বর্তমান বিশ্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে সেই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিজেদের প্রযুক্তি–দক্ষতা বাড়াতে হবে। তাহলে বৈশ্বিক লড়াইয়ে টিকে থাকা সম্ভব হবে। ‘বাংলাদেশ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অলিম্পিয়াড ২০২৫ ’-এর জাতীয় পর্বের অতিথি ও আয়োজকেরা এ আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) আয়োজনে এবং রিভচ্যাটের পাওয়ার্ড বাই পৃষ্ঠপোষকতায় মিরপুরের বিইউবিটি ক্যাম্পাসে গতকাল শনিবার এআই অলিম্পিয়াডের জাতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

প্রায় এক হাজার নিবন্ধিত প্রতিযোগীর মধ্যে বাছাইপর্বে নির্বাচিত ৪০০ জন জাতীয় পর্বে অংশ নেন। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ বি এম শওকত আলী অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করেন। এরপর আয়োজিত হয় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী ‘মেশিন লার্নিং ও প্রোগ্রামিং কনটেস্ট’ ও এআই কুইজ প্রতিযোগিতা।

কুইজ প্রতিযোগিতা শেষে শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় ‘লিভিং ইন এআই এরা’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং ক্যাগল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার বিষয়ক কর্মশালা। বিকেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথোপকথনে অংশ নেন বিক্রুটের প্রতিষ্ঠাতা ধনঞ্জয় বিশ্বাস।

বিকেলে সমাপনী পর্বের গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ। তিনি শিক্ষার্থীদের হাল না ছেড়ে নিরন্তরভাবে সমস্যা সমাধানে লেগে থাকার আহ্বান জানান। এই পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের যুগ্ম সচিব ও ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক মো.

তৈয়বুর রহমান, আইকিউএসির পরিচালক অধ্যাপক শান্তি নারায়ণ গোষ, সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সাইফুর রহমান, রিভচ্যাটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রেজাউল হাসান ও বিডিএআইওর দলনেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন।

সমাপনী পর্বে মেশিন লার্নিং প্রতিযোগিতায় ১২ জন এবং কুইজ প্রতিযোগিতায় ২০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করে পুরস্কৃত করা হয়। আয়োজকেরা জানান, পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পের মাধ্যে আগামী আগস্টে চীনে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক এআই অলিম্পিয়াডের জন্য বাংলাদেশ দল নির্বাচন করা হবে। এ আয়োজনের পার্টনার ছিল কিশোর আলো ও বিজ্ঞান চিন্তা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অল ম প য় ড

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে হামলা যেভাবে যুদ্ধের নৈতিক যুক্তি পাল্টে দিল

গত ১৩ জুন ভোররাতে ইসরায়েল ইরানের ওপর আসন্ন হামলার আশঙ্কায় আক্রমণ চালায়। বিস্ফোরণের শব্দে ইরানের বিভিন্ন এলাকা কেঁপে ওঠে। লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ছিল ইরানের ফর্দো ও নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি, গবেষণাগার এবং জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের বাসভবন। অভিযান শেষে দেখা যায় ইসরায়েল ৯৭৪ ইরানিকে হত্যা করেছে। ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে প্রাণ হারান ২৮ জন।

ইসরায়েল তাদের এ হামলাকে আগাম ‘আত্মরক্ষা’ বলে বর্ণনা করেছে। তাদের দাবি, একটি কার্যকর পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে ইরান মাত্র কয়েক সপ্তাহ দূরে ছিল। কিন্তু ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রতিবেদন—কোথাও এমন প্রমাণ মেলেনি। এ হামলা এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন ইরানি কূটনীতিকেরা যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষদের সঙ্গে সম্ভাব্য একটি নতুন পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল।

সামরিক ও ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষণের বাইরে এখানে একটি গুরুতর নৈতিক প্রশ্ন আছে। একটি রাষ্ট্র বর্তমানে যেটা করেনি; কিন্তু ভবিষ্যতে করার আশঙ্কা আছে, এমন যুক্তির ভিত্তিতে এত বড় ধ্বংসাত্মক হামলা চালানো নৈতিকতার বিচারে কি ন্যায্য? বাকি পৃথিবীর জন্য এ ঘটনা কোন নজির স্থাপন করল?

কিন্তু সামরিক ও ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষণের বাইরে এখানে একটি গুরুতর নৈতিক প্রশ্ন আছে। একটি রাষ্ট্র বর্তমানে যেটা করেনি; কিন্তু ভবিষ্যতে করার আশঙ্কা আছে, এমন যুক্তির ভিত্তিতে এত বড় ধ্বংসাত্মক হামলা চালানো নৈতিকতার বিচারে কি ন্যায্য? বাকি পৃথিবীর জন্য এ ঘটনা কোন নজির স্থাপন করল? 

