রাজস্ব বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখার পরামর্শ টিআইবির
Published: 17th, May 2025 GMT
সরকারের রাজস্ব বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, শুধু অধ্যাদেশ জারি করে বা নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আলাদা বিভাগ সৃষ্টি করে প্রত্যাশিত ফল আসবে না।
আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানিয়েছে টিআইবি। অবিলম্বে অধ্যাদেশটি স্থগিত করে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের পরামর্শ নিয়ে এটিকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। টিআইবি আরও বলেছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজস্বব্যবস্থায় নিয়োজিত লোকবলের নৈতিকতার চর্চা সমুন্নত রাখা, অটোমেশন করা ও প্রত্যক্ষ কর আহরণে উদ্যোগী হওয়া অপরিহার্য।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি জানায়, সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে তড়িঘড়ি করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর মাধ্যমে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনাবিষয়ক দুটি আলাদা বিভাগ তৈরি করেছে সরকার। কিন্তু রাজস্বব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশকে পাশ কাটিয়ে ওই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজস্বব্যবস্থা নির্বাহী বিভাগের করায়ত্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কার স্বার্থে অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে পরামর্শক কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে সেই প্রশ্ন তুলেছে টিআইবি।
টিআইবি বলেছে, যে প্রক্রিয়ায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় নির্বাহী বিভাগ থেকে যে ন্যূনতম স্বাধীনতা ভোগ করার কথা, সেই সুযোগ থাকল না। এনবিআর সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশ পাশ কাটিয়ে তড়িঘড়ি অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। রাজস্বব্যবস্থা সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য সমুন্নত রাখতে অবিলম্বে অধ্যাদেশটিতে উপযুক্ত সংশোধনের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজস্ব খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ একই কাঠামোর মধ্যে থেকে বের করে আনার দাবি বহুদিনের। কারণ, একক কাঠামোর মধ্যে এই দুটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া চলমান থাকায় অনেক সময় স্বার্থের দ্বন্দ্ব, যোগসাজশের দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি রাজস্ব লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রতকর অবস্থায় নিমজ্জিত ছিল। বিভিন্ন অংশীজন, বিশেষজ্ঞসহ সর্বশেষ রাজস্ববিষয়ক পরামর্শক কমিটির প্রস্তাবেও রাজস্বব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের পরামর্শ ছিল। এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তবে রাজস্বব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশগুলোকে পাশ কাটিয়ে অধ্যাদেশ জারির উদ্দেশ্য কী? কার স্বার্থেই-বা অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই সুপারিশগুলো উপেক্ষা করা হলো? রাজস্বব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার নামে যে বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে প্রক্রিয়াটিই স্বচ্ছ কি না, এমন প্রশ্ন ওঠাও অমূলক নয়। তা ছাড়া এই তুঘলকি পরিবর্তনের ফলে এর মূল উদ্দেশ্য রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি কতটুকু বাস্তবায়িত হবে; সেটিও বিশ্লেষণ প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
অধ্যাদেশে রাজস্ব বোর্ডের বিকেন্দ্রীকরণের নামে সরকারের, বিশেষত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক উন্নত চর্চা অনুযায়ী, একটি দেশের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করে স্বতন্ত্র সংস্থা, বোর্ড বা এজেন্সি করা প্রয়োজন। এতে সেটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের আওতামুক্ত থাকে। অথচ এ ক্ষেত্রে পরামর্শক কমিটির মূল সুপারিশ উপেক্ষা করে দেশের রাজস্বব্যবস্থাকে নির্বাহী বিভাগের অধীন দুটি বিভাগে পরিণত করা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের ফলে কর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি, স্বার্থের সংঘাতসহ বিভিন্ন অনিয়মের সুযোগ থাকবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রত্যাশিত রাজস্ব অর্জন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নবগঠিত বিভাগ দুটিকে আইনি সুরক্ষার মাধ্যমে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব বলয়ের বাইরে রাখার কোনো বিকল্প নেই। সরকারের এ সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে চলমান আন্তক্যাডার দ্বন্দ্বে নতুন ইন্ধন জুগিয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও আমরা দেখেছি, আয়কর রিটার্ন দাখিল ও ভ্যাট আদায়-প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে অনলাইন করা যায়নি, হয়রানি ও দুর্নীতি কমেনি, চালান জালিয়াতি নিয়ন্ত্রিত হয়নি, কর ফাঁকি আর অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রিত হয়নি। দেশের কর জিডিপির অনুপাতও বাড়েনি; বরং কমে গেছে এক যুগে। এর মধ্যেই পাবলিক অডিট অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর মাধ্যমে সরকার সিএজির রাজস্ব নিরূপণ নিরীক্ষার এখতিয়ার কেড়ে নিয়ে এ ক্ষেত্রে অনিয়মকে জবাবদিহির বাইরে রাখার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এসবের পেছনেও আমলাতন্ত্রের ভেতরে থাকা সংস্কার প্রতিরোধক স্বার্থান্বেষী মহল রয়েছে। তাদের প্রভাবেই আরও একবার নীতি ও ব্যবস্থাপনাকে পৃথক্করণের নামে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হলো।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইফত খ র জ জ ম ন প রণয়ন ও ব প রক র য় র লক ষ য ট আইব করণ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচন ২৭ নভেম্বর
প্রতিষ্ঠার দুই দশক পর প্রথমবারের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৭ নভেম্বর এই বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
টানা ৩০ ঘণ্টা অনশনে তিন জবি শিক্ষার্থী অসুস্থ
‘নভেম্বরে সম্পূরক বৃত্তির আশ্বাস দিয়েছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যক্রম শুরু হবে। কমিশন পরবর্তী ১১ দিনের মধ্যে তফসিল প্রস্তুত ও ঘোষণা করবে। এছাড়া কমিশন ধাপে ধাপে নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এর মধ্যে থাকবে— জকসু নির্বাচন নীতিমালা ও আচরণবিধি প্রণয়ন; ছাত্র সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে মতবিনিময়; ভোটার তালিকা প্রণয়ন, খসড়া প্রকাশ ও সংশোধন; চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ; মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই ও আপত্তি নিষ্পত্তি; প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ও প্রচারণা কার্যক্রম।
সবশেষে ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ, একই দিনে অফিসিয়াল ফলাফল প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। দীর্ঘ আন্দোলন, দাবি-দাওয়া ও শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে অবশেষে প্রথমবারের মতো জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলো প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংবিধি ও বিধি অনুযায়ী রোডম্যাপের প্রতিটি ধাপ বাস্তবায়িত হবে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী