তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) পৃথক দুটি প্রকল্পের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রকল্প দুটিতে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি ৭৮ লাখ ৬০০ টাকা।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহদেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় প্রস্তাব দুটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা গেছে, ‘ডিজিটাল সরকার ও অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের ‘লট-১: সাপ্লাই, ইন্সটলেশন অ্যান্ড কমিশনিং অব ইক্সপানশন অব এক্সিস্টিং নুটানিক্স প্রাইভেট ক্লাউড প্ল্যাটফরম ইন ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার অ্যাট বিসিসি’র ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে দুটি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে একটি প্রস্তাব আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান থাকরাল ইনফরমেশন সিস্টেম প্রইভেট লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নির্বচিত হয়। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫১ কোটি ৬৮ লাখ ১১ হাজার ৫৮২ টাকা।

সভায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের ‘কন্সট্রাকশন অব নাম্বার ওয়ান ৫০ এমএলডি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ইন ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনমিক জোন অ্যাট মিরসরাই, চট্টগ্রাম’-এর অতিরিক্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। গত ২০২২ সালের ২৬ মে’র সিসিজিপি সভার অনুমোদনক্রমে ‘জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পানি শোধনাগার ও নলকূপ স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় মিরসরাইয়ে একটি ৫০ এমএলডি ক্ষমতাসম্পন্ন সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন কাজ যৌথভাবে (১)জেডএইচইসি, (২) বিওডব্লিউ এবং (৩) এসএমইডিআরআইসি, হংকংয়ের সঙ্গে ৪৩৯ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার টাকায় ক্রয় চুক্তি করা হয়। চুক্তিতে ৮০০ মিলিমিটার ব্যাসের ট্রান্সমিশন পাইপলাইন স্থাপনের বিষয় থাকলেও বাস্তবে ১ হাজার মিমি ব্যাসের ট্রান্সমিশন পাইপলাইন স্থাপন ও মাটি ভরাটের কাজ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ভেরিশেন বাবদ চুক্তির অতিরিক্ত ৭৯ কোটি ৯ লাখ ৮৯ হাজার ১৮ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমাঞ্চল রেলে ভয়াবহ দুর্নীতি, সাবেক ২ জিএমসহ আসামি ১৮ জন

বাজারে একটি তালার দাম ১৭৩ টাকা, কিন্তু সেটি কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৫৯০ টাকায়। ২৬০ টাকার বালতি কেনা হয়েছে ১ হাজার ৮৯০ টাকায়, ৬৫ টাকার বাঁশির জন্য দেওয়া হয়েছে ৪১৫ টাকা, আর ৯৮ টাকার ঝাড়ু কেনা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০ টাকায়। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কেনাকাটায় এমন ভয়াবহ দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এ ঘটনায় বুধবার (১৫ অক্টোবর) মামলা করেছে দুদক। মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৮ জনকে। এর মধ্যে পশ্চিম রেলের সাবেক দুই মহাব্যবস্থাপকও (জিএম) রয়েছেন। 

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রাজশাহীতে মামলা দায়ের করেন।

এতে আসামিদের বিরুদ্ধে কেনাকাটায় মোট দুই কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার ১৯৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আসামিরা হলেন- অবসরে যাওয়া সাবেক মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম ও মজিবুর রহমান, সাবেক সিওসি খায়রুল আলম ও বেলাল হোসেন সরকার, সাবেক এসিওএস জাহিদ কাওছার, তৎকালীন ডেপুটি সিসিএম ফুয়াদ হোসেন আনন্দ, তৎকালীন ডিএফএ শ্যামলী রাণী রায়, তৎকালীন উচ্চমান সহকারী আলামিন তালুকদার, সাবেক ডিএফএ (অর্থ) আলমগীর হোসেন; 

তৎকালীন সিওপিএস এএমএম শাহনেওয়াজ, তৎকালীন এফএ অ্যান্ড সিএও শরিফুল ইসলাম, তৎকালীন ডেপুটি সিওপিএস হাসিনা খাতুন, সাবেক এফএ অ্যান্ড সিএও মসিহ উল হাসান, সাবেক এসিসিএম শেখ আব্দুল জব্বার, সাবেক অতিরিক্ত এফএ অ্যান্ড সিএও গোলাম রব্বানী, তৎকালীন অতিরিক্ত এফএ অ্যান্ড সিও গোলাম রহমান, সাবেক এফএ অ্যান্ড সিও সরোজ কান্তি দেব এবং সাবেক সিসিএম মিহির কান্তি গুহ।

দুদক জানিয়েছে, এই কর্মকর্তারা বিভিন্ন পণ্য কেনার ক্ষেত্রে বাজারদরের চেয়ে ১৫ থেকে ৩৩ গুণ বেশি দাম পরিশোধ করেছেন। রেলের অভ্যন্তরীণ তদন্তেই এসব অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়। তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস।

দুদকের এনফোর্সমেন্ট অভিযানে দেখা যায়- একটি তালা কিনতে ঠিকাদারকে পরিশোধ করা হয়েছে ৫ হাজার ৫৯০ টাকা। যেখানে ভ্যাট, আয়কর ও মুনাফাসহ বাস্তবিক মূল্য ছিল মাত্র ১৭৩ টাকা। শুধু তালা কেনাতেই দুর্নীতি হয়েছে ১০ লাখ ৮৩ হাজার ৪০০ টাকার।

অন্যদিকে, ২৬০ টাকার বালতি ১ হাজার ৮৯০ টাকায়, ৬৫ টাকার বাঁশি ৪১৫ টাকায় এবং ৯৮ টাকার ঝাড়ু ১ হাজার ৪৪০ টাকায় কিনে লুট করা হয়েছে ১৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

একইভাবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে অফিসে ৫০টি ভিআইপি পর্দা কিনতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৩০০ টাকা, লাগেজ ফিতাসহ ওয়াগন কার্ড কেনায় ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ২৫০ টাকা এবং ভিজিটিং চেয়ার, পেডাল ডাস্টবিন, লাগেজ ট্রলি, পাপোশ, ফটোকপিয়ার, স্টিল ফ্রেম চেয়ার, লেদার ক্যাশ ব্যাগসহ আরো ১৩ ধরনের পণ্য কেনায় ১ কোটি ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪৬ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

মোট চারটি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ১৭ ধরনের পণ্য কেনাকাটায় আত্মসাতের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার ১৯৬ টাকা।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাক্কলন কমিটি বাজারদর যাচাই না করেই প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ১৫ থেকে ৩৩ গুণ পর্যন্ত বেশি দর নির্ধারণ করে দরপত্র আহ্বান করে। ১৬৬টি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৬টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয় এবং তারাই কার্যাদেশ পায়। মূল্যায়ন কমিটি বাজারদর যাচাই না করেই ইচ্ছাকৃতভাবে অধিক মূল্যের দর গ্রহণ করে।

দুদক বলছে, অনুমোদনকারী কর্মকর্তা দরপত্র বাতিল বা পুনরায় আহ্বান করার ক্ষমতা থাকলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে অনিয়মিতভাবে দরপত্র অনুমোদন দেন এবং ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। প্রাক্কলন কমিটি, মূল্যায়ন কমিটি, অনুমোদনকারী কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা পরস্পর যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ কারণেই সংশ্লিষ্ট সবাইকে আসামি করা হয়েছে।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, ‘‘মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এখন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে, এরপর পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।’’

ঢাকা/কেয়া/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পশ্চিমাঞ্চল রেলে ভয়াবহ দুর্নীতি, সাবেক ২ জিএমসহ আসামি ১৮ জন