বাংলাদেশ একটি সংকটময় ও গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর আমরা একটি বিরল মুহূর্তে উপনীত হয়েছি, যেখানে ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ আমাদের সামনে উপস্থিত। 

সংস্কার নিয়ে চলমান অচলাবস্থা নিরসনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ন্যূনতম ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। এ জন্য প্রথমেই অবশ্যপালনীয় শর্তগুলোকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন, যা ছাড়া কোনো সংস্কারপ্রক্রিয়া সফল হবে না।

এ অবস্থায় সংস্কারপ্রত্যাশী সমাজের বিভিন্ন অংশের ক্রমাগত সংলাপের মাধ্যমে উত্থাপিত স্বপ্ন ও ভাবনাকে ধারণ করে নাগরিক সমাজের কিছু সংগঠন ও ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত ‘নাগরিক কোয়ালিশন’ নাগরিকদের পক্ষ থেকে সংবিধান সংস্কারের সাতটি প্রস্তাব ও দুটি রোডম্যাপ দিয়েছে। এই সাত প্রস্তাবকে আমরা অবশ্যপালনীয় শর্ত বলে মনে করি।

এসব শর্ত আমরা শুধু নিজেদের মধ্যে বা সংবিধানবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেই তৈরি করিনি; বরং বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও অন্য অনেক দলের শীর্ষ নেতা ও দলের নির্বাচিত সংস্কার কমিটির নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। 

এই অবশ্যপালনীয় শর্তগুলো চিহ্নিত করতে আমরা তিনটি মূলনীতি অনুসরণ করেছি। প্রথমত, সংবিধানকে ক্ষমতাসীনদের কারসাজি থেকে মুক্ত রেখে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সব নাগরিকের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, নিরপেক্ষ নিয়োগের মাধ্যমে কার্যকর নজরদারি নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ রোধে প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা। 

এসব নীতি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের সাতটি প্রস্তাব হচ্ছে: 

১.

জুলাই সনদ: রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদকে নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করবে। এই সনদে জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সংগঠনগুলোর জন্য ভবিষ্যতে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের দায়ে কোনো ধরনের আইনি হয়রানি বা বিচারের মুখোমুখি না হওয়ার সাংবিধানিক সুরক্ষা থাকবে। এই সনদ সংবিধানের পরিশিষ্ট হিসেবে সংযুক্ত হবে এবং সংবিধানের প্রস্তাবে একে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

২. জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা: উচ্চকক্ষের সব আসন রাজনৈতিক দলগুলোর নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে গঠিত হবে। এই উচ্চকক্ষের মূল দায়িত্ব নিম্নকক্ষের সঙ্গে একটি তদারকিমূলক সম্পর্ক তৈরি করা। সংবিধান সংশোধন, জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত চুক্তি এবং যুদ্ধ ঘোষণা-সংক্রান্ত বিলে নিম্নকক্ষের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চকক্ষের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা থাকবে। সাংবিধানিক ও জবাবদিহি নিশ্চিতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারপারসন ও সদস্যদের নিয়োগ এবং অপসারণ সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসারে উচ্চকক্ষের ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত দায়িত্ব পালন করবে: 

ক. সাংবিধানিক ও জবাবদিহি নিশ্চিতকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পর্যালোচনা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। খ. জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রকাশ্য শুনানির আয়োজন। এবং গ. নির্বাহী সিদ্ধান্তগুলোর পর্যালোচনা। 

৩. সাংবিধানিক নিয়োগ: এই কাজ দুই ভাবে করা সম্ভব—উচ্চকক্ষকে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে, অথবা জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) মাধ্যমে। যেহেতু সাংবিধানিক কাউন্সিলের মাধ্যমে আরেকটি ক্ষমতার ভরকেন্দ্র তৈরির বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাই আমরা উচ্চকক্ষ দিয়েই একই দায়িত্ব পালনের একটি বিকল্প প্রস্তাব করেছি।

খেয়াল রাখতে হবে, এটি বিকল্প প্রস্তাব। রাজনৈতিক দলগুলো এনসিসির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছালে সেটাও আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য। সাংবিধানিক সংস্থা (যেমন নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, কম্পট্রোলার ও মহা হিসাব নিরীক্ষক দপ্তর) এবং জবাবদিহিমূলক অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের (যেমন দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, স্থানীয় সরকার কমিশন, তথ্য কমিশন) নিয়োগগুলো নির্বাহী বিভাগের মনোনয়নের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের অথবা এনসিসির অনুমোদনের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। সব জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান উচ্চকক্ষের স্থায়ী কমিটির কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। উচ্চকক্ষ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সাংবিধানিক সংস্থা এবং স্বাধীন জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। 

উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ বিচারিক নিয়োগ কমিশনের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে এবং উচ্চকক্ষের স্থায়ী কমিটি শুধু তাদের মনোনয়ন যাচাই করতে পারবে। নতুন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, যেমন স্থানীয় সরকার কমিশন, পুলিশ কমিশন, জনপ্রশাসন কমিশন, শ্রম কমিশন, নারী কমিশন, ন্যায়পালের কার্যালয়, স্বাধীন সংস্কার বাস্তবায়ন কমিশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং সেগুলোকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল, প্রতিরক্ষাপ্রধানসহ নির্বাহী বিভাগভুক্ত পদগুলোতে সরকার নিয়োগ দেবে। 

■ একটি স্বাধীন সংস্কার বাস্তবায়ন কমিশন গঠন করতে হবে, যা সংসদের আইন ও আওতাবহির্ভূত বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সংস্কার সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবে।  ■ নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের প্রতি অনাস্থা এবং গণপরিষদ না হলে সংবিধান সংস্কারের স্থায়িত্ব ও বৈধতা নিয়ে সন্দেহ দলগুলোকে একে অপরের থেকে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে।

৪. তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা: সংসদ বিলুপ্তির দুই মাস আগে একটি ১০ সদস্যের সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি (এপিপিসি) গঠন করা হবে। সেখানে সরকারি দল থেকে পাঁচজন এবং বিরোধী দল থেকেও পাঁচজন সদস্য থাকবেন। সরকারি ও বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনজন করে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। এই ছয় প্রার্থী থেকে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিটির অন্তত ৮ সদস্যের সম্মতি প্রয়োজন হবে। যদি কমিটি একমত হতে ব্যর্থ হয়, তবে ছয়জন মনোনীত ব্যক্তির মধ্যে থেকে উচ্চকক্ষ ‘র‍্যাংকড চয়েস ভোটিং’পদ্ধতিতে একজনকে নির্বাচন করবে। 

৫. প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা: কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। 

৬. সংসদ পরিচালনা: চারটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে; ক. সরকারি হিসাব-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, খ. বিশেষ অধিকার-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, গ. বিল–সংক্রান্ত সিলেক্ট কমিটি ও ঘ. সাংবিধানিক ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। এর মধ্যে সরকারি হিসাব-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং সাংবিধানিক ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির প্রধান বিরোধী দল থেকে আসতে হবে।

জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষের ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত হবেন। সংসদের প্রতি অধিবেশনে ডেপুটি স্পিকার সংসদ পরিচালনার জন্য মোট ফ্লোর টাইমের অন্তত ৪০ শতাংশ সময় পাবেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি নির্ধারিত বাধ্যতামূলক প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকতে হবে, যেখানে তিনি সংসদ সদস্যদের সরাসরি প্রশ্নের জবাব দেবেন।

৭. নারীদের সরাসরি নির্বাচন: রাজনৈতিক দলগুলোকে আসন্ন নির্বাচনে সাধারণ আসনের জন্য ন্যূনতম ২০ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনীত করতে হবে। সেই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ১০০টি অতিরিক্ত সংরক্ষিত নারী আসন সরাসরি নাগরিকদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে।

এই সংবিধান বাস্তবায়নের জন্য আমরা দুটি রোডম্যাপ প্রস্তাব করছি। এই রোডম্যাপ দুটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার সময় লক্ষ করেছি যে সংস্কারের একটি পূর্বঘোষিত প্রক্রিয়া, ধাপ এবং সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ধারণের মানদণ্ড না থাকায় সংস্কারপ্রক্রিয়ার কোন পর্যায়ে সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করবে এবং সংবিধানের সংস্কারগুলো আদালতের আদেশের কারণে ভবিষ্যতে বাতিল হয়ে যাবে কি না, সে বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এই অনাস্থা সংস্কারের বিভিন্ন এজেন্ডায় রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করছে। 

আমরা মনে করি, সংস্কারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানসম্মতভাবে সংস্কারের সম্পূর্ণ রোডম্যাপ নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, এই রোডম্যাপ নিয়ে ঐকমত্যের অভাবে বিভিন্ন দল সংস্কারের বিভিন্ন এজেন্ডায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বা বিচারিক পর্যালোচনার সংবিধান সংস্কারের স্থায়িত্ব ও বৈধতা নিয়ে হুমকির আশঙ্কায় পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যেখানে মূল লক্ষ্যে হয়তো দলগুলোর মধ্যে বড় কোনো দূরত্ব নেই।

