কাশ্মীরে অভিযানে গিয়ে নিহত সেনা ঝন্টু আলী শেখের স্ত্রীকে সরকারি চাকরি দিলেন মমতা
Published: 6th, May 2025 GMT
জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় সন্দেহভাজনদের ধরতে চলমান অভিযানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত পশ্চিমবঙ্গের সেনাসদস্য ঝন্টু আলী শেখের স্ত্রীকে চাকরি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের সুতিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নিহত সেনাসদস্যের পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর স্ত্রীকে পশ্চিমবঙ্গ হোমগার্ডে চাকরি এবং ১০ লাখ রুপি আর্থিক অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ঝন্টুর বয়স ছিল ৩৬ বছর। তিনি ১০ বছর ধরে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। মার্চ মাসে সর্বশেষ নিজের বাড়িতে ঘুরে গেছেন ঝন্টু শেখ। ঝন্টুর পরিবারে স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, মা–বাবা এবং দুই ভাই রয়েছেন। বড় ভাই রফিকুল শেখ কাশ্মীরের অন্য একটি এলাকায় সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তাঁরা সবাই গভীরভাবে শোকগ্রস্ত। রাষ্ট্রীয় সুবিধা থেকে যেন তাঁরা বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।
কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিল ২৬ পর্যটককে হত্যার পর হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করার জন্য ভারতের সেনাবাহিনী এবং জন্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ যৌথ অভিযান শুরু করে। এই অভিযান চলছিল উধমপুরে। সেখানে তল্লাশির সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ও পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার তেহট্টের পাথরঘাটার বাসিন্দা ঝন্টু আলী শেখ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন মুর্শিদাবাদের দাঙ্গায় বিধ্বস্ত সুতির মাঠে যান এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে আর কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সহ্য করা হবে না।’ এদিন সুতি, ধুলিয়া ও ফারাক্কা নিয়ে নতুন একটি মহকুমা গঠনের ঘোষণাও দেন তিনি।
কোনো দাঙ্গা চাই না—ঘোষণা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ধর্মের অর্থ মানবিকতা, এ বন্ধনকে আমরা কখনো ভাঙতে দেব না।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘কেউ উসকানি দিক, কেউ ভর্ৎসনা করুক, দাঙ্গার ডাকে সাড়া দেবেন না মা-বোনেরা। বিজেপির কথায় প্রলুব্ধ হলে চলবে না। আমি একটুও দাঙ্গা দেখতে চাই না। মা-বোনেরাই দাঙ্গা রুখবেন। আমি সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করি এবং ধর্মের নামে কোনো ক্ষতি আমি মেনে নেব না। শান্তিই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য, আমাদের সম্প্রীতির বন্ধনই শক্তভাবে রক্ষা করতে হবে।’
মুর্শিদাবাদে অতীতে দাঙ্গায় প্রাণহানির অভিজ্ঞতা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি অগ্নিসংযোগের আগুনে অগণিত জীবন ঝলসে গেছে। সেখান থেকে মূল্যবান শিক্ষা হলো—মৌলবাদী উসকানিতে ফিরবেন না। দাঙ্গা করলে আমি আপনাদের পাশে থাকব না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন দ য প ধ য য়
এছাড়াও পড়ুন:
পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত, তবে বাতিলের দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, রোববার এ নিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করা হয়েছে।
বিকেল থেকে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে এ সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। তবে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি শিক্ষার্থীরা। তাঁরা উপাচার্যের নির্বাহী ক্ষমতাবলে এ সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। রাত দেড়টার দিকেও শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ করছিলেন। এটি না হলে আন্দোলন চলবে বলেও তারা জানান।
রাত পৌনে ১টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রশাসনের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতিতে রবিবার ২১ সেপ্টেম্বর জরুরি সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে।'
শনিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবনের সামনে তাঁদের অবস্থান ত্যাগ করেন। এতে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক প্রায় সাত ঘণ্টা পর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পান।
এর আগে শনিবার বেলা তিনটার দিকে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হলে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা তাঁর গাড়ি আটকে দেন। পরে তিনি হেঁটে তাঁর বাসভবনের দিকে যেতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা তাঁর বাসভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দিলে তিনি জুবেরী ভবনের দিকে যান। তাঁর সঙ্গে প্রক্টর মাহবুবর রহমানও ছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিক থেকে জুবেরী ভবনে সহ-উপাচার্য মাঈন উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
এমন পরিস্থিতিতে শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে সহ-উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের ‘লাঞ্ছিত’ করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রোববার কর্মবিরতির ডাক দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি আবদুল আলিম। সিনেট ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীও কর্মবিরতিতে থাকবেন বলে উল্লেখ করেন।
এরপর রাত সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবন ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডসংলগ্ন উপাচার্য সালেহ হাসান নকীবের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। বিপুল সংখ্যক ছাত্রীও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, পোষ্য কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করবেন। পোষ্য কোটার বিলুপ্তি করেই তাঁরা ফিরবেন।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব ফোন ধরেননি। তবে রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা খুবই ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছি। কিন্তু এভাবে জিম্মি করে আটকে রেখে সিদ্ধান্ত হতে পারে না। আজকে তারা যা করল, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাকসু নির্বাচন হবে কি না, এটা শিক্ষার্থীদের আচরণের ওপর নির্ভর করবে। তবে আমি রাকসু নির্বাচন নিয়ে খুবই সিরিয়াস।’
আরও পড়ুনএবার উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের১ ঘণ্টা আগে