আইসিটি বিভাগ ও বেজার দুই প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৩১ কোটি টাকা
Published: 4th, February 2025 GMT
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) পৃথক দুটি প্রকল্পের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রকল্প দুটিতে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি ৭৮ লাখ ৬০০ টাকা।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড.
সভা সূত্রে জানা গেছে, ‘ডিজিটাল সরকার ও অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের ‘লট-১: সাপ্লাই, ইন্সটলেশন অ্যান্ড কমিশনিং অব ইক্সপানশন অব এক্সিস্টিং নুটানিক্স প্রাইভেট ক্লাউড প্ল্যাটফরম ইন ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার অ্যাট বিসিসি’র ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে দুটি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে একটি প্রস্তাব আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান থাকরাল ইনফরমেশন সিস্টেম প্রইভেট লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নির্বচিত হয়। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫১ কোটি ৬৮ লাখ ১১ হাজার ৫৮২ টাকা।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের ‘কন্সট্রাকশন অব নাম্বার ওয়ান ৫০ এমএলডি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ইন ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনমিক জোন অ্যাট মিরসরাই, চট্টগ্রাম’-এর অতিরিক্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। গত ২০২২ সালের ২৬ মে’র সিসিজিপি সভার অনুমোদনক্রমে ‘জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পানি শোধনাগার ও নলকূপ স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় মিরসরাইয়ে একটি ৫০ এমএলডি ক্ষমতাসম্পন্ন সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন কাজ যৌথভাবে (১)জেডএইচইসি, (২) বিওডব্লিউ এবং (৩) এসএমইডিআরআইসি, হংকংয়ের সঙ্গে ৪৩৯ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার টাকায় ক্রয় চুক্তি করা হয়। চুক্তিতে ৮০০ মিলিমিটার ব্যাসের ট্রান্সমিশন পাইপলাইন স্থাপনের বিষয় থাকলেও বাস্তবে ১ হাজার মিমি ব্যাসের ট্রান্সমিশন পাইপলাইন স্থাপন ও মাটি ভরাটের কাজ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ভেরিশেন বাবদ চুক্তির অতিরিক্ত ৭৯ কোটি ৯ লাখ ৮৯ হাজার ১৮ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পড়ে আছে ৮ হাজার কোটি টাকার পাইপলাইন
সাগরে অপেক্ষমাণ বড় ট্যাংকার থেকে পাইপের মাধ্যমে সরাসরি জ্বালানি তেল খালাসের প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে গত বছরের আগস্টে। কিন্তু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ায় এক বছরের বেশি সময় ধরে অলস পড়ে আছে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি।
তেল খালাসে খরচ ও সময় বাঁচাতে ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ বা ভাসমান জেটি নির্মাণের এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট। এরপর চার দফা মেয়াদ বাড়ে। আর ব্যয় ৫ হাজার কোটি থেকে বেড়ে ৮ হাজার ২৯৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)।
এই প্রকল্পের নির্মাণ (ইপিসি) ঠিকাদার ছিল চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিপিপিইসি)। প্রকল্পের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকাদার হিসেবে সিপিপিইসিকে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনাও এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত বছর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেই আলোচনা থেমে যায়। এরপর দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে বিপিসি।
প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় গত বছরের আগস্টে। পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিষ্ঠান নিয়োগ না হওয়ায় এক বছরেও এটি চালু হয়নি।বিপিসি সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল ঠিকাদার নিয়োগে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। দুটি প্রতিষ্ঠান এই কাজে আগ্রহ দেখায়। একটি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে যোগ্যও বিবেচিত হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির দর বিপিসির বার্ষিক প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে ৫১ শতাংশ বেশি। এ কারণে শেষ পর্যন্ত আর প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর দরপত্র প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়।
জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তিন বছরের যে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল, দরদাতা প্রতিষ্ঠান তার চেয়ে ৫১ শতাংশ বেশি অর্থ দাবি করেছে। এ কারণে দরপত্রটি বাতিল করা হয়। এখন জিটুজি বা সরকার টু সরকার ভিত্তিতে ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া বিবেচনায় রয়েছে। চীন ও ইন্দোনেশিয়ার দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে, তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই চলছে। আগামী বছরের মার্চে প্রকল্পটি চালুর লক্ষ্য রয়েছে।
তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সেটি হলে জিটুজি অনুমোদন পাওয়া নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে। সেটি হলে মার্চে প্রকল্পটি চালু করা যাবে কি না, এ নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
প্রকল্পে যা আছে
প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে গভীর সাগরে ভাসমান মুরিং (বিশেষায়িত বয়া) বসানো হয়েছে। সেখান থেকে সাগরের তলদেশ দিয়ে মহেশখালী স্টোরেজ ট্যাংক হয়ে আবার পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত ১১০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাম্পিং স্টেশন, তিনটি করে অপরিশোধিত তেল ও ডিজেল ট্যাংক, বুস্টার পাম্প, জেনারেটরও বসানো হয়েছে প্রকল্পের আওতায়।
প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় এখনো সনাতন পদ্ধতিতে ঝুঁকি নিয়ে সাগর থেকে তেল খালাস করা হচ্ছে। বর্তমানে সাগরের বড় জাহাজ থেকে ছোট ট্যাংকারে প্রথমে তেল স্থানান্তর করা হয়। এরপর ছোট ট্যাংকার জেটিতে এনে পরে তা পাইপের মাধ্যমে খালাস করা হচ্ছে। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ট্যাংকারের মাধ্যমে তেল পরিবহন ও খালাসের কাজ করা হয়। প্রকল্পটি চালু হলে এক লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার থেকে তেল খালাসে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগত। যেটি এখন সনাতন পদ্ধতিতে করতে ১০ থেকে ১১ দিন লাগছে। এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতিতে তেল খালাসে বিস্ফোরণের ঝুঁকিও থাকে। গত বছর এই পদ্ধতিতে তেল খালাস করতে গিয়ে একটি ট্যাংকারে বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
পূর্ণ সক্ষমতায় ব্যবহার হবে না এখনই
দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা বছরে ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করা হয়। সরকারি ইস্টার্ন রিফাইনারি আমদানি করা অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করে। আর পরিশোধিত সেই তেল বাজারজাত করে বিপিসি। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অপরিশোধিত তেল আমদানি না বাড়লে নতুন প্রকল্পটি পূর্ণ সক্ষমতায় ব্যবহার করা যাবে না।
এসপিএম প্রকল্পে পৃথক দুটি পাইপলাইন রয়েছে—একটি অপরিশোধিত তেলের জন্য, অন্যটি পরিশোধিত তেল সরবরাহের। বিপিসি ও ইআরএলের তিনজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট তৈরি না হলে এসপিএম প্রকল্পের পূর্ণ সুবিধা কাজে লাগবে না। এসপিএম প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে তাতে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হওয়ার কথা রয়েছে। পরিবহন, তেল খালাসের খরচ ও নানা অপচয় কমে এ অর্থ সাশ্রয় হবে।
ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের প্রকল্প অনেক আগেই হাতে নেওয়া হয়েছে। যার জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। ইতিমধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপি তৈরি করেছে বিপিসি। তবে এখনো প্রকল্পটি সরকারি অনুমোদন পায়নি।
ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটের বিষয়ে জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট প্রকল্পটি গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে। আগামী একনেক সভায় এই প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে।