ভুল সিদ্ধান্তে নিঝুম দ্বীপে হরিণের বংশনাশ
Published: 11th, January 2025 GMT
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপে ষাটের দশকের প্রথম দিকেই যে কৃত্রিম ‘সুন্দরবন’ সৃষ্টির উদ্যোগ শুরু হয়, দেশ স্বাধীনের পরও তা অব্যাহত থাকে। ধীরে ধীরে সেখানে শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) গাছের চারাগুলো মাথা তুলে দাঁড়ায়। সঙ্গে হরিণের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ১৯৭৪ থেকে ’৭৯ সালের মধ্যে বন বিভাগ নিঝুম দ্বীপে ১৪টি হরিণ অবমুক্ত করে। ১৯৯৬ সালের শুমারিতে দেখা যায়, দ্বীপটিতে হরিণের সংখ্যা বেড়ে ২২ হাজার হয়েছে। এখন সেখানে হরিণের সংখ্যা দুই হাজারও হয় কি না সন্দেহ।
৩০ বছর ধরে নিঝুম দ্বীপে বসবাস করছেন জেলে আবদুল আলীম। গত মে মাসে দ্বীপের নামার বাজার এলাকায় দাঁড়িয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে দ্বীপের চারদিকে খালি হরিণ আর হরিণ আছিল। এত হরিণ আছিল যে মানুষ গনা যাইত, কিন্তু হরিণ গনা যাইত না। এখন হরিণ দেখাই যায় না, আর মানুষ তো গইনা কূল পাওয়া যায় না।’
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা যায়, হরিণ নিয়ে শুরুতেই করা হয় মস্ত এক ভুল। প্রতিবেশ বিবেচনা না করেই সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বনে ছাড়া হয় হরিণ। যেখানে হরিণ থাকবে, সেখানে বাঘ, বানর, কুমির ও ম্যানগ্রোভ বনের অন্য সব প্রাণী ও উদ্ভিদ থাকতেই হবে। নইলে খাদ্যচক্র, বাস্তুতন্ত্রের মতো প্রাকৃতিক সূত্রগুলোর ব্যত্যয় ঘটে ডেকে আনবে বিপর্যয়। মানবসৃষ্ট নিঝুম দ্বীপের ‘সুন্দরবনে’ অবমুক্ত করা হরিণের বেলায় সেটাই ঘটেছে। প্রকৃতির এই অমোঘ বিধানের কথা তখন মাথায় আসেনি প্রশাসনের। ফলে যা ঘটার, তা-ই ঘটেছে; অস্বাভাবিক গতিতে হরিণের বংশবৃদ্ধি যেমন হয়েছে, তেমনি আবার অস্বাভাবিক গতিতেই হয়েছে বংশনাশ।
ওদিকে নিঝুম দ্বীপে জাতীয় উদ্যান ঘোষণার পাশাপাশি আবার সরকারি সিদ্ধান্তেই সেখানে লোকালয়করণের মতো দ্বিমুখী নীতিও কাল হয়ে উঠেছে হরিণের জন্য। একেক সময় একেক দল সরকার গঠন করেছে আর নিজেদের ভোটব্যাংক বাড়াতে দলীয় সমর্থক গোষ্ঠীকে বনের জমি বন্দোবস্ত দিয়ে দ্বীপে ঢুকিয়েছে। এই মানুষেরা দ্বীপের মধ্যে যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হরিণের বাসস্থান ধ্বংস করে এদের বংশ নিপাত করেছে।
অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্যহীনতার কারণে ধীরে ধীরে নিঝুম দ্বীপে বুনো কুকুর ও শিয়াল বাড়তে থাকে এবং তারা হরিণের বাচ্চা ধরে খেয়ে ফেলে। জোয়ার, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে মারা পড়ে হাজারো হরিণ। লবণাক্ততা বাড়তে থাকায় হরিণেরা সুপেয় পানির অভাবে পড়ে। একটা পর্যায়ে স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকেরা হরিণ ধরে খাওয়া শুরু করেন।
একাকী হরিণ বিপাকে
বন বিভাগের প্রকাশনা নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ২০১৫-২০২৫-এর তথ্য অনুসারে, ১৯৭২ সাল থেকেই নিঝুম দ্বীপে স্বল্প পরিসরে বনায়ন শুরু হয়। ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছর থেকে পুরোদমে বনায়নের কাজ শুরু করে বন বিভাগ।
বন বিভাগের তথ্য ও বন্য প্রাণী গবেষকদের মতামত থেকে জানা যায়, বনায়নের শুরুতে নিঝুম দ্বীপে চার ধরনের গাছ লাগানো হয়—কেওড়া, গেওয়া, বাইন ও কাঁকড়া। কেওড়াগাছের পাতা আর দূর্বা ঘাস হরিণের প্রধান খাবার। যে সময় হরিণ ছাড়া হয়, তখন এই বনের কেওড়াগাছের উচ্চতা হরিণের নাগালের মধ্যেই ছিল। হাজার হাজার কেওড়াগাছে হরিণের খাবার ছিল অফুরান। আর হরিণ শিকার করে খাবে, এমন কোনো প্রাণীও বনে ছিল না। ফলে তরতর করে হরিণের বংশবিস্তার ঘটতে থাকে। দুই দশকের মধ্যে হরিণের সংখ্যা গিয়ে পৌঁছায় ২২ হাজারে। ১৯৯৬ সালের হরিণশুমারি থেকে এই সংখ্যা জানা যায়।
