শর্ত মেনেই আইএমএফের ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ
Published: 14th, May 2025 GMT
মার্কিন ডলারের বিনিময় হারে আরও নমনীয়তা আসছে। এতে আরও বাড়তে পারে ডলারের দাম। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত মেনে বিনিময় হার নমনীয় করতে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের শর্ত মেনে নেওয়ায় আন্তর্জাতিক সংস্থাটি তার চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে দুই কিস্তির অর্থ ছাড় করতে যাচ্ছে। সংস্থাটি ২ কিস্তিতে বাংলাদেশকে ১৩০ কোটি ডলার দেবে। আগামী জুনের মধ্যেই এ অর্থ বাংলাদেশে আসবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। তা থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৩টি কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এ ঋণের বাকি আছে আরও ২৩৯ কোটি ডলার। শর্ত পূরণ না হওয়ায় চতুর্থ কিস্তির ক্ষেত্রে এসে আটকে যায় অর্থছাড়। শুরুতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে আগামী জুন মাসে দুই কিস্তি একসঙ্গে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু একপর্যায়ে তাতেও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
মূলত আইএমএফের সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার নিয়ে প্রায় এক মাস ধরে দর-কষাকষি চলে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির পর্যালোচনা করতে গত ৬ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত আইএমএফের একটি মিশন ঢাকা ঘুরে যায়। তাতেও কোনো সমঝোতা হয়নি। আলোচনা গড়ায় আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠক পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল ওই বৈঠক হয়। কিন্তু সেখানেও কোনো সমঝোতা হয়নি। এরপরই বাংলাদেশ ও আইএমএফ ৫ ও ৬ মে দুই দিন ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে বৈঠক করে। তাতেও কোনো সমঝোতা হয়নি। এর মধ্যে আইএমএফের ঋণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে শর্ত মানতে রাজি হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফও কিছুটা ছাড় দেয়। এতেই খুলেছে কিস্তির অর্থছাড়ের পথ। এর পাশাপাশি রাজস্ব আদায় বাড়ানোর শর্তও ছিল। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বড় ধরনের সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ঋণের কিস্তির ডলারের থেকে বড় প্রয়োজন আর্থিক খাতের সংস্কার কার্যক্রম চলমান রাখা। ঋণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে সংস্কার চলমান রাখা যাবে। দেশের অর্থনীতি সঠিক পথে নিতে এ জন্য আইএমএফের ঋণ দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজ বুধবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই থেকে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলন করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইএমএফের ঋণছাড়ের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি আইএমএফের পক্ষ থেকেও শিগগিরই কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে বিবৃতি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
আইএমএফ চেয়েছিল প্রতি ডলারের বিপরীতে বর্তমানে ১১৯ টাকা দামের সঙ্গে ১০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়া ও কমার সুযোগ থাকবে। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৪-৫ শতাংশ বাড়া ও কমার সুযোগ দিতে রাজি হয়েছে। এর ফলে ডলারের দাম ১২৫ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে।বিনিময় হার আরও নমনীয় হচ্ছেঋণ কর্মসূচির শুরুতে নানা শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা। তখন বাংলাদেশের পক্ষে বলা হয়, বাংলাদেশের বাজার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের উপযোগী নয়। পরে সংস্থাটি বিনিময় হার আরও নমনীয় করার শর্ত দেয়। এবার কতটা নমনীয় করা হবে, তা নিয়ে বাংলাদেশ ও আইএমএফের মধ্যে দফায় দফায় সভা হয়। ডলারের দাম এখন যে পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হচ্ছে, ভবিষ্যতেও সেভাবেই হবে। তবে বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভর করে মূল্য আরও হ্রাস-বৃদ্ধির সুযোগ থাকবে।
টাকা-ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে যে পদ্ধতি অনুসরণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, সেটি ‘ক্রলিং পেগ’ নামে পরিচিত। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতি ডলারের বিপরীতে বর্তমানে ১১৯ টাকা দামের সঙ্গে ২ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়তে ও কমতে পারে। এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ১ টাকা ব্যবধানে ডলার বিক্রি করা যায়। এর ফলে ডলারের দাম এখন সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আইএমএফ চেয়েছিল প্রতি ডলারের বিপরীতে বর্তমানে ১১৯ টাকা দামের সঙ্গে ১০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়া ও কমার সুযোগ থাকবে। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৪-৫ শতাংশ বাড়া ও কমার সুযোগ দিতে রাজি হয়েছে। এর ফলে ডলারের দাম ১২৫ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন আমদানি দায় ও ঋণ পরিশোধের চাপ কমে এসেছে। অন্যদিকে বাড়ছে প্রবাসী আয়। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড হতে পারে। ফলে এ মুহূর্তে বিনিময় হারও নমনীয় করা হলেও খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।
বিনিময় হার আরও নমনীয় করে ঋণের কিস্তি এলে এটা দেশের জন্য ভালো। এর মাধ্যমে আমরা বড় ঝুঁকি কাটালাম।জাহিদ হোসেন, অর্থনীতিবিদ ডলার ও রিজার্ভ দুটোই স্থিতিশীলগত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডলার বাজার ও রিজার্ভ পরিস্থিতি—দুটোই স্থিতিশীল পর্যায়ে পৌঁছেছে। হুন্ডি কমার ফলে অর্থ পাচার কমে এসেছে, এতে বেড়েছে বৈধ পথে প্রবাসী আয়। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ও ভালো আসছে। এর প্রভাব পড়েছে রিজার্ভে। পাশাপাশি সুষম প্রতিযোগী ফেরায় ডলারের বাজার স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাড়ে ১০ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ২৫ বিলিয়ন বা আড়াই হাজার কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে। সেবার প্রবাসীরা পাঠান ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১১ মে সময়কালে আসা রেমিট্যান্সকে এক অর্থবছরের সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়।
