শিল্পে উৎপাদন খরচ কমানোর ব্যবস্থা থাকা জরুরি
Published: 26th, May 2025 GMT
দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখন বড় চ্যালেঞ্জ পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া। একদিকে বেড়েছে ব্যাংকঋণের সুদহার, অন্যদিকে কমেছে পণ্যের কাঁচামাল ও প্রস্তুত পণ্যের মধ্যকার ট্যারিফ বা কর ব্যবধান। সেই সঙ্গে জ্বালানি খরচও গত দু-তিন বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে গেছে। এসব কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত কয়েক বছরে যে পরিমাণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, সেই তুলনায় পণ্যের দাম বাড়ানো সম্ভব হয়নি। কারণ, কয়েক বছর ধরেই দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় পণ্যের দাম বাড়াতে গেলে ব্যবসায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ব্যাংক খাতে একদিকে সুদহার বেড়েছে, অন্যদিকে ঋণের মেয়াদও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় কম। বর্তমানে মূলধনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঋণের সর্বোচ্চ মেয়াদ পাঁচ থেকে ছয় বছর। অথচ ভারতসহ আমাদের প্রতিযোগী অনেক দেশে মূলধনি বিনিয়োগের ক্ষেত্র তুলনামূলক কম সুদে ১২ থেকে ১৫ বছর মেয়াদি ঋণ পাওয়া যায়। উচ্চ সুদে কম মেয়াদি ঋণ নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করতে গেলে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এসব কারণে বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠান ও শিল্পোদ্যোগ বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাজেট সামনে রেখে সরকারের কাছে আমাদের অন্যতম প্রত্যাশা, যতভাবে পণ্যের উৎপাদন খরচ কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সবগুলোরই প্রতিফলন যেন বাজেটে থাকে। কর কমানো থেকে শুরু করে নীতি সহায়তা, ব্যাংকঋণের সুদ কমানোর ঘোষণা দেখতে চাই আমরা বাজেটে। কারণ, নতুন বিনিয়োগ দূরে থাক, বিদ্যমান শিল্প টিকিয়ে রাখা এখন উদ্যোক্তাদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আগামী বাজেটে আমরা করসুবিধার পাশাপাশি নীতির ধারাবাহিকতা দেখতে চাই।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে নানাভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। নীতির ধারাবাহিকতা, ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি, সর্বক্ষেত্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সরকারি সেবাপ্রাপ্তির সহজীকরণ ও সবখানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়ের উন্নতি না হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়বে না। যখন কোনো বিনিয়োগকারী বা উদ্যোক্তা কোনো বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন, তখন তিনি সরকার ঘোষিত নীতির ভিত্তিতে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু আমাদের দেশে নীতির ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা যায়। আগামী বাজেটে আমরা সেই ধরনের কোনো পদক্ষেপ দেখতে চাই না।
দীর্ঘদিন ধরেই আমরা দেখে আসছি, এ দেশে নীতি সিদ্ধান্ত ও কর সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। পোশাকের সংযোগ শিল্পের ক্ষেত্রে সুবিধা কম। তাই সরকারি নীতিনির্ধারণ ও সুবিধার ক্ষেত্রে শুধু পোশাকনির্ভর না হয়ে অন্যান্য খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হাসিনা-কাদেরসহ ১৫৫ জনের নামে মামলা, আসামি বিএনপি নেত্রীও
বগুড়ায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১৫৫ জনের নামে হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত মহিলা দলের নেত্রী বিউটি বেগমকেও আসামি করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে সদর থানায় মামলাটি করেন নয়ন মিয়া নামে এক যুবক। গত বছরের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলায় আহত হন নয়ন।
গতকাল বুধবার বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাশির এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। নয়ন বগুড়া সদরের নিশিন্দারা উত্তরপাড়া এলাকার পলাশ মিয়ার ছেলে।
মামলায় উল্লেযোগ্য আসামিরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুনজুরুল আলম মোহন, আসাদুর রহমান দুলু, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবিন, জেলা যুবলীগ সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান সফিক, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল ইসলাম রাজ, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ও তার ছেলে জেলা যুব সংহতির সভাপতি হোসাইন শরিফ সঞ্চয়, জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত মহিলা দলের নেত্রী বিউটি বেগম, শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ রিজু।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট আসামিরা ককটেল, হাতবোমা, লাঠিসোঁটা নিয়ে শান্তিপূর্ণ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেন। ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ সময় বাদী নয়ন মিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলির আঘাতে জখম হয়। পরে ছাত্র জনতা তাদের ধাওয়া করলে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান বাশির জানান, হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১৫৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ২৫০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছেন। ওই মামলায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে সদর থানা পুলিশ অভিযান শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।
এ নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বগুড়ায় ১১টি হত্যা ও তিনটি হত্যাচেষ্টার মামলা হলো।