ব্যথা কোনো রোগ নয়, ব্যথা বিভিন্ন লক্ষণ মাত্র। ব্যথা হচ্ছে এক প্রকার অনুভূতি, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি আমাদের শরীরের কোনো একটি অংশ স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে না। ব্যথা মানব শরীরের বিভিন্ন অংশ হতে পারে। যেমন জোড়াগুলোতে ও মাংশপেশিতে। তবে জোড়ার ব্যথায় মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। এসব জোড়ার ব্যথার মধ্যে হাঁটুর ব্যথা বয়স্ক লোকদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বয়স হলে হাঁটুর ব্যথা নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। এ বয়সে কাউকে না পেলে একাই চলতে হয়। এ একা চলার পথকে ধরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে। এই একলা চলার পথের সঙ্গী হচ্ছে আমাদের হাঁটু। হাঁটা ছাড়া আমরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারি না। ব্যথা সব বয়সেই হয়, তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় অস্টিও-আর্থ্রাইটিস।
কী কী সমস্যা হতে পারে
l বসা থেকে উঠতে কষ্টবোধ করা
l বেশিক্ষণ হাঁটতে না পারা
l নামাজ পড়তে গিয়ে হাঁটু যখন তখন টন টন করে
l কখনও কখনও হাঁটুতে শব্দ হয়
l হাঁটু নড়াচড়া করলে বা ভাঁজ করলে কষ্ট বাড়ে
l তীব্র ব্যথা হলে ফুলে যায় বা লাল হয়ে যায়
এমন ব্যথার কারণ
l আঘাতের কারণে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে
l লিগামেন্ট বা মিনিসকাস-এর ইনজুরির কারণে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে
l খেলাধুলা বা দাঁড়ানোর সময় হঠাৎ পড়ে গিয়ে হাঁটু মচকে গিয়ে ব্যথা হতে পারে
l বারসা বা টেনডনের আঘাতের কারণে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে
l লিগামেন্ট ইনজুরির কারণে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে
হাঁটু মজবুত রাখার উপায়
হাড়ের মূল উপাদান আমিষ কোজেন এবং ক্যালিসিয়াম। প্রাকৃতিক নিয়মে ৩০ বছরের পর থেকে হাড়ের ঘনত্ব ও পরিমাণ কমতে থাকে। হাঁটু দুর্বল ও ভঙ্গুরও হতে থাকে। ৫০ থেকে ৬০ বছরের দিকে হাড় অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। এজন্য হাড়কে মজবুত রাখতে হলে আমিষ কোলাজেন ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খেতে হবে।
হাঁটু ব্যথা প্রতিরোধে উপায়
v হাঁটু ভাঁজ করে বেশিক্ষণ বসে কাজ করবেন না।
l অতিরিক্ত ওজন পরিহার করুন এবং স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখুন
l এক জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন না
l ভারী বস্তা বহন করবেন না
l হাই কমোড ব্যবহার করুন
l খাওয়ার সময় চেয়ারে বসে খান
l সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করার সময় সিঁড়ির রেলিং ব্যবহার করুন
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
হাঁটু ব্যথার চিকিৎসা করে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। কারণ সমস্যা সঠিকভাবে নিরূপণ করে, সঠিক চিকিৎসা দিলে অবশ্যই ভালো হবে। ব্যথা যখন খুব বেশি হয়, তখন অনেকে ব্যথানাশক ওষুধ, মালিশ ও গরম শেক দিয়ে ব্যথা কিছুটা কমায়। কারণ তারা না বুঝে নিজেদের চিকিৎসা নিজেরাই করে। এভাবে চলে দীর্ঘ দিন। যখন এগুলোও কাজ করে না, তখন ব্যথা তাদের জীবনের নিত্যসঙ্গী হয়ে যায়। যদি প্রথম পর্যায়ে এসব রোগী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিত এবং নিয়মকানুন মেনে চলত, তাহলে এ রোগের পরিপূর্ণ চিকিৎসা করা সম্ভব এবং অস্টিও আর্থ্রাইটিস নামক রোগটিও হতো না। এ রোগটি পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। ফলে এ রোগ থেকে তাকে পরিপূর্ণ সুস্থ করা যেত। জীবন অনেক সুন্দর। সুন্দরভাবে বাঁচতে বা ব্যথামুক্তভাবে জীবন-যাপন করতে হলে এ অবস্থায় দৈনন্দিন জীবন-যাপনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। সঠিক ও মানসম্মত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে। v
[বাত-ব্যথা, আর্থ্রাইটিস, প্যারালাইসিস ও ব্যাক পেইন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট, আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড]
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এক চিলতে রোদ্দুরে...
নাটকের আকাশে উজ্জ্বল এক তারার নাম তানিয়া বৃষ্টি। ২০১৫ সালে অভিনয়ের জগতে পা রেখেছেন। একটানা পথচলার দশ বছর পেরিয়ে আজ তিনি এক পরিপক্ব শিল্পী। এই এক দশকে তাঁর অভিনয়ের পরিধি ছুঁয়েছে বিভিন্ন ধরনের চরিত্র– নরম-কোমল প্রেমিকা, প্রতিবাদী নারী, প্রান্তিক জনপদের নারী, পরিবারের দায়িত্বশীল কন্যা কিংবা ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ের গল্প বলা এক মানুষ। প্রতিটি ভূমিকায় তিনি নিজেকে ভেঙে গড়েছেন, প্রতিবার যেন নতুন এক তানিয়া বৃষ্টিকে খুঁজে পাওয়া যায়।
তানিয়া বৃষ্টির অভিনয়ে একটি অনাড়ম্বর সৌন্দর্য আছে, যা সহজে দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তাঁর হাসি যেমন মিষ্টি, তেমনি চোখের ভাষায় খেলা করে এক অনুচ্চারিত বেদনা। অভিনয়ের ভেতরে যে আত্মনিবেদন, তা হয়তো খুব বেশি উচ্চকিত নয়, তবে গভীর। কখনও কখনও ক্যামেরার সামান্য এক দৃষ্টি বিনিময়েই বোঝা যায় দৃশ্যের ভেতরে তাঁর অনুরণন।
ঈদ মানেই উৎসব, আর সে উৎসবে তানিয়া বৃষ্টির নাটক যেন দর্শকের জন্য এক পরম প্রাপ্তি। গত ঈদেও তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো। ‘তাসের ঘর’, ‘মানুষ’, ‘ভালোবাসা অন্তহীন’, ‘পাষাণী’, ‘মনে পড়ে তোমাকে’ ও ‘ক্যাফেতে ভালোবাসা’– এই নাটকগুলো এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রচার হয়েছে ইউটিউব ও টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে। প্রতিটি নাটকে তিনি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে, ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দিয়েছেন। একটি নারীর মনের প্রতিটি স্তর যেন খুলে ধরেছেন তিনি অভিনয়ের পরতে পরতে।
এই জনপ্রিয়তার পথে কেবল ফুল বিছানো ছিল না। কিছু কাজ হয়তো তাঁকেও তৃপ্ত করেনি, কিছু চিত্রনাট্যে হয়তো গভীরতা ছিল না, তবু তিনি বলছেন, এখনকার দিনে গল্প বাছাইয়ে তিনি অনেক বেশি সচেতন। তাঁর কথায়, ‘গল্পের প্রতি আগের চেয়ে বহুগুণ বেশি মনোযোগী আমি। এখন মনে হয়, নিজেকে বারবার ভাঙার মতো চরিত্রই আমাকে টানে। শুধু ক্যামেরায় মুখ দেখানোর জন্য কাজ করতে রাজি নই। এখন যেকোনো নাটকে কাজ করার আগে গল্পটা ভালো হওয়া জরুরি মনে করি। কারণ দর্শক গল্পটাই আগে খোঁজেন। এরপর চরিত্রে নিজের অভিনয় করার সুযোগটা কেমন আছে তাও ভেবে দেখি।’ এই আত্মঅনুসন্ধানী মনোভাবই তাঁকে করে তুলছে আরও পরিণত, আরও আবেগপ্রবণ শিল্পী।
শুধু কাজের মাধ্যমে নয়, তানিয়া বৃষ্টি প্রায়ই থাকেন আলোচনায় ব্যক্তিগত নানা প্রসঙ্গেও। প্রেম, বিয়ে, সম্পর্ক সবকিছুতে থাকে ভক্তদের কৌতূহল। তবে তিনি নিজেই জানিয়েছেন, আপাতত ব্যক্তিগত জীবনের এসব পরিকল্পনা থেকে দূরে তিনি। বর্তমানে নিজের সব মনোযোগ অভিনয়ে, নিজেকে আরও শিল্পসম্মত করে গড়ে তোলায়।
বরাবরই নাটকের ছোটপর্দা থেকে সিনেমার বড়পর্দার প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল তাঁর। ক্যারিয়ারের শুরুতে সুযোগ পেয়ে যান আকরাম খানের ‘ঘাসফুল’ ছবিতে। এরপর বেশ কয়েকটি সিনেমার প্রস্তাব পেলেও নিয়মিত হননি বড়পর্দায়। ছোটপর্দাকে ঘিরে যাঁর স্বপ্ন। এখন তিনি চেষ্টা করছেন প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।
২০১২ সালে ‘ভিট চ্যানেল আই টপ মডেল’ দ্বিতীয় রানারআপের মধ্য দিয়ে শোবিজে আসেন তানিয়া বৃষ্টি। এরপরই রচিত হয় শুধুই তাঁর এগিয়ে চলার গল্প।