৪৩তম বিসিএসের গেজেট-বঞ্চিতদের প্রতি গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সংহতি
Published: 5th, May 2025 GMT
৪৩তম বিসিএসের গেজেট–বঞ্চিতদের ‘আমরণ অনশন’ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। সোমবার চলমান কর্মসূচিতে কমিটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে সংহতি জানান বলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মার্জিয়া প্রভা।
প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য হারুন অর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, আইনজীবী মানজুর আল মতিন ও ছাত্রনেতা রাফিকুজ্জামান ফরিদ। অবিলম্বে আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা।
গেজেটভুক্ত করে যোগদান নিশ্চিতকরণ এবং ‘সরকারি চাকরি ভেরিফিকেশন নীতিমালা’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে অনশন করছেন ৪৩তম বিসিএসের গেজেট–বঞ্চিতরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এ কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।
কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য হারুন অর রশিদ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর এদের (আন্দোলনরতদের) সঙ্গে যা করা হচ্ছে, তা একটা চরম বৈষম্য। সরকারের উচিত দ্রুত তাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া।’
কারণ না দেখিয়ে চাকরি থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কোনো রাষ্ট্রের নেই উল্লেখ করে আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, ‘আমরা একটা পুরোনো ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করছি, লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি, যে ব্যবস্থায় রাষ্ট্র মানুষকে কেবল ফাঁকা আশ্বাস দেয়, কিন্তু মানুষের যৌক্তিক দাবিগুলোকে পূরণ করে না। এই সরকার সেগুলো থেকে বেরিয়ে আসবে, এটা আমার বিশ্বাস।’
মানজুর আল মতিন আরও বলেন, ‘আপনাদের দীর্ঘ চার মাস ধরে যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, সরকার সেই আশ্বাস পূরণ করবে, এটাই প্রত্যাশা। আপনাদের গেজেটেভুক্ত করা হোক, এই দাবি জানাই।’
মানুষকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে কীসের সংস্কার করা হচ্ছে—এমন প্রশ্ন তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু বলেন, ‘৪৩তম বিসিএসের নিয়োগটা ২০২০ সালের। এখন ২০২৫ সাল, এখনো তাঁদের চাকরিতে নিযুক্ত করা হচ্ছে না। এটা তো ওনাদের জন্য একটা অনিশ্চয়তা। এ রকম আরও বিভিন্ন সেক্টরের মানুষকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখা হচ্ছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আইনজীবীর জেরায় জুনায়েদ বললেন, জুলাই আন্দোলনে ষড়যন্ত্রকারী ছিলাম, সত্য নয়
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কর্মসূচি ছিল আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের মেটিকুলাস ডিজাইনের অংশ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আজ সোমবার সাক্ষীকে জেরায় এ কথা বলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। সাক্ষী আলী আহসান জুনায়েদ জবাব দেন, এ কথা সত্য নয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার ৪৮তম সাক্ষী ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদকে জেরা করেন আইনজীবী আমির হোসেন। তিনি এই মামলার পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী।
জেরায় আমির হোসেন বলেন, জুলাই আন্দোলনে যাঁরা ষড়যন্ত্রকারী, তাঁদের মধ্যে আপনি একজন। জবাবে আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, এ কথা সত্য নয় যে জুলাই আন্দোলনে আমি একজন ষড়যন্ত্রকারী ছিলাম। আন্দোলনে কোনো ষড়যন্ত্র ছিল না।
মামলার আরেক আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি দোষ স্বীকার করে এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।
জেরায় আমির হোসেন আরও প্রশ্ন করে বলেন, ফেসবুক প্রোফাইল লাল করা, মার্চ ফর জাস্টিস, রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ, ১ আগস্টকে ৩২ জুলাই হিসেবে গণনা করার সিদ্ধান্ত, ৩ আগস্ট সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচির ঘোষণা এবং মার্চ টু ঢাকাসহ আপনাদের সব কর্মসূচি ছিল আপনাদের দীর্ঘদিনের লালিত নীলনকশার ফলশ্রুতি ও অবৈধ। জবাবে আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, এ কথা অসত্য।
আইনজীবী জেরায় বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে গত বছরের ৩০ জুলাই শোক দিবস ঘোষণা ছিল একটি ভালো উদ্যোগ।
উত্তরে আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, এ কথা সত্য নয়। বরং তা ছিল সরকারের নাটক।
আমির হোসেন বলেন, আপনারা (আন্দোলনকারী) ষড়যন্ত্র করে, টার্গেট করে করে উপরিউক্ত (জুলাই শহীদ) লোকদের হত্যা করেছেন।
এ কথা সত্য নয় বলে জবাব দেন আলী আহসান জুনায়েদ।
স্লোগান দিয়ে নিজেদের ছোট করা প্রসঙ্গসাক্ষী আলী আহসান জুনায়েদকে আইনজীবী আমির হোসেন প্রশ্ন করেন, তাঁর জানা মতে, আন্দোলনকারীরা কেউ রাজাকারের সন্তান ও রাজাকারের নাতিপুতি না। আলী আহসান জুনায়েদ জবাব দেন, ‘হ্যাঁ, যাঁরা আন্দোলন করেছেন তাঁরা কেউ রাজাকারের সন্তান বা নাতিপুতি ছিলেন না।’
এরপর আমির হোসেন প্রশ্ন করেন, আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা রাজাকারের বাচ্চা ও রাজাকারের নাতিপুতি কথাগুলো বলেননি। উত্তরে আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, এ কথা সত্য নয়।
পরে আমির হোসেন বলেন, ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার/ কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ স্লোগানের সঠিক অর্থ অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে এই স্লোগান দিয়ে নিজেরাই নিজেদের ছোট করেছেন।
উত্তরে আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, এই স্লোগান দিয়ে নিজেরাই নিজেদের ছোট করেননি। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের (আন্দোলনকারী) ব্যঙ্গ করে এই বক্তব্য (রাজাকারের বাচ্চা ও রাজাকারের নাতিপুতি) দেওয়ার প্রতিবাদে তাঁরা এই স্লোগান দিয়েছেন।
গোপালগঞ্জের কোটা সুবিধাসাক্ষী আলী আহসান জুনায়েদকে আইনজীবী আমির হোসেন প্রশ্ন করেন, গোপালগঞ্জের লোকেরা কোটার সুবিধা বেশি পেয়ে থাকেন বলে আপনি অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন। আলী আহসান জুনায়েদ জবাব দেন, তিনি অসত্য বলেননি।
পরে আমির হোসেন বলেন, গোপালগঞ্জের লোকেরা কোটা সুবিধা বেশি ভোগ করেছেন যে বলছেন, এ কথার পক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারবেন?
আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, কোনো কাগজপত্র এই মুহূর্তে তাঁর কাছে নেই। তবে পত্রপত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়েছে।
গণহত্যা প্রসঙ্গসাক্ষী আলী আহসান জুনায়েদকে আইনজীবী আমির হোসেন প্রশ্ন করে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতার নির্দেশ দেননি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামাল। এ কথাও সত্য নয় বলে জবাব দেন আলী আহসান জুনায়েদ।
আমির হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে কোনোরূপ গণহত্যা হয়নি। আলী আহসান জুনায়েদ জবাব দেন, এ কথা সত্য নয়।