না পেয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকেও চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কথা হয় শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি নুছরাত আক্তার নামে এক অভিভাবকের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিন একবার একজন চিকিৎসক এতে তাঁর শিশুকে দেখে যান। কিন্তু পরবর্তী সময়ে চিকিৎসকের প্রয়োজন হলে আর দেখা মেলে না।
রফিকুল ইসলাম নামে অপর এক ভুক্তভোগী জানান, বর্তমানে হাসপাতালটি চিকিৎসক সংকটে ভুগছে। সামান্য কাটাছেঁড়া নিয়ে হাসপাতালে এলেই তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অথবা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দিচ্ছে।
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল হক সরকার বলেন, জেলা সদর হাসপাতাল হওয়ায় এখানে রোগীর চাপ অনেক বেশি। তবে তারা আন্তরিকভাবে যতটুকু সম্ভব সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালে ওষুধের সংকটের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে হাসপাতালে ওষুধ না আসায় তা রোগীদের মধ্যে দেওয়া যাচ্ছে না।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্য সমঝোতায় ভারতের সুবিধা কমছে কি
চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে আপাতত ক্ষান্ত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ৯০ দিনের জন্য উভয় দেশই উল্লেখযোগ্য হারে শুল্ক কমিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির আলোচনায় ভারত কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সেই সঙ্গে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের ঘোষণার পর ভারতে যে হারে বিনিয়োগ আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল, তাতেও ভাটা পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প পূর্ণোদ্যমে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর করার পর ধারণা করা হচ্ছিল, বিশ্ববাণিজ্যে ভারত সুবিধা পাবে। কিছু বিনিয়োগ ভারতে আসতেও শুরু করেছিল। আইফোন নির্মাণকারী কোম্পানি অ্যাপল বলেছিল, এখন থেকে তারা ভারতেই বেশি উৎপাদন করবে। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভারতের গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন পারস্পরিক শুল্ক ৯০ দিনের কমাতে রাজি হওয়ায় এখন ভারত ও চীনের শুল্কহার প্রায় কাছাকাছি। ফলে ভারত বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে যে লাভজনক ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ ব্যবহার করেছে, সেই কৌশল দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশলের আওতায় সাধারণত কোম্পানিগুলো চীনের বাইরেও অন্য দেশে বিনিয়োগ করার কথা ভাবছিল। শ্রীবাস্তব বলেন, এখন সেই সুবিধা অনেকটাই সংকুচিত হয়েছে, কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরের সঙ্গে উত্তেজনা কমিয়ে আনায় ভারত ও চীনের শুল্কহার প্রায় সমান হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই পিছু হটার মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য বার্তাটি স্পষ্ট বলে মনে করেন শ্রীবাস্তব। সেটা হলো, ‘ওয়াশিংটন আবারও বেইজিংয়ের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হচ্ছে।’ গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একমত হয়েছে, তারা আগামী ৯০ দিনের জন্য পরস্পরের ঘোষিত পারস্পরিক শুল্ক ও পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার করবে। এতে দুই প্রধান বাণিজ্য অংশীদারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে প্রশমিত হয়েছে।
এই সমঝোতার অংশ হিসেবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্কহার ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামাবে এবং যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে ২৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিল।
শ্রীবাস্তবের মতে, এই পরিবর্তন ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশলকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে, যে কৌশলের ফলে বহু কোম্পানি তাদের উৎপাদন ভারত, ভিয়েতনাম ও মেক্সিকোর মতো দেশে সরিয়ে নিচ্ছিল।
শ্রীবাস্তব আরও বলেন, যদিও স্বল্প বিনিয়োগের সংযোজন জাতীয় কারখানা আপাতত ভারতে থাকতে পারে, কিন্তু প্রকৃত শিল্পভিত্তিক গভীর উৎপাদন কার্যক্রম থেমে যেতে পারে বা আবারও চীনে ফিরে যেতে পারে। বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের দিকনির্দেশনা পর্যবেক্ষণ করছে এবং ভারত প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা নিশ্চিত করতে না পারলে অনেকে ভারতে আসতে দ্বিধাবোধ করবেন।
২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারিতে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়। পরবর্তী সময়ে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও বিভিন্ন দেশের সুরক্ষা নীতি গ্রহণের ফলে অনেক আন্তর্জাতিক উৎপাদন সংস্থা তাদের কার্যক্রমে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করে। এর অংশ হিসেবে অনেকে ভারত, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের কথা ভাবছিল।
এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী উদীয়মান সরবরাহ কেন্দ্রগুলোর দিকে নজর রাখছিলেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে ভারতের মতো রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল ও বিশাল বাজারের দেশ উল্লেখযোগ্য বিকল্প হয়ে উঠছিল। সেই সঙ্গে আছে দেশটির বিশাল তরুণ শ্রমশক্তি।
শ্রীবাস্তবের পরামর্শ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত বাণিজ্যচুক্তিতে ভারত যদি ১০ শতাংশ শুল্ক সুবিধা ধরে রাখতে পারে, অর্থাৎ যদি তা ২ এপ্রিল প্রস্তাবিত ২৬ শতাংশে না ওঠে, তাহলেই বলা যাবে, ভারত চুক্তি করতে চৌকস। তবে কেবল বাণিজ্যনীতি নয়, ভারতের এখনই উৎপাদন খরচ কমানো, পরিবহন ও সরবরাহব্যবস্থার কাঠামো সংস্কারও নীতিগত ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে তিনি মত দেন।
ভবিষ্যতে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনার সময় ভারতকে সচেতন থাকতে হবে, যাতে গাড়ি ও ওষুধশিল্পের মতো সংবেদনশীল খাতগুলো অপ্রয়োজনীয়ভাবে উন্মুক্ত না হয়ে পড়ে। প্রকৃত ও অর্থবহ পারস্পরিক লাভ ছাড়া এসব খাত উন্মুক্ত করা থেকে বিরত থাকা জরুরি বলে মনে করেন অজয় শ্রীবাস্তব।
যেসব দেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য–ঘাটতি আছে, তাদের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে পরবর্তীকালে অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্যচুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করলে ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য ওই শুল্ক স্থগিত করেন। এই সময়সীমা শুরু হয়েছে ৯ এপ্রিল থেকে। যদিও তা চীনের জন্য প্রযোজ্য ছিল না। গত সোমবার চীনের সঙ্গে পৃথক বন্দোবস্তে গেল যুক্তরাষ্ট্র।
সম্প্রতি ব্রিটেনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির আলোচনা শেষ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষজ্ঞ মহলের ব্যাখ্যা, সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র যা আদায় করবে, কার্যত তার ভগ্নাংশ সুবিধাও পাচ্ছে না ব্রিটেন। তাঁরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার সময় ভারতের প্রতিনিধিরা যেন এই বিষয় মাথায় রাখেন এবং সতর্ক পদক্ষেপ নেন। এমন একটি চুক্তি যেন করা যায়, যাতে উভয় পক্ষ লাভবান হয়।