অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে যে প্রশাসনিক সংস্কার কর্মসূচি বিদ্যমান, তা দেশের প্রশাসনকাঠামোকে আধুনিক ও কার্যকররূপে পুনর্গঠনের এক অন্তর্নিহিত প্রয়াস বলেই প্রতীয়মান হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পুনর্গঠন, সরকারি চাকরি বিধি সংশোধন কিংবা পল্লী বিদ্যুৎ–ব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার—এসব পদক্ষেপকে সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধিতে সহায়ক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

তবে এ-ও সত্য, যেকোনো গঠনমূলক সংস্কার প্রয়াসের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মী শ্রেণির মধ্যে উদ্বেগ ও আপত্তির সঞ্চার হতে পারে। কারণ, যেকোনো কাঠামোগত পরিবর্তনই বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যে আলোড়ন তোলে। এসব পরিবর্তন কতটা বাস্তবসম্মত, কতটা বাস্তবায়নযোগ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তাই এসব সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি বা সংশোধনের আহ্বান যদি কর্মীদের পক্ষ থেকে আসে, তা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্য। তাঁদের অভ্যন্তরীণ স্বার্থ, উদ্বেগ ও শঙ্কা আলোচনার মাধ্যমে নিরসনযোগ্য।

কিন্তু কয়েক দিন ধরে সচিবালয়, এনবিআর ও পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগে যেসব আন্দোলন চলছে, তার ধরন নিয়ে চিন্তিত হওয়ার অবকাশ আছে। কেননা দেশ এখন একটি সমস্যাসংকুল সময় অতিক্রম করছে এবং এই সংবেদনশীল মুহূর্তে দায়িত্বরত কর্মচারীদের ন্যূনতম শৃঙ্খলা-বিচ্যুতি রাষ্ট্রযন্ত্রের স্থিতি ও জনজীবনের স্বাভাবিকতাকে বিঘ্নিত করতে পারে।

বিশেষ করে সচিবালয়ে টানা কর্মবিরতি, এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহ কার্যক্রমে অচলাবস্থা এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহতকারী কর্মসূচিগুলো জনমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। এখানে সব পক্ষকে মনে রাখতে হবে যে জুলাই অভ্যুত্থান বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে। আন্দোলনকারীদের অবস্থান যেন জনগণের প্রত্যাশিত সংস্কারের বিরোধী কিছু হয়ে না যায়, সে ব্যাপারে তাদের সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোনো মহল যেন রাজনৈতিক স্বার্থোদ্ধারের অপচেষ্টা না করে, সে ব্যাপারেও তাদের সচেতন থাকা জরুরি।

তা ছাড়া সচিবালয়ে কর্মচারীদের বিক্ষোভের ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে; এনবিআরের আন্দোলনে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে; আর পল্লী বিদ্যুতের কর্মীদের কর্মবিরতিতে গ্রামীণ জনগণ ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। কোনো সরকার, তা অন্তর্বর্তী হোক বা স্থায়ী, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকলে তার ওপর এ ধরনের চাপ প্রয়োগ করা নৈতিক, সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক চেতনারও পরিপন্থী বলে বিবেচিত হয়।

মনে রাখা বিধেয়, রাষ্ট্র বা সরকার কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় পরিচালিত হয় না; এর মূল লক্ষ্য জনগণের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রশৃঙ্খলা ও জনগণের সেবাব্যবস্থা কোনো নির্দিষ্ট কর্মীদের খেয়ালখুশির ওপর নির্ভর করতে পারে না। সেবামূলক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মৌল নৈতিক দায়িত্ব হলো জনগণের প্রতি অঙ্গীকার রক্ষা করা। তা ভুলে গিয়ে নিজের দাবি আদায়ের জন্য জনজীবনকে জিম্মি করে ফেলা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আশাজাগানিয়া বিষয়, সচিবালয়ের কর্মচারীরা আন্দোলন স্থগিত রেখেছেন এবং আজ বুধবার তাঁরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে তাঁদের দাবিদাওয়ার কথা জানাবেন। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান হতে পারে। সরকারকে চলমান পরিস্থিতির প্রতি বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করতে হবে। সরকারকে বুঝতে হবে, যত বড় সংস্কারই হোক না কেন, তার বাস্তবায়ন হতে হবে আলোচনার ভিত্তিতে, অংশীজনদের যুক্তিগ্রাহ্য বক্তব্যকে মূল্যায়ন করে।

