রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে বড় হয়ে দত্তক মাকে খুন করল
Published: 17th, May 2025 GMT
একসময় রাস্তায় সদ্যোজাত শিশুকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এক নারী। ওই শিশুকে দত্তক হিসেবে নিজের কাছে রেখে লালন–পালন করছিলেন তিনি। সেই শিশুই কিশোরী বয়সে এসে পালক মাকেই খুন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতের ওডিশা রাজ্যের গজপতি জেলার পারালাখেমুন্ডি শহরে ভাড়া বাড়িতে গত ২৯ এপ্রিল ঘটেছে এমন ঘটনা।
ওডিশা পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোরীর বয়স এখন ১৩ বছর। সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তার দুই প্রেমিক মন্দিরের পুরোহিত ২১ বছর বয়সী গণেশ রাঠ এবং ২০ বছর বয়সী দীনেশ সাহুর সঙ্গে মিলে নিজের দত্তক মা রাজলক্ষ্মী করকে (৫৪) হত্যার ষড়যন্ত্র করে।
পুলিশ বলছে, রাজলক্ষ্মীর দত্তক নেওয়া ওই কিশোরীর সঙ্গে দুই তরুণের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তিনি এমন সম্পর্কের বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁর সম্পত্তি দখলের লোভও ছিল ওই কিশোরী ও দুই তরুণের।
২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় কিশোরী প্রথমে মায়ের খাবারে ঘুমের ওষুধ মেশায়। যখন রাজলক্ষ্মী অচেতন হয়ে পড়েন, তখন গণেশ রাঠ ও দীনেশ সাহুকে ডেকে আনা হয়। তারপর তিনজনে মিলে বালিশচাপা দিয়ে রাজলক্ষ্মীকে খুন করে।
পরে রাজলক্ষ্মীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। পরিবার ও হাসপাতালকে জানানো হয়, তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। রাজলক্ষ্মীর আগে থেকেই হৃদ্রোগ ছিল। তাই কেউ সন্দেহ করেনি। পরদিন আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে ভুবনেশ্বরে তাঁর মরদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা হয়।
প্রায় দুই সপ্তাহ এ ঘটনা ধামাচাপা থাকলেও রাজলক্ষ্মীর ভাই শিবা প্রসাদ মিশ্রর মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা সামনে আসতে থাকে। তিনি ভুবনেশ্বরে কিশোরীর ফেলে যাওয়া মুঠোফোনটি খুঁজে পান। মুঠোফোনটি ঘেঁটে দেখতে পান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রাম চ্যাটে খুনের পরিকল্পনার পুরো বিবরণ রয়েছে। ওই কথোপকথনে রাজলক্ষ্মীকে খুন করার পরিকল্পনা, সোনা ও নগদ টাকা নেওয়ার বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে লেখা ছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সব দেখার পর গত ১৪ মে শিবা প্রসাদ মিশ্র পারালাখেমুন্ডি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ রাজলক্ষ্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু করে এবং কিশোরী, গণেশ রাঠ ও দীনেশ সাহুকে গ্রেপ্তার করে।
গজপতি জেলার পুলিশ সুপার যতীন্দ্র কুমার পান্ডা জানান, প্রায় ১৪ বছর আগে ভুবনেশ্বরে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় রাজলক্ষ্মী ও তাঁর স্বামী ওই শিশুকে খুঁজে পান। নিঃসন্তান দম্পতি তাকে দত্তক নেন এবং নিজের সন্তান হিসেবে লালন-পালন করতে থাকেন।
তবে এক বছরের মধ্যেই রাজলক্ষ্মীর স্বামী মারা যান। এরপর একাই রাজলক্ষ্মী মেয়েটিকে লালন–পালন করছিলেন। পড়াশোনার সুবিধার্থে তিনি পারালাখেমুন্ডিতে এসে কিশোরীকে একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করান। সেখানে তিনি একটি বাড়ি ভাড়া নেন।
শিশুটি ধীরে ধীরে কিশোরী হয়। এরই মধ্যে তার সঙ্গে দুই তরুণ গণেশ রাঠ ও দীনেশ সাহুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রাজলক্ষ্মী দুজনের সঙ্গে এমন সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি। এ নিয়ে মা–মেয়ের মধ্যে বেশ ঝগড়াঝাঁটি হচ্ছিল।
পুলিশ বলছে, গণেশ রাঠ একপর্যায়ে কিশোরীকে তার মাকে হত্যার উসকানি দিতে থাকেন। রাঠই একসময় তাকে রাজলক্ষ্মীকে খুন করতে বুঝিয়ে রাজি করান। রাঠ কিশোরীকে বোঝান, তাকে মেরে ফেললে তাঁরা কোনো ঝামেলা ছাড়াই সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারবেন এবং অনেক সম্পত্তির মালিক হয়ে যাবেন।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় ওই কিশোরী তার মা রাজলক্ষ্মীকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়। রাজলক্ষ্মী অচেতন হওয়ার পর সে রাঠ ও সাহুকে বাড়িতে ডেকে আনে। এরপর তারা তিনজন মিলে রাজলক্ষ্মীর মুখে বালিশ চেপে তাঁকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। এরপর রাজলক্ষ্মীকে তাড়াহুড়ো করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযুক্ত কিশোরী ও ওই দুই তরুণ রাজলক্ষ্মীর পরিবারের সদস্য ও হাসপাতালের কর্মীদের বলেছিলেন, রাজলক্ষ্মী হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যার আগেই কিশোরী তার মায়ের কিছু সোনার গয়না গণেশ রাঠকে দিয়েছিল। গণেশ সেগুলো প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার রুপিতে বন্ধক রেখেছিল। পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ গ্রাম সোনার গয়না, তিনটি মুঠোফোন এবং রাজলক্ষ্মীকে হত্যায় ব্যবহৃত দুটি বালিশ উদ্ধার করেছে।
এখন তিন অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশি হেফাজতে আছে ও তদন্ত চলছে। ঘটনাটি রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জলক ষ ম র র জলক ষ ম ক ওই ক শ র গণ শ র ঠ খ ন কর
এছাড়াও পড়ুন:
বোতল নিক্ষেপকারী শিক্ষার্থীকে বাসায় দাওয়াত দিলেন তথ্য উপদেষ্টা
পানির বোতল ছুঁড়ে মারা শিক্ষার্থীকে বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। শুক্রবার বিকেলে বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এরপর ডিবি অফিসে শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্য উপদেষ্টা। আন্দোলন শেষে তিনি হুসাইনকে বাসায় আসার দাওয়াত দেন।
এর আগে দুপুরে তিনি হুসাইনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অভিভাবকদের জিম্মায় হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যার পর তথ্য উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে মোহাম্মদ হুসাইন এবং তার মায়ের সঙ্গে দাঁড়ানো ছবি শেয়ার করে এসব তথ্য জানানো হয়।
ওই ফেসবুক পোস্টে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা জানিয়েছেন আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার সমাধান নিয়ে সরকারের স্পষ্ট রোডম্যাপ জানানো হবে। জবির শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দ্রুতই সমাধান হোক।
উল্লেখ্য, কয়েকটি দাবিতে আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গত বুধবার রাত ১০টার পর কাকরাইল মসজিদের সামনে যান তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। সেখানে তিনি কথা বলার একপর্যায়ে একটি প্লাস্টিকের পানির বোতল উড়ে এসে তাঁর মাথায় পড়ে। এরপর আর কথা না বলে সেখান থেকে চলে যান মাহফুজ আলম।