স্ত্রী চিত্রা হরিণ ১৪ থেকে ১৭ মাস বয়সের মধ্যে মা হওয়ার উপযোগী হয়। গর্ভধারণকাল হয় ২১০-২২৫ দিন। সাধারণত বসন্তকালে হরিণ বাচ্চা প্রসব করে। একসঙ্গে একটি, কখনো দুটি শাবকেরও জন্ম হয়। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত তারা মায়ের দুধ খায়। এই ছয় মাসের মধ্যে যদি শাবক মারা যায়, তবে মা আবারও প্রজননক্ষম হয়। বনের হরিণ ৯ থেকে ১১ বছর পর্যন্ত বাঁচে। প্রায় প্রতিবছরই বাচ্চা দিতে পারে স্ত্রী হরিণ। ২০১৯ সালে স্পটেড ডিয়ার শিরোনামে নেপালের হারিও বন কর্মসূচির একটি প্রকাশনা থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
নিঝুম দ্বীপের বনে একদিকে হরিণ বাড়তে থাকে, অন্যদিকে বাড়ে গাছের উচ্চতাও। একটা পর্যায়ে গাছের পাতা হরিণের নাগালের বাইরে চলে যায়। আবার বাড়তি হরিণের খাদ্যচাহিদাও বেড়ে যায়। পরে খাদ্যের খোঁজে লোকালয়ে ঢুকে পড়তে থাকে হরিণ। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথম আলোকে জানান, একটা সময় বাড়ির উঠানে লাগানো সবজিগাছও খেয়ে ফেলা শুরু করে হরিণের দল। দেখা যায়, রান্না করে রাখা হাঁড়িভর্তি ভাত সাবাড় হয়ে গেছে। ধানখেতেও হানা দিত হরিণের পাল; দলবেঁধে খেয়ে ফেলত ফসল। খাবারের সন্ধানে বনের ভেতরে-বাইরে, সমুদ্রের ধারে ঘুরে বেড়াতে থাকে হাজার হাজার হরিণ। হরিণের সংখ্যা এত বাড়ে যে ওয়াইল্ডলাইফ অ্যাডভাইজারি কমিটির পক্ষ থেকে হরিণ শিকারের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নেওয়া হয়। ২০০৬ সালে এই বোর্ড তাদের ২১তম সভায় নিঝুম দ্বীপে হরিণ শিকারের অনুমতি দিয়ে হরিণের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ কমানোর পরামর্শ দেয়। তাদের যুক্তি ছিল, নিঝুম দ্বীপের যে আয়তন, তা এত বেশি হরিণের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
বন্য প্রাণী গবেষক, বন বিভাগের তথ্য, নিঝুম দ্বীপ নিয়ে করা বিভিন্ন গবেষণাপত্র এবং স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালের পর থেকেই হরিণের সংখ্যা কমতে শুরু করে। ২০০৬ সালে করা এক গবেষণায় এই দ্বীপে হরিণের সংখ্যা ১৪ হাজার ৪০০ পাওয়া যায়। কিন্তু এই সংখ্যাও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। বন্য প্রাণী গবেষকদের মতে, যেকোনো বনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে চিত্রা হরিণ ৪০ থেকে ৬০টি থাকলেই ওই বনে ভালো সংখ্যায় হরিণ টিকে আছে বলে ধরা হয়।
২০০৯ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ওয়াইল্ডলাইফ অ্যাডভাইজারি বোর্ডের একটি প্রতিনিধিদল নিঝুম দ্বীপের হরিণের পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখার জন্য সেখানে যায়। কিন্তু তারা দুই দিন নিঝুম দ্বীপের বনাঞ্চলে ঘুরে মাত্র একটি হরিণ দেখতে পায়। পরে তারা হরিণ শিকারের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংঘ আইইউসিএনের ২০১৫ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশের রেড লিস্ট খণ্ড ২: স্তন্যপায়ী প্রাণী বইয়ে বলা হয়, ২০০৬ সালে নিঝুম দ্বীপে হরিণের সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি ছিল। কিন্তু আবাসস্থল হ্রাস, খাদ্যসংকট এবং শিয়াল ও বন্য কুকুর দ্বারা নবজাতক হরিণ শিকারের কারণে এই সংখ্যা ২০১৫ সালে দুই হাজারের নিচে নেমে আসে।
গত মে মাসেও নিঝুম দ্বীপে সরেজমিনে মাত্র একটি হরিণের দেখা পাওয়া যায়। বন বিভাগের নিয়মিত টইলেও হরিণ দেখা যায় খুবই কম। এক মাসে (৮ এপ্রিল থেকে ১০ মে) তারা মাত্র আটটি হরিণ দেখেছেন বলে প্রথম আলোকে জানান।
সে সময় নোয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিঝুম দ্বীপের ৪০ হাজার ৩৯০ একর জমি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছিল। সেখানে এখন ইউনিয়ন পরিষদ হয়েছে। মানুষ বেড়েছে। মানুষ আর বন্য প্রাণী তো পাশাপাশি থাকতে পারে না! তাই ধীরে ধীরে হরিণ কমে গেছে।’
‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’
