রাজশাহীতে ‘ঘুষের জন্য ফাইল আটকে রাখা’ মাউশির উপপরিচালককে বদলি
Published: 18th, May 2025 GMT
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক (ডিডি) আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে ঘুষের টাকা না পেয়ে ৯১টি ফাইল আটকে রাখার প্রমাণ পেয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ রোববার তাঁকে মাউশি থেকে ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে বদলি করা হয়েছে।
মাউশি রাজশাহীতে যোগ দেওয়ার ৫ মাস ২৯ দিনের মাথায় আলমগীর কবীরকে বদলি করা হলো। তাঁর বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন উপসচিব মো.
মাউশি রাজশাহীর উপপরিচালক হিসেবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম যোগ দেন আলমগীর কবীর। তারপর তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম করে এমপিও দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগের তদন্ত চলাকালে তাঁকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সবেতন তিনি পরিচালক হতে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। কিন্তু পরিচালক হতে পারেননি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৮ নভেম্বর তাঁকে আবার মাউশি রাজশাহীর উপপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়। এ নিয়ে ১৯ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘দুর্নীতির অভিযোগে বদলি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ পাওয়া কর্মকর্তাই মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে মাউশির উপপরিচালকের দপ্তরে দুদক পেল আটকে রাখা ১৫১ ফাইল১১ মার্চ ২০২৫রাজশাহী মাউশিতে ফেরার পর আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে ঘুষের জন্য ফাইল আটকে রাখার অভিযোগ আসতে শুরু করে। এ বিষয়ে দুদকের হটলাইনে অভিযোগ গেলে দুবার তদন্ত করে দুদক অভিযোগের প্রমাণ পায় এবং সে মোতাবেক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠায়।
সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল রাজশাহী মাউশিতে অভিযান চালায় দুদক। তখন দুদক কর্মকর্তারা উপপরিচালক আলমগীরের কাছে ৯১টি ফাইল পেন্ডিং দেখতে পান। তাঁর টেবিলে আটকে থাকা ফাইলগুলো রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকদের নতুন এমপিওভুক্তির আবেদনের। ‘টাকা ছাড়া ফাইল ছাড়েন না ডিডি’—এমন অভিযোগে দুদকের একটি দল ওই দিন তাঁর দপ্তরে অভিযান চালায়। এ নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে ‘ঘুষ না দেওয়ায় মাউশির ডিডি আটকে রেখেছিলেন ৯১ ফাইল, প্রমাণ পেল দুদক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুনদুর্নীতির অভিযোগে বদলি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ পাওয়া কর্মকর্তাই হলেন মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক১৯ নভেম্বর ২০২৪এর আগে ১১ মার্চ আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একবার অভিযান চালিয়েছিল দুদক। তখন ১৫১টি ফাইল আটকে রাখার প্রমাণ পেয়েছিল দুদক। এ ব্যাপারে দুদক সদর দপ্তরে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। এ নিয়ে ওই দিন ‘রাজশাহী মাউশির উপপরিচালকের দপ্তরে দুদক পেল আটকে রাখা ১৫১ ফাইল’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এ ছাড়া ২৮ মার্চ ফাইল আটকে রাখাসহ সাত অভিযোগে আলমগীর কবীরকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছিলেন মাউশি রাজশাহীর পরিচালক। আলমগীর শোকজের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠান রাজশাহীর পরিচালক।
আরও পড়ুনঘুষ না দেওয়ায় ৯১টি ফাইল আটকে রেখেছিলেন মাউশি রাজশাহীর ডিডি, প্রমাণ পেল দুদক৩০ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন টেলিকম নীতিমালা নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির উদ্বেগ
অন্তর্বর্তী সরকার টেলিকম খাতে শিগগিরই নতুন নীতিমালা করতে যাচ্ছে বলে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই নীতিমালা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, টেলিকম খাতের পলিসি নির্ধারণে সরকার তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। গ্রামীণ জনগণের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা টেলিকম খাতের টেকসই উন্নয়নে বাধা হতে পারে।
বিএনপি আরও বলেছে, পাশাপাশি এই নীতি দেশের বড় মোবাইল অপারেটরদের সুবিধা দেবে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আজ বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে উদ্বেগের বিষয়টি জানান মির্জা ফখরুল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাঁর দল জানতে পেরেছে, শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকার 'ড্রাফট টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি-২০২৫' প্রকাশ করবে। দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে বিএনপি জরুরি ভিত্তিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গা থেকে সরকারকে সরে আসতে আহ্বান জানিয়েছে। টেলিকম খাতের নতুন পলিসি বাস্তবায়নের আগে সরকারকে পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণের পাশাপাশি এই খাতের বিশেষজ্ঞ, ভোক্তা ও সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।
বিএনপি মনে করে, টেলিকম খাতে সরকারের নতুন পলিসি বাজারে বড় কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য বাড়াবে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সংকটে ফেলার পাশাপাশি টেলিকম খাতে বিদেশি বিনিয়োগকেও নিরুৎসাহিত করবে। যা এই খাতের স্থিতিশীলতাকে বিঘ্ন ঘটাবে। টেলিকম খাতে সরকারের নতুন পলিসি বড় মোবাইল অপারেটরদের প্রতি পক্ষপাত বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, 'সরকার নতুন পলিসির বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে না জানালেও আমরা জানতে পেরেছি। তাই তাড়াহুড়ো করে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন। আমরা চাই প্রযুক্তির সুবিধা যাতে জনগণ ভোগ করতে পারে।'
আবদুল মঈন খান আরও বলেন, 'সরকার সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেওয়ার আগেই আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। নতুন পলিসির সঙ্গে দেশের প্রান্তিক জনগণও সম্পৃক্ত। যারা বিশেষজ্ঞ তাদের কাজ হবে পরামর্শ দেওয়া। কিন্তু তারা যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, সেটা জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করা হবে।'