একই সঙ্গে কোনো সংস্কার কর্মসূচি যদি সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষের মধ্যে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তবে সেই কর্মসূচির ভাষ্য ও উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা এবং অংশগ্রহণমূলক আলোচনা পরিচালনা করাই শাসনের প্রজ্ঞার লক্ষণ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ম দ র জনগণ র র কর ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ জনগণের নয়, কিছু উপদেষ্টার প্রয়োজন: হাফিজ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। আমি মনে করি—জুলাই সনদ দেশের জনগণের প্রয়োজন নেই। কিছু ব্যক্তি যারা উপদেষ্টা হয়েছেন, যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বসবাস করতে গেলে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়বেন; তাদের জন্য হয়তো প্রয়োজন আছে।’’

শনিবার (১ নভেম্বর) ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মামুন, সম্পাদক রিটন

একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াত নিষিদ্ধ চান আলাল

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘এই ধরনের সনদের আমাদের প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রয়োজন–একটা পার্লামেন্ট। যেখানে আগামী দিনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। যেই পার্লামেন্ট এই সনদকে বাস্তবায়িত করবে এবং আগামী গণতন্ত্রকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করতে সক্ষম হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে প্রয়োজন একটি নির্বাচন। যেখানে জনগণ প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করতে পারবে। আমরা আশা করব, আগামীতে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হবে। এই নির্বাচনে যারা বিজয়ী হবেন, জনগণের প্রতিনিধি হবেন; তারাই জুলাই সনদকে সমর্থন করবেন।’’

‘‘আমার দল বিএনপি জুলাই সনদকে সমর্থন করে, আমরাও এটি সমর্থন করতে বাধ্য। কিন্তু, এটার মধ্যে এমন জিনিস ঢোকাবেন না, যেটি নিয়ে আগে ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়ে আলোচনা হয়নি।’’- যোগ করেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘পিআর নিয়ে কথা হচ্ছে। দেশের জনগণকে জিজ্ঞেস করেন, কেউ পিআর চিনেও না। পিআর কেউ চায়ও না। আমরা শত বছর ধরে একজন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে আসছি। তারা (পিআর দাবি করা দলগুলো) ব্যক্তির কাছ থেকে, ভোটারের কাছ থেকে ক্ষমতা তুলে নিয়ে একটা রাজনৈতিক দলের কাছে সমর্পণ করতে চায়। আমরা চাই, বর্তমান যে ব্যবস্থায় নির্বাচন হচ্ছে, সেই ব্যবস্থার মাধ্যমে যাতে নির্বাচন হয়।’’

হাফিজ উদ্দিন আরো বলেন, ‘‘আমাদের একটা প্রতিবেশী রাষ্ট্র আছে, যারা চায় না বাংলাদেশ স্বনির্ভর হোক। নিজের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অক্ষত থাকুক, এটা তারা চায় না। তারা আশ্রয় দিয়েছে মাফিয়া শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনা সেখানে বসে কীভাবে বাংলাদেশে নাশকতা করা যায়, সে বিষয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন। কলকাতায় তারা অফিস খুলেছেন। আমি তাদেরকে একটা পরামর্শ দেব। শুধু কলকাতা নয়, ভারতের প্রত্যেকটা প্রদেশে আপনারা একটা করে অফিস খুলেন। ভারতের কাছ থেকে সনদ নেন। তারপরে ভারতের রাজনীতিতে আপনারা মিশে যান। বাংলাদেশে আপনাদের কোনো প্রয়োজন নেই।’’

ঢাকা/রায়হান/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ জনগণের নয়, কিছু উপদেষ্টার প্রয়োজন: হাফিজ
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম
  • বিএনপি ও জামায়াত কে কোন ফ্যাক্টরে এগিয়ে
  • অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
  • সরকার নিরপেক্ষতা হারালে জনগণ মাঠে নামবে: তাহের
  • সংস্কার ইস্যুতে সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বিএনপি অবস্থান পরিবর্তন করে
  • বিএনপি-জামায়াত দেশকে অন্য এক সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
  • জকসুতে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে প্রশাসন: ছাত্রদল
  • জনগণের সঙ্গে এটা প্রতারণা: মির্জা ফখরুল