জলদস্যু ও স্থানীয়দের একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী হরিণ পাচার ও হরিণের মাংস বিক্রি শুরু করে। ছোট বা মাঝারি আকারের একেকটি হরিণ ২৫-৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ায় অনেক বাসিন্দাও হরিণ শিকার ও পাচারের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর হরিণ পাচারের একটি মামলা করা হয়। এজাহারে বলা হয়, ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় কোস্টগার্ডের তমরুদ্দিন ক্যাম্পের সদস্যরা একটি দেশি নৌকায় জীবন্ত চিত্রা হরিণ পরিবহনকালে সাত ব্যক্তিকে আটক করে। পরে বন বিভাগের লোকজন হরিণ ও আটক ব্যক্তিদের নিজেদের হেফাজতে নেয়।
২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর করা আরেকটি মামলার এজাহারে বলা হয়, নোয়াখালীর নলচিরা রেঞ্জের ঢালচর বিটের নিউচর জোনাক সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ছয়জনের একটি দল একটি চিত্রা হরিণ শিকার করে। হরিণটিকে গাছে ঝুলিয়ে দুজন চামড়া ছাড়াচ্ছিল আর দুজন ওই কাজে সহযোগিতা করছিল। বাকি দুজন হরিণ ধরার জাল (ফাঁদ) গুটাচ্ছিল। পরে কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় তাদের সেখান থেকে আটক করা হয়।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১২ সালে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন সংশোধিত হয়ে কার্যকর হওয়ার আগপর্যন্ত মানুষ গোপনে এবং প্রকাশ্যে হরিণ শিকার করত; হরিণ ধরে রান্না করে খেত।
১৯৮৮ সালে পুনর্বাসনের সময় নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার এলাকায় বসত গড়েন আবদুল মালেক (৬২)। গত মে মাসে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন সময় আছিল, যখন প্রতিদিন হরিণ ধইরা জবাই করা হইতো। দ্বীপে এমন কোনো মানুষ নাই, যে হরিণের মাংস খায় নাই।’
২০১৫ সালের মার্চে নিঝুম দ্বীপের ছোঁয়াখালীতে ঢাকা থেকে আসা কয়েকজন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাকে নিয়ে হরিণ শিকার করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন। দুটি আগ্নেয়াস্ত্রও আটক করা হয় তখন।
শিয়াল ও বুনো কুকুরও হরিণ ধরে খাওয়া শুরু করে বলে জানান নোয়াখালী বন বিভাগের জাহাজমারা রেঞ্জের চর ওসমান বিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহাগ আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা সময় দ্বীপে শিয়াল ছিল না। জোয়ারের পানিতে অন্য অঞ্চল থেকে এখানে ভেসে আসে শিয়াল। পরে দেখা যায়, শিয়াল হরিণশাবক ধরে ধরে খায়। বিশেষ করে হরিণেরা যখন সপরিবার পুকুরে পানি খেতে আসে, তখন শিয়াল হরিণশাবককে আক্রমণ করে। এখন দ্বীপে শিয়ালের সংখ্যা অনেক বেশি।’
জলবায়ুর অভিঘাতবন বিভাগ ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, আইলার মতো বড় ঘূর্ণিঝড়গুলোতেও প্রচুর পরিমাণে হরিণ মারা পড়েছে। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়েই হাজার হাজার হরিণ ভেসে গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজের তত্ত্বাবধানে করা একটি গবেষণায় বলা হয়, বর্ষাকালে কিছু হরিণের খুরারোগ হয়। তখন ওদের হাঁটতে কষ্ট হয়। এ রকম কিছু হরিণ কুকুরের কামড়ে মারা পড়ে। গবেষণায় ২৬৮টি মরা হরিণের হাড় ও মাথা নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, স্ত্রী হরিণ বেশি মারা পড়ায় বংশবিস্তারও কমে যায়। বনে সুপেয় পানির অভাবও দেখা দেয় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে। (শেষ)
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন মাহবুবুর রহমান, নোয়াখালী]
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বকাপে জায়গা করতে বিশ্বকাপজয়ীকে কোচের দায়িত্ব দিল ইতালি
দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা যে কতটা গৌরবের আর আনন্দের, সেটা একজন বিশ্বকাপ জয়ের-অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড়ের চেয়ে আর কে ভালো বোঝাতে পারবেন?
