জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখোমুখি অবস্থানের মুখে পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে বারোটার দিকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সামনে উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। তবে শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক যে সুবিধা রয়েছে সেটা বিবেচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠনের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) পোষ্য কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন দেওয়া হবে বলে জানান উপাচার্য। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভায় পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন নানাভাবে বঞ্চিত হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক যে সুবিধা রয়েছে সেটা বিবেচনা করার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে।’

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কয়েকজন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনশনে বসেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার এই কোটায় বেশ কিছু পরিবর্তনের ঘোষণা দেন উপাচার্য। ওই ঘোষণায় অনির্ধারিত সংখ্যক পোষ্য কোটার পরিবর্তে ৪০টি কোটার কথা উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া একজন ব্যক্তি একবারের জন্য এ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ওই অনশন ভাঙেন। এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ভাষ্য ছিল, তাঁরা দুটো কারণে নতুন কোটা পদ্ধতির ঘোষণাটি মেনে নিয়েছিলেন। কারণ দুটো হলো, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের (জাকসু) তফসিল নির্ধারিত সময়ে (৬ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা ও আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা ঠিক সময় শুরু করতে পারা (৯ ফেব্রুয়ারি)।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁরা মঙ্গলবার সকালে আগের মতো পোষ্য কোটা বহালের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে যান। এ সময় ভবনের দেয়ালে ‘পোষ্য কোটা বাতিল করো’ লেখাসংবলিত শিক্ষার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন কয়েকজন কর্মচারী।

এদিকে পোস্টার ছেঁড়ার প্রতিবাদ জানাতে কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবনের সামনে গেলে এক শিক্ষার্থীকে এক কর্মচারী ধাক্কা দেন বলে অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এরপর বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে যান এবং দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে কর্মচারীরা সেখান থেকে চলে যান। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাঁরা পুরো পোষ্য কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁরা উপাচার্যকে সিদ্ধান্ত নিতে চার ঘণ্টা সময় বেধে দেন।

এদিকে পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণার পর আনন্দ প্রকাশের পাশাপাশি কিছুটা সন্দেহও প্রকাশ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মুন্না বলেন, ‘অযৌক্তিক পোষ্য কোটা কোটা বাতিল হওয়ায় আমরা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই। নতুন বাংলাদেশে সব ধরনের বৈষম্য নিপাত যাক। তবে উপাচার্য প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার জন্য যে কমিটি করেছে সেই কমিটি আবার প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার আওতায় পোষ্যদের ভর্তির সুযোগ করে দেয় কি না সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশালে মিষ্টি বিতরণ অনুষ্ঠানে ছাত্রদল নেতা খুনের নেপথ্যে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর বরিশালের বাবুগঞ্জে মিষ্টি বিতরণ অনুষ্ঠানে খুন হওয়া ছাত্রদল নেতা রবিউল ইসলামের (৩০) মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়েছে। স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে তিনি খুন হন।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের আগরপুর বিদ্যালয়ের সামনে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। জানাজায় উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। নিহত রবিউল জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি আগরপুর গ্রামের কুয়েতপ্রবাসী মিজানুর রহমানের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গতকাল সোমবার শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়কে স্বাগত জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে একটি পক্ষ গতকাল সন্ধ্যায় মিষ্টি বিতরণ করছিল। তখন ছাত্রদলের আরেক পক্ষের কয়েকজন এসে তাঁদের না জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করার বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষে উভয় পক্ষের আটজন আহত হন। এ সময় রবিউল ইসলামকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করা হয়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

উপজেলা ছাত্রদলের একটি সূত্র জানায়, মাস তিনেক আগে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। মাসখানেক পর সেই কমিটি স্থগিত করে জেলা ছাত্রদল। এর পর থেকেই ইউনিয়নে ছাত্রদলের দুটি পক্ষ আলাদা আলাদা কর্মসূচি করে আসছিল। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এক পক্ষে ছিলেন নিহত সহসভাপতি রবিউল ইসলাম এবং অপর পক্ষে ছিলেন স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাবিদ হাসান, আগরপুর কলেজের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এমদাদুল হকসহ অন্যরা। মূলত তাঁরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই দ্বন্দ্বে জড়ান।

উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি আতিক আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমরা চাই, এই ঘটনায় যাঁরা প্রকৃত দোষী, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হোক। নির্দোষ কোনো ব্যক্তিকে যাতে হয়রানি করা না হয়।’ তিনি স্বীকার করেন, ইউনিয়নে ছাত্রদলের দুটি পক্ষ আলাদা আলাদা কর্মসূচি করছিল। মূলত নেতৃত্ব ও আধিপত্যের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে।

আরও পড়ুনবরিশালে মিষ্টি বিতরণ অনুষ্ঠানে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা নিহত১৭ নভেম্বর ২০২৫

বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সুলতান আহমেদ খান সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনাহূত কাউকে হয়রানি করার জন্য মামলায় না জড়ানোর পক্ষে। আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যপ্রমাণ ও অন্যান্য সবকিছু যাচাই করে যাঁরা জড়িত, তাঁদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এ জন্য সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করতে প্রস্তুত।’

বাবুগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পলাশ সরকার বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে পরিবার মামলা করবে বলে বলে জানিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভূমিকম্পে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন তিন হলে ফাটল, নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ
  • পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে অনশনে ৪৭তম বিসিএস প্রিলি উত্তীর্ণদের একাংশ
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া–১ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
  • মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে অনশন 
  • বরিশালে মিষ্টি বিতরণ অনুষ্ঠানে ছাত্রদল নেতা খুনের নেপথ্যে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব