শুধু আলাপচারিতা নয়, ডকুমেন্ট বিনিময় বা ভুল মেসেজ পাঠালেও দ্রুত তা মুছে ফেলা, নিজের পছন্দের ছবি বিনিময় বা স্ট্যাটাস জানাতে গ্রাহকবান্ধব হওয়ায় হোয়াটসঅ্যাপ যেন অপ্রতিরোধ্য। ঠিক এসব কারণেই সাইবার প্রতারক চক্র প্রায়ই কারিগরি কৌশলে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট টার্গেট করে। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
সারাবিশ্বে ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগে হোয়াটসঅ্যাপ ছাড়া যেন সবকিছুই অচল। অ্যাপ হিসেবে যা এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
ঠিক এসব কারণে সাইবার প্রতারক চক্র প্রায়ই কারিগরি কৌশলে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট টার্গেট করে। সুরক্ষা পেতে তাই কিছু বিষয় জানা একান্ত প্রয়োজন। অ্যাপ ব্যবহারে অবশ্যই তা পাসওয়ার্ড, ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা মুখাবয়ব পরিচিতির মাধ্যমে বিশেষভাবে লক করতে হবে। বুঝতে হবে, অ্যাপটি শুধু নিজের মাধ্যমেই ব্যবহার করতে হবে।
কী করা প্রয়োজন
অবশ্যই হোয়াটসঅ্যাপ সেটিংস অপশনে গিয়ে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন সক্রিয় করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে এটি অন্যতম পদ্ধতি। অন্যদিকে, পিন নম্বর দিয়ে সিস্টেমকে আরও নিরাপদ করা জরুরি। টার্গেট করা প্রতারক চক্র যেন কোনোভাবে আপনার নম্বরটি ভার্চুয়ালি ব্যবহার করে ওই নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপের অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রেণে না নিতে পারে। যে কোনো অবস্থায় টু-স্টেপ ভেরিফিকেশনের পিন নম্বর কারও সঙ্গে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ক্লাউড ব্যাকআপ
অ্যাপে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থা সক্রিয় হলেও হোয়াটসঅ্যাপের যে ডেটা ক্লাউডে ব্যাকআপ হিসেবে সংরক্ষিত হয়, মূলত তা এনক্রিপটেড নয়, অর্থাৎ খুব বেশি সুরক্ষিত নয়। ঠিক সে কারণে অনেক সময়ে স্মার্টফোন বদলে নিলে ওই নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টল করলে পুরোনো ডেটা স্বয়ংক্রিয় ডাউনলোড হয়ে যায়। তাই এমন ব্যাকআপ প্রতারক চক্র বেহাত করার সুযোগ নিতে পারে। সুতরাং সেটিংস অপশনে গিয়ে চ্যাট ব্যাকআপ এন্ড-টু্-এন্ড এনক্রিপশন অপশন সচল রাখা শ্রেয়।
অ্যাডভান্সড প্রাইভেসি
অ্যাডভান্সড চ্যাট প্রাইভেসি সুবিধা সক্রিয় হলে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো ভিডিও ও ছবি প্রাপকের ডিভাইস গ্যালারিতে আর স্বয়ংক্রিয় সংরক্ষণ হবে না। সুবিধাটি ব্যক্তিগত বা গ্রুপ– দুই ধরনের চ্যাট অপশনেই ব্যবহারযোগ্য হবে। স্বয়ংক্রিয় ছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে ভিডিও বা ছবি সংরক্ষণ করা যাবে কিনা– এমন প্রশ্নে মেটা উন্নয়ক বিভাগ তেমন কিছু জানায়নি।
অনেকেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত ছবি ও ভিডিও বিনিময় করেন। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপে কেউ ভিডিও বা ছবি পাঠালে তা প্রাপকের ডিভাইসে স্বয়ংক্রিয় ডাউনলোড হয়ে যায়। ফলে অনেকেই পরবর্তী সময়ে বিপত্তির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। সমস্যা সমাধানের সঙ্গে ব্যক্তিগত বার্তার গোপনীয়তার সুরক্ষায় ‘অ্যাডভান্সড চ্যাট প্রাইভেসি’ অপশনে নতুন সুবিধার কথা জানাল কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে বেটা সংস্করণে নির্দিষ্ট গ্রাহকের মাধ্যমে সুবিধার ভালোমন্দ দিক যাচাই করার কাজ চলছে। অ্যাপে ‘ডিসঅ্যাপিয়ারিং মেসেজ’ অপশন সচল থাকলে নির্দিষ্ট সময় পর সব ধরনের কনটেন্ট বিনিময় ফাইল নিজে থেকেই মুছে যাবে। উল্লিখিত অপশন দিয়ে এক দিন, সাত দিন বা ৯০ দিন আগের সব ধরনের ফাইল মুছে ফেলার সময়সীমা নির্ধারণ করা যায়।
জানা গেছে, অ্যাডভান্সড চ্যাট প্রাইভেসি অপশনটি সক্রিয় হলে মেটা এআই নিজে থেকেই কাজ করবে না। ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে স্বয়ংক্রিয় চ্যাট অপশনে ছবি তৈরি বা প্রশ্নোত্তর পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে, মেটা এআই ব্যবহার করা না গেলেও কনটেন্ট ফরওয়ার্ড বা স্ক্রিনশট নেওয়ার সুযোগ বহাল থাকবে।
