রাজশাহীতে জমিজমার সালিস থেকে ককটেলসহ ছয়জন গ্রেপ্তার
Published: 23rd, May 2025 GMT
রাজশাহীর মোহনপুরে জমিজমার সালিস চলার সময় দেশি অস্ত্র, ককটেলসহ ছয়জনকে আটক করেন এলাকার লোকজন। পরে তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে এ সালিসের আয়োজন করা হয়েছিল। রাত সাড়ে আটটার দিকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা গিয়ে ককটেলগুলো নিষ্ক্রিয় করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছে। গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন উপজেলার নওপাড়া গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে আলিফ হোসেন (১৯), রাজশাহী নগরের নওদাপাড়া মহল্লার শাহিনুর রহমানের ছেলে সোহাগ আহমেদ (২৯), শালবাগান এলাকার বাবলার ছেলে বাপ্পি (৩০) ও পাপ্পু (২৮), মনসুর রহমানের ছেলে মিনহাজুল ওরফে সোহান (২৬) ও পবা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে মারুফ মোর্তুজা (২৭)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জাহানাবাদ ইউনিয়নের কোটালিপাড়া ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কৃষক রফিকুল ইসলামের দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। বিষটি নিষ্পত্তির জন্য গতকাল দুপুর ১২টার দিকে জাহানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুব আর রশিদসহ কয়েকজন সালিসে বসেন। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদ কম্পাউন্ডের ভেতর দুটি মোটরসাইকেলে এসে কয়েকজন সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করছিলেন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের আটক করেন। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে দেশি অস্ত্র ও স্কুলব্যাগে ককটেল পাওয়া যায়। তাঁদের ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ আসে।
আজ শুক্রবার মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, দেশি অস্ত্রসহ ছয়টি ককটেল পাওয়া গেছে। গতকাল রাতে বোম ডিস্পোজাল ইউনিট ককটেল নিরাপদে সরিয়ে নেয়। পরে সেগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়েছিল। গ্রেপ্তার ছয়জনকে আজ আদালতে পাঠানো হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গুলিবিদ্ধ নাদিমের পেট থেকে রক্ত ঝরছিল: জবানবন্দিতে স্ত্রী তাবাসুম
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ নাদিম মিজানের স্ত্রী তাবাসুম আক্তার জবানবন্দিতে বলেছেন, গত বছরের ১৯ জুলাই তাঁর স্বামী জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। বেলা আড়াইটার দিকে স্থানীয় লোকজন তাঁর স্বামীকে গুলিবিদ্ধ-রক্তাক্ত অবস্থায় বাসায় নিয়ে আসেন। তিনি দেখতে পান, তাঁর স্বামীর পেট থেকে রক্ত ঝরছে। স্বামীর এই অবস্থা দেখে তিনি জ্ঞান হারান।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা একটি মামলায় আজ সোমবার তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে তাবাসুম এ কথাগুলো বলেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজন এই মামলার আসামি। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
জবানবন্দিতে তাবাসুম বলেন, গত বছরের ১৯ জুলাই তাঁর স্বামী নাদিম জুমার নামাজ পড়তে রামপুরা থানার সামনের মসজিদে যান। বেলা আড়াইটার দিকে স্থানীয় লোকজন তাঁর স্বামীকে গুলিবিদ্ধ-রক্তাক্ত অবস্থায় বনশ্রী এলাকার বাসায় (তাবাসুম বাবার বাড়ি) নিয়ে আসেন। তিনি দেখতে পান, তাঁর স্বামীর পেট থেকে রক্ত ঝরছে। স্বামীর এই অবস্থা দেখে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। ৫-১০ মিনিট পর জ্ঞান ফিরলে তিনি জানতে পারেন, তাঁর স্বামীকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাইরে তখন অনবরত গুলি চলছিল। তাই তিনি হাসপাতালে যেতে পারেননি। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁর স্বামীকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তিনি জানতে পারেন, নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর থানার সামনে তাঁর স্বামীর শরীরে পুলিশ ও বিজিবির ছোড়া গুলি লাগে।
হাসপাতাল থেকে নাদিমের লাশ বাসার নিচে আনা হয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন তাবাসুম। তিনি বলেন, তখন রামপুরা থানার পুলিশ লাশ নিয়ে যেতে চায়। তাঁরা নাদিমের লাশ দোতলার বাসায় নিয়ে যান। সে সময় বাসায় ও বাসার আশপাশে অনেক আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা জড়ো হন। তখন হেলিকপ্টার থেকে বাড়ি ও ছাত্রজনতাকে লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। তখন তাঁর মা ছাদে ছিলেন। টিয়ারশেল মায়ের শরীরে লাগতে গেলে দুলাভাই মাকে রক্ষা করেন। টিয়ারশেল ছাদে পড়ে বিস্ফোরিত হয়। তিনি (তাবাসুম) রুমে বসে হেলিকপ্টারের আওয়াজ শুনতে পান। টিয়ারশেলের গন্ধ পান। এতে তাঁর চোখমুখ জ্বলছিল।
সেদিন রাত ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নাদিমের লাশ মিরপুর-১ নম্বরের ঈদগাহ মাঠে নেওয়া হয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করে তাবাসুম। তিনি বলেন, জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নাদিমের দাফন সম্পন্ন হয়।