গাজীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক ও জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

রবিবার (৪ মে) রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করা হয়। মিছিলটি ভিসি চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘হাসনাত ভাই আহত কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’; ‘জুলাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’; ‘ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ গণঅভ্যুত্থানে অনেক জাতীয় নেতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ ও ভারত প্রশ্নে কঠোর অবস্থান ধরে রেখেছেন। 

এ সময় তারা অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানান। হাসনাতের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন তারা‌।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রোজোয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। আমরা তাদেরকে চাঁদাবাজ, লুটেরা হিসেবে জানি। তারা এই জুলাই অভ্যুত্থানে ২ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। তারা সন্ত্রাসী সংগঠন। নির্বাচন তো দূরে থাক, আমরা কোনো সন্ত্রাসীকে বাংলাদেশের মাটিতেই দেখতে চাই না।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব আল ইসলাম বলেন, হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর যে হামলা, এটা পুরো জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর হামলা। জুলাই বিপ্লবীদেরকে এই সরকার নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারেনি। তারা প্রোক্লেমেশন দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে এই জুলাই বিপ্লবীদেরকে হাইকোর্ট দেখাবেন না।

তিনি বলেন, আমরা বলে দিতে চাই, দিল্লির প্রেসক্রিপশনে এ দেশে কোনো রাজনীতি হবে না। যদি আপনারা অবিলম্বে জুলাই প্রোক্লেমেশন ঘোষণা করতে না পারেন, তাহলে জুলাই অভ্যুত্থানের মতো আবারও ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে আসবে।

ঢাকা/সৌরভ/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার ছেলেকে গোসল করাতেও দেয়নি ওরা’

রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের অডিটরিয়াম শহীদদের বাবা-মায়ের অশ্রুতে ভিজেছে। অনেক মা উঠে দাঁড়িয়েছেন, আর স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বলেছেন, “আমার ছেলে গুলি খেয়েছিল রাস্তায়, কিন্তু হাসপাতালে নিয়েও চিকিৎসা পায়নি।”

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট)‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ এর ১ বছর পূর্তিতে ঢাকা জেলা প্রশাসন ৮২ শহীদ পরিবার ও ১ হাজার ৪৮৩ জন জুলাইযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিয়েছে। কিন্তু এই সংবর্ধনা শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, এটি ছিল স্মরণ, শ্রদ্ধা, বিচার চাওয়ার আর্তি আর রাষ্ট্র পুনর্গঠনের অঙ্গীকার।

ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের মানুষের বুকে গুলি চালিয়ে টিকে থাকতে চেয়েছিল। ৫ আগস্ট শুধু স্মরণ করার মতো দিন নয়, এটা প্রতিজ্ঞার দিন, মাফিয়াতন্ত্রকে চিরতরে নির্মূল করার শপথ।”

আরো পড়ুন:

বীরদের উৎসর্গ করে জুলাইয়ের গল্প শোনালেন সায়ান

চব্বিশের অভ্যুত্থানে জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি

তিনি আরো বলেন, “আজ আমরা শ্রদ্ধা জানাই শুধু জুলাই শহীদদের নয়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদেরও, যাদের আত্মত্যাগে আমরা প্রথম স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। এবার এসেছে গণতন্ত্রের পূর্ণ মুক্তির সময়।”

অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করে শহীদ শুভ’র মা রেনু কাঁপা কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলেকে গুলি করার পর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওকে বাঁচাতে কেউ আসেনি। মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরলে গোসল করাতে দেয়নি পুলিশ। আমার ছেলে অপরাধ কী করেছিল? ছাত্রদের ডাকে সাড়া দিয়েছিল, এটাই ছিল ওর অপরাধ?”

শহীদ আকরাম খান রাব্বির মা বলেন, “আমরা এখানে কোনো উৎসব করতে আসিনি। এসেছি বিচার চাইতে। আমাদের সন্তানদের খুন করে কেউ যেন নিরাপদে না থাকে। স্বৈরাচারী শাসকের বিচার চাই। এমন শাস্তি চাই, যেন দুনিয়া কাঁপে।”

এই স্মৃতিচারণ অংশে অডিটোরিয়ামের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। দর্শকসারিতে অনেকেই চোখ মুছছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ বলেন, “যে সরকার গুলি চালিয়েছিল, তারা পালিয়ে গেছে। তাদের দোসররাও আত্মগোপনে। সেই শূন্যতার সময় নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে আমরা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলাম। এখন সেই সংকট পেরিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।”

তিনি উপস্থিত শহীদ পরিবার ও আন্দোলনকারীদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও উপহার তুলে দেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, সমাজকল্যাণ ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।

অনুষ্ঠানে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়। যেখানে আন্দোলনের ভয়াবহতা ও আন্দোলনকারীদের সাহসিকতা ফুটে ওঠে।

ঢাকা/এএএম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালিত
  • গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে চিরস্থায়ী করে রাখতে হবে: আসিফ নজরুল
  • সিলেটে জুলাই স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টে ছাত্রলীগের হামলা, আহত ১৪
  • সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ দিলেন মির্জা ফখরুল
  • চবি প্রশাসনকে নিয়ে পথনাটক ‘বহুতদিন অইয়ে আর মুলা ন ঝুলায়ো’
  • বিতর্কিত ছবির স্থানে খালেদা জিয়ার উক্তি টানাল শিবির
  • কুয়েতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালিত
  • আমিরাতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালিত 
  • খুলনায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ ও উন্মুক্ত আলোচনা
  • ‘আমার ছেলেকে গোসল করাতেও দেয়নি ওরা’