সিসিটিভিতে দেখা যাওয়া ব্যক্তিকে খুঁজছে পুলিশ
Published: 10th, May 2025 GMT
রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় দুই বোনকে হত্যার ঘটনায় বাড়ির ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় (সিসিটিভি) দেখা যাওয়া অপরিচিত এক ব্যক্তিকে খুঁজছে পুলিশ। তাঁদের ধারণা, ওই ব্যক্তিই দুই বোনকে হত্যা করে থাকতে পারেন। এ ছাড়া পুলিশ বাড়ি থেকে আজ শনিবার কিছু আলামত জব্দ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীকে।
গতকাল শুক্রবার পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ওই বাড়ির দোতলার একটি ফ্ল্যাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাবেক কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম (৬০) ও তাঁর ছোট বোন সুফিয়া বেগমকে (৫২) ছুরিকাঘাত ও শিল–নোড়ার আঘাতে হত্যা করা হয়। রাত ১১টার দিকে পুলিশ তাঁদের লাশ উদ্ধার করে।
দুই বোন খুনের রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে। এতে দেখা যায়, শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে নীল রঙের জিনস প্যান্ট ও গাঢ় নীল রঙের শার্ট পরা এক ব্যক্তি বাড়িটির দোতলায় ওঠেন। তাঁর মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক আর মাথায় ছিল কমলা রঙের ক্যাপ। পরনের কাপড় পাল্টে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ওই ব্যক্তি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
ওই বাড়িতে মরিয়ম বেগম, তাঁর স্বামী কাজী আলাউদ্দিন ও মেয়ে নুসরাত জাহান এবং মরিয়মের ছোট বোন সুফিয়া বেগম থাকতেন। ঘটনার সময় কাজী আলাউদ্দিন বরিশালে গ্রামের বাড়িতে আর নুসরাত অফিসে ছিলেন।
আজ দুপুরে পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নুসরাত জাহানকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনেরা। নুসরাত মিরপুর ১১ নম্বরে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে তিনি নিজ কর্মস্থলে যান। রাত পৌনে ৯টার দিকে বাসায় ফিরে কলিংবেল বাজালে ভেতর থেকে কোনো শব্দ পাননি। পরে বিকল্প চাবি দিয়ে তালা খুলে বাসায় ঢুকে মাকে ডাইনিং রুমে আর খালাকে শোয়ার ঘরে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান।
নুসরাত বলেন, তাঁর মায়ের মাথায় ও পেটে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাত হয়। খালার মাথা শিল–নোড়ার আঘাতে থেঁতলানো ছিল। ঘটনাস্থলে পড়ে ছিল রক্তমাখা চাকু ও শিল–নোড়া। তিনি প্রতিবেশীদের অ্যাম্বুলেন্স আনার অনুরোধ করেন। এরই মধ্যে বাসায় পুলিশ আসে। খাবারের টেবিলের ওপর একটি মগে শরবত বানানো এবং পাশে তিনটি গ্লাস ছিল বলেও জানান তিনি।
নুসরাত বলেন, জানামতে তাঁর মা-বাবার সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ বা শত্রুতা ছিল না। তাঁর মা ঢাকায় বিআইডব্লিউটিএর প্রধান কার্যালয়ে সহকারী সমন্বয় কর্মকর্তা ছিলেন। এক বছরের বেশি সময় আগে তিনি অবসরে যান। তাঁদের বাসা থেকে টাকা বা মালামাল কোনো কিছু খোয়া যায়নি। তাঁর মা ও খালার গায়ে সোনার গয়নাও খোয়া যায়নি। এখন জমিজমা নিয়ে কোনো বিরোধ ছিল কি না, সেটা তাঁর বাবা ভালো বলতে পারবেন।
২০ বছর ধরে তাঁরা এই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকেন বলে জানান নুসরাত। তিনি বলেন, তাঁর মা খুবই সতর্ক ছিলেন। অপরিচিত কোনো লোককে তিনি বাসায় ঢুকতে দিতেন না। ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী বেশির ভাগ সময়ই ফটকে থাকতেন না। ভাড়াটেরা তালা খুলে আবার লাগিয়ে দিতেন। কোনো কারণে বাড়ির প্রধান ফটক খোলা থাকলে, যে কেউ ঢুকে পড়তে পারে।
পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা মাজেদুল ইসলামও একই কথা জানান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে বাড়ির মালিককে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি তাঁরা। পাশের বাসায় দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, কিন্তু কোনো শব্দ পাননি।
