সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া পাথর কোয়ারি থেকে পাঁচ বছর আগে জব্দ করা হয় ১ কোটি ঘনফুট পাথর। পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেই পাথর নেমেছে ৪৪ লাখ ২৩ হাজার ঘনফুটে। সম্প্রতি খনিজ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে পাথরের ওই পরিমাণ দেখানো হয়েছে। অথচ জব্দকারী প্রতিষ্ঠান সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তর প্রথম নিলামে এক কোটি ঘনফুট পাথর উল্লেখ করেছিল।
এদিকে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে ওই পাথর সরানো শুরু হয়েছে। জানা গেছে, আদালতে অমীমাংসিত অবস্থায় গত ৬ মে ওই পাথর নিলামে বিক্রির কার্যাদেশ দেয় বিএমডি। পরে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ মে বিএমডির কার্যাদেশ স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠান প্রিয়াস এন্টারপ্রাইজ গতকাল সোমবার থেকে পাথর সরিয়ে নিতে শুরু করেছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালের আগে থেকে ইজারাবিহীন লোভাছড়া পাথর কোয়ারি থেকে অবাধে পাথর উত্তোলন করে আসছিল স্থানীয় একটি গোষ্ঠী। করোনা মহামারির সময় বিক্রি করতে না পেরে লোভাছড়া নদীর জিরো পয়েন্ট থেকে কানাইঘাট সেতু এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করে পাথর মজুত করেন তারা। পরে ওই বছরের ১৭ জুন জেলা প্রশাসনের সহায়তায় অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর। জব্দ করা হয় অবৈধভাবে উত্তোলন ও মজুত করা এক কোটি ৫ লাখ ঘনফুট পাথর।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২০ সালে অভিযানের পর এক কোটি ৫ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দের কথা জানিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। পরে ৫ লাখ ঘনফুট কম উল্লেখ করে নিলাম ডাকা হয়। এরপর গত পাঁচ বছর ধরে ওই পাথর নিলাম নিয়ে চলছে জটিলতা। একাধিকবার নিলাম ডাকা হলেও কখনও স্থগিত আবার কখনও বাতিল হয়। সবশেষ আপিল বিভাগের নির্দেশনায়, এ বিষয়ে এক রিটের ওপর হাইকোর্টে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই ৬ মে প্রিয়াস এন্টারপ্রাইজের কাছে ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ ২৫ কোটি ৮৭ লাখ ৫ হাজার ২১২ টাকা নিলামমূল্যে ওই পাথর বিক্রি করে বিএমডি। পরে উচ্চ আদালত তা স্থগিত করলেও সোমবার থেকে ঠিকই পাথর সরানো শুরু করেছে প্রিয়াস এন্টারপ্রাইজ।
ব্যবসায়ীরা জানান, জব্দ করা পাথরের তৎকালীন বাজারমূল্য ঘনফুটপ্রতি ৯০ টাকা ধরলে দাম দাঁড়ায় ৯০ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রতি ঘনফুট পাথরের বাজারমূল্য ১২৫ টাকা। সেই হিসাবে মূল্য দাঁড়ায় ১২৫ কোটি টাকা। সবশেষ নিলামের তথ্যমতে, ৪৪ লাখ ঘনফুট ধরলেও দাম হওয়ার কথা ৫৫ কোটি টাকার ওপরে। তবে নিলামে তা অর্ধেক দামে বিক্রি করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে পাথর চুরি, কৌশলে পাথর সরিয়ে নেওয়া এবং দায়সারা পরিমাপের কারণে পাথর কমেছে। এখন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যোগসাজশে পাথরের পরিমাণ আরও কম দেখিয়ে স্বল্পমূল্যে পাথরগুলো বিক্রি করা হয়েছে।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিলামে যে ৪৪ লাখ ঘনফুটের কথা বলা হয়েছে বাস্তবে পাথর রয়েছে তার থেকে বেশি, যার বাজারমূল্য শতকোটি টাকার কাছাকাছি। স্থানীয় পূর্ব লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ফখর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জব্দ পাথরের পরিমাণ সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি হবে। এজন্যই নিলাম নিয়ে এত টানাপোড়েন হয়েছে।
পাথরের পরিমাণ বিষয়ে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার সমকালকে বলেন, ওই সময় অনুমানের ভিত্তিতে, না পরিমাপ করে পাথরের ঘনফুট নির্ধারণ করা হয়েছিল জানা নেই। যেহেতু বিএমডি নিলামের বিষয়টি দেখছে তারাই ভালো জানে।
আদালতের নির্দেশ অমান্য
বিভিন্ন তথ্য ও আদালতের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জব্দ করা পাথর বিক্রিতে প্রথম নিলাম হয় ২০২০ সালে। ওই বছরের ২১ জুলাই সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৩০ কোটি টাকায় পাথরগুলো কেনে মেসার্স সামি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তবে প্রতিষ্ঠানটি নিলামের টাকা জমা না দিতে পারায় জামানত বাজেয়াপ্ত করে দরপত্র কমিটি। পরে প্রতিষ্ঠানের মালিক নজরুল ইসলাম উচ্চ আদালতে রিট করে টাকা ফেরত পান। ওই সময় রিটের কারণে আদালত নিলাম স্থগিত করেন। পরে পরিবেশ অধিদপ্তর আরেক দফা নিলাম আহ্বান করলেও তিন ব্যবসায়ীর রিটের কারণে স্থগিত হয়।