ডিসপ্লে পিকচার
অ্যাপে থাকা ডিসপ্লে পিকচারে (ডিপি) ব্যক্তিজীবনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি সংরক্ষণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতারক চক্র ওই ছবির স্ক্রিনশট ব্যবহার করে রীতিমতো ব্ল্যাকমেইল করে বসে।
বিশেষ প্রয়োজনে হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি বা স্ট্যাটাসে দেওয়া ছবি বা ভিডিও অংশে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও, ছবি বা তথ্য দিলে যেন অসৎ উদ্দেশ্যে কেউ তা ব্যবহার না করতে পারে, সে জন্য শুধু নির্বাচিত ব্যক্তিদের (সিলেক্টিভ কনট্যাক্ট) তা দেখার অপশন সক্রিয় রাখা প্রয়োজন।
পরিচিত কোনো ব্যক্তির নাম করে আর্থিক সহায়তা চাওয়া বা সন্দেহজনক কোনো চ্যাট দৃশ্যমান হলে হুট করে অ্যাপে তাঁর ছবি দেখে নিশ্চিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিছু করার আগে অবশ্যই সুনিশ্চিত হতে হবে, তিনি আপনার পরিচিতজন কিনা। আগেই তাঁকে শনাক্ত করা না গেলে তাঁর পরিবার-পরিজনকে ফোন করে নিশ্চিত হতে হবে, আদতে মেসেজ পাঠানো ব্যক্তি তিনি নিজেই কিনা। হুট করে সন্দেহ হচ্ছে বা খটকা লাগছে– এমন ফোনকল বা অচেনা ভিডিও কল ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, এভাবেই ফাঁদ পেতে প্রতারক চক্র প্রতিদিন হাজারো হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিব্রত করছে সাধারণ ব্যক্তিজীবনকে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ য় টসঅ য প হ য় টসঅ য প ব যবহ র কর ব য কআপ
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়াই–ফাই পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? যেভাবে পুনরুদ্ধার করবেন
ওয়াই–ফাই এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। কাজ, শিক্ষাব্যবস্থা, ভিডিও স্ট্রিমিং বা অনলাইন মিটিং—সবকিছুই ওয়াই–ফাইয়ের ওপর নির্ভরশীল। ওয়াই–ফাই সংযোগ নিরাপদ রাখতে এ জন্য জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়। তবে দীর্ঘ ও জটিল পাসওয়ার্ডের কারণে অনেক সময় তা ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। বিশেষ করে যখন যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থাকলে অনেকেই পাসওয়ার্ড মনে রাখেন না। অবশ্য অধিকাংশ কম্পিউটার এবং স্মার্ট যন্ত্র ব্যবহারকারীর ওয়াই–ফাই পাসওয়ার্ড নিরাপদে সংরক্ষণ করে রাখেন। ফলে প্রয়োজন অনুযায়ী তা সহজেই পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
অ্যান্ড্রয়েডে ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড দেখানতুন অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণে সংরক্ষিত পাসওয়ার্ড সরাসরি দেখা যায় না। তবে কিউআর কোডের মাধ্যমে তা শেয়ার করা সম্ভব। সেটিংস অপশনে থাকা কানেকশনস মেনুতে গিয়ে ওয়াই–ফাই নির্বাচন করতে হবে। সংযুক্ত ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্কের নামের পাশে থাকা গিয়ার আইকনে ট্যাপ করে পরের পেজে যেতে হবে। পাসওয়ার্ড অপশনের পাশে থাকা আই আইকনে ট্যাপ করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হবে। এরপর পাসওয়ার্ড দেখা যাবে। এ ছাড়া নিচে থাকা কিউআর কোড ব্যবহার করেও ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্ক শেয়ার করা যাবে।
উইন্ডোজে ওয়াই–ফাই পাসওয়ার্ড বের করার উপায়উইন্ডোজ কম্পিউটার আগে সংযুক্ত সব নেটওয়ার্কের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করে। প্রথমে কন্ট্রোল প্যানেল ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক অ্যান্ড শেয়ারিং সেন্টার অপশনে গিয়ে সংযুক্ত ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্কের নামের ওপর ক্লিক করতে হবে এবং ওয়্যারলেস প্রপার্টিজ নির্বাচন করতে হবে। এরপর সিকিউরিটি ট্যাবে গিয়ে শো ক্যারেক্টারস টিকবক্সে টিক দিতে হবে। এরপর পাসওয়ার্ড দেখা যাবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া