প্রাথমিকে আসছে কোটাবিহীন শিক্ষক নিয়োগের বড় বিজ্ঞপ্তি
Published: 5th, May 2025 GMT
যারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হতে চান তাদের জন্য আসছে বড় নিয়োগ। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত হলে আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হতে পারে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। যেখানে থাকবে না পোষ্য ও নারী কোটা। ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আমরা কখনো পদের সংখ্যা উল্লেখ করি না। তাই কত পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসবে, সেটা বলা ঠিক হবে না। তবে বর্তমানে সহকারী শিক্ষক পদে ৮ হাজার ৪৩ শূন্য পদ রয়েছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় এই শূন্য পদ বেড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার হতে পারে। এ ছাড়া সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের জন্য ৫ হাজার ১৬৬ সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। অপর দিকে প্রায় ৩০ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের প্রক্রিয়া চলমান। তাঁরা পদোন্নতি পেলে এসব পদেও নতুন করে সহকারী শিক্ষক নেওয়া হবে। তাই বলা যায়, সামনে যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে, সেখান থেকে বেশিসংখ্যক প্রার্থী নেওয়া হবে। আবেদনের সময় পদ বাছাই করে দেওয়ার সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা।’
প্রাথমিকের ২০২৫ সালের নতুন বিধিমালায় কোটা থাকবে না। তবে ২০ শতাংশ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের অগ্রাধিকার থাকবে।নতুন নিয়োগ বিধিমালার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা–২০২৫ অনুমোদনের জন্য বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে এ বিধিমালা নিয়ে একটি বৈঠকও হয়েছে সেখানে। এখন সচিব কমিটির বৈঠক বাকি রয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে এরপর সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্ম কমিশনে মতামতের জন্য পাঠানো হবে। বিধিমালা যেদিন প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ হবে, তার পরদিনই আমাদের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
প্রাথমিকের বর্তমান শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯–এ সহকারী শিক্ষক পদে ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা ও ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা রয়েছে। ২০২৫ সালের নতুন বিধিমালায় এই তিন কোটা থাকবে না, তবে ২০ শতাংশ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের অগ্রাধিকার থাকবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ আদালতের রায় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির সব গ্রেডে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে ৯৩ শতাংশ। বাকি ৭ শতাংশ নিয়োগ হবে কোটার ভিত্তিতে। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদটি ১৩তম গ্রেডের। তাই এই পদের নিয়োগে ৭ শতাংশের বেশি কোটা রাখার সুযোগ নেই। ৭ শতাংশ কোটার মধ্যে রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য ১ শতাংশ কোটা। অন্য ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।
আরও পড়ুনপ্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন এক ধাপ বাড়ানোর উদ্যোগ, ভিন্নমত শিক্ষকদের২৮ এপ্রিল ২০২৫প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক পদে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছিলেন, প্রাথমিকে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। থাকবে না কোনো পোষ্য কোটা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিতে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতার বিষয়টিও নতুন নিয়োগ বিধিমালায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা জানান, সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের কাম্য যোগ্যতার বিষয়টি ঠিক করা হয়েছে নতুন বিধিমালায়। নতুন বিধিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হলে এই পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে আর কোনো বাধা থাকবে না।
আরও পড়ুনইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত৩০ এপ্রিল ২০২৫প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ক্লাস্টারের ভিত্তিতে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। একেকটি জেলা–উপজেলায় ২০ থেকে ২৫টি বিদ্যালয় মিলে একটি করে ক্লাস্টার হয়। এই হিসাবে সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট ক্লাস্টার রয়েছে ২ হাজার ৫৮৩টি। একটি ক্লাস্টারের জন্য একজন করে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষক নেওয়া হবে। ২০ থেকে ২৫টি বিদ্যালয়ের জন্য একজন করে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। ক্লাস্টারের হিসাবে দুটি পদ মিলে মোট ৫ হাজার ১৬৬ সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে সংগীত বিষয়ে ২ হাজার ৫৮৩ ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে ২ হাজার ৫৮৩ জন।
আরও পড়ুনআস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনে চাকরি, বেতন ৭০,০০০-১০০,০০০ টাকা০৩ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নত ন ব ধ ম ল কর মকর ত র নত ন ব র জন য সহক র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি, এখন কী করবে ভারত-ইসরায়েল
