আবাসন সমস্যার সমাধানসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সব দাবি সরকার মেনে নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ। এরপর আন্দোলন কর্মসূচি সমাপ্তির ঘোষণা দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো.

রইছ উদ্‌দীন।

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনস্থলে যান ইউজিসির চেয়ারম্যান। তিনি অনশনকারী এক শিক্ষার্থীকে পানি পান করিয়ে তাঁদের অনশন ভাঙান। পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলনের মুখে সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের তিন দফা দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তিনি চলমান এ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা দেন।

ইউজিসি জানিয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পরিচালন বাজেট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে আবাসনসংকট নিরসনে খুব দ্রুত অস্থায়ী হল নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

এর আগে টানা তৃতীয় দিনের মতো গতকালও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখী কাকরাইল মোড় অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি একটি অংশ গতকাল বিকেলে গণ-অনশনে বসে। এর আগে দুপুরে জুমার নামাজের পর বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মিলে সমাবেশ করেন। অবস্থান কর্মসূচির কারণে গতকালও দিনভর মৎস্য ভবন মোড় থেকে কাকরাইলে যাওয়ার এবং যমুনার সামনের সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

ইউজিসির চেয়ারম্যানের বক্তব্যের পর আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন বাজেট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে সবকিছু করা হবে বলেও জানান তিনি।

উপাচার্যের বক্তব্যের পর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইছ উদ্‌দীন বলেন, ‘দাবিগুলো সুস্পষ্টভাবে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। আমরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছি। এরপরও যদি কোনো রকমের গড়িমসি বা নয়ছয় হয়, তাহলে আমরা ঘরে বসে থাকব না। এরপর যত বাজেট প্রণীত হবে, সবগুলোতে যাতে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, আমরা সে দাবি জানিয়ে এসেছি। তাঁরাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ দাবি বাস্তবায়ন হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন তিনি।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের ঘোষণার পর আন্দোলনরত অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কাকরাইল মোড় ছেড়ে যান। তবে আন্দোলনে অংশ নেওয়া কিছু শিক্ষার্থী দাবি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসির উদ্দীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, দাবির বিষয়ে সব দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে। আজকে যে ঘোষণা এসেছে, সবাই দেখেছে। এর ব্যত্যয় হলে আবার কঠোর জবাব দেওয়া হবে। এ সময় সেখানে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের পানি ও কলা খাইয়ে অনশন ভাঙান সহকারী অধ্যাপক নাসির উদ্দীন। রাত পৌনে ১২টার দিকে সব শিক্ষার্থী ফিরে যান।

এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, গতকাল বিকেল চারটার দিকে গণ-অনশন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ও কয়েকজন শিক্ষক। পাশাপাশি তখন সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি চলমান ছিল।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা—এই তিন দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিন দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে লংমার্চ করেন জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে তাঁদের লংমার্চ কাকরাইলে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে বাধা পার হয়ে শিক্ষার্থীরা যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর ওই দিন বেলা দুইটা থেকে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন জগন ন থ গতক ল ইউজ স

এছাড়াও পড়ুন:

শুক্রবার সকাল ১০টায় সমাবেশ, জুমার পর গণ-অনশনের ঘোষণা

তিন দফা দাবি আদায়ে গণ–অনশনসহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচিও চালিয়ে যাবেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্‌দীন এ ঘোষণা দেন।

ঘোষণা অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক–শিক্ষার্থী এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সমাবেশ হবে। জুমার নামাজের পর থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে গণ–অনশনে বসবে।

কর্মসূচি ঘোষণা করে অধ্যাপক রইছ উদ্‌দীন বলেন, ‘আজকে দুই দিন অতিবাহিত হতে চলছে। সরকারের কর্ণকুহরে আমাদের আওয়াজ পৌঁছাচ্ছে না। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো গ্রিন সিগন্যাল পাইনি। ওনারা (সরকার) আমাদের কথা শুনছেন না, আমাদের কথা শোনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন না।’

দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘হয় দাবি আদায় হবে, না হয় আমরা স্থান ত্যাগ করব না, যতক্ষণ না আমাদের মৃত্যু হয়। যখন আমরা গ্রিন সিগন্যাল পাব, আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে; তাৎক্ষণিক আমরা আমাদের এই কর্মসূচি সমাপ্ত করব।’

দাবির ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাতেও কাকরাইল মোড়ে রাত্রিযাপনের ঘোষণা দেন অধ্যাপক রইছ উদ্‌দীন।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন পুলিশের নির্মম হামলার প্রতিবাদে ১৪ মে–কে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কালো দিন’ হিসেবে ঘোষণা করেন।

তিন দফা দাবিতে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার অভিমুখে লংমার্চ নিয়ে যাওয়ার সময় কাকরাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। এ সময় ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে অর্ধশত শিক্ষক–শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর বেলা দুইটা থেকে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তখন থেকে সেখানে তাঁদের লাগাতার অবস্থান চলছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনবৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করার তিন দফা দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে যমুনা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আজ
  • আন্দোলন শেষ করলেন জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা
  • বৃষ্টিতে ভিজে বিজয় উল্লাস জবি শিক্ষার্থীদের, ফিরে গেলেন ক্যাম্পাসে
  • দাবি পূরণের আশ্বাস, অনশন ভাঙলেন জগন্নাথের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা
  • ৫০ ঘণ্টা ধরে অবস্থানের পর গণ-অনশনে জগন্নাথের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা
  • কাকরাইলে গণঅনশনে জবি শিক্ষার্থীরা, কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
  • গণঅনশনে জবি শিক্ষার্থীরা, কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
  • গণঅনশনে জবি শিক্ষার্থীরা, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
  • শুক্রবার সকাল ১০টায় সমাবেশ, জুমার পর গণ-অনশনের ঘোষণা