সড়কটি ২০২২ সালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যতটুকু ক্ষতি হয়েছে, তা অল্প টাকায় মেরামত করা সম্ভব। কিন্তু সেই সড়কে ৬৮০ কোটি টাকা ব্যয়ের আয়োজন করেছিল সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক মন্ত্রণালয়ের তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়েছে।

সড়কটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলায় পড়েছে। নাম সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই-হবিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক। দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটার। সড়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কৌশলে বিপুল ব্যয়ের চেষ্টা ধরা পড়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে গতকাল রোববার সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ‘বুড়ো উপদেষ্টারা কী করে’ শিরোনামে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ‘হবিগঞ্জ এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি সড়ক মেরামত ও প্রশস্তকরণ প্রকল্পে কয়েকটি প্যাকেজে প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তার ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮০ কোটি টাকা।

সব পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে সরকারি ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঠাই। পাশাপাশি সড়ক বিভাগের একজন কর্মকর্তাকে সরেজমিনে দেখতে পাঠাই। সরেজমিনে দেখা যায়, মাত্র ৭৫০ মিটার রাস্তা পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন!’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘হাওর অঞ্চলের রাস্তাটিতে যানবাহন চলাচল সীমিত, শিল্পকারখানা নেই। প্রকল্পের কোনো যৌক্তিকতা নাই। টেন্ডার হয়ে যাওয়া ক্রয় প্রস্তাবগুলি ফিরিয়ে নিই।.

..ভালো রাস্তা মেরামত করে প্রকৌশলী, ঠিকাদার, রাজনীতিবিদদের লুটপাটের দারুণ বন্দোবস্ত।’

সড়কটি মেরামত ও সম্প্রসারণ কাজ চারটি ভাগে (প্যাকেজ) ভাগ করে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে সাড়ে ৯ কিলোমিটারের সম্প্রসারণ ও মেরামতের জন্য প্রায় ১৪৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়।যেভাবে ধরা পড়ল ‘লুটপাটের বন্দোবস্ত’

সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই-হবিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কটি দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থেকে নাসিরনগর, হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা হয়ে হবিগঞ্জ শহরে যাওয়া যায়। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বড় ধরনের যানজট তৈরি হলে মাঝেমধ্যে এই সড়ক দিয়ে ঢাকা-সিলেট পথের বাস চলাচল করে। আর হবিগঞ্জ থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম পথে ২০-২৫টি বাস নিয়মিত চলাচল করে। তবে মূল যানবাহন অটোরিকশা, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল।

সওজ সূত্র জানায়, সড়কটি বর্তমানে সাড়ে ৫ মিটার বা প্রায় ১৮ ফুট চওড়া। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে সড়কটি সম্প্রসারণ ও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ‘২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগাধীন বিভিন্ন সড়ক, সেতু ও কালভার্টসমূহের জরুরি পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ঢোকানো হয় সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই-হবিগঞ্জ ৩০ কিলোমিটার সড়ক।

সড়কটি মেরামত ও সম্প্রসারণ কাজ চারটি ভাগে (প্যাকেজ) ভাগ করে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে সাড়ে ৯ কিলোমিটারের সম্প্রসারণ ও মেরামতের জন্য প্রায় ১৪৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। ঠিকাদার হিসেবে মোস্তফা জামান ট্রেডার্স, মোস্তফা কামাল ও ইডেন প্রাইস (যৌথ) নির্বাচন করে সওজের হবিগঞ্জ কার্যালয়। তারা ১৪২ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর প্রস্তাব করে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়।

ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া গত মাসে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। সন্দেহ হলে মন্ত্রণালয় থেকে একজন কর্মকর্তাকে সরেজমিন পরিদর্শনে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তদন্ত কর্মকর্তা সরেজমিনে দেখতে পান, সড়কের সংশ্লিষ্ট অংশের মাত্র ৭৫০ মিটার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত, যা ১০-১৫ কোটি টাকাতেই মেরামত করা সম্ভব। কিন্তু বেশি টাকা ব্যয় করতে সড়কটি দ্বিগুণ চওড়া করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। অথচ তার যৌক্তিকতা নেই।

সওজের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিগত সরকারের আমলে দরপত্র আহ্বানের আগেই কোন ঠিকাদার কোন কাজটি পাবে, তা নির্ধারিত হয়ে যেত। ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদ, সওজ ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কাজ ভাগ করা হতো।যেভাবে প্রকল্প বড় হয়