বহু দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্য একের পর এক যুদ্ধের বৃত্তে ঢুকে পড়েছে। একের পর এক দেশ আক্রমণের শিকার হয়েছে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। সব দিক বিবেচনায় মধ্যপ্রাচ্য হয়ে উঠেছে বিশ্বশক্তিগুলোর যুদ্ধক্ষেত্র। মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি নিয়ে তাদের উদ্বেগ কম, আগ্রহের জায়গা প্রাকৃতিক সম্পদ।
কাতারের দোহায় ইসরায়েলের হামলার পর উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর মধ্যে ‘মার্কিন নির্ভরযোগ্যতা’ নিয়ে ক্রমে সন্দেহ বাড়ছে। দ্য টাইমস অব ইসরায়েলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দোহায় হামলার আগে নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। যদিও ট্রাম্প পরে তা অস্বীকার করেছেন।
আসল ব্যাপার হলো ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা উপভোগ করে। স্বাভাবিকভাবেই এ সন্ধিক্ষণে সবার নজর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রকল্পের দিকে। কারণ, ইসরায়েলের এই প্রকল্প খোলাখুলিভাবে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর ওপর হুমকি তৈরি করেছে।
আরও পড়ুনযুবরাজ সালমান এক দশকে যেভাবে সৌদি আরবকে পাল্টে দিলেন১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ফলে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক, রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যম বিশ্লেষকেরা ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে এবং সেটি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে আরব-মুসলিম দেশগুলোর সম্পর্ক কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব ও পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে। এ অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ইউরোপ এবং পাকিস্তানের চিরশত্রু ও বিকাশমান অর্থনৈতিক শক্তি ভারতকে হতবাক করেছে।
সম্প্রতি ভারত যখন ‘ইসরায়েলি ধাঁচের সম্প্রসারণবাদের’ ঘোষণা দিয়ে আক্রমণ করে, তখন পাকিস্তান কার্যকরভাবে নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে। কয়েক বছর আগে প্রয়াত ব্রিটিশ সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক মন্তব্য করেছিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান সংঘাতে ইসরায়েল বড় ভূমিকা রাখছে।
এ বছরের শুরুতে তুরস্ক-পাকিস্তান-আজারবাইজানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তিটি মুসলিম দেশগুলোতে যে শঙ্কা বাড়ছে তারই প্রতিফলন।
পাকিস্তান-সৌদি আরব চুক্তি দিল্লি ও জেরুজালেমে সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হলেও ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ও ‘অখণ্ড ভারত’ প্রকল্পের কারণে বিশ্বশান্তি হুমকির মুখে পড়ার বিষয়ে কোনো উদ্বেগ দেখা যায় না।ইসরায়েল ও ভারতের জোট এবং তাদের ‘সম্প্রসারণবাদী’ নীতির কারণে উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তিকে আগ্রাসী পরিকল্পনা হিসেবে নয়; বরং প্ররোচনাহীন হামলার বিরুদ্ধে একটি আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরেই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে, ছয়টি মুসলিম দেশ বোমা হামলা চালিয়ে এবং মুসলমানদের হত্যা, হত্যাচেষ্টা, বাস্তুচ্যুতি ও স্থায়ীভাবে পঙ্গু করার পর নেতানিয়াহু এখন অভিযোগ তুলছেন—বিশ্বে ইসরায়েল যে ক্রমে নিঃসঙ্গ হয়ে উঠছে, এর জন্য দায়ী চীন, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘আমাদের অস্ত্রশিল্পকে আরও বিকশিত করতে হবে। আমরা একসঙ্গে এথেন্স ও সুপার স্পার্টা হব।’
আরও পড়ুনইসরায়েল-ভারত যেভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে চেয়েছিল২৬ জুন ২০২৫‘ফিফটি স্টেটস-ওয়ান ইসরায়েল’ শীর্ষক এক বিশাল সমাবেশে নেতানিয়াহু বলেন, ‘জীবনের মূল্য আইনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’। তাঁর এ বক্তব্যে ইঙ্গিত মেলে, সামনে আরও বড় যুদ্ধ অপেক্ষা করছে।
আসলে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রকল্পের লক্ষ্য হলো পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের অংশবিশেষ দখল করে নেওয়া। এর মধ্যে রয়েছে মিসর, জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন ও সৌদি আরব। এটি স্বীকার করতেই হবে, এটি নিছক কল্পকাহিনি নয়; বরং ঠেকানো সম্ভব এমন এক বাস্তবতা।
সাম্প্রতিক একটি নিবন্ধে আমি লিখেছিলাম, ইসরায়েল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে একের পর এক মুসলিম দেশ ধ্বংস করছে। পশ্চিমা বিশ্ব ইসরায়েলকে নিঃশর্ত সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এবং লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, মিসর, এমনকি আরও দূরে মধ্যপ্রাচ্যে ভূমি দখলের অভিযানকে সমর্থন করছে। ‘ইহুদি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে’ কিংবা ‘বিশ্বকে নিরাপদ করা’—এই যুক্তিকে সামনে আনা হচ্ছে। ইসরায়েলের এ মারাত্মক অভিযান কোথায় গিয়ে শেষ হবে? এরপর কোন দেশ—পাকিস্তান, তুরস্ক, মিসর নাকি সৌদি আরব?
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুই দেশের নেতারা। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রিয়াদ