শ্রমক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি রোধে আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুমোদনের আহ্বান
Published: 7th, May 2025 GMT
শ্রমক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি রোধে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন ১৯০ অনুমোদনের জন্য সরকারের প্রতি জরুরি আহ্বান জানানো হয়েছে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ এক জাতীয় ত্রিপাক্ষিক সংলাপে। গতকাল মঙ্গলবার (৬ মে) ঢাকায় এ সংলাপ হয়।
সংলাপে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, নিয়োগকর্তা প্রতিনিধিগণ, সিভিল সোসাইটি এবং উন্নয়ন সহযোগীরা অংশ নেন। সংলাপের আয়োজন করে ট্রেড ইউনিয়ন ইন্টারন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন।
সংলাপে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেছেন, বিশ্বব্যাপী যৌন হয়রানির বহু ঘটনা রিপোর্টই হয় না। তাই, আমাদের জাতীয় ও শ্রম আইনের মধ্যে সমন্বয় রেখে কর্মীদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান সরকার এ বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুমোদন কোনো জটিল প্রক্রিয়া নয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আ হ ম শফিকুজ্জামান বলেন, ২০০৯ সালে হাইকোর্ট রায় দিলেও আজও আমরা আইন প্রণয়নের অপেক্ষায়। আমরা এখন আইএলও কনভেনশন ১৫৫, ১৮৭ ও ১৯০ অনুমোদনের লক্ষ্যে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং সব কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজ করার উদ্যোগ নিচ্ছি।
আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুতিয়ানিন বলেন, কনভেনশন ১৯০ অনুমোদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ শুধু শ্রমিক সুরক্ষায় অগ্রগতি প্রদর্শন করবে না, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দায়িত্বশীল বিনিয়োগ এবং টেকসইতার প্রতীক হয়ে উঠবে।
সংলাপে তুলে ধরা হয়, কীভাবে নারী কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হয়রানি এখনো একটি গুরুতর সমস্যা এবং তা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বিস্তৃত আইনি কাঠামোর প্রয়োজন।
টিইউ আইএলএস কমিটির আহ্বায়ক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, এ সংলাপ সময়োপযোগী। আমরা বিশ্বাস করি, এটি সম্মিলিত পদক্ষেপ, যা সকল কর্মীর জন্য নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
প্যানেল আলোচনায় সি ১৯০ অনুমোদনের পথে জাতীয় আইন ও কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, কর্মী ও নিয়োগকর্তা সংগঠনগুলোর ভূমিকা এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরির কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।
সংলাপ শেষে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুমোদনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি এবং আইনগত সমন্বয়ের ওপর জোর দেওয়ার বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেন।
ঢাকা/হাসান/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ জাস্ট ট্রানজিশন একাডেমির যাত্রা
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), লউডস ফাউন্ডেশন এবং থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন (টিআরএফ) সম্মিলিতভাবে মঙ্গলবার (৬ মে) বাংলাদেশ জাস্ট ট্রানজিশন একাডেমির আয়োজন করে।
বাংলাদেশ জাস্ট ট্রানজিশন একাডেমি একটি দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। ৬ মে এবং ৭ মে ঢাকায় এই একাডেমি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এতে দেশের প্রধান স্টেকহোল্ডাররা অংশগ্রহণ করে পরিবেশগতভাবে টেকসই ও সহনশীল অর্থনীতি ও সমাজের জন্য জাস্ট ট্রানজিশনের অর্থ কী তা উপলব্ধি ও উন্নত করার লক্ষ্যে আলোচনা করবেন।
একাডেমিতে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে প্যানেল আলোচনা, যুব জলবায়ু উদ্যোক্তাদের উপস্থাপনা, ইন্টারেক্টিভ ব্রেকআউট সেশনসহ নানা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে এবং সরকারের, নিয়োগকর্তা ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে যৌথভাবে জাস্ট ট্রানজিশনের লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বানে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকায় একাডেমি উদ্বোধনকালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “বাংলাদেশ অর্থনীতি ও সমাজ টেকসইতার দিকে এগিয়ে নিতে সরকারের ভিশন ও হস্তক্ষেপে জাস্ট ট্রানজিশনের মূল্যবোধ প্রতিফলিত করা উচিত। এই পরিবর্তন আমাদের শ্রমিক, মাটি ও বাতাসের রক্ষা করবে এবং আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবে।”
আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিআইনেন বলেন, “আইএলওর জাস্ট ট্রান্সিশন ফ্রেমওয়ার্ক শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের কথা নয়, বরং তাদের জীবনের প্রভাবিত করে এমন বিষয়গুলিতে তাদের ক্ষমতায়ন ও কণ্ঠস্বর দেওয়ার লক্ষ্যে কমিউনিটিকে অন্তর্ভুক্ত করে।”
সুইডেন দূতাবাসের হেড অব ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন মারিয়া স্ট্রিডসম্যান নীতিনির্ধারণে খণ্ডখণ্ড পদ্ধতি এড়ানো এবং নারীদের ও অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের নীতিনির্ধারণ সংলাপ ও প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান, যাতে তারা ন্যায়সঙ্গত পরিবর্তনের সুফল পায়।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বাংলাদেশের প্রতিনিধি জিয়াওকুন শি বলেন, “জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারকে জলবায়ু অর্থায়নের অংশীদারিত্ব এবং সুবিধা গ্রহণে সহায়তা করছে। যার মধ্যে রয়েছে সবুজ জলবায়ু তহবিল এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অভিযোজন এবং স্থিতিস্থাপকতার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা।”
উদ্বোধনী সেশনে আরো উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশনের (এনসিসিডব্লিউই) চেয়ারম্যান বাদল খান এবং বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি আরদাশির কবির। তারা দেশে জাস্ট ট্রানজিশনে শ্রমিক, কমিউনিটি এবং নিয়োগকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেন।
লউডস ফাউন্ডেশনের ঢাকার প্রধান নওরিন চৌধুরী আইএলওর জাস্ট ট্রানজিশন অ্যাকশন প্রোগ্রাম, এফএও, বাংলাদেশি শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং ইউনিলিভার ইএসজি বিশেষজ্ঞের সহযোগিতায় বাংলাদেশের জন্য ন্যায়সঙ্গত রূপান্তরের অর্থ কী তা নির্ধারণের ওপর প্রথম প্যানেল আলোচনাটি পরিচালনা করেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, সুইডেনসহ টিম ইউরোপ ইনিশিয়েটিভ এবং গ্লোবাল অ্যাফেয়ারস কানাডাও এই অনুষ্ঠানে সহায়তা করছে।
আইএলও-এর সামাজিক অংশীদার, সরকারের মন্ত্রণালয়, লাইন ডিপার্টমেন্ট, কর্পোরেট ও ব্যবসায়িক সংস্থা, শ্রমিক, যুব সংগঠন ও অর্থায়ন অংশীদাররা এই একাডেমিতে অংশগ্রহণ করে।
ঢাকা/হাসান/সাইফ