সওজ সূত্র জানায়, ৩০ কিলোমিটার সড়কের বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতে বড়জোর ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা লাগতে পারে। কিন্তু ব্যয় বাড়ানোর জন্য সড়কটি ১০ দশমিক ৩ মিটারে উন্নীত করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। পুরো ব্যয় সরকারের রাজস্ব খাত থেকে নির্বাহ করার কথা। এই কাজের জন্য হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগের আওতায় চারটি দরপত্র আহ্বান করা হয়।

সওজ সূত্র জানায়, দরপত্রগুলো গত বছরের মে মাসের দিকে আহ্বান করা হয়েছিল। দরপত্রপ্রক্রিয়া চলাকালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর মধ্যে দরপত্রের মেয়াদ বাড়িয়ে ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয় গত মাসে।

ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সব কটি ভাগের কাজেই তিন-চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঘুরেফিরে অংশ নিয়েছে। একেক ঠিকাদার একটি কাজ পেয়েছে। এমনও দেখা গেছে যে এক ঠিকাদার এক প্যাকেজে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে। একই ঠিকাদার অন্য প্যাকেজে সর্বোচ্চ দরদাতা।

সওজের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিগত সরকারের আমলে দরপত্র আহ্বানের আগেই কোন ঠিকাদার কোন কাজটি পাবে, তা নির্ধারিত হয়ে যেত। ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদ, সওজ ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কাজ ভাগ করা হতো।

সড়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পছন্দের ঠিকাদারেরা যাতে বেশি ব্যয়ের কাজ পান, সে জন্য প্রকল্প বড় করার প্রবণতা সওজে রয়েছে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর খরচ কমানোতে গুরুত্ব দিয়েছে। পাশাপাশি যে কাজের ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তা কতটা যৌক্তিক তা দেখতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বেছে বেছে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। এতেই অনিয়ম বেরিয়ে আসছে।

অনিয়মের উদাহরণ দিতে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, সওজের অধীন নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর হয়ে নবীনগর পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়ক প্রশস্ত করার আরেকটি প্রকল্প চলমান আছে। সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই-হবিগঞ্জ সড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের সম্প্রসারণ কাজ ওই প্রকল্পের একটি প্যাকেজে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অথচ দুটি কাজের একটি থেকে অন্যটির দূরত্ব শত কিলোমিটারের কাছাকাছি। এই কাজে ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩৪৩ কোটি টাকা দর প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু সড়ক মন্ত্রণালয় এটি আবার দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ দিয়েছে।

সড়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পছন্দের ঠিকাদারেরা যাতে বেশি ব্যয়ের কাজ পান, সে জন্য প্রকল্প বড় করার প্রবণতা সওজে রয়েছে।

বর্তমান সরকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধ করার চেষ্টা করছে। সড়কে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বা অপচয় কমিয়ে সেই অর্থ স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যয় করার উদ্যোগ আছে।উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বিপুল ব্যয়ের বাস্তবতা কতটা

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে এত বিপুল ব্যয়ের বিষয়টি স্থানীয়দের কাছেও অস্বাভাবিক ঠেকছে। হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মোড়াকরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, বন্যায় রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে। তবে ৩০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সরেজমিনে এলেই তা স্পষ্ট দেখা যাবে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটির যৌক্তিকতা বোঝাতে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা স্থানীয় প্রাণী, মৎস্য ও কৃষি উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি স্থানীয় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন সম্ভাবনার বাস্তবতা পাননি। এমনকি মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্থানীয় মৎস্য ও কৃষি পরিবহন হয় নৌপথে। বরং হাওর এলাকায় সড়ক সম্প্রসারণ করলে মৎস্য ও জীববৈচিত্র্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

‘এটা একটা বার্তা’

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন খাতে বিপুল ব্যয় করা হয়েছে। অনেক ব্যয় অপ্রয়োজনীয়। এর ফলে সরকারের ঋণ বেড়েছে। অন্যদিকে রাজস্ব সেভাবে বাড়েনি। আগের সরকারের আমলে বিপুলভাবে বেড়ে যাওয়া ব্যয় সামাল দিতে অন্তর্বর্তী সরকার এখন হিমশিম খাচ্ছে। নানা ক্ষেত্রে ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সরকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধ করার চেষ্টা করছে। সড়কে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বা অপচয় কমিয়ে সেই অর্থ স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যয় করার উদ্যোগ আছে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা একটা বার্তা। অন্যদেরও এ ধরনের ব্যয় পরিহার করতে হবে।