ফলে আমরা মনে করি, ঐকমত্য কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কারের সম্পূর্ণ রোডম্যাপ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো জরুরি। কারণ, কোন রোডম্যাপ বেছে নেওয়া হচ্ছে, তার ভিত্তিতে দলগুলোর অবস্থান পরিবর্তিত হচ্ছে। 

প্রস্তাবিত দুই রোডম্যাপ

বিকল্প ১: সংবিধান প্রণয়ন পরিষদ–পদ্ধতি: ৩০০ আসনবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচিত সংসদ একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ এবং সংবিধান প্রণয়ন পরিষদ (কনস্টিটিয়েন্ট অ্যাসেম্বলি) হিসেবে কাজ করবে। বিজয়ী দল বা জোট সরকার গঠন করবে। 

সংবিধান প্রণয়ন পরিষদ ৯০ দিনের মধ্যে একটি নতুন খসড়া সংবিধান তৈরি করবে, যার ভিত্তি হবে: ক. রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানো সংস্কার প্রস্তাবসমূহ, যা ঐকমত্য কমিশন ও জুলাই সনদ থেকে গ্রহণ করা। খ. রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত, কিন্তু ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি, এমন সংস্কার প্রস্তাবগুলোকেও রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে সংবিধান প্রণয়ন পরিষদের আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।

বিকল্প ২: সর্বদলীয় ঐকমত্য–পদ্ধতি: সব রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষরিত জুলাই সনদ সংবিধানের একটি রাজনৈতিক ভিত্তি হিসেবে গৃহীত হবে। ঐকমত্য কমিশন এবং সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো এবং জুলাই সনদের ভিত্তিতে একটি সংবিধান সংশোধনী বিলের খসড়া প্রণয়ন করবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা একটি ঐচ্ছিক পূর্ব-নির্বাচনী চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন, যেখানে তাঁরা নির্বাচিত হলে খসড়া বিলটি অনুমোদন এবং জুলাই সনদকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার অঙ্গীকার করবেন।

৩০০ আসনবিশিষ্ট একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যার মাধ্যমে একটি সংসদ গঠিত হবে, যা শুধু জাতীয় সংসদ হিসেবে কার্যকর থাকবে। সাধারণ নির্বাচনের সঙ্গে একই সঙ্গে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে জুলাই সনদ এবং সম্মতিপ্রাপ্ত সংবিধান সংশোধনীগুলোর খসড়া বিল সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ভোটারদের সম্মতি নেওয়া হবে।

যদি গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ এবং ইতিমধ্যে সম্মতিপ্রাপ্ত সংবিধান সংশোধনীগুলোর অনুমোদনের জনসম্মতি পাওয়া যায়, তবে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ খসড়া সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাবিত বিলটি অনুমোদন করে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে। আর যদি গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ এবং সম্মতিপ্রাপ্ত সংবিধান সংশোধনীগুলোর অনুমোদনের জনসম্মতি না পাওয়া যায়, তবে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ প্রস্তাবিত বিল এবং সনদের বিষয়ে সংসদে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। 

উভয় ক্ষেত্রেই একটি স্বাধীন সংস্কার বাস্তবায়ন কমিশন গঠন করতে হবে, যা সংসদের আইন ও আওতাবহির্ভূত বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সংস্কার সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবে। এই কমিশন নিয়মিত বিরতিতে সংসদকে তাদের বাস্তবায়নের অগ্রগতির প্রতিবেদন প্রদান করবে। এসব প্রস্তাব ও রোডম্যাপের আলোকে আমরা রাজনৈতিক দল এবং সরকারের কাছে তিনটা দাবি রাখছি; এক. রাজনৈতিক দলগুলোকে সংবিধান সংস্কারের সাতটি মুখ্য প্রস্তাব বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করতে হবে। দুই. ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত দুটি রোডম্যাপের মধ্যে যেকোনো একটিতে ঐকমত্য পৌঁছাতে হবে। তিন. অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্মত হওয়া রোডম্যাপের ভিত্তিতে দ্রুত নির্বাচনের একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা করতে হবে। 

সংস্কার একটি ক্রমাগত চলমান প্রক্রিয়া। এই ৭/২ প্রস্তাব প্রণয়নের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় আমরা দেখেছি যে দলগুলোর মধ্যে মৌলিক প্রশ্নে যে দূরত্ব রয়েছে, তা অলঙ্ঘনীয় নয়। তবে নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের প্রতি অনাস্থা এবং গণপরিষদ না হলে সংবিধান সংস্কারের স্থায়িত্ব ও বৈধতা নিয়ে সন্দেহ দলগুলোকে একে অপরের থেকে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, এই অনাস্থা দূর না করে ঐকমত্য অর্জন সম্ভব নয়। অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে ঐকমত্য কমিশন অক্লান্ত চেষ্টা করছে। তবে দলগুলোর মধ্যে এই অনাস্থা দূর করতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। 

আমরা মনে করি, সংস্কারের তিনটি প্রধান পক্ষ একটা টেবিলের তিনটা খুঁটি। একটি খুঁটি ভেঙে গেলে পুরো টেবিল ভেঙে পড়ে। একটি খুঁটি রাজনৈতিক দলগুলো, যাদের সাতটি মৌলিক প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। দ্বিতীয় খুঁটি নিরপেক্ষ রেফারি ঐকমত্য কমিশন, যাদের বেছে নেওয়া প্রস্তাব ও নিক্তি ঐকমত্যের সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ধারণ করছে। কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ বেছে নিতে হবে। তৃতীয় খুঁটি সরকার, যাকে সম্মত হওয়া রোডম্যাপের ভিত্তিতে সংস্কারের খাতিরে দ্রুত নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করতে হবে। আমাদের আশঙ্কা, এই তিনটি লক্ষ্যের যেকোনো একটিতে ব্যর্থতা সংস্কারপ্রক্রিয়াকে প্রতিবন্ধতার সম্মুখীন করবে।

● লেখকেরা নাগরিক কোয়ালিশনের সদস্য

*মতামত লেখকদের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত র প রস ত ব স স ক র কম ন শ চ ত কর জ ল ই সনদ প রক র য় ন র জন য সরক র র গঠন কর আম দ র অন স থ কম ট র ঠ ত হব ব কল প দল থ ক ন করব সদস য ক ষমত র একট

এছাড়াও পড়ুন:

উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের আগে ভেবে দেখার আহ্বান ইসলামী আন্দোলনের

উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপন করা হলে অপরাধ কমার পরিবর্তে মামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটি মনে করছে, অতীতে উপজেলা পর্যায়ে আদালত থাকলেও সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করা দরকার।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের কাছে দলের এই অবস্থান তুলে ধরেন ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের বিষয়টিকে আরও ভেবে দেখার আহ্বান জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের বিধান বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে ইসলামী আন্দোলন। তবে প্রস্তাবের সঙ্গে মতামত যোগ করে গাজী আতাউর রহমান বলেন, পূর্বে রাজনৈতিকভাবে কিংবা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিস্বার্থে যেভাবে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারতেন, এটা না রেখে কমিশনের পাশাপাশি ভুক্তভোগীর পরিবারের সম্মতির বিষয়টিকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের মূল প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গাজী আতাউর রহমান জানান, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠন করার বিষয়ে তারা একমত। এ ক্ষেত্রে প্রথমে চার বিভাগ এবং পর্যায়ক্রমে আট বিভাগেই গঠন করা যেতে পারে।

বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে আরও অংশ নেন দলের যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম।

আরও পড়ুনউচ্চ ও নিম্ন আদালতকে ‘ফ্যাসিস্টমুক্ত’ করতে হবে: সালাহউদ্দিন আহমদ২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে কি শতভাগ একমত হতে হবে
  • রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে শর্ত যোগ করার প্রস্তাব জামায়াতের
  • কোন কোন অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য, সে ব্যাপারে আইনি ব্যাখ্যা থাকা উচিত: এনসিপি
  • উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের আগে ভেবে দেখার আহ্বান ইসলামী আন্দোলনের
  • বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠায় ঐকমত্য হয়েছে: আলী রীয়াজ
  • রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ও বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য
  • আত্মত্যাগের পথ পেরিয়ে সুযোগ এসেছে, হেলায় হারানো যাবে না: আলী রীয়া
  • প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ নিয়ে আলোচনায় একাধিক প্রস্তাব
  • নির্বাচনী রাজনীতি কোন দিকে গড়াচ্ছে?
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দ্বিমত নেই : আলী রীয়া