মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাবে কিছু পণ্যের দাম বাড়াতে যাচ্ছে ওয়ালমার্ট। কারণ, আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির আয়ে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সে জন্য দাম বাড়ানোর পথই বেছে নিচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান।

হোয়াইট হাউস বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করায় ওয়ালমার্টের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওয়ালমার্টের প্রধান নির্বাহী ডগ ম্যাকমিলান গতকাল বৃহস্পতিবার বিনিয়োগকারীদের সামনে অবস্থান তুলে ধরেন। এ সময় তিনি ট্রাম্প প্রশাসন আপাতত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা স্থগিত করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তবে নতুন খরচের চাপ সামলাতে তাঁদের পণ্যের দাম বাড়াতেই হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ডগ ম্যাকমিলান বলেন, ‘আমরা আমাদের পণ্যের দাম যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করব, তবে ঘোষিত শুল্কের পরিমাণ এতটাই বেশি যে আমরা সব চাপ নিজেরা নিতে পারছি না।’ তিনি বলেন, কোস্টারিকা, কলম্বিয়া ও পেরুর মতো আলোচনায় কম আসা দেশগুলোর ওপর শুল্কের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম চাপে পড়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে কলা, অ্যাভোকাডো, কফি ও গোলাপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। খবর বিবিসি

ওয়ালমার্ট জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে তারা যে পণ্য বিক্রি করে, তার দুই-তৃতীয়াংশই দেশে তৈরি, সংযোজন বা উৎপাদিত। তবে খেলনা, ইলেকট্রনিক পণ্যসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের প্রধান সরবরাহকারী চীন।

এদিকে কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) জন ডেভিড রেইনি বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁদের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোয় চলতি মাস থেকেই উচ্চ মূল্যের প্রভাব পড়তে শুরু করতে পারে। তবে দামের প্রভাবটা জুনে নিশ্চিতভাবেই দেখা যাবে।

প্রতিবেশী কানাডা ট্রাম্পের শুল্কনীতির পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। সে দেশের বড় খুচরা বিক্রেতা লবলউসের প্রধানও সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কানাডার নাগরিকেরা সামনে শুল্ক-সংক্রান্ত মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব দেখতে পারেন।

লবলউসের প্রধান নির্বাহী পের ব্যাংক সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের মধ্যে শুল্ক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, তবে কানাডার ক্ষেত্রে এখনো তেমন কিছু ঘটেনি।

এসব ঘোষণা এমন সময়ে এসেছে, যখন ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন করে মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে। ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধির মুখে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কনীতি টিকে থাকবে এবং এর ফলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

ওয়ালমার্টের কর্মকর্তারা জানান, তাঁরা খাদ্যদ্রব্যকে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব থেকে রক্ষার চেষ্টা করছেন এবং বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত সরবরাহব্যবস্থা বদলে ফেলার মতো অবস্থানে আছেন। তাঁরা আরও বলেন, আগামী তিন মাসের লাভ নিয়ে এখনই সুনির্দিষ্ট কিছু বলা সম্ভব নয়। কারণ, পরিস্থিতি অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত সার্বিকভাবে বাজারে পণ্য বিক্রি ঠিকই চলছে। ফেব্রুয়ারি কিছুটা ধীরগতির ছিল, যার জন্য কর্মকর্তারা খারাপ আবহাওয়াকে দায়ী মনে করেন। তবে মার্চ ও এপ্রিল মাসে বিক্রি বেড়েছে।

ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে ওয়ালমার্টের মোট রাজস্ব আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে আড়াই শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৬৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ১৬ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার। আর যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ালমার্টের যেসব স্টোর এক বছরের বেশি সময় খোলা রয়েছে, সেগুলোয় পণ্য বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা হয়েছে ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৪৪০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ কম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি

চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।

এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।

আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।

বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।

এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।

এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশে কফি–সংস্কৃতি প্রসারে ‘আমা কফি’
  • রাজশাহীতে আইনি ব্যবস্থা নিন
  • বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের ৩ প্যাকেজ ঘোষণা
  • চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি