আদালত জানতে চেয়েছিলেন ৭ দিনের মধ্যে, উত্তর মেলেনি ৭ বছরেও
Published: 20th, April 2025 GMT
একজন আইনজীবীর রিটে ২০১৯ সালে হাইকোর্ট সাত দিনের মধ্যে জানতে চেয়েছিলেন ওয়াসার পানির নমুনায় মলমূত্র এবং অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি কেন পাওয়া গেছে? যার উত্তর আজ প্রায় সাত বছরেও পাওয়া যায়নি। এই তথ্য জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসরীন সুলতানা। তিনি বলেন, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।
আজ রোববার দুপুরের দিকে ‘ওয়াসার দূষিত পানি, ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নগরবাসী’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন নাসরীন সুলতানা। এবি পার্টির বিজয়নগরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, রাজধানীর কল্যাণপুর, তেজগাঁও, মালিবাগ, মগবাজার, মধুবাগ, বাসাবো, মানিকনগরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে ওয়াসার পানির সঙ্গে পোকা আসছে।
এবি পার্টির আজকের সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে নাসরীন সুলতানা বলেন, প্রতিবছরই গ্রীষ্মের শেষ এবং বর্ষার শুরুতে ওয়াসার পানি হয়ে ওঠে নোংরা ও পোকামাকড়ের প্রজননক্ষেত্র। দূষণের পরিমাণ এতটাই বাড়ে যে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। কিন্তু এ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান চিন্তা করা হয়নি।
স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও উন্নয়নের ডামাডোল আর স্মার্ট বাংলাদেশের ভিড়ে সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপন করা যায়নি, যা সামগ্রিক ব্যর্থতা—এমন মন্তব্য করে এবি পার্টির এই নেত্রী বলেন, হাজার হাজার নাগরিকের যেখানে ই-কোলাই জীবাণু ও পোকামাকড় দিয়ে পূর্ণ পানি খেয়ে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় তখন ওয়াসার এমডির পক্ষ থেকে সমাধান তো দূরের কথা, কোনো বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
নাসরীন সুলতানা বলেন, জুরাইন, মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের এ নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। রান্নাসহ দৈনন্দিন কাজে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ব্যবহারের ফলে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এই এলাকার বাসিন্দারা। জুরাইনের স্থানীয় মসজিদের গভীর নলকূপ এখন শেষ ভরসা। সেখান থেকে নামমাত্র মূল্যে পানি কিনে তাঁরা চলছেন বছরের পর বছর। ওয়াসার বিল দেওয়ার পরেও এ রকম নাগরিক ভোগান্তি জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটের সম্পূর্ণ বিপরীত।
সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানিতে কেঁচো বা এ ধরনের পোকামাকড় পাওয়া যাচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ময়লা ও দুর্গন্ধ। গত সরকারের সময় ২২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পুরোটাই পানি শোধনের পরিবর্তে আওয়ামী লুটেরাদের পকেটে ঢুকেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কোনো সরকারই জনগণের মৌলিক অধিকার বিশুদ্ধ সুপেয় পানির নিশ্চয়তা তৈরি করতে পারেনি দাবি করে আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ওয়াসার পানিতে ভয়াবহ ই–কোলাই ভাইরাস পাওয়ার পরও ওয়াসা নির্বিকার। ওয়াসার কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মধ্যে যেসব দুর্নীতিবাজ কেঁচো বা পোকামাকড় বসে আছে তাদের অপসারণ ছাড়া নগরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্যসচিব আহমেদ বারকাজ নাসির, সহকারী প্রচার সম্পাদক রিপন মাহমুদ, আজাদুল ইসলাম আজাদ, সহকারী দপ্তর সম্পাদক শরণ চৌধুরী, সহকারী অর্থ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, নারীবিষয়ক সহকারী সম্পাদক শাহিনুর আক্তার শীলা প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
সারে গ্যাসের দাম ১৬ থেকে বেড়ে ২৯ টাকা ২৫ পয়সা
সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে একলাফে বাড়িয়ে ২৯ টাকা ২৫ পয়সা করা হয়েছে। নতুন দাম আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করার আদেশ দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।
আজ রোববার বিইআরসি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ নতুন দাম ঘোষণা করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মো. আবদুর রাজ্জাক, মো. মিজানুর রহমান, সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ শাহিদ সারওয়ার প্রমুখ।
পেট্রোবাংলা এবং গ্যাসের বিতরণ কোম্পানিগুলো ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার আবেদন করেছিল। সে প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি গ্রহণ করা হয় গত ৬ অক্টোবর।
সার কারখানায় পুরো মাত্রায় গ্যাস দেওয়া হলে ২০ লাখ টনের ওপরে সার উৎপাদন করা সম্ভব। আর ২০ লাখ টন সার উৎপাদন করা গেলে গ্যাসের দাম ৩০ টাকা হলেও আমদানির তুলনায় কম দাম পড়বে। বছরে ৩০–৩২ লাখ টন ইউরিয়া সার জোগান দিতে হয়। গ্যাসের অভাবে আমদানি করে ১৬–২১ লাখ টন জোগান দিতে হয়।দাম বাড়ানোর পর সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ না বাড়লে পেট্রোবাংলাকে জরিমানা করা হবে কি না বা দাম কমানো হবে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, পেট্রোবাংলা এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বাড়াবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, দাম বাড়ানো হলে বাড়তি ৭ কার্গো এলএনজি আমদানি করে সারে সরবরাহ করা হবে। ছয় মাস (অক্টোবর-মার্চ) পুরো মাত্রায় (২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হবে। অবশিষ্ট ছয় মাসের মধ্যে (এপ্রিল-মে) ১৬৫ মিলিয়ন হারে, জুনে ১৭৫ মিলিয়ন আর জুলাই-সেপ্টেম্বরে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস সরবরাহ করবে।
সার কারখানায় পুরো মাত্রায় গ্যাস দেওয়া হলে ২০ লাখ টনের ওপরে সার উৎপাদন করা সম্ভব। আর ২০ লাখ টন সার উৎপাদন করা গেলে গ্যাসের ৩০ টাকা হলেও আমদানির তুলনায় কম দাম পড়বে। বছরে ৩০–৩২ লাখ টন ইউরিয়া সার জোগান দিতে হয়। গ্যাসের অভাবে আমদানি করে ১৬–২১ লাখ টন জোগান দিতে হয়।
ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পিএলসির দৈনিক চাহিদা ৭২ মিলিয়ন ঘনফুট, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের চাহিদা ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট, যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত আশুগঞ্জ সার কারখানা অনেক পুরনো হওয়ায় গ্যাস খরচ অনেক বেশি, যে কারণে কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুনসার কারখানার জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব০৬ অক্টোবর ২০২৫এ ছাড়া বিদেশি কোম্পানির মালিকানাধীন কাফকো সার কারখানায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট। কাফকোকে চুক্তির আওতায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হয়। আর তাদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক দরে ডলারে সার কিনে নেয় বাংলাদেশ। সম্প্রতি কোম্পানিটির সঙ্গে ৩০ টাকা দরে চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে।