নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান জানতে চেয়েছেন দেশের ৪৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক। একই সঙ্গে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবির পাশাপাশি নারীবিদ্বেষ তৈরিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর ‘অপপ্রচার ও অপতৎপরতার’ প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকেরা এ অবস্থান জানান। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক পারভীন হাসান, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সুব্রত চৌধুরী, সালমা আলী ও সারা হোসেন, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, লেখক রেহনুমা আহমেদ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, অধ্যাপক নায়লা জামান খান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, লেখক পাভেল পার্থ প্রমুখ।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিতে কয়েক দিন ধরে হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু ধর্মীয় নামধারী সংগঠনের প্রতিনিধি ও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসছে। তাঁদের কেউ কেউ এই কমিশন বাতিল না করা হলে সরকার উৎখাত, দেশ অচল করে দেওয়ার মতো হুমকি দিয়েছেন। এসব দাবি শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয়, একই সঙ্গে এটি জনমনে নারীবিদ্বেষ উসকে দিচ্ছে। এসব বক্তব্যকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।’

বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, ‘আমরা অনতিবিলম্বে বিষয়টি নিয়ে সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান জানতে চাই। সাম্প্রদায়িক ও নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠীর এমন বক্তব্য শুধু নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন কিংবা সরকারের জন্য নয়, দেশের জনগণ ও তাদের অধিকারের ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।’

আরও পড়ুনহেফাজতে ইসলামকে আইনি নোটিশ দিলেন এনসিপির তিন নেত্রীসহ ৬ নারী০৫ মে ২০২৫

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পুরো কমিশনকে বাতিল করার দাবির পেছনে গভীর দুরভিসন্ধি এবং রাজনৈতিক ও কায়েমী স্বার্থ জড়িত। প্রকাশ্যে নারীর বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার ও কমিশনের সদস্যদের চরিত্র হনন করায় ওই গোষ্ঠী এবং অন্তর্বর্তী সরকার উভয়কেই জবাবদিহি করতে হবে।

বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, যাঁরা নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল চাইছেন, তাঁদের আসল উদ্দেশ্য নারীকে অবদমিত রেখে, বৈষম্যকে জিইয়ে রেখে নিজেদের গোষ্ঠীগত ও কায়েমী স্বার্থ হাসিল করা। দেশ অচল করার হুমকি দিয়ে তাঁরা কার এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমেছেন, সেটি তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সরকারকে তদন্তের মাধ্যমে এসব উসকানিদাতা ও তাঁদের ইন্ধনদাতাদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আরও পড়ুনমহাসমাবেশে দুই বক্তার ‘আপত্তিকর’ শব্দচয়নের জন্য দুঃখ প্রকাশ হেফাজতের৬ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ ন জ ন সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত, তবে বাতিলের দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, রোববার এ নিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করা হয়েছে।

বিকেল থেকে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে এ সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। তবে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি শিক্ষার্থীরা। তাঁরা উপাচার্যের নির্বাহী ক্ষমতাবলে এ সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। রাত দেড়টার দিকেও শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ করছিলেন। এটি না হলে আন্দোলন চলবে বলেও তারা জানান।

রাত পৌনে ১টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রশাসনের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতিতে রবিবার ২১ সেপ্টেম্বর জরুরি সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে।'

শনিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবনের সামনে তাঁদের অবস্থান ত্যাগ করেন। এতে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক প্রায় সাত ঘণ্টা পর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পান।

এর আগে শনিবার বেলা তিনটার দিকে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হলে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা তাঁর গাড়ি আটকে দেন। পরে তিনি হেঁটে তাঁর বাসভবনের দিকে যেতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা তাঁর বাসভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দিলে তিনি জুবেরী ভবনের দিকে যান। তাঁর সঙ্গে প্রক্টর মাহবুবর রহমানও ছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিক থেকে জুবেরী ভবনে সহ-উপাচার্য মাঈন উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা।

এমন পরিস্থিতিতে শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে সহ-উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের ‘লাঞ্ছিত’ করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রোববার কর্মবিরতির ডাক দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি আবদুল আলিম। সিনেট ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীও কর্মবিরতিতে থাকবেন বলে উল্লেখ করেন।

এরপর রাত সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবন ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডসংলগ্ন উপাচার্য সালেহ হাসান নকীবের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। বিপুল সংখ্যক ছাত্রীও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, পোষ্য কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করবেন। পোষ্য কোটার বিলুপ্তি করেই তাঁরা ফিরবেন।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব ফোন ধরেননি। তবে রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা খুবই ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছি। কিন্তু এভাবে জিম্মি করে আটকে রেখে সিদ্ধান্ত হতে পারে না। আজকে তারা যা করল, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাকসু নির্বাচন হবে কি না, এটা শিক্ষার্থীদের আচরণের ওপর নির্ভর করবে। তবে আমি রাকসু নির্বাচন নিয়ে খুবই সিরিয়াস।’

আরও পড়ুনএবার উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