অন্যদিকে আন্তদেশীয় বাণিজ্য নিষ্পত্তি সংস্থা এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বকেয়া পরিশোধের পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে রয়েছে। আকুর মাধ্যমে মার্চ-এপ্রিল মাসের জন্য ১৮৮ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে মোট রিজার্ভ রয়েছে ২৫ বিলিয়নের ওপরে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিনিময় হার আরও নমনীয় করে ঋণের কিস্তি এলে এটা দেশের জন্য ভালো। এর মাধ্যমে আমরা বড় ঝুঁকি কাটালাম। কারণ, আইএমএফের ঋণ ঝুলে গেলে অন্য সহযোগী সংস্থার ঋণও আটকে যেত। বিনিময় হার আরও নমনীয় করার এখনই স্বস্তিকর সময়। কারণ, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় ঊর্ধ্বমুখী। আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম ১২ শতাংশ কমার পূর্বাভাস মিলেছে। তাই এখনকার চেয়ে উত্তম সময় আর না–ও মিলতে পারে।’
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারভিত্তিক কোনো দেশ করে না। তবে বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও একই প্রক্রিয়ায় ডলারের দাম নির্ধারণ করতে হবে। ভয় না দেখিয়ে ডলার বেচাকেনার মাধ্যমে দামে হস্তক্ষেপ করতে হবে। এটাই বৈশ্বিক চর্চা।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইএমএফ র ঋণ ও কম র স য গ প রব স র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যাংকব্যবস্থা থেকে কম ঋণ নেবে সরকার
বাজেট–ঘাটতি মেটাতে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে কম ঋণ নেবে সরকার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রা মোট বাজেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। আগামী অর্থবছরেও তা-ই থাকছে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার হতে পারে। এ বাজেট থেকেই ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আগামী অর্থবছরে আড়াই লাখ কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি উৎস থেকে এ ঋণ নেওয়া হবে। বাজেট প্রণয়নের মূল দায়িত্বে থাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজেট–ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি অর্থবছরেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের আশপাশে রাখা হয়। কখনো ৫ শতাংশের একটু বেশি থাকে বাজেট–ঘাটতি, কখনোবা ৫ শতাংশের কম। তবে আগামী অর্থবছরে বাজেট–ঘাটতি ৪ দশমিক ২ শতাংশ রাখা হতে পারে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এ বাজেট–ঘাটতি পূরণে অবশ্য বেশির ভাগ ঋণই নেওয়া হবে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে।
চলতি অর্থবছরে সরকারের মোট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে নিট বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯০ হাজার ৭০০ কোটি এবং দেশি বা অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে। বাকি ঋণ সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য উৎস থেকে নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের।
ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের বেশি ঋণ নিলে তাতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আবার ব্যাংকঋণের সুদ বাবদও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়, যা মূলত রাজস্ব সংগ্রহের অর্থ। আগামী অর্থবছরে এসব বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।—মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি।চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ২০ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে আগামী অর্থবছরে মোট ঋণের মধ্যে নিট বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা একটু বাড়িয়ে ধরা হচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে দেশি ঋণ। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত জুন শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি টাকায়। ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া গত বছরের জুন শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকায়, চার বছর আগে যার পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে চার বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি বেশি হওয়ার কারণে সুদ পরিশোধ বাবদ বড় অঙ্কের বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে আগামী বাজেটেও। আগামী অর্থবছরে ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এক লাখ টাকা কোটি টাকার বেশি, যার বড় অংশই ব্যয় হবে দেশি ঋণের সুদ পরিশোধে।
জানতে চাইলে সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মূল সমস্যা রাজস্ব আদায়ে। রাজস্ব আদায় বাড়ানো গেলে সরকারকে এত বেশি ঋণ নিতে হতো না। আমার ধারণা, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে আগামী অর্থবছরে সরকার বেশি ঋণ নেবে না; বরং সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি থেকে ভালো অর্থ সংগ্রহ করবে। গত জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বেড়েছে। তাই মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন।’
ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা স্বস্তির কারণবাজেট–ঘাটতি পূরণে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার দুইভাবে ঋণ নেয়। একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে, অন্যটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যায় ব্যাংকগুলোর। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। তাতে ভোগান্তি বাড়ে সাধারণ মানুষের। অর্থনীতিরই সূত্র এটি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী গত এপ্রিলে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য ব্যাংকঋণ অন্যতম কারণ হলেও সরকারের হাতে তেমন বিকল্প নেই। তবে আশার কথা হচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রার পুরো সরকার ঋণ ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেয় না।
উদাহরণস্বরূপ, চলতি অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংশোধিত বাজেট তা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের আট মাসে সরকার ব্যাংক খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার ১৭ শতাংশ ঋণ নিয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের বেশি ঋণ নিলে তাতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আবার ব্যাংকঋণের সুদ বাবদও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়, যা মূলত রাজস্ব সংগ্রহের অর্থ। আগামী অর্থবছরে এসব বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেট যদি ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাখা হয় তাহলে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় তা যথেষ্টই ছোট হচ্ছে। আমাদের মূল নজর দিতে হবে রাজস্ব সংগ্রহে। বিশ্বের সর্বনিম্ন রাজস্ব–জিডিপির হার বলেই অতি জরুরি প্রয়োজন মেটাতে ব্যাংকব্যবস্থার ওপর সরকারকে নির্ভর করতে হচ্ছে। একই কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকার ভালো বরাদ্দ রাখতে পারছে না।