ঘটনার সময় মরিয়মের স্বামী বন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী আলাউদ্দিন বরিশালের দেহেরগতিতে গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা বা জমিজমা নিয়েও কোনো বিরোধ ছিল না। তিনি স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকাকে সুস্থ রেখে গ্রামের বাড়িতে যান। আলমারির ড্রয়ারের কাগজপত্র এলোমেলো ছিল বলে তিনি শুনেছেন। সেগুলো কী ধরনের কাগজপত্র, তা দেখার পর বুঝতে পারবেন।
মরিয়ম ও সুফিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে হিমঘরে রাখা হয়েছে। কাজী আলাউদ্দিন বলেন, তাঁর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে ইশরাত জাহান যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। সে এলেই তার মা–খালাকে বরিশালে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে।
আজ দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ওই বাসা থেকে কিছু আলামত জব্দ করে নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। মিরপুর থানার ওসি সাজ্জাদ রোমন বলেন, বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হলেও তাঁকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। হত্যার তদন্ত চলছে।
দুপুরে এই প্রতিবেদক ওই বাড়িতে ঢোকার সময় প্রধান ফটকটি খোলা পান। জানতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী বলেন, পুরো বাড়ি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব তাঁর ওপর। এ কারণে তিনি সব সময় প্রধান ফটকে থাকেন না। এ ছাড়া পাশে তাঁর পানের দোকান আছে, সেখানেও বসেন।
আরও পড়ুনরাজধানীর শেওড়াপাড়ায় দুই বোনকে হত্যা২১ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক কর মকর ত ব দ কর ওই ব ড় র ওই ব র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
উত্তাল সাগরে ফেরি ও জাহাজ বন্ধ, ঝুঁকি নিয়ে চলছে স্পিডবোট
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড–সন্দ্বীপ নৌপথে সাগর উত্তাল থাকায় আজ শুক্রবার ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঝুঁকি নিয়েই চলছে স্পিডবোট।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ সতর্কতা জারি থাকলে সন্দ্বীপ চ্যানেলে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানায়, প্রতিবছর ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত এই নৌপথে স্পিডবোট চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে। তবে এসব নির্দেশনা উপেক্ষা করেই চলছে স্পিডবোট। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ১৬ জুনও উত্তাল সাগরে একটি স্পিডবোট দুর্ঘটনায় পড়ে।
আজ বিকেল সোয়া চারটার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বোয়ালিয়াকুল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ফেরিঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে দুটি স্পিডবোট কুমিরার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। তবে সাগর ছিল প্রচণ্ড উত্তাল। মাঝপথে স্পিডবোট দুটি সরাসরি কুমিরা ঘাটে না গিয়ে বাঁশবাড়িয়া এলাকায় এসে পৌঁছায়। পরে উপকূল ধরে কুমিরা ঘাটের দিকে যেতে দেখা যায়।
স্থানীয় জেলেরা জানান, সাগরের ঢেউ এতটাই প্রবল ছিল যে স্পিডবোট দুটি গতিপথ হারিয়ে কুমিরার বদলে বাঁশবাড়িয়ায় এসে পড়ে। তবে স্পিডবোটগুলোর মালিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, সতর্কতা সংকেত থাকাকালে স্পিডবোট, ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সন্দ্বীপ চ্যানেলে স্পিডবোট চলাচলে মৌসুমি নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) উপমহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর নূর তুষার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবহাওয়া অফিস ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করলে আমরা ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজ চালাই না। আজও সব ধরনের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।’
বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘ঘাটে আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা রয়েছেন। নির্দেশনা অমান্য করে যাঁরা স্পিডবোট চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’