জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ সংশোধন নয়, সরাসরি বাতিল চেয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত প্ল্যাটফর্ম ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কলমবিরতি কর্মসূচি চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছেন পরিষদ। রোববার আগারগাঁও এনবিআর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব ঘোষণা দেন ঐক্য পরিষদের কর্মকর্তারা। 

সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, গত চার দিনের ধারাবাহিকতায় সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা কর্মসূচি চলবে।

সংগঠনের পক্ষে অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের মতামত উপেক্ষা ও সংস্কার কমিটির সুপারিশ প্রকাশ না করে নজিরবিহীনভাবে দ্রুত ও গোপনীয়তার সঙ্গে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এই সংস্কারের উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতা নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী মহল, পলিসি থিংক-ট্যাংকসহ বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তুলেছেন।

তিনি বলেন, রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের নামে ৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এনবিআরকে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে কোনো কারণ ছাড়াই। যেখানে রাজস্ব এজেন্সিকে সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। সেখানে এটিকে বিলুপ্ত করে রাজস্ব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে দুটি বিভাগ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা রাজস্ব ব্যবস্থাপনার আন্তর্জাতিক রীতিনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থি। 

বিলুপ্ত নয়, এনবিআরকে স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী এজেন্সি হিসেবে রাখতে হবে এমন দাবি করে সেহেলা সিদ্দিকী বলেন, এনবিআরে গত ৪৫ বছর ধরে ফুলটাইম চেয়ারম্যান নেই। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যিনি সচিব তিনি সচিবালয়ে দায়িত্বের পাশাপাশি এনবিআরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। যদিও এই দুইটা ভিন্ন পদ। পোর্টফোলিও ভিন্ন। এই সচিবরা ভিন্ন ক্যাডার থেকে আসেন। ফলে তাদের আয়কর, ভ্যাট এবং কাস্টমসসহ রাজস্ব আইন ও পদ্ধতি অভিজ্ঞতা এবং পেশাগত জ্ঞান থাকে না। এতে এনবিআরের কাজকর্ম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। 

আন্দোলনে সাময়িক অসুবিধার জন্য করদাতা ও সেবাপ্রার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে ঐক্য পরিষদ। সংগঠনের পক্ষে উপকমিশনার সানজিদা খানম বলেন, রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা আলাদা করার পক্ষে। কিন্তু সেটি হতে হবে বাস্তবমুখী, অংশীজনের মতামতভিত্তিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ মূল্যায়নের মাধ্যমে। দাবি আদায় হলে নির্ধারিত অফিস সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময়ে কাজ করে এনবিআরের অনিষ্পন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। 

এদিকে আজ এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা আল আমিন শেখ এক ক্ষুদেবার্তায় জানিয়েছেন, অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি হয়েছেন। তিনি আগামী মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে আলোচনায় বসবেন। 

এ বিষয়ে সানজিদা বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেছে, অর্থ উপদেষ্টা আলোচনায় বসবেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আসেনি। অর্থ উপদেষ্টার নির্দেশনায় যদি বসতে হয়, তাহলে সেখানে ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি দল থাকতে হবে। শুধু অর্থ উপদেষ্টা থাকলে হবে না। প্রধান সংশ্লিষ্ট অন্য উপদেষ্টাদেরও আলোচনায় রাখতে হবে। কারণ এনবিআর চেয়ারম্যান একাধিকবার অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বসেছেন। কিন্তু তাতে কোনো ফলাফল আসেনি।

অধ্যাদেশ বাতিল নাকি সংযোজন-বিয়োজন হলেও আলোচনায় বসবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সেহেলা সিদ্দিকী বলেন, এখন আর অধ্যাদেশ সংযোজন-বিয়োজনের পথ নেই। কোনো সংশোধন নয়, সরাসরি বাতিল করতে হবে।

অতিরিক্ত কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেছে, অর্থ উপদেষ্টা সঙ্গে বসতে চান। কিন্তু অফিসিয়ালি কোনো প্রস্তাবনা না পাওয়ায় দ্বিধা তৈরি হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আর কেউ থাকছেন কিনা, এই আলোচনায় বসার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা আছে কিনা- এসব সুস্পষ্ট করতে হবে। এটি বাতিল করার আগ পর্যন্ত অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে না।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনব আর কর মকর ত ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।

ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।

আরো পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।

যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।

লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।

বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