আজ ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ১৯৭৬ সালের এই দিনে আয়োজিত হয়েছিল ফারাক্কা লংমার্চ। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সেই লংমার্চ ছিল আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রথম জাতীয় আন্দোলন। তিনি শুধু শাসকগোষ্ঠী নয়, প্রতিবেশী শক্তিধর রাষ্ট্র ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েও আমরা দেখছি, ভারতের পানি আগ্রাসন থামেনি। তিস্তা থেকে শুরু করে আড়াই ডজন নদীর ওপর অন্যায্য নিয়ন্ত্রণ এখনও একইভাবে চলমান। ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশ আজ মরূকরণের পথে! মওলানা ভাসানী ১৯৭৬ সালে যে আশঙ্কা করেছিলেন, আজ সেই আশঙ্কাই বাস্তব হয়ে দেখা দিচ্ছে।
ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের জন্য শুধু একটি প্রকৌশল বা কাঠামোগত সংকট ছিল না। ছিল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক আত্মসমর্পণের বড় উদাহরণ। মওলানা ভাসানীই তা প্রথম বুঝেছিলেন। তাই তো ৯৬ বছরের বার্ধক্যকে উপেক্ষা করে লাখো জনতাকে সংগঠিত করে ৫০ মাইল দীর্ঘ ফারাক্কা লংমার্চের নেতৃত্ব দেন! ভারত সরকার ১৯৬১ সালে গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধের নির্মাণ শুরু করে, যা শেষ হয় ১৯৭৫ সালে। আর সে বছরের ২১ এপ্রিল ৪১ দিনের জন্য পরীক্ষামূলক পানি প্রত্যাহারের চুক্তি আদায় করে নেয় বাংলাদেশের কাছ থেকে। সেই যে পানি প্রত্যাহার শুরু হয়েছে, তার পর থেকে সব চুক্তি ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে তা অবিরতভাবে চালিয়ে গেছে ভারত। ফারাক্কা বাঁধ চালুর মাত্র এক বছরেই এর প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশের পদ্মা এবং পদ্মার শাখা নদীগুলোর প্রবাহের ওপর।
বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শুকনো নদী খাতে জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল; পানির স্তর নেমে গিয়েছিল; নদীভাঙন বেড়েছিল; হুমকিতে পড়েছিল মানুষের জীবন-জীবিকা। মাত্র এক বছরের পর্যবেক্ষণেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ওপর জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ুগত ব্যাপক প্রভাব বুঝতে পারেন দূরদর্শী নেতা মওলানা ভাসানী। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে ১৬ মে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট পর্যন্ত ৫০ মাইলের দীর্ঘ লংমার্চে অংশ নেয় লাখো জনতা।
বাংলাদেশের মানুষ চায় একটি দৃঢ় আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রনীতি, যেখানে দেশের স্বার্থ থাকবে সর্বাগ্রে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার আন্তর্জাতিক মঞ্চে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করে কোনো জোরালো অবস্থান নেয়নি। জাতিসংঘ, সার্ক, বিমসটেক বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে এই ইস্যু উপস্থাপন করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের উদ্যোগও দেখা যায়নি কিংবা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে যৌথ নদী কমিশনকে পুনর্গঠন এবং কার্যকর করার উদ্যোগও চোখে পড়েনি। এমনকি বাংলাদেশের পক্ষে থাকা জাতিসংঘের ১৯৯৭ সালের জলপ্রবাহ কনভেনশন পর্যন্তও অনুসমর্থন দেওয়ার ঘোষণা বা সিদ্ধান্তের কথা শোনা যায়নি। উজানের দেশ ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বাংলাদেশের পক্ষে এর চেয়ে বড় আন্তর্জাতিক আইন ও প্ল্যাটফর্ম আর কী হতে পারে! যৌথ নদীর যৌক্তিক পানি বণ্টন নিশ্চিতে সরকারের জোরালো ভূমিকা না থাকা জনগণের প্রত্যাশার পরিপন্থি। সরকারকে বুঝতে হবে, পানি শুধু কূটনৈতিক ইস্যু নয়; এটি জাতীয় নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশগত অস্তিত্বের প্রশ্ন।
২০২৫ সালের ১৬ মে যেন আমাদের কাছে শুধু স্মৃতিচারণের দিন হিসেবে না আসে। বরং ১৬ মে যেন বাংলাদেশের নবচেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার দিন হয়। ফারাক্কা লংমার্চ আজও প্রমাণ করে– যেখানে রাষ্ট্র নীরব সেখানে প্রতিবাদই পথ দেখায়। মওলানা ভাসানীর সাহস, নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতা আমাদের দেখিয়েছে কীভাবে একক সংগ্রামেও একটি জাতির অধিকার আদায়ে সাড়া জাগানো যায়। আজ আমাদের নাগরিকদেরও সেই চেতনায় জেগে উঠতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন, জাতীয় ঐক্য ও কূটনৈতিক সাহসিকতা দিয়ে বাংলাদেশকে তার ন্যায্য পানির অধিকার আদায় করতে হবে।
মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ বস সরক র র ওপর মওল ন
এছাড়াও পড়ুন:
৭ কোটি বাজেটে ৯০ কোটি আয়, সবাইকে টেক্কা দিয়েছে এই সিনেমা
হিন্দিতে ‘ছাবা’, ‘সাইয়ারা’ চলতি বছর বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল। দক্ষিণি সিনেমার মধ্যে ‘লোকাহ চ্যাপটার ১: চন্দ্র’, ‘কানতারা: চ্যাপটার ১’ ভালো ব্যবসা করেছে। কিন্তু বাজেটের তুলনায় ব্যবসায়িক সাফল্যে বিচার করলে সবাইকে পেছনে ফেলেছে একটি দক্ষিণি সিনেমা। মাত্র ৭ কোটি রুপি বাজেটের ছবিটি আয় করেছে ৯০ কোটি রুপি!
২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বড় তারকা ও বাজেটের সিনেমা যেমন হিট হয়েছে, তেমনই কিছু চমকপ্রদ সাফল্য এসেছে ছোট বাজেটের চলচ্চিত্র থেকে। সেই ছোট বাজেটের তামিল ছবি ‘টুরিস্ট ফ্যামিলি’ পুরো বছরকে ছাপিয়ে গেছে, যা এখন ২০২৫ সালের সবচেয়ে লাভজনক সিনেমা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
‘টুরিস্ট ফ্যামিলি’: হৃদয়স্পর্শী গল্পের সাফল্য
‘টুরিস্ট ফ্যামিলি’ পরিচালনা করেছেন অভিশান জেভিন্থ, যিনি এটি দিয়ে পরিচালনায় অভিষেক করছেন। সিনেমার কাহিনি শ্রীলঙ্কা থেকে আসা এক তামিল পরিবারের ভারতযাত্রাকে ঘিরে। পরিবারটি অর্থনৈতিক সংকট থেকে ‘উন্নত জীবনের’ আশায় দেশ ছাড়ে।