যাচাই-বাছাই ছাড়াই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য প্রকাশ করছে মার্কিন সাময়িকী ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্ট (আইপিডি)। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মূল্যস্ফীতি বাড়ছে এবং সুদের হার ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এসব চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়তে থাকা বাংলাদেশিরা প্রশ্ন তুলতে পারেন- দেশের আর্থিক খাত গভীর সংকটে, এ সময় আহসান মনসুরের মেয়ে কীভাবে এত বিলাসী জীবনে চলেন?। আহসান মনসুরই-বা কীভাবে তিনতলা কাঁচ ও স্টিলের ‘ফার্মহাউসে’ নিশ্চিন্তে থাকেন, যখন সবার পকেট কাটা পড়ছে?’ এই কথাগুলো টিম লারকিন নামে গত ৩১ জানুয়ারি ইন্টারন‍্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্টে (আইপিডি) প্রকাশ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সম্পদ খতিয়ে দেখলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে সেই ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি করা হচ্ছে না। তবে টিম লারকিন নামের ব্যক্তি অস্তিত্ব আছে কিনা, তা নিশ্চিত নয়।

মাসব্যাপী অনুসন্ধানে ডিসমিসল্যাব দেখতে পায়, আইপিডি ওয়েবসাইটে বাংলাদেশবিষয়ক যেসব লেখা সাম্প্রতিক সময়ে ছাপা হয়েছে, এর মধ্যে অন্তত ১০ লেখা এ ধরনের। যেখানে লেখকদের নামে প্রকাশিত হয়েছে যাদের কোনো সত্যিকার পরিচয় পাওয়া যায়নি। অনেক সময় তাদের প্রোফাইল ছবি নেওয়া হয়েছে শাটারস্টকের মতো স্টক ফটো সাইট থেকে। এই ভুয়া লেখকদের অন্তত দুটি লেখা যাচাই না করেই বাংলাদেশি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয়েছে। এগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তার আওয়ামী লীগের দলীয় পেজগুলো থেকেও শেয়ার করা হয়েছে, যার ফলে এসব বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা আরও ছড়িয়ে পড়ে।

ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.

আহসান এইচ মনসুর এই অপপ্রচারের শিকার হন সম্প্রতি। মার্চ মাসে তিনি যুক্তরাজ্যে যান। সেখানে ব্রিটিশ সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা করতে যান আহসান মনসুর। শেখ হাসিনার সরকারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। এই সফরের চলাকালীন অন্তত তিনটি নিবন্ধে তাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হয়, তার ব্যাংকিং নীতি এবং তার প্রবাসী মেয়ের কথিত ‘বিলাসী জীবন’ নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

গত ২৪ মার্চ দ্য গার্ডিয়ান জানায়, যুক্তরাজ্যের সংসদের ‘অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অন রেসপনসিবল ট্যাক্স অ্যান্ড করাপশন’-এর এমপিরা এক সেশনের আগে একাধিক ই-মেইল পেয়েছেন, যেগুলোতে মনসুরের মেয়ের সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় এবং আইপিডির নিবন্ধের লিংক দেওয়া হয়। ই-মেইলগুলো এসেছে একটি সাংবাদিক ও একটি ব্রিটিশ পাবলিক রিলেশনস ফার্মের পক্ষ থেকে। ব্রিটিশ পত্রিকাটি সেই কথিত সাংবাদিকের কোনো খোঁজ পায়নি। অন্যদিকে পিআর ফার্মটি জানায়, তারা কোনো ক্লায়েন্টের হয়ে কাজ করেছে তা বলবে না।

ডিসমিসল্যাবের অনুসন্ধানে আইপিডির সম্পাদকীয় দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়া যাচাই করতে ডিসমিসল্যাব নিজেই দুটি ভুয়া নিবন্ধ আইপিডিতে জমা দেয়—একটি আন্দোলনকারীদের প্রতি জাতিসংঘের সম্ভাব্য পক্ষপাত নিয়ে, অন্যটি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নতুন দল, জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রশংসা করে। দুটি লেখাই তৈরি করা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে। দুটি নিবন্ধেই আগে খারিজ হওয়া মিথ্যা তথ্য রাখা হয়েছিল। আইপিডি তার মধ্যে জাতিসংঘ সম্পর্কিত লেখাটি প্রকাশ করেছে, অন্যটি প্রকাশ করেনি।

এসব বিষয়ে ডিসমিসল্যাবের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশ্ন করা হলে আইপিডির সম্পাদক জন লাইম্যান ই-মেইলে জানান, তাদের প্ল্যাটফর্ম লেখকদের সঙ্গে বিশ্বাসের ভিত্তিতে কাজ করে এবং স্বীকার করেন কিছু ভুয়া লেখক হয়তো থেকে গেছে। কারণ তাদের প্রায় ৩ হাজার কনট্রিবিউটর রয়েছে। 

তিনি আরও জানান, অনেক লেখক কখনো কখনো নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন, যা তিনি মেনে নেন। কিন্তু এসব লেখকদের পরিচয় যাচাই করেন কিনা, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল খকদ র ন বন ধ মনস র আইপ ড সরক র আহস ন

এছাড়াও পড়ুন:

গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য কাতারে প্রতিনিধি দল পাঠাবে ইসরায়েল

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির সর্বশেষ প্রস্তাব নিয়ে হামাসের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা করার জন্য রোববার কাতারে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার রাতের শেষদিকে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, তিনি আলোচকদের নির্দেশ দিয়েছেন—  তারা যাতে মধ্যস্থতাকারীদের আলোচনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে।

তবে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের দেওয়া যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় হামাস যে পরিবর্তনের শর্ত দিয়েছে, সেটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন নেতানিয়াহু।

গত শুক্রবার রাতে হামাস জানায়, তারা ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ দেখিয়েছে এবং তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত।

তবে একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে এমন কিছু সংশোধন চেয়েছে যার মধ্যে একটি হলো— স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা ব্যর্থ হলেও নিশ্চিত করতে হবে যে, নতুন করে কোনো হামলা হবে না।

গাজার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার ইসরায়েলি হামলা ও গুলিতে অন্তত ৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

খান ইউনিস শহরের একটি হাসপাতালের বরাতে জানানো হয়, আল-মাওয়াসি এলাকায় তাঁবুগুলোর ওপর বোমা হামলায় এক চিকিৎসক ও তাঁর তিন সন্তানসহ সাতজন নিহত হন।

এদিকে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের দুই মার্কিন কর্মী খান ইউনিস এলাকায় একটি গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছেন বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এ হামলার জন্য হামাসকে দায়ী করেছে। যদিও হামাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে ভয়াবহ হামলা চালায় হামাস। এর জবাবে সেদিন থেকে গাজায় তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, তখন থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫৭ হাজার ৩৩৮ জন নিহত হয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