মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপনের চার বছর পরও চালু করা যায়নি দুটি ক্যাথল্যাব। এরই মধ্যে একটি ক্যাথল্যাব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম। তারা ক্যাথল্যাবটি যারা চালু করতে পারেননি, তাদেরকেই এ জন্য দায়ী করেছে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হৃদরোগীদের সুবিধার জন্য এই হাসপাতালে ১৯ কোটি টাকা খরচে দুটি ক্যাথল্যাব স্থাপন করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচটিএমএস ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ট্রেড হাউস এখানে ক্যাথল্যাব দুটি স্থাপন করে। যদিও তারা সেগুলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়নি। এ ছাড়া নির্মাণ করা হয়নি ওয়াশরুম। দক্ষ লোকবলের না থাকায় চার বছরেও ক্যাথল্যাব দুটি চালু করা যায়নি।
এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ক্যাথল্যাব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ শাখার উপসচিব মো.

শাহাদত হোসেন কবির ৮ মে এক পরিপত্রে এ নির্দেশ দেন। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বিপুলসংখ্যক রোগীকে নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুটি ক্যাথল্যাবের মধ্য থেকে উপযুক্ত একটি চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। 
এতে আরও বলা হয়, এ বিষয়ে চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজার, নিমিউ অ্যান্ড টিসি প্রয়োজনীয় কারিগরি পরামর্শ ও সহায়তা দেবেন।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ হাসপাতালে ৮০ শয্যার সিসিইউ রয়েছে। এখানে হৃদরোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের জন্য ২০১৮-১৯ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ক্যাথল্যাব স্থাপন করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও দক্ষ লোকবল সংকটে ক্যাথল্যাবগুলো চালু করা যায়নি। একটি ক্যাথল্যাব চালু হলে মাসে ৫০-৬০ জন মুমূর্ষু হৃদরোগীর এনজিওগ্রাম করা সম্ভব। এতে সরকারি খরচেই তারা হার্টে রিং পরাতে পারবেন।
এমনিতেই এই হাসপাতালে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। এর মধ্যে অব্যবহৃত দুটি ক্যাথল্যাবের একটি সরিয়ে নেওয়াকে মহাবিপদ হিসেবে দেখছেন জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সদস্য অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এ ঘটনার দায়ভার তাদের ওপরই পড়ে, যারা দীর্ঘদিনেও ক্যাথল্যাব দুটি চালু করতে পারেননি।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলামের দাবি, তিনি যোগ দেওয়ার পর ক্যাথল্যাব দুটি চালুর উদ্যোগ নেন। ইতোমধ্যে তিনজন নার্স ও দু’জন টেকনিশিয়ানকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি ক্যাথল্যাব চালুর আশ্বাস দেন। সেটি দিয়েই রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব। একটি ক্যাথল্যাব মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী চমেক হাসপাতালে পাঠানো হবে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

আগামী এডিপিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন বরাদ্দ বাড়ল না। আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। উন্নয়ন বাজেটে এ দুই খাত প্রত্যাশিত মনোযোগ পাচ্ছে না।

চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে আগামী এডিপিতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। আর স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমছে আড়াই হাজার কোটি টাকা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ৬ মে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বর্ধিত সভায় আগামী এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। আগামীকাল রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় নতুন এডিপি পাস হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের খসড়া এডিপি অনুসারে, শিক্ষা খাতে ৯১টি প্রকল্পে আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা, যা চলতি এডিপির বরাদ্দ থেকে ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা।

অন্যদিকে শিক্ষা খাতের ৩৫টি প্রকল্পে আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ থাকছে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। চলতি এডিপিতে বরাদ্দ ২০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা।

উন্নয়ন বাজেটে এ দুই খাত প্রত্যাশিত মনোযোগ পাচ্ছে না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত অনেকটা অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। আগামী বাজেটেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার ইঙ্গিত নেই।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, পৃথিবীর যে ১০টি দেশ অর্থনীতির আকারের তুলনায় শিক্ষা খাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়, বাংলাদেশ তার একটি। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে একজন বাংলাদেশির বছরে ৮৮ ডলার খরচ করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে মাথাপিছু খরচ হয় ৫৮ ডলার, যার বড় অংশই নাগরিকেরা নিজেরা সংস্থান করেন।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার হবে, বরাদ্দ বাড়বে। সুযোগ ছিল পুরোনো বাজেট কাঠামো বাদ দিয়ে নতুন বাজেট কাঠামো তৈরি করার। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হলে তা হবে আশ্চর্য হওয়ার মতো। যাঁরা এখন নীতিনির্ধারকের দায়িত্বে, তাঁরা এত বছর বলে আসছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।

সেলিম রায়হানের মতে, এবার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে এবং ঋণও কম আসছে। এসব কারণে হয়তো এডিপিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমেছে। এ ছাড়া খরচ করার সক্ষমতার অভাবও আছে।

এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের টাকা খরচের সক্ষমতার অভাব আছে। তাই যৌক্তিকভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যেন বরাদ্দের টাকা কার্যকরভাবে খরচ করা সম্ভব হয়।

এডিপির কমছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা

এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ব্যাপক পরিমাণে কমানো হচ্ছে। এবার কমছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপির আকার হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য পরে তা কমিয়ে আনা হয়।

আগামীকালের এনইসি সভায় আগামী অর্থবছরের এডিপির খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এতে সভাপতিত্ব করার কথা আছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুসারে, আগামী এডিপির অর্থের মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আর প্রকল্প সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। আগামী এডিপিতে ১ হাজার ১৪২টি প্রকল্প।

কোন খাতে কত বরাদ্দ

নতুন খসড়া এডিপিতে বরাদ্দের দিক থেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে। এ খাতে মোট ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষা খাতে। এ খাতে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা।

অন্য খাতগুলোর মধ্যে গৃহায়ণ খাতে ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা; স্বাস্থ্যে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি: স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি; কৃষিতে ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা; পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ১০ হাজার ৬৪১ কোটি; শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৫ হাজার ৩৮ কোটি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ যাচ্ছে। প্রায় সব খাতেই চলতি এডিপিতে বরাদ্দ কমেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ব্যয় পরিবীক্ষণ জরুরি
  • আবার আড্ডা হবে জমবে শান্ত দুপুর
  • রায়ের সমালোচনাকারীরা আদালত অবমাননা করছেন: ইশরাক
  • সুন্দরী বিচার করবেন জয়া-মেহজাবীন-রাফী
  • আগামী এডিপিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে
  • রাশিয়া আবার সস্তা গম আমদানির বড় উৎস
  • স্মরিব ‘কাল নিরবধি’
  • নগর ভবন অবরোধ করে ইশরাক সমর্থকদের বিক্ষোভ
  • ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনে বিক্ষোভ