মহানবী (সা.)-কে কটূক্তি করে চবি শিক্ষার্থী বললেন ‘আই ডোন্ট কেয়ার’
Published: 4th, February 2025 GMT
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
অভিযুক্ত এসএম সানবিম সিফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তার ওই পোস্টের বিষয়ে এক শিক্ষার্থী জিজ্ঞাসা করলে জবাবে তিনি বলেন, ‘আই ডোন্ট কেয়ার।’
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানান।
সম্প্রতি ফেসবুকে মহানবী হয়রত মুহাম্মদ (সা.
সমাবেশে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, “আমাদের সহপাঠী সানবিম সিফাত ক্লাসরুমেও অনেক সময় ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছে। ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হয়রত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে তার কটূক্তি ও অবমাননাকর মন্তব্য লক্ষ্য করেছি আমরা। ফেসবুকে দেওয়া তার পোস্ট নিয়ে আমরা জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, ‘আই ডোন্ট কেয়ার’। তার ঔদ্বত্যপূর্ণ আচরণে আমরা সহপাঠী হিসেবে বেশ লজ্জিত। আমরা তাকে আমাদের ব্যাচ থেকে বয়কট করেছি এবং তার যথাযথ শাস্তির দাবি জানাই।”
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অনেক শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত এমন ঘৃণিত কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হাতিয়ার বানিয়ে সবসময় ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হয়রত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করে বেড়ায়। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন এমন কটূক্তি করা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কার্যকর শাস্তির ব্যবস্থা করেন।”
আরবি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এএইচএম রিয়াদ বলেন, “প্রতিনিয়ত এমন ঘৃণিত কাজের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশব্যাপী ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট হবে। যারা এসব কাজ করছে, তারা কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে, তা খুঁজে দেখতে হবে। এটা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশও হতে পারে। আমরা চাই সানবিম সিফাতকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। যাতে আগামীতে কেউ ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করতে না পারে।”
এদিকে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রক্টর অফিসে গিয়ে সানবিম সিফাতকে বহিষ্কারের লিখিত অভিযোগ দেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, “আমরা বিষয়টি জেনেছি এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগও পেয়েছি। সানবিম সিফাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা ব্যবস্থা নেব। দ্রুত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অফ রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভা ডেকে তাকে যথাযথ শাস্তি দেওয়া হবে।”
গত বছর ১৪ আগস্ট এ নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, “আজকে যেমন কিংবদন্তীর ইতিহাসে আসল রূপ ফাঁস হচ্ছে, ঠিক তেমনি সকল নেতা-মনিষীর জীবনীর নিরপেক্ষ ইতিহাস খুঁজে দেখুন তাদের কালো দিক প্রকাশ পাবে। এমনকি যাকে আপনারা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসাবে দাবি করেন, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে তার ইতিহাস খুঁজলে দেখবেন তিনিও ধোয়া তুলসী পাতা না।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আমানতের টাকা ফেরত পেতে চতুর্থ দিনের মতো মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ঘেরাও
জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতি থেকে আমানতের টাকা ফেরত পেতে আবার উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে প্রশাসনিক সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। দুই দিন বিরতি দিয়ে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করা হয়। বেলা দেড়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি চলছিল।
শুক্র ও শনিবার বিরতি দিয়ে আজ সরকারি সব দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে গত মঙ্গলবার থেকে সরকারি ২৩টি দপ্তরের সব কার্যক্রম বন্ধ আছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে টাকা ফেরত পাওয়ার ন্যূনতম উদ্যোগ না থাকায় আন্দোলনকারীরা ঘেরাও কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব দপ্তরের সেবাগ্রহীতারা।
মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহ প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল থেকে আবার পরিষদ ঘেরাও করা হয়েছে। গত সপ্তাহে টানা তিন দিন ও আজ প্রশাসনের সব দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ আছে। গতকাল দুপুরে থানায় আন্দোলনকারীদের নিয়ে আলোচনায় বসা হয়েছিল। সেখানে সাতটি সমিতির লোকজনও ছিলেন। আন্দোলনকারীরা পুরো টাকা না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এ জন্য কোনো সমাধান ছাড়াই আলোচনা শেষ হয়। এর চেয়ে বেশি কিছু করার ক্ষমতা তাঁর নেই। এটা নিয়ে কী হবে, সেটাও জানেন না।
‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’ ব্যানারে আজ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও অংশ নেন। এক বছর ধরে এ ব্যানারে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও একাধিকবার উপজেলা পরিষদ ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিন্তু কোনো গ্রাহকই টাকা ফেরত পাননি।
আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা মানুষ চতুর্থ দিনের মতো উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জড়ো হন। তাঁরা উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে কার্যালয় ঘেরাও করেন। এতে ২৩টি দপ্তরের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সেখানে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
আন্দোলনকারীরা বলেন, টাকা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে তাঁরা ঘেরাও কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। ২৩টি সমবায় সমিতিতে প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক টাকা জমা করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা ২০২২ সালের শেষের দিকে আত্মগোপনে চলে যান। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় কয়েক গুণ বেশি মুনাফার লোভ তাঁরা দেখিয়েছিলেন। এভাবে জামালপুর থেকে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির সদস্য মাহবুব আলম বলেন, আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে অবস্থান করবেন সবাই। এখান থেকে সন্ধ্যার পর মশাল মিছিল বের করা হবে। টাকা না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই আন্দোলন চলবে।
জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সমবায় সমিতিগুলোতে গ্রাহকদের ৭৩০ কোটি টাকা জমা ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দাবি, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোতে আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরে কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।
আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ৩৫ হাজার মানুষ তাঁদের কষ্টে উপার্জিত টাকা ফেরতের দাবিতে নানা আন্দোলন করছেন। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁরা কার্যকর কোনো সহযোগিতা পাননি। যখনই আন্দোলন শুরু হয়, প্রশাসন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন দমিয়ে দেয়। এরপর প্রশাসনের কোনো ভূমিকা থাকে না। এ জন্য এবার আলোচনা ও আন্দোলন একসঙ্গে চলবে। গতকাল ছোট ছোট সমিতির লোকজন নিয়ে প্রশাসন বসেছিল। কিন্তু যাঁরা হাজার কোটি টাকা নিয়ে আত্মগোপনে, তাঁদের কেউ ছিলেন না। প্রশাসনের কথায় আন্দোলনকারীরা আশ্বস্ত হতে পারেননি।