অবৈধ ভারতীয়দের নিয়ম মেনে ফেরত পাঠাবে বাংলাদেশ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 17th, May 2025 GMT
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমার কাছে পুশইন (ঠেলে পাঠানো) উস্কানিমূলক কার্যক্রম মনে হচ্ছে না।’ তখন অবৈধ ভারতীয়দের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অবৈধ ভারতীয় একেবারে নেই– এমন কথা বলব না। সবাইকে অনুরোধ করব, এ বিষয়ে সরকারকে জানালে নিয়ম মেনে তাদের ভারতে পাঠানো হবে।’
শনিবার সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রায়মঙ্গল নদী ও বয়েসিং খালের সংযোগস্থলে ভাসমান সীমান্ত চৌকি (বিওপি) উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে তিনি সম্প্রতি ৭৮ জনকে পুশইন করার স্থান সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া পরিদর্শন করেন। শনিবারও কয়েকজনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। এ নিয়ে গত ৪ মে থেকে ৩৪৬ জনকে ঠেলে পাঠানোর খবর পাওয়া গেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশি কেউ ইন্ডিয়ায় থেকে থাকলে তাঁকে প্রোপার চ্যানেলে (আইন মেনে) পাঠাতে বলা হয়েছে। ইন্ডিয়ার যারা বাংলাদেশে আছে, তাদের কিন্তু আমরা প্রোপার চ্যানেলে পাঠিয়ে থাকি। আমরা কাউকে পুশব্যাক করি না।’
তিনি জানান, শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বিএসএফ পুশইন চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিজিবির সঙ্গে আনসার ও জনগণের সমন্বিত প্রতিরোধের কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছে। বিজিবির সঙ্গে সবাই মিলে সহযোগিতা করলে ভারত পুশইন করতে পারবে না। কূটনৈতিক পর্যায়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে পুশইন বন্ধে তাদের চিঠি লেখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের প্রায় ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ১৮০ কিলোমিটার নদী। এর মধ্যে ৭৯ কিলোমিটার সুন্দরবনের অন্তর্গত। জলভিত্তিক নজরদারি নিশ্চিত করতে রিভারাইন বিজিবি গঠন প্রক্রিয়াধীন।
এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান, বিজিবি সদরদপ্তর ও খুলনা সেক্টর কমান্ডার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা.
এ ছাড়া বিকেলে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের মোংলায় নবনির্মিত বোট ওয়ার্কশপ ও স্লিপওয়ের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সমুদ্র ও উপকূল সুরক্ষায় শিগগির কোস্টগার্ডকে নতুন পাঁচটি জাহাজ দেওয়া হবে।
পঞ্চগড়ে ১১ জন আটক
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার তিনটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে ১১ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। শুক্রবার রাত ২টায় নাউতারী, প্রধান পাড়া ও ধামের ঘাট এলাকা দিয়ে ঠেলে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে ডানাকাটা ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করেন। গতকাল বিকেলে তাদের বোদা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিন বলেন, ‘বিজিবির পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাদের আদালতে তোলা হবে।’
ঠাকুরগাঁওয়ে ১৭ জনকে পুশইন
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার চাপসার সীমান্ত দিয়ে ১৭ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। পরে অনুপ্রবেশের দায়ে তাদের আটক করে বিজিবি। এ বিষয়ে হরিপুর থানার ওসি জাকারিয়া মণ্ডল বলেন, ‘বিজিবি তাদের আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে।’
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা)
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় ৩০০ জন
পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) শুরু করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে আতঙ্ক চরমে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় ভারতীয় সীমান্তে জড়ো হচ্ছে শত শত মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থানা এলাকার হাকিমপুর সীমান্তে এমন ঘটনা দেখা গেছে। বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য শুধুমাত্র এই সীমান্তেই জড়ো হয়েছেন নারী শিশু সহ অন্তত ৩০০ জন বাংলাদেশি নাগরিক।
আরো পড়ুন:
সৌদিতে বাস-ট্যাংকার সংঘর্ষ, ৪২ ভারতীয় হজযাত্রীর মৃত্যুর আশঙ্কা
দিল্লির আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর সহযোগী গ্রেপ্তার
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে, শহর থেকে বিভিন্ন সময়ে ভারতে অনুপ্রবেশকারী এই বাংলাদেশিরা ফের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য হাকিমপুর সীমান্তে এসে পৌঁছেছেন। কেউ দালালের মাধ্যমে কেউ আবার নিজেরাই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এসেছেন সীমান্তে। কিন্তু বিএসএফের বাধায় সীমান্তেই আটকে পড়েছেন এই বাংলাদেশিরা।
আটকে পড়া ব্যক্তিরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে ভারতে অনুপ্রবেশের পর তারা কলকাতা, দিল্লি, ব্যাঙ্গালুরু থেকে মুম্বাইয়ের মতো শহরে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি ভারত জুড়ে শুরু হওয়া এসআইআরের কারণে জেল ও জরিমানা এড়াতে দেশে তারা ফিরতে চাইছেন।
অফিসিয়াল বিবৃতি জারি না করলেও বিএসএফ সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে এমন ছবি শুধুমাত্র হাকিমপুর সীমান্তের নয়। এই সীমান্তে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের সংখ্যাটা অনেক বেশি। বিএসএফ জানিয়েছে, আটকে পড়া এই বাংলাদেশিদের মানবিক বিবেচনায় গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের দাবির স্বপক্ষে নিথিপত্র বিএসএফের ১৪৩ নম্বর ব্যাটালিয়ন খতিয়ে দেখছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে আগামী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