ছাতক উপজেলার বড়কাপন ভায়া দোয়ারাবাজারে কপলা-শ্রীপুর সড়ক সংস্কারকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার আগেই হাতের টানে পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে। যে কারণে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন সড়ক সংস্কারে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক সংস্কারকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এরই মধ্যে পান্ডারগাঁও ইউনিয়নবাসীর উদ্যোগে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। ওই কর্মসূচিতে স্থানীয়রা বলেছেন, অবিলম্বে সড়ক সংস্কারকাজ সঠিকভাবে করা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন তারা। এ বিষয়ে এলজিইডির দায়সারা ভাব তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় প্রকৌশলীকে উপজেলা থেকে দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের বড়কাপন এলাকা থেকে কপলাবাজার হয়ে সড়কটি দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের শ্রীপুর এসেছে। এ সড়কটি দিয়ে দুটি উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের সুড়িরগাঁও, পান্ডারগাঁও, নোয়াগাঁও, হরিপথনগর, আফসরনগর, পলিরচর, হিম্মতেরগাঁও, শ্রীপুর, মাছিমপুর, বাউসা, দোহালিয়া আইন্দারীগাঁও, বিয়ানীবাজারসহ অন্তত ৩০টি গ্রামের হাজার হাজার লোকজন যাতায়াত করেন। সড়কটি বেশ কয়েক বছর ধরে চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় সম্প্রতি দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সড়কটি সংস্কারকাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর কার্যাদেশ দেওয়া হয় মেসার্স সালেহ অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।
এক মাস আগে ঠিকাদার সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করে। কাজের শুরুতেই ব্লক ও গাইডওয়াল নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এতে পিচ ঢালাইয়ের আগেই গাইডওয়াল ও ব্লকগুলোতে ফাটল ধরে এবং অনেক জায়গা ভেঙে যায়। ওই সড়কে কপলা থেকে শ্রীপুর বাজার পর্যন্ত পিচ ঢালাই করা সম্পন্ন করেছে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ।
সড়ক সংস্কারকাজের ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার অনেকাংশের পিচ ঢালাই উঠে গেছে। কোথাও বৃষ্টির পানি জমে আছে। রাস্তার পাশে দেওয়া ব্লকগুলো এলোমেলো করে রাখা হয়েছে। বাঁশের লাঠি দিয়ে খোঁচা দেওয়ায় ঢালাইয়ের টুকরাগুলো উঠে যাচ্ছে। সড়কের গাইডওয়াল নির্মাণে করা হয়েছে অনিয়ম।
হরিপথনগর গ্রামের হাফিজ আমিন উদ্দিন বলেন, কাজ শেষ হওয়ার আগেই সড়কের কয়েকটি অংশের পিচ ঢালাই উঠে গেছে। এসব অনিয়ম দেখার যেন কেউ নেই। স্থানীয় পান্ডারগাঁও ইউপি সদস্য আলী হোসেন বলেন, পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের শ্রীপুর বাজার সড়কের প্রায় ৮ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারকাজে নিম্নমানের পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। উপজেলা এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে তদারকি না করার কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালেহ অ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রতিনিধি ফয়সল আহমদ বলেন, কাজে অনিয়ম হয়নি। সড়কের কিছু জায়গায় ফাটল এবং পিচ উঠে গেছে। এগুলো মেরামত করে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল হামিদ বলেন, সংস্কারকাজ তো এ রকম হওয়ার কথা নয়। কাজের তদারকি করেছেন নিজেই। কাজের ত্রুটি থাকলে ঠিকাদার তা ঠিক করে দেবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক সড়ক স স ক র প ন ড রগ উপজ ল র সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঘুঘুডাঙ্গার মনোরম তালসড়ক
অক্টোবরের প্রথম দিকে লম্বা এক ছুটিতে বেড়াতে গেলাম বগুড়া। দেশের উত্তরের জনপদ বরাবরই আমার পছন্দ। মানুষ কম, হালকা বসতি। পথে বা হাটবাজারে ততটা ভিড়ভাট্টা নেই। বাজারে কম দামে টাটকা শাকসবজি মেলে। এসব কেনার চেয়ে দেখেই তুমুল আনন্দ পাই। নিঝুম গ্রামের ভেতর ফসলের মাঠে ছড়িয়ে থাকা বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি বেশ উপভোগ করি। যত দূর চোখ যায়Ñ গ্রামের পর গ্রাম। মুঠো মুঠো সবুজের ভেতর এঁকেবেঁকে ছুটে চলা মেঠো পথ মাড়িয়ে আমরা প্রতিদিন দূরে কোথাও হারিয়ে যাই। দিনের মুহূর্তগুলো মানুষের জীবনাচারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কতটা নিপুণভাবে ক্ষণে ক্ষণে বদলে যেতে পারে,Ñ এসব গ্রামে না এলে তা বোঝার উপায় নেই। কৃষিনির্ভর এই জনপদে প্রতিমুহূর্তের ব্যস্ততা যেন অনিবার্য নিয়তি।
বগুড়ার গ্রামীণ জনপদ ঘুরে, দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে মনে হলো যথেষ্ট নয়! চোখের তৃষ্ণা মেটেনি। মনের ক্ষুধাও যায়নি! তখনই মনে পড়ল নওগাঁর ঘুঘুডাঙ্গার বিখ্যাত তালসড়কটির কথা। এত কাছে এসে তালসড়কটি দেখতে যাব না, তা কি হয়? স্থানীয় সাংবাদিক আনোয়ার পারভেজ বললেন, ‘বগুড়া থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টারই তো জার্নি। ঘুরে আসুন।’ আমারও মনে হলো, এমন একটি অসাধারণ দৃশ্যের জন্য এই দূরত্ব কিছুই না।
সকালে তুমুল বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙল। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার থেমেও গেল। গাড়িতে ওঠার সময় স্থলপদ্মের গাছটি চোখে পড়ল। গাছভর্তি ফুলগুলো বৃষ্টির দাপটে একেবারে নেতিয়ে পড়েছে। অথচ বিকেলে ভেবে রেখেছিলাম, সকালে শরতের মধুর আলোয় স্থলপদ্মের ছবি তুলব। তা আর হলো না। দ্রুত বেরিয়ে পড়ি। প্রথমে গেলাম নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার বাগানে। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যখন স্বপ্নমণ্ডিত সেই তালসড়কে পৌঁছাই, তখন ঠিক দুপুরবেলা।
কিন্তু দুপুর হলেও দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর তালসড়ক। শুধু বৃহত্তর রাজশাহী নয়, দূরদূরান্ত থেকেও পর্যটকেরা এখানে আসেন। নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নে এই তালসড়কের অবস্থান। মূলত ঘুঘুডাঙ্গা-শিবপুর সড়কের দুপাশজুড়ে থাকা বীথিবদ্ধ তালগাছের জন্যই সড়কটি ‘তালসড়ক’ বা ‘তালতলী’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। হাজীনগর গ্রামের মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কজুড়ে এই তালসড়কের অবস্থান।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন রাস্তা ও খালপাড়ে ৭২০ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে লাগানো হয়েছে কয়েক লাখ তালগাছ। তখন বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা, পত্নীতলা ও ধামইরহাট, রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর উপজেলার রাস্তার দুপাশে রোপণ করা হয়েছে অনেক তালগাছ। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে অনেক গাছই হারিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে বেঁচে আছে কিছু। তবে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গার এই গাছগুলো এখনো কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। বর্তমানে গাছগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু হওয়ায় রাস্তার দুপাশে শোভাবর্ধন করছে।
একসময় নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙা-শিবপুর সড়কটি ছিল একটি মেঠো পথ। ২০১২ সালের দিকে সড়কটি পাকা করা হয়। বর্তমানে তালসড়কের দুপাশে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ থাকায় সড়কটি বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
ভাদ্র মাসে তাল পাকার মৌসুমে তালসড়ক ঘিরে উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। নানা স্বাদের তালের পিঠা এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। তবে বেড়াতে আসা পর্যটকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য এখানে মানসম্পন্ন পর্যটনসেবা থাকা প্রয়োজন।
শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলই নয়, বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানেও প্রচুর পরিমাণে তালগাছ চোখে পড়ে। খেতের আলপথ, বাড়ির সীমানা, খালপাড়, পুকুরপাড় বা পথের ধারে এসব সুদৃশ্য তালগাছ প্রকৃতিতে ভিন্ন এক ব্যঞ্জনা তৈরি করেছে। দেশের বিভিন্ন জনপদে ছড়িয়ে থাকা এসব তালগাছের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও আছে। দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দৃশ্যমান তালগাছের রস থেকে ভালো মানের সুস্বাদু গুড় ও মিছরি তৈরি করা হয়। বাজারে এসব গুড়-মিছরির চাহিদাও ব্যাপক। আমাদের দেশেও এসব গাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে তালের গুড় তৈরি করা সম্ভব। প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার।
মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক