শ্রমক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি রোধে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন ১৯০ অনুমোদনের জন্য সরকারের প্রতি জরুরি আহ্বান জানানো হয়েছে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ এক জাতীয় ত্রিপাক্ষিক সংলাপে। গতকাল মঙ্গলবার (৬ মে) ঢাকায় এ সংলাপ হয়।

সংলাপে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, নিয়োগকর্তা প্রতিনিধিগণ, সিভিল সোসাইটি এবং উন্নয়ন সহযোগীরা অংশ নেন। সংলাপের আয়োজন করে ট্রেড ইউনিয়ন ইন্টারন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন।

সংলাপে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেছেন, বিশ্বব্যাপী যৌন হয়রানির বহু ঘটনা রিপোর্টই হয় না। তাই, আমাদের জাতীয় ও শ্রম আইনের মধ্যে সমন্বয় রেখে কর্মীদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান সরকার এ বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুমোদন কোনো জটিল প্রক্রিয়া নয়।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আ হ ম শফিকুজ্জামান বলেন, ২০০৯ সালে হাইকোর্ট রায় দিলেও আজও আমরা আইন প্রণয়নের অপেক্ষায়। আমরা এখন আইএলও কনভেনশন ১৫৫, ১৮৭ ও ১৯০ অনুমোদনের লক্ষ্যে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং সব কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজ করার উদ্যোগ নিচ্ছি।

আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুতিয়ানিন বলেন, কনভেনশন ১৯০ অনুমোদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ শুধু শ্রমিক সুরক্ষায় অগ্রগতি প্রদর্শন করবে না, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দায়িত্বশীল বিনিয়োগ এবং টেকসইতার প্রতীক হয়ে উঠবে।

সংলাপে তুলে ধরা হয়, কীভাবে নারী কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হয়রানি এখনো একটি গুরুতর সমস্যা এবং তা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বিস্তৃত আইনি কাঠামোর প্রয়োজন।

টিইউ আইএলএস কমিটির আহ্বায়ক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, এ সংলাপ সময়োপযোগী। আমরা বিশ্বাস করি, এটি সম্মিলিত পদক্ষেপ, যা সকল কর্মীর জন্য নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

প্যানেল আলোচনায় সি ১৯০ অনুমোদনের পথে জাতীয় আইন ও কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, কর্মী ও নিয়োগকর্তা সংগঠনগুলোর ভূমিকা এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরির কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।

সংলাপ শেষে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুমোদনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি এবং আইনগত সমন্বয়ের ওপর জোর দেওয়ার বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেন।

ঢাকা/হাসান/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

২৮ জুন থেকে কর-ভ্যাট-কাস্টমসে ‘কমপ্লিট শার্টডাউন’

রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক কমিটি বাতিল ও চেয়ারম্যানের অপসারণসহ কয়েকটি দাবি আদায়ে আগামী ২৮ জুন থেকে সারাদেশের সব কর অঞ্চল, ভ্যাট কমিশনারেট ও কাস্টম হাউসে লাগাতার ‘কমপ্লিট শার্টডাউন’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনরত কর্মীদের প্ল্যাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

আজ সোমবার দুপুরে আগারগাঁও এনবিআর ভবনের নিচে সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা।

লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, আগামী ২৭ জুনের মধ্যে প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক সব বদলি আদেশ বাতিল করতে হবে। এছাড়া রাজস্ব ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করা হলে আগামী ২৮ জুন থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন চলবে।

পরিষদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকায় এনবিআরের সব দপ্তরের সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এদিন রাজস্ব ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় অনেককে কাফনের কাপড় পরে এ কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে।

এদিকে আন্দোলনের মধ্যে গতকাল আয়কর অনুবিভাগের পাঁচ কর্মকর্তাকে ‘তাৎক্ষণিক বদলি’ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এই বদলি আদেশকে ‘প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক’ পদক্ষেপ আখ্যা দিয়ে ঐক্য পরিষদ বলেছে, সব বদলি আদেশ আজকের (সোমবার) মধ্যে বাতিল না করা হলে আগামী মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকাস্থ কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি পালন করবে। এছাড়া ঢাকার বাইরে স্ব-স্ব দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি, কলম বিরতি এবং ‘চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি’ ঘৃণা প্রকাশ চলবে।

পাশাপাশি এ ধরনের নতুন কোনো বদলি আদেশ জারি করা হলে আগামী ২৫ ও ২৬ জুন দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে কলম বিরতি, অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের নেতারা বলেন, ২৭ জুনের মধ্যে এসব বদলি আদেশ বাতিল না হলে, এর মধ্যে চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা না হলে ২৮ জুন শনিবার থেকে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়করের সব দপ্তরে ‘লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন’ চলবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

লিখিত বক্তব্যে পরিষদের নেতারা বলেন, চেয়ারম্যান সম্প্রতি বদলি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে কর বিভাগের সিনিয়র কমিশনারকে প্রতিহিংসামূলকভাবে নিপীড়নমূলক বদলি করেছেন। আবার সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য স্পর্শকাতর দপ্তরে প্রশ্নবিদ্ধ এক কর্মকর্তাকে কর কমিশনারের দায়িত্ব দিয়েছেন।

এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এর প্রতিবাদে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে এ দাবির চেয়ে এখন মূল দাবি হয়ে উঠেছে চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