আইএমএফ ঋণের সুরাহা ছাড়াই শেষ আরেক দফার বৈঠক
Published: 6th, May 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড়ে কোনো সুরাহা ছাড়াই শেষ হয়েছে আরেক দফা বৈঠক। এবারও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে– এ মুহূর্তে ডলারের দর বাজারভিত্তিকের ক্ষেত্রে নমনীয় করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের এই অবস্থানের ভিত্তিতে সংস্থাটি নিজেদের মধ্যে আবার আলোচনা করবে। এরপর আগামী ১৯ মে উভয় পক্ষের মধ্যে আরও একটি বৈঠক হবে। সেখানেও ইতিবাচক কোনো বার্তা না এলে ওয়াশিংটনে পরবর্তী আইএমএফের বোর্ড সভা থেকেই ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিকের ক্ষেত্রে নমনীয় করবে কি না, তার ওপর নির্ভর করছে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের কিস্তি পাওয়ার বিষয়টি। বাজারভিত্তিক করার অর্থ হচ্ছে, ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার মান কত হবে, তা ঠিক হবে বাজারে। এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকে সমঝোতা হয়নি। ভার্চুয়াল বৈঠকে বাংলাদেশের দিক থেকে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড.
বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি, আবার আলোচনার পথও বন্ধ হয়ে যায়নি। সমঝোতার বিষয়ে আরও বৈঠক হবে। আইএমএফকে জানানো হয়েছে এবং বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযুক্ত সময় এখনই নয়।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে শর্তের অগ্রগতি যাচাইয়ে গত মাসে একটি মিশন ঢাকা সফর করে। তবে কোনো সমঝোতা ছাড়াই তারা ঢাকা ছাড়ে। মূলত বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে নমনীয়তা দেখাতে চাচ্ছে না। এ কারণে আলোচনা গড়ায় ওয়াশিংটনে। গত মাসের শেষ দিকে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের ফাঁকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সাইডলাইনে আলাদা বৈঠক হয়। কিন্তু ঢাকা বা ওয়াশিংটন– কোথাও আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে পরবর্তী দুই কিস্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ। এরপর গত দুই দিন এ বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ভার্চুয়াল সভা হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ এ মুহূর্তে ডলারের দরে নমনীয়তা না দেখানোর নীতিগত অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বর্তমান ডলারের দর বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ কারণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে দরের তেমন পার্থক্য নেই। আবার বৈধ পথে রেমিট্যান্সে প্রায় ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে। ডলারের দর দীর্ঘদিন ধরে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল থাকার পরও এভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে। এ মুহূর্তে ডলারের দরে সামান্য নমনীয়তা দেখালেই দর বাড়তে শুরু করবে। ডলার বাজারে আবার অস্থিরতা শুরু হবে। ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকা মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যাবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইএমএফ ঋণ আইএমএফ র নমন য়
এছাড়াও পড়ুন:
এখন ফাইনালের স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে একটু পরপরই চোখে পড়েছে বাংলাদেশের পতাকা। দর্শকদের হাতে উড়তে থাকা সেই লাল-সবুজ ম্যাচ শেষে যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আনন্দ আর উল্লাসে রঙিন হয়ে উঠল গ্যালারি। সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে লিটন দাসের দল। বাংলাদেশ জিতেছে বলেই হয়তো ভুলে যাওয়া গেল শরীফুল ইসলামের বেধড়ক মার খাওয়া কিংবা ফসকে যাওয়া ক্যাচের হতাশা।
আবারও আলো ছড়ালেন মোস্তাফিজুর রহমান। সাইফ হাসান জানিয়ে দিলেন, তিনিও আছেন। কিছুক্ষণ তাঁর সঙ্গী ছিলেন লিটন দাস। ক্যাচ ফেলার হতাশা ভুলে শেষটা রাঙিয়ে তুললেন তাওহিদ হৃদয়। এমন ছোট ছোট মুহূর্ত মিলিয়েই বাংলাদেশ লিখল দারুণ এক জয়ের গল্প। যে জয় এখন দেখাচ্ছে আরও বড় স্বপ্ন—এশিয়া কাপ ফাইনাল। দিন দুয়েক আগেও যে পথটা মনে হচ্ছিল কাঁটায় ভরা, এখন তা বেশ প্রশস্তই লাগছে। আগামী বুধবার ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ, পরদিন পাকিস্তানের বিপক্ষে। এই দুই ম্যাচের একটি জিতলেও বাংলাদেশের ফাইনাল খেলার যথেষ্টই সম্ভাবনা থাকবে। হেরে গেলে অবশ্যই থাকবে না। তবে ভারত বা পাকিস্তান কোনো দলকেই না হারিয়ে যে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলা যায় না, এটা কে না জানে!
যদিও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের শুরুটা এমন ছিল যে, তখন এসব আলোচনা করাটা রীতিমতো বাড়াবাড়ি মনে হতো। মাত্র ৪ ওভারেই শ্রীলঙ্কা তুলে ফেলে ৩৬ রান। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা খেয়ে চাপে পড়েন তাসকিন আহমেদ। তবে শেষ বলে পাতুম নিশাঙ্কাকে ফিরিয়ে পথ দেখান তিনিই। এরপর মেহেদী হাসান নেন পরপর দুটি উইকেট। কিন্তু চাপের মুখে শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়ায় দাসুন শানাকার ব্যাটে।
শানাকা আর চারিত আসালাঙ্কার ২৭ বলে ৫৭ রানের জুটি আবারও চাপে ফেলে বাংলাদেশকে। শামীম–হৃদয়ের হাত ফসকে তিনটি ক্যাচ বেরিয়ে যাওয়ার পর বড় রানে চাপা পড়ার শঙ্কাও জাগে। ঠিক তখনই আশার আলো হয়ে হাজির মোস্তাফিজ।
প্রথম ৩ ওভারে ১৫ রান দিয়ে একটি উইকেট পেয়েছিলেন। কিন্তু ইনিংসের ১৯তম এবং নিজের শেষ ওভারে যা করলেন, সেটাই ঘুরিয়ে দিল ম্যাচের মোড়। প্রথম বলেই হৃদয়ের হাত ফসকে গেল আসালাঙ্কার ক্যাচ, তবে হয়ে গেলেন রানআউট। পরের ৫ বলে মোস্তাফিজ দিলেন মাত্র ৩ রান, তুলে নিলেন আরও ২ উইকেট!
ওভারের শেষ বলে হাসারাঙ্গাকে ফিরিয়ে মোস্তাফিজ ছুঁয়ে ফেললেন সাকিব আল হাসানকে। টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক এখন তাঁরা দুজন। শ্রীলঙ্কার ইনিংস থেমে গেল ১৬৮ রানে।
তাড়া করতে নামা তানজিদ হাসানকে দেখে মনে হচ্ছিল, এই ম্যাচেও হিসাব মেলাতে পারবে না বাংলাদেশ। নুয়ান তুষারার ধাঁধা তিনি এখনো মেলাতে পারেননি—ছয়বার মুখোমুখি হয়ে চারবারই আউট হয়েছেন। তবে এতটুকুই। এরপর গল্পটা সাইফ হাসান ও লিটন দাসের। দ্বিতীয় উইকেটে ৩৪ বলে গড়েন ৫৯ রানের জুটি।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৫৯ রান তুলে লিটন ফেরেন সপ্তম ওভারেই। তবে হাসারাঙ্গার বলে সুইপ করতে গিয়ে ১৬ বলে ২৩ রান করে অধিনায়ক ফিরলেও বাংলাদেশ পথ হারায়নি। এরপর কিছুক্ষণ হাল ধরে রাখেন সাইফ হাসান। টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ৪৫ বলে করেন ৬১ রান, ৪ ছক্কা আর ২ চারে সাজানো ইনিংস।
তাঁর বিদায়ের পর ব্যাটন তুলে নেন হৃদয়। কামিন্দু মেন্ডিসের করা পরের ওভারে ২ চার ও ১ ছক্কায় তুলে নেন ১৬ রান। ম্যাচটা তখন বাংলাদেশের একেবারে হাতের মুঠোয়।
শেষ দিকে ১ রান বাকি থাকতে ৩ বলে বাংলাদেশ হারায় ২ উইকেট। কিন্তু তাতে শ্রীলঙ্কার আফসোসই বাড়ে। নাসুম আহমেদ জয়সূচক রানটা নিতেই অন্য প্রান্তে লাফিয়ে ওঠেন শামীম হোসেন। আনন্দে ভাসে বাংলাদেশের ডাগআউট, যেন পুরো দুবাইও।