অচলাবস্থার মধ্যেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করলেন কুয়েট উপাচার্য
Published: 19th, May 2025 GMT
অচলাবস্থার মধ্যেই কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক হযরত আলী।
সোমবার (১৯ মে) সকালে তিনি খুলনা ছেড়ে ঢাকায় যান বলে কুয়েটের একজন সিনিয়র ডিনকে মোবাইলে জানিয়েছেন।
বিষয়টি জানতে কুয়েট উপাচার্যের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
আরো পড়ুন:
শিক্ষার্থী নির্যাতনের প্রতিবাদ পাবিপ্রবি শিক্ষকের
জাবিতে আবাসিক হলের পাশে একাডেমিক ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ
এর আগে, গত ৪ মে থেকে কুয়েটের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও পাঁচ দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন শুরু করেন কুয়েটের শিক্ষকরা। শিক্ষকদের দেওয়া প্রথম সাতদিনের আলটিমেটাম গত বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেলে শেষ হয়। এরপর ১৮ ও ১৯ ফেব্রয়ারি শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ জানানোর পর সোমবার দ্বিতীয় দফায় ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে উপাচার্য দপ্তরের সামনে দুপুর ১২টায় অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষক সমিতি।
এরই অংশ হিসেবে সোমবার দুপুরে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। এ সময় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করলে জানতে পারেন তিনি খুলনায় নেই।
পরে সাংবাদিকদের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.
তিনি আরো বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছি। ক্লাসে ফেরার জন্য শিক্ষকরা উদগ্রীব। কুয়েটের স্বাভাবিক কার্যক্রম অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছে। ছাত্ররাও আশ্বাস দিয়েছে যে, তারা শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে। কিন্তু এরপরেও শিক্ষকদের দাবি পূরণে কেন দেরি হচ্ছে? কর্মবিরতির সপ্তম দিন পার করে অষ্টম দিনে পড়েছে। এখনো কেনো কুয়েট প্রশাসন নিশ্চুপ?” বর্তমান অচলাবস্থার জন্য তিনি কুয়েট প্রশাসনকেই দায়ী করেন।
কুয়েটের রেজিস্ট্রারের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “মঙ্গলবার উপাচার্য ঢাকা থেকে কুয়েটে আসবেন বলে তাকে জানানো হয়েছে। তবে অফিসিয়াল কোনো পত্র এখনো পাওয়া যায়নি। এমনকি উপাচার্য অস্থায়ীভাবে কার ওপর দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, সেটিও জানা যায়নি।”
তবে কুয়েটের বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডিন এবং গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “রোববার উপাচার্য আমাকে মোবাইলে জানান, তিনি ঢাকায় যাবেন। মঙ্গলবার (২০ মে) তিনি খুলনা ফিরবেন বলেও জানিয়েছেন। যদিও আমার ওপর দায়িত্ব অর্পণের কোনো কাগজ পাইনি।”
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. সাহিদুল ইসলাম বলেন, “মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আবার দেখব। এর মধ্যে সংকট নিরসন না হলে আবারো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১১টা থেকে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে।”
এদিকে, শিক্ষকদের পাশাপাশি সেখানে উপস্থিত হয়ে কুয়েটের ১৯তম ব্যচের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা দ্রুত ক্লাস শুরুর দাবি জানাই। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি আমরা ১৯তম ব্যচের শিক্ষার্থীরা। আমাদের দুইটি পরীক্ষা আটকে আছে। ১ হাজার শিক্ষার্থী সেশনজটে পড়ছে। আর ১ হাজার শিক্ষার্থী মানে ১ হাজার পরিবার।
কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাছুদের আমলে গঠিত তদন্ত কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে অটল।
এ বিষয়ে তারা বলেন, আমরা নতুন কমিটির পক্ষে নই, তাহলে আরো পিছিয়ে যাবে। আমরা চাই বর্তমান কমিটিই তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে দ্রুত অচলাবস্থার অবসান করুক।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষকদ র উপ চ র য
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’