[প্রতিবেদনটিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর মকর ত দ র ব র হ মণব ড় য় সরক র র আমল ন ম প রক শ ন ৩০ ক ল ম ট র প রথম আল ক প রক র য় র জন য প জন য প র মৎস য ও প রকল প উপদ ষ ট পর বহন র একজন ভ গ কর ম র মত হয় ছ ল সড়ক প র একট সওজ র সড়ক ম র সড়ক

এছাড়াও পড়ুন:

এক কোটি ঘনফুট পাথর থেকে উধাও ৫৬ লাখ

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া পাথর কোয়ারি থেকে পাঁচ বছর আগে জব্দ করা হয় ১ কোটি ঘনফুট পাথর। পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেই পাথর নেমেছে ৪৪ লাখ ২৩ হাজার ঘনফুটে। সম্প্রতি খনিজ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে পাথরের ওই পরিমাণ দেখানো হয়েছে। অথচ জব্দকারী প্রতিষ্ঠান সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তর প্রথম নিলামে এক কোটি ঘনফুট পাথর উল্লেখ করেছিল। 
এদিকে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে ওই পাথর সরানো শুরু হয়েছে। জানা গেছে, আদালতে অমীমাংসিত অবস্থায় গত ৬ মে ওই পাথর নিলামে বিক্রির কার্যাদেশ দেয় বিএমডি। পরে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ মে বিএমডির কার্যাদেশ স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠান প্রিয়াস এন্টারপ্রাইজ গতকাল সোমবার থেকে পাথর সরিয়ে নিতে শুরু করেছে।

স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালের আগে থেকে ইজারাবিহীন লোভাছড়া পাথর কোয়ারি থেকে অবাধে পাথর উত্তোলন করে আসছিল স্থানীয় একটি গোষ্ঠী। করোনা মহামারির সময় বিক্রি করতে না পেরে লোভাছড়া নদীর জিরো পয়েন্ট থেকে কানাইঘাট সেতু এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করে পাথর মজুত করেন তারা। পরে ওই বছরের ১৭ জুন জেলা প্রশাসনের সহায়তায় অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর। জব্দ করা হয় অবৈধভাবে উত্তোলন ও মজুত করা এক কোটি ৫ লাখ ঘনফুট পাথর। 
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২০ সালে অভিযানের পর এক কোটি ৫ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দের কথা জানিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। পরে ৫ লাখ ঘনফুট কম উল্লেখ করে নিলাম ডাকা হয়। এরপর গত পাঁচ বছর ধরে ওই পাথর নিলাম নিয়ে চলছে জটিলতা। একাধিকবার নিলাম ডাকা হলেও কখনও স্থগিত আবার কখনও বাতিল হয়। সবশেষ আপিল বিভাগের নির্দেশনায়, এ বিষয়ে এক রিটের ওপর হাইকোর্টে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই ৬ মে প্রিয়াস এন্টারপ্রাইজের কাছে ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ ২৫ কোটি ৮৭ লাখ ৫ হাজার ২১২ টাকা নিলামমূল্যে ওই পাথর বিক্রি করে বিএমডি। পরে উচ্চ আদালত তা স্থগিত করলেও সোমবার থেকে ঠিকই পাথর সরানো শুরু করেছে  প্রিয়াস এন্টারপ্রাইজ।

ব্যবসায়ীরা জানান, জব্দ করা পাথরের তৎকালীন বাজারমূল্য ঘনফুটপ্রতি ৯০ টাকা ধরলে দাম দাঁড়ায় ৯০ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রতি ঘনফুট পাথরের বাজারমূল্য ১২৫ টাকা। সেই হিসাবে মূল্য দাঁড়ায় ১২৫ কোটি টাকা। সবশেষ নিলামের তথ্যমতে, ৪৪ লাখ ঘনফুট ধরলেও দাম হওয়ার কথা ৫৫ কোটি টাকার ওপরে। তবে নিলামে তা অর্ধেক দামে বিক্রি করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে পাথর চুরি, কৌশলে পাথর সরিয়ে নেওয়া এবং দায়সারা পরিমাপের কারণে পাথর কমেছে। এখন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যোগসাজশে পাথরের পরিমাণ আরও কম দেখিয়ে স্বল্পমূল্যে পাথরগুলো বিক্রি করা হয়েছে। 
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিলামে যে ৪৪ লাখ ঘনফুটের কথা বলা হয়েছে বাস্তবে পাথর রয়েছে তার থেকে বেশি, যার বাজারমূল্য শতকোটি টাকার কাছাকাছি। স্থানীয় পূর্ব লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ফখর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জব্দ পাথরের পরিমাণ সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি হবে। এজন্যই নিলাম নিয়ে এত টানাপোড়েন হয়েছে। 
পাথরের পরিমাণ বিষয়ে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার সমকালকে বলেন, ওই সময় অনুমানের ভিত্তিতে, না পরিমাপ করে পাথরের ঘনফুট নির্ধারণ করা হয়েছিল জানা নেই। যেহেতু বিএমডি নিলামের বিষয়টি দেখছে তারাই ভালো জানে। 

