গুঞ্জনটা কদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। অবশেষে সেই গুঞ্জনই সত্যি হলো। স্প্যানিশ তরুণ ডিন হাউসেনকে বোর্নমাউথ থেকে ৫ কোটি পাউন্ডে বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮০০ কোটি টাকায় কিনে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে জুভেন্টাস থেকে ১ কোটি ২৮ লাখ পাউন্ডে বোর্নমাউথে আসেন হাউসেন। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটিতে মাত্র এক মৌসুম খেলেই নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন ২০ বছর বয়সী এই সেন্টারব্যাক। সেই পারফরম্যান্সই মূলত তাঁকে নিয়ে এসেছে মাদ্রিদে।

হাউসেনকে দলে টানা নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ডিন হাউসেনকে কেনার ব্যাপারে বোর্নমাউথের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছে রিয়াল মাদ্রিদ। আগামী পাঁচ মৌসুমের জন্য, ১ জুন ২০২৫ থেকে ৩০ জুন ২০৩০ পর্যন্ত সে আমাদের সঙ্গে থাকবে।’

আরও পড়ুনএল ক্লাসিকো: বার্সার বেঞ্চের ধার রিয়ালের চেয়ে বেশি ১০ মে ২০২৫

রিলিজ ক্লজের ৫ কোটি পাউন্ড দিয়েই হাউসেনকে দলে ভেড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বোর্নমাউথও। তবে এই চুক্তি থেকে শুধু বোর্নমাউথ নয়, হাউসেনের সাবেক দুই ক্লাব জুভেন্টাস ও মালাগাও উপকৃত হবে।

রিয়ালের জার্সিতে অভিষেকের জন্য হাউসেনকে অবশ্য আগামী মৌসুম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় ক্লাব বিশ্বকাপেই তাঁকে দেখা যাবে রিয়ালের সাদা জার্সিতে। মায়ামিতে আগামী ১৮ জুন আল হিলালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ–যাত্রা শুরু করবে রিয়াল।

হাউসেনের জন্ম নেদারল্যান্ডসে হলেও ৫ বছর বয়সে তাঁর পরিবার চলে আসে স্পেনে। স্প্যানিশ ক্লাব মালাগার যুব একাডেমিতে ফুটবলের হাতেখড়ি হাউসেনের। বয়সভিত্তিক ফুটবলে শুরুতে নেদারল্যান্ডসের হয়ে খেললেও পরে স্পেনের হয়ে খেলা শুরু করেন হাউসেন। স্পেন জাতীয় দলের হয়ে তাঁর অভিষেক হয় জন্মভূমি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। নেশনস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের সেই লড়াইয়ে জিতে স্পেনকে সেমিতে যেতেও সহায়তা করেন হাউসেন।

আরও পড়ুনবার্সেলোনায় রিয়াল মাদ্রিদ যেভাবে ‘হালি মাদ্রিদ’১২ মে ২০২৫

গত মৌসুমে রক্ষণে ব্যাপকভাবে ভুগেছে রিয়াল। বিশেষ করে এদের মিলিতাও এবং দানি কারভাহালের না থাকা দলটিকে বেশ চাপে রেখেছিল। মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৪ ম্যাচে হারা রিয়াল জিততে পারেনি বড় কোনো ট্রফিও। যে কারণে রক্ষণের শক্তি বাড়াতে আগেভাগেই হাউসেনকে কিনে নেওয়া।

আগ্রাসী মানসিকতার এই ডিফেন্ডার এরিয়েলেও (হাওয়ায়) দুর্দান্ত। পাশাপাশি বল প্লেয়িং ক্ষমতাও দারুণ। নিচ থেকে আক্রমণ তৈরির সময়ও ভূমিকা রাখতে পারেন হাউসেন। এ ছাড়া লং পাসেও যেকোনো প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার সামর্থ্য আছে তাঁর।

তাঁকে কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে রিয়াল ছাড়ার পথে থাকা কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেন, ‘সে দারুণ একজন খেলোয়াড়। দারুণ সম্ভাবনা আছে তার মধ্যে। রিয়াল মাদ্রিদের জন্য এটা খুবই ভালো সাইনিং।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী

আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।

রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।

মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