বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ঘটনায় করা মামলায় মেঘনা পেট্রোলিয়াম শ্রমিক ইউনিয়নের (সিবিএ) ছয় নেতার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালতে হট্টগোল হয়েছে। একপর্যায়ে বিব্রত হয়ে বিচারক এজলাস থেকে নেমে যান। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ ঘটনা ঘটেছে।

তবে শুনানি শেষে ছয় সিবিএ নেতার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন আদালত। তাঁরা হলেন মেঘনা পেট্রোলিয়াম সিবিএ সভাপতি মো.

আইয়ুব, সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমান, সহসাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন, অর্থ সম্পাদক ইউসুফ আলী, দপ্তর সম্পাদক রনি কর ও সদস্য রাজীব ধর।

আদালত সূত্র জানায়, গত জুলাই-আগস্টে নগরের সিটি কলেজ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের একদল নেতা-কর্মী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান। এ ঘটনায় মাশফিকুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বাদী হয়ে মোট আটজনকে আসামি করে নগরের সদরঘাট থানায় মামলা করেন। এর মধ্যে সিবিএর ছয় নেতা রয়েছেন। তাঁরা ছয়জন এই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। মেয়াদ শেষ হওয়ায় আত্মসমর্পণ করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতে।

শুনানিতে বাদীপক্ষের আইনজীবী সিবিএ সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমানকে বিএনপির নেতা দাবি করে মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হয়েছে দাবি করেন। বাকিরাও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় শুনানিতে। ওই সময় বেশ কিছুসংখ্যক আইনজীবী এর বিরোধিতা করে বলেন, আসামিরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সঙ্গে স্বৈরাচারের দোসরদের সঙ্গে ছবি, ভিডিও রয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মফিজুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালতে হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে বিচারক বিব্রত হয়ে এজলাস থেকে নেমে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আদালতের ভেতর ও বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আসামিদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় সাবেক বিএনপি নেতাকে আইনজীবী হত্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কুমিল্লার আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ। এ হত্যা মামলায় ইসতিয়াক সরকার ওরফে বিপু নামের এক বিএনপি নেতাকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর ভাই কুমিল্লা মহানগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ইমতিয়াজ সরকার ওরফে নিপু।

ইসতিয়াক সরকারের পরিবারের দাবি, সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে লড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। সে কারণে দলের আরেকটি পক্ষ এক আসামির জবানবন্দির মাধ্যমে তাঁকে ওই আইনজীবী হত্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।

আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসতিয়াককে হত্যার মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ করেন কুমিল্লা মহানগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও ইসতিয়াকের বড় ভাই ইমতিয়াজ সরকার ওরফে নিপু।

ইসতিয়াক সরকার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ও মহানগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক।

সংবাদ সম্মেলনে ইমতিয়াজ সরকার দাবি করেন, ইসতিয়াক সরকার দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। কিছুদিন আগে তিনি মহানগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক হওয়ার পর সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে লড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা এবং বিএনপির ভেতরের বিরোধী মহল ষড়যন্ত্র শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে আইনজীবী হত্যাকাণ্ডে তাঁকে জড়ানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওই দিন বিকেলে নগরের প্রতিটি সড়কে বিজয় মিছিলের পাশাপাশি নানা সহিংসতা চলে। সেদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কুমিল্লার আদালতে হামলার খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান আইনজীবী ফোরাম কুমিল্লা শাখার যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। পরে তাঁরা মাগরিবের নামাজের জন্য নগরের মোগলটুলী এলাকায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা তাঁদের ওপর হামলা ও গুলি করে। এ ঘটনায় আবুল কালাম আজাদ কোমরে গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে সংকটাপন্ন অবস্থায় ওই রাতেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাঁকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ আগস্ট বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় হওয়া মামলায় ইসতিয়াক সরকারের নাম নেই। তবে প্রায় সাত মাস আগে অনিক নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ওই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে ইসতিয়াক সরকারের নাম উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইমতিয়াজ বলেন, ওই আইনজীবী হত্যাকাণ্ডের দিন দুপুরে ইসতিয়াক বিজয় মিছিল নিয়ে পূবালী চত্বরে যান এবং বিকেলে পুলিশের অনুরোধে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় উপস্থিত হয়ে সেখানেই অবস্থান করেন। থানার সিসিটিভি ফুটেজ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিওতে বিষয়টি প্রমাণিত হলেও অনিক নামের এক আসামির জবানবন্দির মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর নাম মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। দলের আরেকটি পক্ষ তাঁর ভাইকে এ মামলায় জড়িয়েছে যেন তিনি নির্বাচন করতে না পারেন। এ ছাড়া ওই হত্যা মামলার বাদীও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিওতে জানিয়েছেন যে তিনি ইসতিয়াক সরকার নামের কাউকে চেনেন না।

আইনজীবী হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে ইমতিয়াজ সরকার বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হয়রানির অবসান চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কবির হোসেনসহ স্থানীয় ও মহানগর বিএনপির নেতা–কর্মীরা।

আজ বিকেলে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এতে মোট ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ তদন্তে যা পেয়েছে, সেটাই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে। ওই ৩৫ জনের মধ্যে ইসতিয়াক সরকারের নাম রয়েছে। এখন বাকিটা বিজ্ঞ আদালতের বিষয়। আমাদের হাতে এখন আর কিছু নেই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুলিশের অভ্যন্তরীণ তত্ত্বাবধান ও জবাবদিহি ভেঙে পড়েছিল: হাইকোর্ট
  • ক্ষমতা নয়, জনগণের ভোট ফেরত দেওয়ার জন্য নির্বাচনের কথা বলছি: টুকু
  • শেরপুর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন স্থগিত 
  • দেশ যাতে গণতান্ত্রিক অবস্থায় ফিরে আসতে না পারে, সে জন্য ষড়যন্ত্র চলছে: তারেক রহমান
  • লাশ নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
  • কুমিল্লায় সাবেক বিএনপি নেতাকে আইনজীবী হত্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
  • দুজনকে পিটিয়ে হত্যা : ‘এ্যালা মুই কেমন করি বাঁচিম, কার কাছোত বিচার চাইম’
  • অটোরিকশা বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্ব, স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ
  • ‘সব ভুলে তারেক রহমানের হাত শক্তিশালী করতে হবে’  
  • জিএম কাদেরের নেতৃত্বেই জাতীয় পার্টি: শামীম হায়দার পাটোয়ারী