সরকারের রাজস্ব বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, শুধু অধ্যাদেশ জারি করে বা নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আলাদা বিভাগ সৃষ্টি করে প্রত্যাশিত ফল আসবে না।

আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানিয়েছে টিআইবি। অবিলম্বে অধ্যাদেশটি স্থগিত করে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের পরামর্শ নিয়ে এটিকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। টিআইবি আরও বলেছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজস্বব্যবস্থায় নিয়োজিত লোকবলের নৈতিকতার চর্চা সমুন্নত রাখা, অটোমেশন করা ও প্রত্যক্ষ কর আহরণে উদ্যোগী হওয়া অপরিহার্য।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি জানায়, সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে তড়িঘড়ি করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর মাধ্যমে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনাবিষয়ক দুটি আলাদা বিভাগ তৈরি করেছে সরকার। কিন্তু রাজস্বব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশকে পাশ কাটিয়ে ওই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজস্বব্যবস্থা নির্বাহী বিভাগের করায়ত্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কার স্বার্থে অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে পরামর্শক কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে সেই প্রশ্ন তুলেছে টিআইবি।

টিআইবি বলেছে, যে প্রক্রিয়ায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় নির্বাহী বিভাগ থেকে যে ন্যূনতম স্বাধীনতা ভোগ করার কথা, সেই সুযোগ থাকল না। এনবিআর সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশ পাশ কাটিয়ে তড়িঘড়ি অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। রাজস্বব্যবস্থা সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য সমুন্নত রাখতে অবিলম্বে অধ্যাদেশটিতে উপযুক্ত সংশোধনের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজস্ব খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ একই কাঠামোর মধ্যে থেকে বের করে আনার দাবি বহুদিনের। কারণ, একক কাঠামোর মধ্যে এই দুটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া চলমান থাকায় অনেক সময় স্বার্থের দ্বন্দ্ব, যোগসাজশের দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি রাজস্ব লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রতকর অবস্থায় নিমজ্জিত ছিল। বিভিন্ন অংশীজন, বিশেষজ্ঞসহ সর্বশেষ রাজস্ববিষয়ক পরামর্শক কমিটির প্রস্তাবেও রাজস্বব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের পরামর্শ ছিল। এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি।’

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তবে রাজস্বব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশগুলোকে পাশ কাটিয়ে অধ্যাদেশ জারির উদ্দেশ্য কী? কার স্বার্থেই-বা অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই সুপারিশগুলো উপেক্ষা করা হলো? রাজস্বব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার নামে যে বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে প্রক্রিয়াটিই স্বচ্ছ কি না, এমন প্রশ্ন ওঠাও অমূলক নয়। তা ছাড়া এই তুঘলকি পরিবর্তনের ফলে এর মূল উদ্দেশ্য রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি কতটুকু বাস্তবায়িত হবে; সেটিও বিশ্লেষণ প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

অধ্যাদেশে রাজস্ব বোর্ডের বিকেন্দ্রীকরণের নামে সরকারের, বিশেষত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক উন্নত চর্চা অনুযায়ী, একটি দেশের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করে স্বতন্ত্র সংস্থা, বোর্ড বা এজেন্সি করা প্রয়োজন। এতে সেটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের আওতামুক্ত থাকে। অথচ এ ক্ষেত্রে পরামর্শক কমিটির মূল সুপারিশ উপেক্ষা করে দেশের রাজস্বব্যবস্থাকে নির্বাহী বিভাগের অধীন দুটি বিভাগে পরিণত করা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের ফলে কর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি, স্বার্থের সংঘাতসহ বিভিন্ন অনিয়মের সুযোগ থাকবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রত্যাশিত রাজস্ব অর্জন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নবগঠিত বিভাগ দুটিকে আইনি সুরক্ষার মাধ্যমে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব বলয়ের বাইরে রাখার কোনো বিকল্প নেই। সরকারের এ সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে চলমান আন্তক্যাডার দ্বন্দ্বে নতুন ইন্ধন জুগিয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও আমরা দেখেছি, আয়কর রিটার্ন দাখিল ও ভ্যাট আদায়-প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে অনলাইন করা যায়নি, হয়রানি ও দুর্নীতি কমেনি, চালান জালিয়াতি নিয়ন্ত্রিত হয়নি, কর ফাঁকি আর অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রিত হয়নি। দেশের কর জিডিপির অনুপাতও বাড়েনি; বরং কমে গেছে এক যুগে। এর মধ্যেই পাবলিক অডিট অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর মাধ্যমে সরকার সিএজির রাজস্ব নিরূপণ নিরীক্ষার এখতিয়ার কেড়ে নিয়ে এ ক্ষেত্রে অনিয়মকে জবাবদিহির বাইরে রাখার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এসবের পেছনেও আমলাতন্ত্রের ভেতরে থাকা সংস্কার প্রতিরোধক স্বার্থান্বেষী মহল রয়েছে। তাদের প্রভাবেই আরও একবার নীতি ও ব্যবস্থাপনাকে পৃথক্‌করণের নামে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হলো।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইফত খ র জ জ ম ন প রণয়ন ও ব প রক র য় র লক ষ য ট আইব করণ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সব পলিটেকনিকে বিক্ষোভ কাল, হাইকোর্টের সামনে অবস্থানের ডাক

একটি রিট মামলায় দেওয়া রায় বাতিলের দাবিতে আগামীকাল রোববার হাইকোর্টের সামনে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন ঢাকার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষার্থীরা। এদিন সারাদেশে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করার ঘোষণাও দিয়েছে শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ’।

আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি দিয়েছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন। সেখানে আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জোবায়ের পাটোয়ারী বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন এখনও শেষ হয়নি। আমাদের প্রথম দাবি ছিল ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়ে। ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের সমস্যার যে সমাধান; সেটি আমরা এখনও দেখতে পাইনি।’

মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিলেও হাইকোর্টের যে রায় আছে, সেটি নিয়ে কোনো ফলাফল তারা পাননি বলে তুলে ধরেন জোবায়ের। তিনি বলেন, ‘এ রায়টি নিয়ে শুনানি করা হয়েছিল, সেদিন রায়টি স্থগিত করা হয়।’

আগামীকাল রোববার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, এই রায়টি সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি করা হোক। এদিন প্রত্যেকটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হবে এবং ঢাকার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, আমাদের এই দাবিগুলো দ্রুততম সময় মেনে নিন।’

কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. মাশফিক ইসলাম দেওয়ান বলেন, ‘ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখার খসড়া ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। সরকার কারিগরি শিক্ষক তথা ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর ও জুনিয়র ইন্সট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আশাবাদী, আমাদের এ রূপরেখা সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত হবে।’

ছয় দফা পূরণে দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা গত ১৬ এপ্রিল থেকে রাস্তায় নামেন। সপ্তাহখানেক ধরে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে কমিটি গঠন করে। এরপর তারা আন্দোলন স্থগিত করেন।

তবে পরদিনই সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে তাদের তরফ থেকে।

৭ মে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শাটডাউন কর্মসূচি শিথিল করে ক্লাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেও শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১. জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের পদোন্নতি বিষয়ে হাই কোর্টের রায় বাতিলসহ ক্রাফট ইন্সট্রাকটর পদবি পরিবর্তন এবং ওই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত করা।

২. ২০২১ সালের বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাকটর নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধি অনতিবিলম্বে বাতিল করা, সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে নিয়োগ বাতিল করা ও মামলা করার সঙ্গে জড়িত ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

৩. ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদী অব্যাহত রাখা এবং মানসম্মত পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যক্রম আধুনিক বিশ্বের আদলে প্রণয়ন করা।

৪. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) পদে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাস করা শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না এবং এই পদ সংরক্ষিত করতে হবে।

৫. বেসরকারি খাতে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীদের ন্যূনতম ১০ম গ্রেডের মূল বেতনের সমান অর্থাৎ ১৬০০০ টাকা দেওয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাইকোর্টের সামনে অবস্থান কর্মসূচি, সারাদেশের পলিটেকনিকে বিক্ষোভ কাল
  • সব পলিটেকনিকে বিক্ষোভ কাল, হাইকোর্টের সামনে অবস্থানের ডাক
  • ধারাবাহিক কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি বিচার বিভাগীয় কর্মচারিদের