কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে প্রতিপক্ষের মারধরে আহত মো. আতিক নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার একটি হাসপাতাল মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের বাবা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের নানা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হারুন অর রশীদ মজুমদার। 

আরো পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে ৪ সাংবাদিককে আটকে মারধর, ‌‘গুলি’ 

শেরপুরে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২

মারা যাওয়া আতিক পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাকাটিয়া গ্রামের ব্যাপারী বাড়ির আবদুল মান্নান মিয়ার ছোট ছেলে। তিনি চৌদ্দগ্রাম সরকারি পাইলট বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

নিহতের বাবা আবদুল মান্নান মিয়া থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে উল্লেখ করেন, আতিক সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে সোনাকাটিয়া গ্রামের মধ্যমপাড়ায় মোতালেবের দোকানে যান। সেখানে পূর্ব থেকে যোগসাজশে উপস্থিত থাকা একই গ্রামের নূরে আলম, আমান ও নেয়ামত উল্লাহর নেতৃত্বে নাম না জানা আরো ৫-৬ জন আতিককে মারধর করেন। হত্যার উদ্দেশ্য লোহার রড, এসএসপাইপ, বিদেশি বড় টর্চ লাইট, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আতিকের মাথা, কান, নাক ও মুখ জখম করে তারা। এ সময় আতিক ও উপস্থিত একরাম হোসেন রনি, আসিফ ও আল আমিনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। তারা হামলাকারীদের কবল থেকে তাকে (আতিক) উদ্ধার করে। 

পরিবারের লোকজন আতিককে দ্রুত চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আতিককে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলেও আইসিইউ সঙ্কটে পরে ঢাকার বিএনকে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয় আতিককে। ওই হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকাকালীন মঙ্গলবার বিকেলে আতিকের মৃত্যু হয়। 

এদিকে, আতিকের মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে বিকেল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মারা যাওয়া যুবকের পরিবার থানায় অভিযোগ দিয়েছে।”

ঢাকা/রুবেল/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রধর ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

তিস্তায় দেখা বড় সাদা কপাল রাজহাঁস

তিস্তা নদী পরিযায়ী পাখিদের একটি পথ। এখানে পরিযায়ী পাখি এসে অবস্থান করে না। কিছুটা সময় বিশ্রাম নেয়। দু-চার দিন থেকে চলে যায় ভাটিতে। শীত মৌসুমে অনেক পাখি তিস্তায় আসে। কয়েক বছর ধরে যে পাখিগুলো আমরা দেখেছি, তার থেকে ভিন্ন একটি পাখি এ বছর দেখতে পেলাম। বড় সাদা-কপাল রাজহাঁস। আমি আগে আর কোথাও এ পাখি দেখিনি। ফলে প্রথম দেখার একটি বিশেষ আনন্দ আছে।

পাখিটি বাংলাদেশে অনিয়মিতভাবে দেখা যায়। বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীতে কয়েক বছর ধরে আমরা কয়েকজন আলোকচিত্রী নিয়মিত যাই। তাঁদের কেউ অতীতে এ পাখি দেখতে পাননি। আমাদের জানামতে, তিস্তায় এটাই এ পাখি দেখার প্রথম রেকর্ড। যেহেতু পাখিটি দেখতে অনেক বড়, তাই কেউ সহজে চিহ্নিত করতে পারে।

পরিযায়ী পাখির মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীতে অনেক পাখি দেখা যায়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এমনকি পূর্বাঞ্চলে পরিযায়ী পাখি আসারও আগে নীলফামারী-লালমনিরহাট-রংপুরে তিস্তা নদী ধরে পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করে। ২০২০ সাল থেকে এমনটাই দেখে আসছি।

এ বছর নভেম্বর মাসের শুরুতেই রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর মহিপুর ঘাট থেকে নৌকায় উজানের দিকে যাই। প্রথম দিনই অনেক প্রজাতির পাখি দেখতে পাই। শুরুতে একঝাঁক গাঙচিল দেখলাম। দুই প্রজাতির গাঙচিল একসঙ্গে। এদের ছবি তুলে আরও খানিকটা উজানে যেতেই দেখতে পাই একঝাঁক পাতারি হাঁস। তারও খানিকটা উজানে কয়েকটি চখাচখি।

অনেক দূর থেকে দেখলাম কয়েক প্রজাতির হাঁসের একটি বড় মিশ্র ঝাঁক। খালি চোখে বোঝা যাচ্ছিল না কী হাঁস। ক্যামেরার লেন্সে দেখতে পেলাম পান্তামুখি হাঁস, রাঙা দিঘেরি, নাইরলি হাঁস, পিয়ং হাঁস। নৌকায় উজানে যেতে যেতে দেখলাম কয়েকটি পাখি আরও দূর থেকে উড়ে আসছে। দূরত্ব কিছুটা কমলে নিশ্চিত হলাম পাখির সংখ্যা ৪। আরও কাছে এলে বুঝলাম রাজহাঁস। ছবি তুলে জুম করে দেখলাম এগুলো বড় সাদা-কপাল রাজহাঁস। ২০০৮ সালে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বাংলাদেশের পাখি গ্রন্থে রেজা খান সাদা-কপাল রাজহাঁস সম্পর্কে লিখেছেন, ‘বিরলতম, কখনো দেখা মেলে। শীতের পরিযায়ী; মোটে একবার দেখা যাবার রেকর্ড আছে ঢাকার কোনো বড় নদীর এলাকায় অবিকল রাজহাঁস সাদৃশ্য।’ তবে এরপর আরও অনেকবার দেখা গেছে।

বিরল বড় সাদা-কপাল রাজহাঁস দেখা যাচ্ছে শুনে আলোকচিত্রী খাইরুল ইসলাম পলাশ এবং রানা মাসুদও তিস্তায় চলে আসেন। খাইরুল ইসলাম দেখতে পেলেও রানা মাসুদ আর দেখতে পাননি। পরে আমরা আরও বেশ কয়েক দিন তিস্তা নদীতে গিয়েছি কিন্তু আর বড় সাদা-কপাল রাজহাঁস দেখতে পাইনি। স্থানীয় কয়েকজনের কাছে শুনেছি, কোনো এক শিকারি রাজহাঁস মেরেছে। নিশ্চিত হওয়া যায়নি এই হাঁসগুলোকে কেউ মেরেছে কি না। এমনও হতে পারে, দূরে কোথাও চলে গেছে। শীত মৌসুম শেষ হলে এই পথ ধরে ফিরবে আবার আগের ঠিকানায়।

বড় সাদা-কপাল রাজহাঁসের ইংরেজি নাম গ্রেটার হোয়াইট–ফ্রন্টেড গুজ। বৈজ্ঞানিক নাম Anser albifrons।

এই রাজহাঁসের চঞ্চু ও মাথার মাঝখানে সাদা থাকার কারণে এর নামকরণ হয়েছে বড় সাদা-কপাল রাজহাঁস। পেটের অংশের হালকা গাঢ় ধূসর রঙে ছোপ ছোপ কালোর মিশেল চোখে পড়ে। লেজের দিকটা সাদা। পা হলদেটে। পালক প্রধানত গাঢ় ধূসর। পাখার ওপরের সাদা সরু রেখা চোখে পড়ে। পাখিটি আকৃতিতে অনেক বড় হওয়ায় দূর থেকে দেখতেও দারুণ দেখায়।

তুহিন ওয়াদুদ: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

সম্পর্কিত নিবন্ধ