দেরির বিষয়ে ‘যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা’ দিতে হবে সরকারকে: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি
Published: 11th, January 2025 GMT
‘জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশে অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ঘোষণাপত্র প্রকাশ না হওয়ার ইঙ্গিত ইতিমধ্যে সরকারের দিক থেকে দেওয়া হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা বলছেন, ঘোষণাপত্রের বিষয়ে কেন বেশি সময় লাগবে, এর ‘যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা’ সরকারকে দিতে হবে। এরপর করণীয় ঠিক করবেন তাঁরা।
‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ পক্ষে জনমত তৈরির জন্য ঢাকা, চট্টগ্রামসহ জেলায় জেলায় লিফলেট (প্রচারপত্র) বিতরণ ও জনসংযোগ চালাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ঘোষণাপত্রের বিষয়ে সরকার সবার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। এতে হয়তো কিছু সময় বৃদ্ধি হতে পারে। শিক্ষার্থীরা ধৈর্য ধারণ করবেন, সংযম দেখাবেন—এমন প্রত্যাশার কথাও বলেছেন তিনি।
ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকারের দিক থেকে আসা বক্তব্যের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের পাঁচজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলছেন, যে উপদেষ্টা বক্তব্য দিয়েছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবেই উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হয়েছেন। ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি এ বিষয়ে এমন কোনো অবস্থান নেবে না, যাতে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বিব্রত হন। তাঁরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, ঘোষণাপত্র প্রকাশের বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা আছে। সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে প্রকাশ্য কোনো বিরোধিতায় যাবেন না তাঁরা।
তবে ঘোষণাপত্র তৈরির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটিতে। নেতাদের ধারণা, দলগুলো আন্তরিক হলে যেকোনো সময়ই ঘোষণাপত্র দেওয়া সম্ভব; কিন্তু দলগুলো সহযোগিতামূলক মনোভাব দেখাচ্ছে না।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার যদি ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র তৈরি করতে না পারে, সে ক্ষেত্রে এর যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা দিতে হবে। এরপর আমরা সাংগঠনিকভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব সরকারকে সময় দেব কি না। তবে আপাতত ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের লিফলেট বিতরণ ও জনসংযোগ কর্মসূচি চলমান থাকবে।’
সরকার যদি ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র তৈরি করতে না পারে, সে ক্ষেত্রে এর যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা দিতে হবে। এরপর আমরা সাংগঠনিকভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব সরকারকে সময় দেব কি না। আখতার হোসেন, সদস্যসচিব, জাতীয় নাগরিক কমিটিবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা বলছেন, ঘোষণাপত্রের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তাঁরা নিয়েছেন। এ জন্য জনসংযোগ করছেন, জনগণের কাছে যাচ্ছেন। পাশাপাশি নতুন যে রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছেন, জনসংযোগের কর্মসূচির মাধ্যমে নতুন করে জনগণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ তৈরি হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি যে লিফলেট বিতরণ করছে, তাতে ঘোষণাপত্রে সাতটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে আহত ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুচিকিৎসা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট করা; ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ নেতৃত্বের কথা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা; অভ্যুত্থানে আওয়ামী খুনি ও দোসরদের বিচার নিশ্চিত করার স্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করা; ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তি সংবিধান বাতিল করে নির্বাচিত গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বিলোপে সব ধরনের সংস্কারের ওয়াদা করা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির লক্ষ্যে সরকার চলতি সপ্তাহে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে। তবে এই ঘোষণাপত্র সরকার দেবে না। সরকার ঘোষণাপত্রের প্রক্রিয়াকে সহায়তা করছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করতে চেয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। তাদের এই উদ্যোগ রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনার জন্ম দেয়। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হবে। এমন প্রেক্ষাপটে ৩০ ডিসেম্বর রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণাপত্র প্রকাশের পরিবর্তে ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) নামে সমাবেশ করে।
সেই সমাবেশ থেকে ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। পরে ৪ জানুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা জানান, ঘোষণাপত্রের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে ৬–১১ জানুয়ারি লিফলেট বিতরণ, সমাবেশ ও জনসংযোগ করা হবে। এ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘ঘোষণাপত্র সপ্তাহ’। এর মধ্যে ৭ জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচি ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র না দিতে পারাটাকে আমরা সরকারের গাফিলতি হিসেবে দেখছি। সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ১৫ জানুয়ারির পর আমরা কর্মসূচি আরও জোরদার করব।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
ব্যক্তিগত সম্পদ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম এবিসির এক সাংবাদিকের ওপর ভীষণ চটে যান। ওই সাংবাদিকের কারণে ‘অস্ট্রেলিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে’ বলে সতর্ক করেন তিনি। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে ওই সাংবাদিকের ব্যাপারে নালিশ করারও হুমকি দেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের লনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। এবিসির সাংবাদিক জন লায়ন্সও তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন। লায়ন্স এবিসিতে প্রচারিত ফোর কর্নারস অনুষ্ঠানের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।
গতকাল লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কতটা ধনী হয়েছেন? তিনি আরও উল্লেখ করেন, ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে অবস্থান করা সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি না।’ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ট্রাম্প অর্গানাইজেশন নামে তাঁর যে পারিবারিক ব্যবসাটি আছে, সেটি এখন তাঁর সন্তানেরা পরিচালনা করেন।
ট্রাম্পের দাবি, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বেশির ভাগ ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন যে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।এরপর লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’
এরপর লায়ন্সকে ট্রাম্প জিজ্ঞাসা করেন, তিনি (লায়ন্স) কোথা থেকে এসেছেন।
এরপর ট্রাম্প চটে গিয়ে বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে লায়ন্স ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতি’ করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলতে থাকেন, ‘আমার মতে, আপনি এ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার অনেক ক্ষতি করছেন। আর তারা আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। আপনি জানেন, আপনার নেতা (অ্যান্থনি আলবানিজ) শিগগিরই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। আমি তাঁকে আপনার ব্যাপারে বলব। আপনি খুব খারাপ ভঙ্গিতে কথা বলছেন। আপনি আরও ভালোভাবে কথা বলুন।’
সাংবাদিক লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’এরপর লায়ন্স আবারও কিছু বলতে গেলে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘চুপ করুন’।
গত জুনে কানাডায় জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে প্রথমবারের মতো ট্রাম্প ও আলবানিজের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে হঠাৎই তা বাতিল হয়ে যায়। এর পর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করছেন আলবানিজ।
আরও পড়ুনট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডার পর কী বললেন স্টারমার ও আলবানিজ০১ মার্চ ২০২৫সম্প্রতি আলবানিজ বলেছেন, নিউইয়র্কে বিশ্বনেতাদের সম্মেলন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানকালে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দেখা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিউইয়র্কে আমাদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হবে। আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার রাতে তিনি একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। এ ছাড়া চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিভিন্ন ফোরামে আমাদের দেখা হবে। এটা সম্মেলনের মৌসুম।’
ট্রাম্পের সঙ্গে আলবানিজের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে পেন্টাগনের অকাস পারমাণবিক সাবমেরিন চুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় বাড়াতে ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার কাছে যে দাবি জানিয়েছেন, তা নিয়ে পর্যালোচনা।