নৈতিকতাবিদ ও আন্তর্জাতিক আইনের বিশেষজ্ঞরা ‘প্রি-এম্পটিভ’ যুদ্ধ ও ‘প্রিভেন্টিভ’ যুদ্ধের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট বিভাজনরেখা টেনেছেন। প্রি-এম্পটিভ যুদ্ধ হয় আসন্ন হুমকির প্রতিক্রিয়ায়। অপর দিকে প্রিভেন্টিভ বা প্রতিরোধমূলক যুদ্ধ চালানো হয় ভবিষ্যতের কোনো সম্ভাব্য হুমকির আশঙ্কা থেকে।

শুধু প্রথম ধরনের যুদ্ধটিই নৈতিকতার বিচারে গ্রহণযোগ্য। তথাকথিত ক্যারোলাইন সূত্রে দেখা যায়, প্রি-এম্পটিভ হামলা তখনই ন্যায্য হতে পারে, যদি হুমকিটি হয় ‘তাৎক্ষণিক, চরম এবং এমন অবস্থায় যে বিকল্প কোনো উপায় নেই’। কিন্তু ইসরায়েলের ইরান আক্রমণ এসব পরীক্ষায় পাস করতে পারেনি। ইরান কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করছিল না। কূটনৈতিক পথও পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল না। এ হামলায় ধ্বংসযজ্ঞের যে ঝুঁকি ছিল (তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়া), তা সামরিক প্রয়োজনীয়তার সীমা বহুগুণে ছাড়িয়ে গেছে।

আইন নৈতিক বিধিনিষেধের প্রতিফলন করে। জাতিসংঘ সনদের ২(৪) অনুচ্ছেদ বলপ্রয়োগ নিষিদ্ধ করেছে। এখানে একমাত্র ব্যতিক্রম হলো ৫১ অনুচ্ছেদ। এ অনুচ্ছেদটিতে কোথাও সশস্ত্র আক্রমণ হলে, তারপর আত্মরক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েল যে ‘পূর্বসতর্কতামূলক আত্মরক্ষা’র কথা বলেছে, সেটি একটি বিতর্কিত আইনি প্রথার ওপর দাঁড়িয়ে তারা বলছে। এটি কোনো স্বীকৃত চুক্তিভিত্তিক আইন নয়। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ইসরায়েলের হামলাকে ‘একটি নগ্ন আগ্রাসন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এই আইন লঙ্ঘনের ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনব্যবস্থার ভিতকেই ঝুঁকির মুখে ফেলে। একটি রাষ্ট্র বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রি-এম্পশন বা আগাম হামলার যুক্তি দাঁড় করাতে পারে, তাহলে অন্যরাও তা করবে। যেমন চীন তাইওয়ানের কাছে টহলদারি দেখে আক্রমণ করতে পারে কিংবা পাকিস্তান ভারতের কথিত সামরিক তৎপরতাকে কেন্দ্র করে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। এটি বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করবে।

ইসরায়েলের পক্ষাবলম্বনকারীরা যুক্তি দিতে পারেন, অস্তিত্বের হুমকি থাকলে তখন চরম পদক্ষেপ গ্রহণ করা ন্যায্য। ইরানের নেতারা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন এবং নিয়মিতভাবে হিজবুল্লাহ ও হামাসের মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছিলেন।

এখানে যে ঐতিহাসিক ক্ষত আছে, সেটা বাস্তব। কিন্তু দার্শনিকেরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে বক্তব্য তা যতই বিদ্বেষপূর্ণ হোক না কেন, সেটা কাজের সমান নয়। উসকানিমূলক বক্তব্য আর সশস্ত্র হামলার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। যদি শুধু কথাটাই যুদ্ধ শুরুর ন্যায্যতা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে যেকোনো দেশই অপছন্দের বক্তৃতাকে অজুহাত বানিয়ে আগাম হামলা চালাতে শুরু করতে পারে। ফলে বিশ্ব ‘আদিম রাষ্ট্রের’ দশায় ঢুকে যেতে পারে, যেখানে প্রতিটি উত্তেজনাকর মুহূর্ত যুদ্ধ শুরুর অজুহাত হয়ে দাঁড়াবে।

ড্রোন নজরদারি আর স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাগুলো যখন প্রতিদিনের ভূরাজনীতিতে ঢুকে পড়ে, তখন যুদ্ধ হয়ে ওঠে স্বাভাবিক বিষয়। আর শান্তি হয়ে যায় ব্যতিক্রমী ঘটনা।

হোসেইন দাব্বাঘ নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি লন্ডন–এর দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক

আল–জাজিরা ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