আগামী এডিপির আকার হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা
Published: 6th, May 2025 GMT
এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ব্যাপক পরিমাণে কমানো হচ্ছে। এবার কমছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপির আকার হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য পরে তা কমিয়ে আনা হয়।
আজ মঙ্গলবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বর্ধিত সভায় আগামী অর্থবছরের এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সভায় অনুমোদিত আগামী এডিপির আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আর প্রকল্প সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। আগামী এডিপিতে ১ হাজার ১৪২টি প্রকল্প। এবার অন্যবারের মতো আগামীবারও পরিবহন ও যাতায়াত এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। চলতি মাসেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় আগামী এডিপি পাস হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
কোন খাতে কত বরাদ্দনতুন খসড়া এডিপিতে বরাদ্দের দিক থেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে। এ খাতে মোট ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষা খাতে। এ খাতে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা।
অন্য খাতগুলোর মধ্যে গৃহায়ণ খাতে ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা; স্বাস্থ্যে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা; স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা; কৃষিতে ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা; পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ১০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা; শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৫ হাজার ৩৮ কোটি টাকা; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ যাচ্ছে। প্রায় সব খাতেই চলতি এডিপিতে বরাদ্দ কমেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর দ দ র খ
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজার আগে ভারতে গেল ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি ইলিশ
দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এবার ১২ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এ অনুমতির মেয়াদ রয়েছে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এর আগে গত সোমবার পর্যন্ত ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি ইলিশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বছর ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সোমবার পর্যন্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠান ইলিশ রপ্তানি করেছে। অর্থাৎ ২১টি প্রতিষ্ঠান কোনো ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি। ইলিশ রপ্তানি হয়েছে বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। এ দুটি স্থলবন্দর দিয়ে শেষ মুহূর্তে আর ইলিশ রপ্তানি হওয়ার খুব বেশি সুযোগ নেই।
এনবিআরের হিসাবে, সব মিলিয়ে এবার ইলিশ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা।
এনবিআরের হিসাবে, সব মিলিয়ে এবার ইলিশ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা।সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানিএনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি প্রথম শুরু হয় ২০১৯–২০ অর্থবছরে। গত সাত বছরে সবচেয়ে বেশি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ২০২০–২১ অর্থবছরে। ওই সময় ১৭ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। এর আগে সবচেয়ে কম রপ্তানি হয় ২০১৯–২০ অর্থবছরে। সেবার ৪ লাখ ৭৬ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এবারই সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।
এ বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের একটি চট্টগ্রামের কালুরঘাটের প্যাসিফিক সি ফুডস। প্রতিষ্ঠানটি ৪০ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে। তবে সিংহভাগই রপ্তানি করতে পারেনি।
জানতে চাইলে প্যাসিফিক সি ফুডসের পরিচালক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমতে পারে, এমন আশায় ছিলাম আমরা। তবে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমেনি। ফলে মাত্র দেড় হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি করেছি আমরা। তাতেও লোকসান হয়েছে। দাম বেশি থাকায় আর রপ্তানি করছি না।’
আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমারের ইলিশের রপ্তানি মূল্য কম। ফলে ভারতের বাজারে মিয়ানমারের ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে বেশি।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে দেশটি ইলিশ আমদানি করে ভারত। দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পরিমাণে কম দামে ইলিশ আমদানি করে মিয়ানমার থেকে।
যেমন ২৪–২৫ অর্থবছরে (এপ্রিল–মার্চ) দেশটি মিয়ানমার থেকে সাড়ে ছয় লাখ কেজি ইলিশ আমদানি করেছে। গড়ে ভারতের আমদানি মূল্য ছিল ৬ ডলার ২৩ সেন্ট। অন্যদিকে একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে ৫ লাখ ৪২ হাজার কেজি ইলিশ। গড় আমদানি মূল্য ছিল ১০ ডলার ৯৩ সেন্ট।
এর আগে সবচেয়ে কম রপ্তানি হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে। সেবার ৪ লাখ ৭৬ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এবারই সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যেই ইলিশ গেলবাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার সাড়ে ১২ ডলার বা ১ হাজার ৫৩২ টাকা দরে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বেঁধে দিয়েছে। এর মানে হলো, এর চেয়ে কমে ইলিশ রপ্তানি করা যাবে না। তবে চাইলেই বেশি দামে রপ্তানি করা যাবে।
এনবিআরের তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৯–২০ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম মূল্যে ইলিশ রপ্তানি হয়ে আসছে। ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ইলিশ রপ্তানির নজির খুব কম।
এ বছর রপ্তানি হওয়া ৪৫টি চালানের মধ্যে ৪৪টি চালানের ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য অর্থাৎ সাড়ে ১২ ডলারে। শুধু একটি চালান ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে রপ্তানি হয়েছে। এই চালান রপ্তানি করেছে ভোলার চরফ্যাশনের রাফিদ এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি ৪২০ কেজি ইলিশ কেজিপ্রতি ১৩ ডলার ৬০ সেন্টে রপ্তানি করেছে।
স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমতে পারে, এমন আশায় ছিলাম আমরা। তবে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমেনি। ফলে মাত্র দেড় হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি করেছি আমরা। তাতেও লোকসান হয়েছে। দাম বেশি থাকায় আর রপ্তানি করছি না।আবদুল মান্নান, পরিচালক, প্যাসিফিক সি ফুডসপ্রতিবারই অনুমতির চেয়ে কম রপ্তানিবাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি এবং এনবিআরের রপ্তানির হিসাব তুলনা করে দেখা গেছে, প্রতিবারই যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়, বাস্তবে রপ্তানি হয় খুব কম। যেমন গত বছর ২৪ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলেও বাস্তবে রপ্তানি হয়েছে ৪ লাখ ৪৪ হাজার কেজি ইলিশ। অর্থাৎ অনুমতির ২৩ শতাংশ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এবারও এখন পর্যন্ত অনুমতির ১১ শতাংশ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।