আদালতের নির্দেশ অমান্য
বিভিন্ন তথ্য ও আদালতের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জব্দ করা পাথর বিক্রিতে প্রথম নিলাম হয় ২০২০ সালে। ওই বছরের ২১ জুলাই সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৩০ কোটি টাকায় পাথরগুলো কেনে মেসার্স সামি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তবে প্রতিষ্ঠানটি নিলামের টাকা জমা না দিতে পারায় জামানত বাজেয়াপ্ত করে দরপত্র কমিটি। পরে প্রতিষ্ঠানের মালিক নজরুল ইসলাম উচ্চ আদালতে রিট করে টাকা ফেরত পান। ওই সময় রিটের কারণে আদালত নিলাম স্থগিত করেন। পরে পরিবেশ অধিদপ্তর আরেক দফা নিলাম আহ্বান করলেও তিন ব্যবসায়ীর রিটের কারণে স্থগিত হয়। 
এ টানাপোড়েনের মধ্যে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের নির্দেশে ২০২৩ সালের ২ এপ্রিল বিএমডি ওই এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ৪৪ লাখ ২৩ হাজার ১১৩ ঘনফুট পাথরের পরিমাণ উল্লেখ করে তৃতীয় দফার নিলাম আহ্বান করে বিএমডি। ওই দরপত্র খোলার তারিখ ছিল গত ১২ জানুয়ারি। এর আগে উচ্চ আদালতে রিট করেন প্রথমবার নিলাম পাওয়া নজরুল ইসলাম। পরে দরপত্র খোলার আগের দিন ১১ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারির পাশাপাশি তিন মাসের জন্য নিলামের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। 
ওই আদেশের বিরুদ্ধে বিএমডি আপিলের গত ২৪ ফেব্রুয়ারি খারিজ করেন আপিল বিভাগ। এ ছাড়া রিটটি হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন। সেই শুনানি হওয়ার আগে ৬ মে প্রিয়াস এন্টারপ্রাইজের মালিক নগরীর শাহী ঈদগাহের বাসিন্দা কামরুল হাসান চৌধুরীকে কার্যাদেশ দেয় বিএমডি। পরে ওই কার্যাদেশের বিরুদ্ধে সামি এন্টারপ্রাইজের মালিক আরেকটি রিট পিটিশন করলে ১৫ মে আদালত বিএমডির কার্যাদেশ স্থগিত করেন। রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম কাফি সমকালকে বলেন, আপিল বিভাগের নির্দেশনা মতে রিট নিষ্পত্তি না করে কোনো আদেশ দিতে পারে না বিএমডি। এটি স্পষ্টত আদালত অবমাননা। 

এ বিষয়ে বিএমডি মহাপরিচালক আনোয়ারুল হাবিব রিট নিষ্পত্তি হয়েছে দাবি করে সমকালকে বলেন, ‘আমরা যা করেছি নিয়ম অনুযায়ী করেছি। মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা ও আদেশ অনুসরণ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এখানে অন্যায়ভাবে কিছু করা হয়নি।’ 
তবে রিট নিষ্পত্তির বিষয়টি উচ্চ আদালতের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে রিটকারীর আইনজীবী বলেন, ‘রিটটি এখনও তালিকায় ওঠেনি। কীভাবে নিষ্পত্তি হলো।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঝুঁকিপূর্ণ ৬ ফুট গভীর ড্রেন
  • ১০ মিনিটের রাস্তা শেষ হয় না দুই ঘণ্টায়ও
  • যানজট এড়াতে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের অনুরোধ
  • স্টিলথ যুদ্ধবিমান তৈরি করবে ভারত
  • টিসিবি জন্য কেনা হচ্ছে ৪৫ লাখ লিটার রাইস ব্র্যান তেল
  • এক কোটি ঘনফুট পাথর থেকে উধাও ৫৬ লাখ
  • এক যুগ পর আ.লীগ নেতার দখল থেকে সরকারি সড়ক উদ্ধার
  • কাবাব, ফালুদা, লাচ্ছিসহ মুখরোচক খাবারের এক বাজার
  • বৃষ্টির মধ্যেই সড়কে পিচ ঢালাইয়ের অভিযোগ