বাণিজ্য-বিনিয়োগ নিয়ে অনেক আশাবাদ শোনা গেছে অতীতে। এখন সময় এসেছে প্রয়োজনীয় সেবা এবং মানের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করার। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় সেবা প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ প্রতিষ্ঠানকে  শুধু রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পালন করলেই হবে না; বাণিজ্য বিনিয়োগ সহায়ক নীতি এবং সেবার দায়িত্বও পালন করতে হবে। তা না হলে শুধু ভালো কথায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আনা সম্ভব হবে না। 

গতকাল রোববার ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে নীতির সমন্বয়’ শিরোনামে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা এবং তাদের প্রতিনিধিরা। আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে এ সভার আয়োজন করে।  
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ছয় মাস পার হয়েছে। এ সময়ে সরকার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিছু বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। তবে সরকারের উদ্দেশ্য ভালো, খারাপ কোনো এজেন্ডা নেই। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। ইতোমধ্যে কিছু জায়গায় স্থিতিশীলতা এসেছে। তবে মূল্যস্ফীতি এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নিয়েছে। এতে আবার ব্যাংক ও বেসরকারি খাতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন হয়েছে। 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর একটা অংশ এখন দেশে নেই। তারা বিপুল পরিমাণে অর্থসম্পদ বাইরে নিয়ে গেছে। ব্যাংকগুলো এখন খালি রয়েছে কেন? প্রায় সব দুর্বল ব্যাংক থেকে আমানতকারীদের বিপুল পরিমাণ টাকা বাইরে নিয়ে গেছে একটি চক্র। এটা ক্ষমার যোগ্য নয়। বেসরকারি খাতকেও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন অর্থ উপদেষ্টা। 

ভ্যাটের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে তারা একটি সিদ্ধান্তে আসবেন। এ সময় পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন তিনি। শেয়ারবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেড ক্যাটেগরির কোম্পানির শেয়ারের অনেক লেনদেন হয়। দেখা গেছে, কিছু কারখানায় গরু-ছাগল চরে বেড়ায়; কিন্তু শেয়ারের দর বেশি। 
এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, আমদানি শুল্ক প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। এগুলো সব একসঙ্গে প্রত্যাহার করা কঠিন হয়ে যাবে। তবে পর্যায়ক্রমে করা যাবে। তিনি বলেন, কাস্টম হাউসগুলো সরকারের অর্থ আয়ের মেশিন হওয়া উচিত নয়। বরং এগুলোকে ব্যবসার সহায়ক হিসেবে কাজ করতে হবে। 

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, শুধু কর সংগ্রহ নয়, এনবিআরের উচিত বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানের দিকেও মনোযোগ দেওয়া। বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সের বাইরে চিন্তা করে সব খাতের জন্য কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে হবে। বিভিন্ন সংস্থাকে একত্রিত করে একটি শক্তিশালী বিনিয়োগ সংস্থা গঠন করে তাদের ক্ষমতা প্রদান করা প্রয়োজন। খরচের ব্যাপারে সরকারকে আরও দক্ষ ও সাশ্রয়ী হতে হবে। ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ বাড়ানোর আগে নিজেদের ব্যয় কমানো উচিত। ব্যাংক ঋণের সুদহার একক অঙ্কে আনতে হবে।
মূল প্রবন্ধে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশে কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নেই। বিশেষ করে জিডিপির তুলনায় বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ কম। এই পরিস্থিতি উত্তরণে বিদ্যমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতি সংশোধন করতে হবে। এ ছাড়া শুল্ক-কর নিয়ে বিদ্যমান জটিলতা নিরসন করতে হবে। 
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি উন্নতির চেষ্টার পরিবর্তে সম্প্রতি ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। এটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত। বর্তমানে সরকারের অগ্রাধিকার বিষয় হওয়া উচিত দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও কর্মসংস্থান। এ ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সুদহার। 

কোকা-কোলা বাংলাদেশের এমডি শাদাব আহমেদ খান বলেন, সরকারকে নতুন বিনিয়োগ ও পুনর্বিনিয়োগের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন তারা। কিন্তু এ জন্য শুল্ক-কর কমিয়ে বিনিয়োগের সুরক্ষা দিতে হবে। 
বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও নাসের এজাজ বিজয় বলেন, বর্তমানে দেশের ব্যবসায়ীরা আস্থার অভাবে ভুগছেন। এটি দূর
করা প্রয়োজন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজপরিবারের সঙ্গে সমঝোতা চান প্রিন্স হ্যারি

রাজপরিবারের সঙ্গে সমঝোতার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন প্রিন্স হ্যারি। যুক্তরাজ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনি লড়াইয়ে হারের পর বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ডিউক অব সাসেক্স হেনরি চার্লস আলবার্ট ডেভিড এই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন। আবেগঘন ওই সাক্ষাৎকারে বাবা রাজা চার্লসের স্বাস্থ্য নিয়েও উদ্বেগ জানান তিনি।

হ্যারি বলেন, নিরাপত্তা সংক্রান্ত এইসব কারণে বাবা (চার্লস) তার সঙ্গে কথা বলবেন না। কিন্তু তিনি আর লড়তে চান না। তাছাড়া, বাবা কতদিন বাঁচবেন তাও তিনি জানেন না।

১৫ মাস আগে যুক্তরাজ্যের রাজা চার্লসের ক্যান্সার ধরা পড়ে। বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে। কিছুদিন আগে চার্লস ব্যক্তিগত এক বার্তায় তার ক্যান্সারের অভিজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। এরপরই বাবাকে নিয়ে ওই কথা বললেন প্রিন্স হ্যারি।

যুক্তরাজ্যে সফরকালে হ্যারি ও তার পরিবারের পুলিশি নিরাপত্তার মাত্রা নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায়ে হেরে যান প্রিন্স হ্যারি। শুক্রবার মামলার রায় ঘোষণা করে লন্ডনের আপিল আদালত।

২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের দায়িত্ব ছেড়ে স্ত্রী মেগান মার্কেলকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান প্রিন্স হ্যারি। এরপর যুক্তরাজ্য সরকার হ্যারিকে আর আগের মতো সরকার-প্রদত্ত নিরাপত্তা না দেওয়া এবং প্রতিটি সফরের ক্ষেত্রে তা আলাদাভাবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রথম মামলায় হারের পর হ্যারি আপিল করেন। তার আইনজীবীদের অভিযোগ ছিল, হ্যারিকে ‘অযৌক্তিক ও কম মানের’ নিরাপত্তা দিয়ে অন্যদের তুলনায় আলাদাভাবে দেখা হয়েছে। কিন্তু আদালত সেই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে।

সরকারের পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, হ্যারির নিরাপত্তা কমানোর কারণ হচ্ছে, তার রাজকীয় অবস্থানের পরিবর্তন। তিনি এখন বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরে বাস করেন।

মামলায় পুনরায় পরাজয়ের পর হ্যারি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমি আমার পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হতে চাই। আইনি লড়াই করার আর কোনও মানে হয় না। জীবন মূল্যবান।

তিনি আরও বলেন, আমার পরিবারের কিছু সদস্য ও আমার মধ্যে অনেক মতবিরোধ, মতভেদ আছে। কিন্তু এখন সেগুলো ক্ষমা করে দিয়েছি।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে স্ত্রী মেগান এবং সন্তানকে রাজপরিবারে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব না, সেকথাও বলেছেন হ্যারি। নিরাপত্তা সংক্রান্ত মামলায় আদালত যে রায় দিয়েছে তার ফলে পরিবারসহ নিরাপদে যুক্তরাজ্যে ফেরা ‘অসম্ভব’ হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