চট্টগ্রামে ছয় সিবিএ নেতার জামিন শুনানিতে হট্টগোল, বিব্রত বিচারক
Published: 8th, May 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ঘটনায় করা মামলায় মেঘনা পেট্রোলিয়াম শ্রমিক ইউনিয়নের (সিবিএ) ছয় নেতার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালতে হট্টগোল হয়েছে। একপর্যায়ে বিব্রত হয়ে বিচারক এজলাস থেকে নেমে যান। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ ঘটনা ঘটেছে।
তবে শুনানি শেষে ছয় সিবিএ নেতার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন আদালত। তাঁরা হলেন মেঘনা পেট্রোলিয়াম সিবিএ সভাপতি মো.
আদালত সূত্র জানায়, গত জুলাই-আগস্টে নগরের সিটি কলেজ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের একদল নেতা-কর্মী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান। এ ঘটনায় মাশফিকুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বাদী হয়ে মোট আটজনকে আসামি করে নগরের সদরঘাট থানায় মামলা করেন। এর মধ্যে সিবিএর ছয় নেতা রয়েছেন। তাঁরা ছয়জন এই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। মেয়াদ শেষ হওয়ায় আত্মসমর্পণ করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতে।
শুনানিতে বাদীপক্ষের আইনজীবী সিবিএ সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমানকে বিএনপির নেতা দাবি করে মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হয়েছে দাবি করেন। বাকিরাও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় শুনানিতে। ওই সময় বেশ কিছুসংখ্যক আইনজীবী এর বিরোধিতা করে বলেন, আসামিরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সঙ্গে স্বৈরাচারের দোসরদের সঙ্গে ছবি, ভিডিও রয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মফিজুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালতে হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে বিচারক বিব্রত হয়ে এজলাস থেকে নেমে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আদালতের ভেতর ও বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আসামিদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুই আসামিকে খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি পেল রাষ্ট্রপক্ষ
চট্টগ্রামে কুকুর লেলিয়ে হিমাদ্রী মজুমদার নামের এক ছাত্রকে হত্যার মামলায় দুই আসামিকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি পেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ রোববার এ আদেশ দেন। দুজন হলেন শাহাদাত হোসাইন ওরফে সাজু ও শাহ সেলিম ওরফে টিপু।
হিমাদ্রী মাদকবিরোধী সংগঠন শিকড়ের সদস্য ছিলেন। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, এলাকায় মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় কুকুর লেলিয়ে ছাদ থেকে ফেলে তাঁকে হত্যা করা হয়।
ওই মামলায় ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল ও অপর দুই আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। তিন আসামি হলেন জুনায়েদ আহম্মদ ওরফে রিয়াদ, জাহিদুল ইসলাম ওরফে শাওন ও মাহবুব আলী খান ওরফে ড্যানি। খালাস পাওয়া দুজন হলেন শাহাদাত হোসাইন ওরফে সাজু ও শাহ সেলিম ওরফে টিপু। এই দুজনকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করে।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্যাহ আল মাহমুদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাদাত মো. সায়েম ভূঞা। শাহ সেলিমের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী শুনানিতে ছিলেন।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। জামিন আবেদন করা হয়েছিল। আপিলের সঙ্গে জামিন আবেদন শুনানি হবে বলেছেন আদালত।
খালাসপ্রাপ্ত দুই আসামি কারাগারে আছেন জানিয়ে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সায়েম ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, দুজনকে খালাসের রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত রায় স্থগিত করেন। এ স্থগিতাদেশ চলমান।
২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের একটি ভবনের পাঁচতলার ছাদে নিয়ে হিমাদ্রীকে মারধরের পর তাঁর ওপর কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাঁকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। ওই বছরের ২৩ মে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান পাঁচলাইশের সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের ‘এ’ লেভেলের শিক্ষার্থী হিমাদ্রী।
এ ঘটনায় হিমাদ্রীর মামা অসিত কুমার দে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালত পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট চট্টগ্রামের আদালত রায় দেন। বিচারিক আদালতের রায়ে পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র ওই বছরই হাইকোর্টে আসে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। কারাগারে থাকা তিন আসামি পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর হাইকোর্ট তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল এবং দুজনকে খালাস দিয়ে রায় দেন।