জিম্মিদের উৎসর্গ করে হলেও যুদ্ধে জিততে চান নেতানিয়াহু, বিভক্তি বাড়ছে ইসরায়েলে
Published: 14th, May 2025 GMT
গাজা উপত্যকায় হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের মুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, নাকি সেখানে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর তথাকথিত ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’ চলবে, এ প্রশ্নে দিন দিন বিভক্ত হয়ে পড়ছেন ইসরায়েলের জনগণ। তবে দেশটির সরকার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে গাজায় পূর্ণ বিজয় চাইছে। সে ক্ষেত্রে সরকার দ্বিতীয় বিকল্পটিই বেছে নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। প্রথমে এই বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ঠেকাতে না পারায় চাপের মুখে পড়েন নেতানিয়াহু। এরপর দীর্ঘ ১৯ মাস ধরে চলা যুদ্ধের অবসান না ঘটাতে পারা বা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা কেমন হবে, তার রূপরেখা তুলে ধরতে না পারার চাপে আছেন তিনি।
গত মার্চে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একতরফাভাবে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি বাতিল করেন। চুক্তি অব্যাহত থাকলে গাজা থেকে জিম্মিদের মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। যুদ্ধবিরতি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তটি যেন ইসরায়েলি সমাজের অভ্যন্তরীণ বিভক্তি আরও প্রকট করে তুলেছে। কারণ, সরকারবিরোধীরা বুঝে গেছেন, গাজা থেকে জিম্মিদের জীবিত ফেরার সম্ভাবনা দিন দিন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একাধিক ইউনিট থেকে সরকারের উদ্দেশে একের পর এক খোলাচিঠি লেখা হয়েছে। এগুলোতে সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
ইসরায়েলের সাধারণ জনগণের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা গেছে। মে মাসের শুরুর দিকে হাজার হাজার ইসরায়েলি নাগরিক তেল আবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। গাজায় সামরিক অভিযান জোরদার করতে ৬০ হাজার অতিরিক্ত রিজার্ভ সেনা (আপৎকালের জন্য মজুত সেনা) মোতায়েনে নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এ বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
সমালোচকদের মতে, যুদ্ধ চলমান থাকায় নেতানিয়াহু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা বিতর্ক ও দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে রাখার সুযোগ পাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি জোট সরকারের কট্টর ডানপন্থী দলগুলোর সমর্থনও ধরে রাখতে পারছেন। এই দলগুলো স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, ‘পূর্ণাঙ্গ বিজয়’ অর্জিত না হওয়ার আগপর্যন্ত তারা যুদ্ধের সমাপ্তি মেনে নেবে না। ‘পূর্ণাঙ্গ বিজয়’ অর্জিত না হলে তারা জোট থেকে সরে যাবে ও নেতানিয়াহু সরকারের পতন ঘটাবে।২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ইতিমধ্যে ৫২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের বড় অংশই নারী ও শিশু।
গত এপ্রিলের মাঝামাঝি ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সদস্যরা একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেন। চিঠিতে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে কোনো জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুর জন্য নয়; বরং নেতানিয়াহুর ‘ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থ’ রক্ষার জন্যই এ যুদ্ধ চালানো হচ্ছে।
এই চিঠির পর ইসরায়েলের নৌবাহিনী, সামরিক বাহিনীর অন্যান্য অভিজাত ইউনিট, এমনকি ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্যরাও নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করেন।
নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কোনো দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলে জোট হতে পারে: সারজিস আলম
আগামীর বাংলাদেশ এবং জনগণের স্বার্থ সামনে রেখে যদি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়, তাহলে নির্বাচনী জোট হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এসসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এনসিপির কমিটি গঠন উপলক্ষে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিবের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সারজিস আলম বলেন, ‘যদি তারা (রাজনৈতিক দল) জুলাই সনদ বাস্তবায়নে একমত থাকে, বিচারিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একমত থাকে, যদি তারা বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্টবিরোধী তাদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারে—এ বিষয়গুলোতে যদি আমরা ঐকমত্য হতে পারি, তাহলে জনগণের স্বার্থে অ্যালায়েন্স (নির্বাচনী জোট) হতে পারে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলমান, তবে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
আগামী নির্বাচনে এনসিপি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করছে জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে যদি প্রতিটি ওয়ার্ডে এনসিপির আহ্বায়ক কমিটি থাকে, তাহলে ৩০০ আসনে শক্তিশালী প্রার্থী দিতে পারবেন। কমিটি গঠনের বিষয়ে কাজ চলছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) অংশগ্রহণ করার কোনো অধিকার নেই উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি নেতা সারজিস আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং তাদের যারা দোসর জাতীয় পার্টি, তাদেরও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো অধিকার নেই। এই জাতীয় পার্টির কত বড় সাহস, এই জিএম কাদেররা এবং এঁদের যারা সাঙ্গপাঙ্গ আছে, এরা যে খুনিদের দোসর এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ওই খুনিদের মদদদাতা, তার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়। তারা যখন বলে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না! তাদের জন্মদাতা যে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ যে তাদের পেলেপুষে বড় করেছে, এর প্রমাণ তারা আবার নতুন করে দিচ্ছে। তাদের জাত চেনাচ্ছে। এই খুনিদের আগামীর বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার নেই।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নে সারজিস আলম বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন আমাদের শাপলা প্রতীক দিতে গিয়ে তারা তাদের জায়গা থেকে একটি লম্বা সময় স্বেচ্ছাচারিতা করেছে এবং কোনো আইনগত বাধা না থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে শাপলা না দিয়ে শাপলা কলি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমাদের জায়গা থেকে আহ্বান করব, তারা যদি ওই একই ধরনের আচরণ আগামী দিনে করে, তাহলে তাদের ওপর আস্থার সংকট তৈরি হবে। আমরা চাই, তারা সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে তাদের প্রতিষ্ঠানের স্বাধীন যে সাংবিধানিক অবস্থা, তা যেন বজায় রাখে। তারা যেন পূর্বের মতো কোনো দলীয় নির্বাচন কমিশনে পরিণত না হয়। যদি কারও ভেতর এমন চিন্তা বা চেষ্টা থাকে, তাহলে তাদের পরিণতি তাদের পূর্বসূরিদের মতো হবে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারোয়ার, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকিন আলম প্রমুখ।