মানিকগঞ্জের ক্যাথল্যাব যাবে চমেক হাসপাতালে
Published: 17th, May 2025 GMT
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপনের চার বছর পরও চালু করা যায়নি দুটি ক্যাথল্যাব। এরই মধ্যে একটি ক্যাথল্যাব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম। তারা ক্যাথল্যাবটি যারা চালু করতে পারেননি, তাদেরকেই এ জন্য দায়ী করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হৃদরোগীদের সুবিধার জন্য এই হাসপাতালে ১৯ কোটি টাকা খরচে দুটি ক্যাথল্যাব স্থাপন করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচটিএমএস ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ট্রেড হাউস এখানে ক্যাথল্যাব দুটি স্থাপন করে। যদিও তারা সেগুলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়নি। এ ছাড়া নির্মাণ করা হয়নি ওয়াশরুম। দক্ষ লোকবলের না থাকায় চার বছরেও ক্যাথল্যাব দুটি চালু করা যায়নি।
এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ক্যাথল্যাব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ শাখার উপসচিব মো.
এতে আরও বলা হয়, এ বিষয়ে চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজার, নিমিউ অ্যান্ড টিসি প্রয়োজনীয় কারিগরি পরামর্শ ও সহায়তা দেবেন।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ হাসপাতালে ৮০ শয্যার সিসিইউ রয়েছে। এখানে হৃদরোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের জন্য ২০১৮-১৯ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ক্যাথল্যাব স্থাপন করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও দক্ষ লোকবল সংকটে ক্যাথল্যাবগুলো চালু করা যায়নি। একটি ক্যাথল্যাব চালু হলে মাসে ৫০-৬০ জন মুমূর্ষু হৃদরোগীর এনজিওগ্রাম করা সম্ভব। এতে সরকারি খরচেই তারা হার্টে রিং পরাতে পারবেন।
এমনিতেই এই হাসপাতালে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। এর মধ্যে অব্যবহৃত দুটি ক্যাথল্যাবের একটি সরিয়ে নেওয়াকে মহাবিপদ হিসেবে দেখছেন জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সদস্য অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এ ঘটনার দায়ভার তাদের ওপরই পড়ে, যারা দীর্ঘদিনেও ক্যাথল্যাব দুটি চালু করতে পারেননি।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলামের দাবি, তিনি যোগ দেওয়ার পর ক্যাথল্যাব দুটি চালুর উদ্যোগ নেন। ইতোমধ্যে তিনজন নার্স ও দু’জন টেকনিশিয়ানকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি ক্যাথল্যাব চালুর আশ্বাস দেন। সেটি দিয়েই রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব। একটি ক্যাথল্যাব মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী চমেক হাসপাতালে পাঠানো হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি অনুদানে মূলধারার সিনেমা উপেক্ষিত, ক্ষোভ প্রকাশ নায়ক-পরিচালকের
প্রতি বছর সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অনুদানের তালিকা প্রকাশের পরও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
এ বছর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ১২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে ৯ কোটি টাকা এবং ২০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে ৪ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। সেই তালিকা প্রকাশের পর থেকেই চলচ্চিত্র নির্মাতা, পরিবেশক ও শিল্পীদের মাঝে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এবার সেই ক্ষোভের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন জনপ্রিয় নায়ক নিরব।
বিষয়টি নিয়ে নায়ক নিরব সমকালকে বলেন, ‘বিগত সময়ের মতো এবারও মূলধারার সিনেমাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। যদি এই অনুদানগুলো মূলধারার ছবিতে দেওয়া হতো, তাহলে সাধারণ দর্শকের কাছেও সিনেমাগুলো পৌঁছাতে পারত। কিন্তু যেসব বিকল্পধারার ছবিকে অনুদান দেওয়া হয়, সেগুলোর বেশিরভাগই ঠিকভাবে মুক্তি পায় না।’
নিরব আরও বলেন, ‘এই বিকল্প ধারার সিনেমাগুলোর লক্ষ্যই থাকে ফেস্টিভাল আর পুরস্কার। অথচ এই সিনেমাগুলো নির্মাণে যে অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি জনগণের টাকা। সেই জনগণই যদি এই ছবি দেখতে না পায়, তাহলে অনুদানের উদ্দেশ্য কী? এটা শুধু আমার একার কথা নয়, গত কয়েকদিন ধরে অনেক চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিও এই বিষয় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছেন।’
সরকারি অনুদানের পর নজরদারি ও তদারকি নিয়েও কথা বলেন এই অভিনেতা। তার মতে, “একটা ছবিকে অনুদান দেওয়ার পর নিয়মিত খোঁজ রাখা উচিত-ছবির অগ্রগতি কী, শুটিং শেষ হলো কি না, মুক্তির পরিকল্পনা কী? আর বড় পরিসরে ছবিগুলোর মুক্তি নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।”
মূলধারার প্রতিনিধিত্ব নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও অনুদানের দুটি ছবিতে অভিনয় করেছি-রোজিনা পরিচালিত ‘ফিরে দেখা’ এবং বন্ধন বিশ্বাস পরিচালিত ‘ছায়াবৃক্ষ’। দুটি ছবিই মুক্তি পেয়েছে। তবে খুব খোলামেলাভাবে বলি, অভিজ্ঞতা খুব বেশি ইতিবাচক ছিল না। কারণ, যাঁরা অনুদান কমিটিতে থাকেন, তাঁদের বেশিরভাগই বিকল্পধারার ভাবনা নিয়ে কাজ করেন। আমি মনে করি, সেই কমিটিতে মূলধারার অভিজ্ঞ লোকদেরও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’
পরিচালক ও পরিবেশক অনন্য মামুনও সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “শিল্পকলায় যদি অডিটোরিয়াম থাকতে পারে, তাহলে চলচ্চিত্র রক্ষায় সরকারি সিনেমা হল থাকবে না কেন? গত ১০ বছরে চলচ্চিত্রে যত অনুদান দেওয়া হয়েছে, তার প্রকৃত সুফল কতটা এসেছে? বরং অনুদানের চলচ্চিত্রগুলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়, যেখানে প্রকৃত প্রযোজকরা থেকে যান বঞ্চিত।”
তিনি আরও বলেন, ‘এই অনুদানের টাকায় যদি প্রতিটি জেলায় সরকারি সিনেমা হল গড়ে তোলা হতো, তাহলে চলচ্চিত্র শিল্পের ভীষণ উপকার হতো।’
উল্লেখ্য, নিরব বর্তমানে ‘শিরোনাম’ ছবির শেষ লটের শুটিংয়ে ব্যস্ত। কানাডা থেকে ফিরে তিনি ছবিটির বাকি অংশের কাজ শেষ করবেন বলে জানিয়েছেন। এরপরই তিনি নতুন একটি সিনেমা ‘গোলাপ’-এর শুটিং শুরু করবেন, যেখানে প্রথমবারের মতো তার বিপরীতে অভিনয় করবেন চিত্রনায়িকা পরীমনি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সরকারি চলচ্চিত্র অনুদান একটি নিয়মিত কার্যক্রম, যা ১৯৭৬ সাল থেকে চালু রয়েছে। মাঝে কিছু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এটি বন্ধ থাকলেও ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে তা আবারও নিয়মিতভাবে চালু হয়। প্রথম অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’।
সরকারি অনুদানের প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে-সৃজনশীল ও গুণগত চলচ্চিত্র নির্মাণে সহায়তা করা। তবে বাস্তবে এই উদ্দেশ্য কতটা পূরণ হচ্ছে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।