৮ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা
Published: 4th, February 2025 GMT
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ৮ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাজেটের আকার এমন ধরেই আয়-ব্যয়ের খসড়া রূপরেখা তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সামনে এটি তুলে ধরা হবে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ সংক্রান্ত সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড.
সভায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে একটি সম্ভাব্য সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করবেন অর্থ সচিব। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঘোষিত বাজেটের আকার ধরা হয় ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয় ৬ লাখ ২ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। এর ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্যও ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বিশাল বাজেট রেখে গেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে, আগামী অর্থবছরের যে বাজেট বরাদ্দ ধরা হয়েছে, তা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে দেওয়া হয়েছিল চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সম্পদ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বৈঠকে আগামী অর্থবছরের জন্য ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটের খসড়া তুলে ধরা হয়। কিন্তু সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আকার খানিকটা কমানো হয়েছে। আগামী জুনে এ বাজেট চূড়ান্ত করার সময় কিছু পরিবর্তন হতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি ও সরকারের আর্থিক সক্ষমতা বেশি না থাকায় আগামী বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট হওয়া উচিত।
জানা গেছে, আগামী বাজেটেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে কর্মসংস্থান বাড়ানো ও সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ব্যয় ৮ লাখ কোটি টাকার বেশিই ধরা হচ্ছে। কারণ অর্থ মন্ত্রণালয় মনে করছে, সরকারি ব্যয় বিশেষত উন্নয়ন ব্যয় একেবারে কমে গেলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগামী অর্থবছরে সরকারি ব্যয়ের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এডিপির বাস্তবায়ন মাত্র ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কিছু রাজনৈতিক প্রকল্প কাটছাঁট করা হয়েছে। আবার কিছু প্রকল্পে পর্যালোচনা করে কমানো হয়েছে ব্যয়। একই সঙ্গে সম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে উন্নয়ন কাজে কাঙ্ক্ষিত গতি না আসায় এডিপি বাস্তবায়ন কমে গেছে। অর্থ বিভাগ মনে করছে, অর্থবছর শেষে এডিপির বরাদ্দের ১ লাখ কোটি টাকার বেশি অব্যবহৃত থেকে যেতে পারে। তাই আগামী বাজেটে বরাদ্দ যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনা হচ্ছে।
জানা গেছে, বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে আগামী অর্থবছর দেশের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরই অংশ হিসেবে এবারই প্রথম করজাল সম্প্রসারণের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্ভাব্য আয়করদাতাদের চিহ্নিত করা হবে। বাজেটে আয়কর খাত থেকে বেশি রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা করা হবে।
সূত্র জানায়, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য এনবিআরকে অন্তত ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হতে পারে। চলতি বাজেটে সংস্থাটির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে সংস্থাটি প্রায় ৫৭ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৮৭ কোটি টাকা মানিলন্ডারিং, গাজীসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা
সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী এবং নারায়ণগঞ্জ (রূপগঞ্জ-১) এর সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (৭৭) ও তার সাবেক পিএস এমদাদুল হক (৫২) সহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে সিআইডি।
মামলার অন্য অভিযুক্তরা হলেন- সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলা (৫৭), তোফায়েল আহমেদ আলমাছ (৫৫), মো. মাহাবুবুর রহমান জাকারিয়া মোল্লা (৪৮), মো. আনছার আলী (৫৫), আলফাজ উদ্দিন (৬৩) ও দিমন ভূঁইয়া (৫৫)।
প্রতারণাপূর্বক চাঁদাবাজীর মাধ্যমে ভুয়া দলিল তৈরি করে অবৈধভাবে মোট ২৪০১.৪৬ শতাংশ জমি (যার বর্তমান সরকারি বাজারমূল্য ৮৬ কোটি ৭৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪৪ টাকা) জবর দখল, হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করায় তাদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট রূপগঞ্জ থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৪৩
মামলার এজাহার ও সিআইডি সূত্রে জানাগেছে, অভিযুক্তরা অজ্ঞাত ৭/৮ জন ব্যক্তির সহায়তায় একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র গড়ে তোলে। অপরাধ চক্রটি পরস্পর যোগসাজশে গত ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি হতে ২০২৪ সালের ২০ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ভিকটিম মো. শাহ আলমের ১২৪ শতাংশ, আব্দুস সোবহান মিয়ার ১০ শতাংশ, নাঈম প্রধানের ১৮ শতাংশ, হাসিনা বেগমের ০৯ শতাংশ, আলেয়ার ৪৫ শতাংশ, ইয়াছিন প্রধানের ২৭.৫ শতাংশ, সানজুরা বেগমের ০৪ শতাংশ, মো. আশরাফ উদ্দিন ভুইয়ার ৭২ শতাংশমোস্তফা মনোয়ার ভুইয়ার ৩৪৬ শতাংশ, মো. হাবিব খানের ১৮৩.৫ শতাংশ, রাশিদা ভুইয়ার ১২৪ শতাংশ, আমজাদ আলী ভুইয়ার ৭৬০.৫ শতাংশ, মোবারক ভুইয়ার ৩১ শতাংশ, নূর-ই-তাছলীম তাপসের ৪৩০.৭ শতাংশ, মো. মাহবুবুল হক ভুইয়ার ৭১.৪৭ শতাংশ ও মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের ৬৫ শতাংশসহ সর্বমোট ২৪০১.৪৬ শতাংশ জমি যার বর্তমান মূল্য (সরকারি দর অনুযায়ী) ৮৬ কোটি ৭৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪৪ টাকা পরস্পর সংঘবদ্ধভাবে প্রতারণাপূর্বক চাঁদাবাজির মাধ্যমে ভুয়া দলিল সৃজন করে অবৈধভাবে স্থাবর সম্পত্তি জবর দখল করে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছে।
এ বিষয়ে সিনিয়র স্পেশাল জজ, মহানগর আদালত, ঢাকার পারমিশন পিটি. নং- ৬৮৪/২০২৫, তারিখ-৮ জুলাই ২০২৫ খ্রি. মুলে সম্পত্তি ক্রোক করা আছে, যার বর্তমান বাজার মূল্য ৪০০ (চারশত) কোটি টাকা।
ক্রোককৃত সম্পত্তির রিসিভার হিসেবে বিজ্ঞ সিনিয়র স্পেশাল জজ, মহানগর আদালত, ঢাকা সিআইডি প্রধান (এ্যাডিশনাল আইজিপি) কে নিয়োগ করেছেন। ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অজ্ঞাত অপর সদস্যদের শনাক্তকরণ ও অন্যান্য আইনানুগ প্রক্রিয়ার স্বার্থে সিআইডির অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাবজাল বলেন, মামলাটি থানায় দায়ের হলেও তদন্ত করছে সিআইডি।