আর এমন ভাবনা থেকেই এবার গানারো গাত্তুসোকে জাতীয় ফুটবল দলের কোচ নিয়োগ দিয়েছে ইতালি। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা করা নিয়ে শঙ্কায় আছে। এর আগে খেলতে পারেনি ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপে। টানা তৃতীয় আসর যাতে দর্শক হয়ে না থাকতে হয়, সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে ২০০৬ বিশ্বকাপজয়ী গাত্তুসোকে দায়িত্ব দিয়েছে ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন এফআইজিসি।
২০২৬ বিশ্বকাপের ইউরোপিয়ান বাছাইয়ে ইতালি খেলছে ‘আই’ গ্রুপে। পাঁচ দলের গ্রুপ থেকে শুধু শীর্ষ স্থানধারী দলই বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা করতে পারবে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা দল প্লে-অফে খেলার সুযোগ পাবে। এই মুহূর্তে ‘আই’ গ্রুপে ৪ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে নরওয়ে। ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ইসরায়েল। ইতালির অবস্থান তিনে, ২ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট।
গত সপ্তাহে নরওয়ের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হারার পরই এফআইজিসি কোচ লুসিয়া স্পালেত্তিকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিদায় নিশ্চিতের পরও সোমবার মল দোবার বিপক্ষে ম্যাচে ডাগআউটে দাঁড়ান স্পালেত্তি, ম্যাচটি ইতালি ২-০ ব্যবধানে জেতে।
নরওয়ে নিজেদের প্রথম চার ম্যাচের চারটিতেই জেতায় ইতালি এখন চাপে আছে। হাতে এখনো ৬টি ম্যাচ বাকি। তবে শীর্ষস্থানে থাকতে হলে নিজেদের বাকি সব ম্যাচ তো জিততেই হবে, নরওয়েকেও পয়েন্ট হারাতে হবে। আর এমন জটিল পরিস্থিতির মধ্যেই ইতালি দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন গাত্তুসো।
৪৭ বছর বয়সী গাত্তুসো ২০০০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ইতালির জাতীয় দলে খেলেছেন। এর মধ্যে ২০০৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের সেরা পারফরমারদের একজন ছিলেন। সব ম্যাচেই শুরুর একাদশে ছিলেন, পরে জায়গা করে নিয়েছিলেন বিশ্বকাপের অলস্টার একাদশেও। ২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডের ক্লাব সিওনে খেলোয়াড় কাম কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখন থেকে গত ১২ বছরে মোট ৯টি ক্লাবের ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন গাত্তুসো। যার মধ্যে আছে নিজের সাবেক ক্লাব এসি মিলান এবং ভ্যালেন্সিয়া ও মার্শেই। সর্বশেষ ক্রোয়েশিয়ার ক্লাব হাইদুক স্প্লিটের দায়িত্বে ছিলেন, যা গত মাসে পারস্পরিক সমঝোতায় ছেড়ে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোচ হিসেবে মোট ৩৭৬টি ম্যাচে ডাগআউটে দাঁড়িয়ে গাত্তুসোর জয়ের হার ৪২.৮২ শতাংশ। জিতেছেন ১৬১টিতে, ড্র ১০৮ আর হার ১০৭-এ।
এখন দেখার বিষয়, ইতালি দলে তার সাফল্যের হার কতটা হয়, বিশেষ করে যখন দলের দরকার শতভাগ জয়। ইতালি জাতীয় দল তাদের পরবর্তী ম্যাচ খেলবে ৫ সেপ্টেম্বর এস্তোনিয়ার বিপক্ষে।