এ টানাপোড়েনের মধ্যে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের নির্দেশে ২০২৩ সালের ২ এপ্রিল বিএমডি ওই এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ৪৪ লাখ ২৩ হাজার ১১৩ ঘনফুট পাথরের পরিমাণ উল্লেখ করে তৃতীয় দফার নিলাম আহ্বান করে বিএমডি। ওই দরপত্র খোলার তারিখ ছিল গত ১২ জানুয়ারি। এর আগে উচ্চ আদালতে রিট করেন প্রথমবার নিলাম পাওয়া নজরুল ইসলাম। পরে দরপত্র খোলার আগের দিন ১১ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারির পাশাপাশি তিন মাসের জন্য নিলামের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন।
ওই আদেশের বিরুদ্ধে বিএমডি আপিলের গত ২৪ ফেব্রুয়ারি খারিজ করেন আপিল বিভাগ। এ ছাড়া রিটটি হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন। সেই শুনানি হওয়ার আগে ৬ মে প্রিয়াস এন্টারপ্রাইজের মালিক নগরীর শাহী ঈদগাহের বাসিন্দা কামরুল হাসান চৌধুরীকে কার্যাদেশ দেয় বিএমডি। পরে ওই কার্যাদেশের বিরুদ্ধে সামি এন্টারপ্রাইজের মালিক আরেকটি রিট পিটিশন করলে ১৫ মে আদালত বিএমডির কার্যাদেশ স্থগিত করেন। রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম কাফি সমকালকে বলেন, আপিল বিভাগের নির্দেশনা মতে রিট নিষ্পত্তি না করে কোনো আদেশ দিতে পারে না বিএমডি। এটি স্পষ্টত আদালত অবমাননা।
এ বিষয়ে বিএমডি মহাপরিচালক আনোয়ারুল হাবিব রিট নিষ্পত্তি হয়েছে দাবি করে সমকালকে বলেন, ‘আমরা যা করেছি নিয়ম অনুযায়ী করেছি। মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা ও আদেশ অনুসরণ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এখানে অন্যায়ভাবে কিছু করা হয়নি।’
তবে রিট নিষ্পত্তির বিষয়টি উচ্চ আদালতের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে রিটকারীর আইনজীবী বলেন, ‘রিটটি এখনও তালিকায় ওঠেনি। কীভাবে নিষ্পত্তি হলো।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল খ ঘনফ ট এক ক ট ৪৪ ল খ ত কর ন ব এমড বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা দক্ষিণের ৯ স্থানে বসছে অস্থায়ী পশুর হাট
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে। সেগুলো হলো- উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গায়, পোস্তগোলা শশ্মানঘাটের পশ্চিম পাশের নদীর পাড়ে খালি জায়গায়, রহমতগঞ্জ ক্লাবের খালি জায়গায়, হাজারীবাগে ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্ব পাশের খালি জায়গায়, আমুলিয়া আলীগড় মডেল কলেজের উত্তর পাশের খালি জায়গায়, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পাশের খালি জায়গায়, কমলাপুর সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন খালি জায়গায়, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাকস্টান্ড সংলগ্ন খালি জায়গায় ও মেরাদিয়া বাজারের পূর্ব পাশের খালপাড়ের খালি জায়গায়।
ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার আফতাবনগর ও মেরাদিয়াসহ মোট ১১টি স্থানে অস্থায়ী হাটের দরপত্র আহ্বান করেছিল ডিএসসিসি। পরে আইনগত জটিলতা থাকায় আফতাবনগর ও মেরাদিয়া হাটের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
এর মধ্যে, উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শশ্মানঘাটের পশ্চিম পাশের নদীর পাড়ে খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ ক্লাবের খালি জায়গা, হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্ব পাশের খালি জায়গা, আমুলিয়া আলীগড় মডেল কলেজের উত্তর পাশের খালি জায়গার হাটে সর্বোচ্চ দরদাতা পেয়েছে ডিএসসিসি।
এছাড়া, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পাশের খালি জায়গা, কমলাপুর সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাকস্টান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারের পূর্ব পাশের খালপাড়ের খালি জায়গায় সরকারি মূল্যের চেয়ে কম দর পায় ডিএসসিসি।
কিন্তু, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথকে কেন্দ্র করে ১৪ দিন ধরে নগর ভবন তালাবদ্ধ। আন্দোলনের কারণে সর্বোচ্চ দর পাওয়া হাটগুলোর ইজারাদারকে কার্যাদেশ ও বাকি হাটগুলোকে পুনঃদরপত্র আহ্বান করতে পারছে না ডিএসসিসি।
এ বিসয়ে ডিএসসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা হাসিবা খান বলেন, ‘‘যেসব হাটের ইজারায় সর্বোচ্চ দরদাতা পাওয়া গেছে, আন্দোলনের কারণে তাদেরও কার্যাদেশ দেওয়া সম্ভব হয়নি। আবার বাকি চারটি হাটের বিষয়ে এখনো কর্পোরেশন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।’’
ইজারা সম্পন্ন করতে না পারলে কীভাবে পশুর হাট বসানো হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘‘এরই মধ্যে আমরা পাঁচটি হাটের ইজারা সম্পন্ন করেছি। বাকি চারটি হাটের ইজারা বাকি। ঈদের আগে সেগুলোর ইজারা শেষ করতে পারব বলে আশা করি।’’
ঢাকা/এএএম/রাজীব